ঢাকায় তিন রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’ আটক: বর্ধমান বিস্ফোরণে জড়িত বলে সন্দেহ
১ ডিসেম্বর ২০১৪ রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার লালবাগ এতিমখানা মোড় থেকে এই তিন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তারা হলেন: নূর হোসেন ওরফে রফিকুল ইসলাম (২৬), ইয়াসির আরাফাত (২২) ও ওমর করিম (২৫)৷ তাদের কাছে পাঁচটি ডেটোনেটর, দুটি জেল বোমা এবং বিস্ফোরক তৈরির উপাদান পাওয়া গেছে বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান৷
তিনি সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘এরা রোহিঙ্গা জঙ্গি৷ মিয়ানমারের জঙ্গি সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন (এআরইউ) ও নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এনজিও গ্লোবাল রেহিঙ্গা সেন্টারের (জিআরসি) সঙ্গে যুক্ত৷''
তিনি জানান, ‘‘ভারতের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজনদের যে তথ্য ভারতীয় গোয়েন্দারা দিয়েছেন, তাদের মধ্যে ঢাকায় আটক তিনজনের মধ্যে দুজনের সঙ্গে নূর হোসেন ও ইয়াসিরের মিল পাওয়া গেছে৷'' এর মধ্যে নূর হোসেন চার বছর, ফারুক ১২ বছর এবং আরাফাত ১ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন৷
এর আগে কলকাতায় গ্রেপ্তার জেএমবি জঙ্গি সজিদের স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে (২৫) গত ২২শে নভেম্বর ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়৷ পরদিন চট্টগ্রামের একটি হোটেল থেকে এক পাকিস্তানি নাগরিকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যারা রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও) সঙ্গে জড়িত বলে বাংলাদেশের পুলিশের ধারণা৷
গত ২রা অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হওয়ার পর তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে এনআইএ কর্মকর্তারা বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততার কথা জানায়৷ এরই মধ্যে এই ঘটনায় বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা তদন্ত দল ভারত সফর করে ঢাকায় ফিরেছেন৷ এই দলের নেতৃত্ব দেন গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম৷
তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ভারতে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের মধ্যে মধ্যে শেখ রহমতুল্লাহ সাজিদ বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের অধিবাসী৷ তিনি নরায়ণগঞ্জে মাসুম মাসুম নামে পরিচিত ছিলেন৷ আর বর্ধমানের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ভারতের হায়দ্রাবাদ থেকে খালিদ মোহাম্মদ নামে মিয়ানমারের এক নাগরিককে আটক করা হয়৷ তাই মিয়ানমারের জঙ্গিরাও বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷'' তিনি আরও জানান, ‘‘জেএমবি-র সঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের যোগাযোগ সম্পর্কে আমরা অবগত৷''
ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার তথ্য মতে, ‘‘বর্ধমান বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত খালিদ মোহাম্মদ একজন রোহিঙ্গা৷ তিনি মিয়ানমারের উগ্রপন্থী সংগঠন তেহেরিক-ই-আজাদি আরাকান এর হয়ে পাকিস্তানের তেহেরিকেই তালিবানের কাছ থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নেন৷ গোয়েন্দা কর্মকর্তা কৃষ্ণপদ রায় জানান, ‘‘এই খালিদই ঢাকায় রবিবার রাতে ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়া তিন রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি' নেতা৷''
মহানগর পুলিশের আরেক উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত রোহিঙ্গা নাগরিক খালিদ মোহাম্মদ ওরফে আব্দুর নুরকে তারা তাদের আদর্শিক গুরু মনে করে৷ তারা অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়াশুনার আড়ালে উগ্র জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে৷ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন এনজিও, এতিমখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারা তত্পর৷''
তিনি আরও জানান, ‘‘ভারতের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনার পর অন্তর্দেশীয় জঙ্গি নেটওয়ার্কের খোঁজে বাংলাদেশ এবং ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদানের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে৷''
বাংলাদেশে কক্সবাজারের দুটি ক্যাম্পে ৩৪ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গার বাইরে আরো সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন বলে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়
বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা বিদেশে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন বলে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের অভিযোগ৷ দেশি-বিদেশি কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের নামে জঙ্গি কার্যক্রমে ইন্ধন দিচ্ছে বলেও দাবি করা হয় গোয়েন্দা তথ্যে৷