আশঙ্কাটা অমূলক নয়৷ তাই ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া রাজ্যগুলোয়৷ জলে-স্থলে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি৷ এহেন জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াবার কথা বলছেন অনেকে৷
বিজ্ঞাপন
ঢাকায় জঙ্গি হানায় ভারত স্বভাবতই উদ্বিগ্ন৷ শুধু তাই নয়, ঢাকা মডেলে ভারতেও জঙ্গি হানার আশঙ্কা করছে মোদী সরকার৷ আশঙ্কাটা অমূলক নয় বলেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল দফায় দফায় বৈঠক করেছেন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিভাগের কর্তা-ব্যক্তিদের সঙ্গে৷ কথা বলেছেন ঢাকার ভারতীয় হাই-কমিশনারের সঙ্গে৷ কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে আছে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির বিস্তীর্ণ অভিন্ন সীমান্ত৷ মোদী সরকারের দুশ্চিন্তার আরও একটা কারণ বাংলাদেশে তথকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর উপস্থিতির বাড়বাড়ন্ত৷ ঢাকার জঙ্গি হানা তারই প্রমাণ৷ অবশ্য বাংলাদেশ সরকার দেশে আইএস-এর বাড়বাড়ন্তের কথা পুরোপুরি স্বীকার করেনি, বলেছে, এটা আইএস-এর যোগসাজসে দেশীয় জঙ্গি গোষ্ঠী জামাত-উল-মুজাহিদিনের কাজ৷ জঙ্গিরা দেশি না বিদেশি সেটা বড় কথা নয়, আসল কথা সন্ত্রাস৷ ভারতীয় সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়েছে, জঙ্গিরা রেস্তোরাঁয় হানা দিয়ে হত্যা করেছে বেশি সংখ্যক বিদেশিকে, যাতে বার্তা যায় যে বাংলাদেশ বিদেশিদের জন্য নিরাপদ নয়৷
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
ঢাকার গুলশানের আর্টিজান ক্যাফেতে দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার জিম্মি ঘটনার অবসান হলেও মানুষের মন থেকে আতঙ্ক যাচ্ছে না৷ এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই নিহত হয়েছে ২০ জিম্মি৷ নিহত হয়েছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তাও৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
ঘটনার শুরু
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে অবস্থানরত অজ্ঞাত সংখ্যক অতিথি সেখানে আটকা পড়েন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
দুই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু
পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের পাশাপাশি ছ'জন হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বলেছেন, বাকি কয়েকজনকে হয়তো বাঁচানো যায়নি৷ এই জঙ্গি হামলায় জড়িত একজন ধরা পড়েছে বলেও শনিবার সকালে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters
এ যেন দুঃস্বপ্ন
কমান্ডো অভিযানে মুক্ত গুলশানের ক্যাফে থেকে উদ্ধার পাওয়া ব্যক্তিদের ১২ ঘণ্টার ‘দুঃস্বপ্ন’ কাটছে না৷ তাঁদের চোখে মুখে ক্লান্তি ও ভীতির ছাপ৷ তারা বলছিলেন, কয়েকজনের মৃতদেহ দেখেছেন, অনেক জায়গায় রক্তের ছাপ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য
তাঁরা বলছেন, জিম্মিকারীরা বাংলাদেশি মুসলমানদের সুরা পড়তে বলে৷ সুরা পড়তে পারার পর তাঁদেরকে রাতে খেতেও দেওয়া হয়৷ যাঁরা হিজাব পরা ছিল, তাঁদের বাড়তি খাতির করা হয়৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/S. K. Das
আইএস-এর দায় স্বীকার
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে বলে সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ জানিয়েছে৷ এই জঙ্গি দলের মুখপত্র আমাক নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে এ সব খবরে দাবি করা হয় যে, ‘তাদের’ এই হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৪০ জন৷
ছবি: picture-alliance/abaca
কমান্ডো অভিযান
সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে রাতভর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখার পর যৌথ সেনা, নৌ, পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো দল গুলশানে অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়৷ ৮ টা ১৫ মিনিটে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ৬ জনকে উদ্ধার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ভবনের নিয়ন্ত্রণ ও আতঙ্কের অবসান
৮ টা ৫৫ মিনিটে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা৷ গোয়েন্দা দল ভবনের ভেতর বিস্ফোরকের জন্য তল্লাশি শুরু করে৷ ৯ টা ১৫ মিনিটে ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান হয়৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
8 ছবি1 | 8
নিহতদের মধ্যে ছিলেন ১৮ জন বিদেশি, যার মধ্যে একজন ১৯ বছরের তারিষী জৈন ভারতীয়৷ ইতিমধ্যে দিল্লির কাছে গুরগাঁওতে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে৷ দ্বিতীয়ত দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সন্ত্রাস দমনে সরকার ও বিরোধী মধ্যে রাজনৈতিক মতভেদ সরিয়ে রাখতে হবে৷ তা না হলে আন্তর্জাতিক চরমপন্থিদের হাতে বাংলাদেশের অস্তিত্বের সংকট দেখা দেবে৷ সন্ত্রাসী ভাইরাসে সংক্রামিত দেশকে বাঁচাতে হোমিওপ্যাথিক চিকিত্সা যথেষ্ট নয়৷
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি এমনিতেই অশান্ত৷ সেই সুযোগে আইএস বা তাদের সমগোত্রীয় কোনো জঙ্গিদল চোরাপথে ভারতে ঢুকে যে সন্ত্রাসী তত্পরতা চালাবে না, তা বলা যায় না৷ এটাও মাথায় রাখতে হবে, জনা পঞ্চাশেক ভারতীয় আইএসে যোগ দিয়েছে৷ জেহাদের নামে ভারতীয় মুসলিম যুবকদের মগজ ধোলাই-এর কাজ চলেছে অনলাইনে ক্রমাগত৷ তারা এখন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন বা সিমির মত দেশীয় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির চেয়ে আইএস-এর দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে বেশি৷ এর প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির আন্তর্জাতিক জলপথে এবং স্থলপথে সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের যৌথ টহলদারি এবং নজরদারি অনেক বাড়ানো হয়েছে৷ উত্তরবঙ্গের কোচবিহার থেকে মালদহ পর্যন্ত অনেক জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া নেই৷ সেদিকেও কড়া নজর রাখা হয়েছে৷ এ বিষয়ে গ্রামবাসীদেরও বোঝানো হয়েছে কোনো অচেনা ব্যক্তিদের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখলে পুলিশকে যেন তা জানানো হয়৷ গোয়েন্দা পুলিশ পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড় বোমাকাণ্ডের সঙ্গে ঢাকা জঙ্গিকাণ্ডের যোগসূত্র আছে বলে সন্দেহ করছে৷
বিশ্বের কয়েকটি বিপজ্জনক সীমান্ত
দুই দেশের মধ্যে সীমানা নিয়ে যুদ্ধ কিংবা উন্নত জীবনের আশায় এক দেশের নাগরিকের প্রতিবেশী দেশে যাওয়া – ইত্যাদি কারণে বিশ্বের কয়েকটি সীমান্ত বিপজ্জনক বলে পরিচিত৷ ছবিঘরে থাকছে সেগুলোর কথা৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত
এই সীমান্তের ৪০টি ‘স্পর্শকাতর’ অংশে ‘লেজার’-এর বেড়া দেয়া হবে বলে জানিয়েছে ভারত৷ পাকিস্তান থেকে ভারতে অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে এই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷ এর ফলে বেড়ার সংস্পর্শে কিছু আসলে উচ্চস্বরে সাইরেন বেজে উঠবে৷ ২০১১ সালের জুনে ‘ফরেন পলিসি’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮০০ মাইল দীর্ঘ এই সীমান্তে নিহত হয়েছে এক লক্ষ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Arif Ali/AFP/Getty Images
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ এর হাতে ৪৬ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে৷ আহত হয়েছে ৭৩ জন৷ এছাড়া অপহরণ করা হয়েছে ৫৯ জনকে৷ কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত শিগগিরই বেড়া দেয়ার কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানান৷
ছবি: Str/AFP/Getty Images
যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত
উন্নত জীবনের আশায় মেক্সিকো থেকে প্রতিবছর অনেক মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন৷ আর তা করতে গিয়ে প্রাণ যায় অনেকের৷ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম-এর ২০১৪ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, গত ১৪ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে ৬,০০০ এর বেশি লোক নিহত হয়েছে৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Gordon Hyde
ভূমধ্যসাগর
যুদ্ধ আর সংঘাত এড়াতে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরোপে শরণার্থী প্রবেশ করছে৷ এদের একটি বড় অংশ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করে৷ এতে প্রাণ যায় অনেকের৷ জার্মান ম্যাগাজিন ‘ডেয়ার স্পিগেল’ গত অক্টোবরে এক প্রতিবেদনে ভূমধ্যসাগরকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সীমান্ত বলে আখ্যা দেয়৷ ২০১৫ সালে ভূমধ্যসাগরে নিহতের সংখ্যা ছিল ৩,৭৭০৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Palacios
আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্ত
প্রায় দেড় হাজার মাইল দীর্ঘ ‘ডুরান্ড লাইন’ নামে পরিচিত সীমান্ত এখনও মেনে নেয়নি আফগানিস্তান৷ পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখা রাজ্যের পশতুন অধ্যুষিত এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে আফগানিস্তান৷ এই সীমান্তকে ঘিরে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে৷
ছবি: Reuters
উত্তর কোরিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া
বিশ্বের সবচেয়ে সামরিক সজ্জায় সজ্জিত সীমান্ত বলা হয় একে৷ ১৯৫৩ সালে কোরিয়া যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর প্রায় দেড়শো মাইল দীর্ঘ এই সীমান্তের দুই পাশ থেকে সৈন্যদের সরিয়ে দেয়া হয়৷ তখন থেকেই দুই দেশের সৈন্যরা প্রায় আড়াই মাইল প্রশস্ত এই সীমান্তের দুই পাশে অবস্থান করছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
6 ছবি1 | 6
অন্যান্য ভারতীয় পত্র-পত্রিকাগুলি এবং জনমত ঢাকা জঙ্গিকাণ্ড সম্পর্কে কী বলছে? বলছে আইএস এবং আল-কায়েদা বাংলাদেশকে নরম মাটি ভেবে ঘাঁটি গাড়ছে, হাসিনা সরকার সেটাকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল, তা দেননি৷ এটা বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা যে, তারা হাসিনা সরকারকে সেটা বোঝাতে পারেনি৷ ব্লগার ও সংখ্যালঘুদের হত্যার মতো অনেক বিক্ষিপ্ত সন্ত্রাসীকাণ্ডের পরও সরকার আত্মসন্তুষ্টিতে ডুবেছিল৷ এখন সরকারের উচিত অবিলম্বে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নেয়া৷ নেওয়া উচিত আগাম ব্যবস্থা, কড়া ব্যবস্থা৷ কারণ জঙ্গিদের পাল্টা হানার ভয় করলে চলবে না৷
ভারতীয় জনমতের একাংশ মনে করেন, গত সপ্তাহান্তে বাংলাদেশে, গত রবিবার বাগদাদের মতো আগামীকাল ভারতে বা বিশ্বের অন্যত্র হত্যাকাণ্ড চালানো হবে না – এ কথা কেউ বলতে পারে না৷ এর থেকে কি মুক্তির কোনো পথ নেই? এটা তো দিনের আলোর মতো সত্যি যে, কিছু দেশ এইসব সন্ত্রাসীদের মদত দিচ্ছে, আশ্রয় দিচ্ছে৷ আর তারা দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে নির্মম হত্যালীলা, ধর্মের নামে৷ কিন্তু এ সব হত্যাকাণ্ড যদি সত্যিই ইসলামের নামে যদি হয়, তাহলে ঢাকায়, বাগদাদে বা অন্য মুসলিম দেশগুলিতে কেন হচ্ছে? তাও আবার রমজান বা ঈদের সময়? কেন এক্ষেত্রে জাতিসংঘ আরও সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে না? স্রেফ নিন্দাবাক্য উচ্চারণই কি যথেষ্ট? কেন এ সব অপরাধীদের ন্যুরেমব্যার্গ বিচারের ধাঁচে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না? কেন বিশ্বের কল্যাণকামী দেশগুলি একজোট হয়ে এদের কড়া মোকাবিলা করছে না? কোথায় আটকাচ্ছে? কেন আটকাচ্ছে? প্রশ্ন অনেক৷ কিন্ত এই প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে, এ সমস্যা দূর করতে না পারলে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক হয়ে পড়বে অর্থহীন৷ কারণ বাস্তবতার ভিত্তিতে ভারতের মতো কোনো দেশই নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারে না, পারছে না আজ৷
আপনার কী মনে হয় বন্ধু? ভারতেও কি ঢাকার স্টাইলে জঙ্গি হামলা হতে পারে? লিখুন নীচের ঘরে৷
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷