ঈদের পরে সরকার বিরোধী আন্দোলন সফল করতে বিএনপি-র ঢাকা মহানগরের কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ কারণ দলের নীতি নির্ধারকদের মতে, ঢাকায় শক্ত আন্দোলন করা না গেলে সারাদেশের তেমন লাভ হয় না৷ ঈদের আগেই গুরুত্বপূর্ণ কমিটিও পুনর্গঠন করা হবে৷
বিজ্ঞাপন
বিএনপি-র নীতি নির্ধারকরা মনে করেন, ঢাকায় আন্দোলন জমানোই মূল কাজ৷ ঢাকার বাইরে যদি আন্দোলন তীব্রও হয়, তার পরও রাজধানীতে আন্দোলন না জমলে তা কাজে আসে না৷ বিএনপি মনে করে, ৫ই জানুয়ারির আগে ও পরে ঢাকার বাইরের আন্দোলন বেশ ভালোই হয়েছে৷ ঢাকা ছাড়া দেশের অন্যান্য বিভাগ এবং জেলায় সরকারকে কোণঠাসা করা সম্ভব হয়েছিল৷ কিন্তু ঢাকায় আন্দোলন জোরদার করতে না পারায় সরকার ভালোভাবেই টিকে গেছে৷ তাই ঈদের পরে সরকার বিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করতে ঢাকা মহানগর বিএনপি-কে শক্তিশালী করা হচ্ছে৷
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার রাতে তার গুলশানের কার্যালয়ে দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকা মহানগর কমিটি মোটামুটি চূড়ান্ত করে ফেলেছেন বলে জানা গেছে৷
তাতে বিএনপি-র স্থায়ী কমিটির সদস্য ঢাকার সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাসকে ঢাকা মহানগর বিএনপি-র আহ্বায়ক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ বিএনপি চেয়ারপার্সনের আরেক উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুকে করা হতে পারে যুগ্ম আহ্বায়ক৷ স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং গত কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালামও নতুন কমিটিতে থাকছেন৷
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশানের বাসভবনে কার্যত ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷ রবিবার তিনি পুলিশের বাধার কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাড়ি থেকে বেরোনোর চেষ্টা
‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় অংশ নিতে রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর তিনটার দিকে গুলশানের বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷ কিন্তু তাঁর পথরোধ করতে বাড়ির গেটে মানব দেয়াল তৈরি করে পুলিশ এবং ব়্যাবের সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
আটকে ছিলেন গেটে
পুলিশ এবং ব়্যাব সদস্যদের বাধার মুখে বেশ কিছুক্ষণ গাড়ির মধ্যে বসে ছিলেন খালেদা জিয়া৷ এরপর এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
গাড়ি থেকে বেরিয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী৷ এসময় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন৷ উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে খালেদা বলেন, ‘‘দেশ আজ কোথায় যাচ্ছে? এরা সবাই গোপালগঞ্জের৷ গোপালগঞ্জের নামই বদলে যাবে৷’’ দৈনিক প্রথম আলো খালেদার এই বক্তব্য প্রকাশ করেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সোমবারও চলবে কর্মসূচি
নিরাপত্তা বাহিনীর বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি খালেদা জিয়া৷ তবে তিনি বাড়ির মধ্যে ফিরে যাবার আগে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘‘এই সরকার জালেম এবং অগণতান্ত্রিক৷ এই সরকারের পতন হবেই৷’’ এসময় তিনি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সোমবারও চলবে বলে ঘোষণা দেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
বালুভর্তি ট্রাকের ব্যারিকেড
খালেদা জিয়ার বাড়ির চারপাশে গত কয়েকদিন ধরেই পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল৷ শনিবার তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তায় সাধারণ ব্যারিকেডের পাশাপাশি বালুভর্তি ট্রাকও যোগ করা হয়৷ কয়েকটি ট্রাক এমনভাবে রাখা হয়, যাতে খালেদার গাড়ি বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে বের হতে না পারে৷ আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশিদ স্বপন জানান, খালেদা জিয়াকে কার্যত গুলশানের বাড়িতে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুলিশের বক্তব্য
খালেদা জিয়াকে বাড়ির বাইরে যেতে না দেয়া প্রসঙ্গে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নয়াপল্টনে কোনো জমায়েত বা সমাবেশের অনুমতি নেই৷ তাই বিরোধী দলীয় নেত্রীকে সেখানে যেতে দেয়া হবে না৷ আর তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টিও পুলিশের দেখার আছে৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
প্রাণহানি
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’কে ঘিরে সংঘর্ষ এবং বিস্ফোরণে ঢাকায় কমপক্ষে দুই ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন৷ রবিবার সকাল এগারোটার দিকে ঢাকার মালিবাগে পুলিশ আর জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারান মনসুর আলী৷ অন্যদিকে, কমলাপুরে তল্লাশির সময় বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন নিরাপত্তাকর্মী আবুল কাশেম৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
সুপ্রিমকোর্টে তাণ্ডব
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় যোগ দিতে সুপ্রিমকোর্টের বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা কোর্টের মূল গেট দিয়ে মিছিল করে নয়াপল্টনে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের জল কামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আটকে দেয়৷ এরপর তারা ভিতরে গিয়ে পুলিশের প্রতি ইট পাটকেল ছোড়ে৷ এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের একদল সমর্থক সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে ঢুকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ সেখানে কয়েকজন আইনজীবী আহত হন৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
বিরল সংঘর্ষ
বলাবাহুল্য, সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও বাইরে থেকে কোন দলের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেয়নি৷ সেক্ষেত্রে রবিবার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আদালত চত্বরে প্রবেশ করে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়াটা বিরল ঘটনা বলে অবিহিত করেন আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি৷
ছবি: Reuters
চুপচাপ নয়াপল্টন
‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচির আওতায় গোটা দেশ থেকে সক্ষম নেতাকর্মীদের ২৯ ডিসেম্বর, রবিবার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে হাজির হওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া৷ কিন্তু রবিবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে পারেনি৷ কিছু নেতাকর্মী কার্যালয়ের সামনে যেতে চাইলে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ফলে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দৃশ্যত পুলিশ এবং সাংবাদিক ছাড়া কেউ ছিল না৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাঁচ জানুয়ারি নির্বাচন
উল্লেখ্য, আগামী পাঁচ জানুয়ারি বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জন করায় এবার ১৫৪টি আসনে ভোটাভুটির দরকার হচ্ছে না৷ এসব আসনে একজন করে প্রার্থী রয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
11 ছবি1 | 11
বিএনপি-র একজন শীর্ষ নেতা জানান, দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ওমরাহ করতে শনিবার সৌদি আরবের পথে রওনা হচ্ছেন৷ তারপর নতুন আহ্বায়ক কমিটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে৷
আর বিএনপি-র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে জানান, নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার আগেই যতদূর সম্ভব সব পর্যায়ের কমিটি শক্তিশালী করা হবে৷ এই কমিটিতে তারাই ঠাঁই পাচ্ছেন, যারা বিগত আন্দোলনে অগ্রভাগে ছিলেন এবং ভবিষ্যতের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন৷
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি-র নীতি নির্ধারকরা অতীতের আন্দোলন এবং তার প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করেছেন৷ কার কী ভূমিকা ছিল এবং কৌশলগত দিকও বিবেচনা করেছেন৷ আর তাতে মনে হয়েছে, ঢাকার আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে হলে আন্দেলনের জন্য সামর্থ্যবান নেতৃত্ব প্রয়োজন৷
তিনি বলেন, ‘‘সাংগঠনিক শক্তি মজবুত না হলে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন৷ এই সরকারকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে৷ তারা এই সরকারকে আর চায় না৷ বিএনপি তাই জনগণকে সংগঠিত করে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে৷''
উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগে ঢাকা মহানগর বিএনপি-র প্রধান সাদেক হোসেন খোকা বিগত আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণে পদত্যাগে বাধ্য হন৷