1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঢাকায় থেকে যুদ্ধজয়ের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেন মাহফুজা

৩০ নভেম্বর ২০১১

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরিতে যারা বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরই একজন অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম৷ যুদ্ধকালীন নয় মাস ঢাকায় অবস্থান করে যুদ্ধজয়ের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছেন তিনি৷

Textilindustrie in Dhaka (März 2011). Näherinnen auf der Straße in Dhaka. Garment workers returning on the streets of Dhaka. Zugeliefert am 10.4.2011 durch Ziphora Eka Robina. Copyright: DW /Bijoyeta Das
এই ঢাকা শহরেই নানা অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজা খানমছবি: DW

১৯৪৬ সালে বাংলা সনের পহেলা বৈশাখ কলকাতায় জন্ম মাহফুজা খানমের৷ পিতা মুস্তাফিজুর রহমান খান৷ মা সালেহা খানম৷ ১৯৬৬-৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ - ডাকসু'র ভাইস-প্রেসিডেন্ট তথা ভিপি ছিলেন মাহফুজা৷ তবে ১৯৬৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ডাকসু'র ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ এসময় পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে এমএসসি'র ছাত্রী ছিলেন তিনি৷ ১৯৬৯ সালে বর্তমান আইন মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মাহফুজা৷

১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা দাবি সারাদেশের মানুষের কাছে এবং বিশেষভাবে ছাত্র সমাজের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন মাহফুজা এবং তাঁর সহকর্মী ছাত্র নেতারা৷ বাঙালির ‘মুক্তি সনদ' হিসেবে বিবেচিত সেই ছয় দফা দাবিকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে সভা-সমাবেশে বক্তৃতা করে ঘুরেছেন মাহফুজা খানম৷ এরপর ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং সত্তরের নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী সংকটে যারা বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে সংগ্রাম করেছেন তাদের মধ্যে মাহফুজা অন্যতম৷

ঢাকায় অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরছবি: Gerhard Klas

স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘১৯৭০ সালে প্রলয়ংকরী ঝড়ে চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে একদিনে প্রায় দশ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিল৷ অথচ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী এই দুর্যোগ কবলিত অঞ্চলের মানুষদের জন্য কিছুই করেনি৷ ফলে জনসাধারণের মাঝে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল সেটাকেও আমরা জনগণের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম৷ এরপর সাতই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে যখন বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন, সেই ভাষণের মধ্যেই কিন্তু এক বিবেচনায় স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ডাক অন্তর্ভুক্ত ছিল৷''

তিনি আরো জানান, ‘‘১৯৭১ সালের মার্চ মাস পুরোটাই ঢাকার রাজপথ আন্দোলন-সংগ্রামে উত্তাল ছিল৷ প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, শিক্ষক সংগঠন থেকে শুরু করে আপামর জনসাধারণ রাজপথে মিছিল-মিটিং করছিল৷ আমিও তখন ছোট্ট শিশুর মা হওয়া সত্ত্বেও সারাটি মাস মিছিল-মিটিং-এ নেতৃত্ব দিয়েছি৷ আর সেসময় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ছিল আমাদের তীর্থস্থানের মতো৷ সেখানে একটি হাত মাইকে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটতো৷ এমনকি আমার মাতৃত্বকে অস্বীকার করেই যেন আমি সংগ্রামে ছাঁপিয়ে পড়েছিলাম৷ আমরা তখন পুরানা পল্টনে থাকতাম৷ পঁচিশে মার্চ কালো রাত্রিতে হত্যাযজ্ঞ শুরু হওয়ার পর ২৬ তারিখ থেকে সান্ধ্য আইন জারি করা হয়৷ ২৮ তারিখে সান্ধ্য আইন শিথিল করা হলে আমার বাবার বাড়ি স্বামীবাগে যাই৷ এসময় পথের ধারে প্রচুর লাশ পড়ে থাকতে দেখলাম৷''

যাহোক, ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম শীর্ষ নেত্রী হিসেবে স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজের করণীয় সম্পর্কে তিনি এসময় কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতাদের সাথে পরামর্শ করেন৷ তবে কোলে শিশু থাকায় দলীয় নেতৃবৃন্দ তাঁকে ঢাকায় অবস্থান করে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন৷ তাই যুদ্ধ চলাকালীন নয় মাস ঢাকায় অবস্থান করে শহীদুল্লাহ কায়সার ও শহীদ জননী জাহানারা ইমামসহ অন্যান্যদের সাথে কাপড়, ওষুধ-পত্র এবং অর্থ সংগ্রহের কাজ করতেন৷ অস্ত্র সংগ্রহ এবং সেগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন৷ আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন৷ ঢাকায় অবস্থিত বাংলা-ইউএস গ্রন্থাগার এবং সেসময় মতিঝিলে অবস্থিত টেলিভিশন টাওয়ারসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন মাহফুজা খানম৷ এছাড়া আগরতলা থেকে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী নেতাদের নীতি, কৌশল ও নির্দেশাবলী অনুসারে লিফলেট-পোস্টার তৈরি করে ঢাকায় সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছেন৷

এসব লিফলেট ছাপানোর কাজে কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অবকাঠামো ও উপকরণ ব্যবহার করেছেন - সেসম্পর্কে তিনি জানান, ‘‘আমি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলাম৷ তাই সেখানে থাকা সাইক্লোস্টাইল যন্ত্রের সাহায্যে আমরা এগুলো ছাপাতাম৷ আমরা ঘরে ঢুকে যখন কাজ করতাম তখন বাইরে থেকে পিওনকে বলা হতো দরজায় তালা লাগিয়ে রাখার জন্য৷ আবার ছাপানোর কাজের জন্য আমরা রসায়ন বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ সংগ্রহ করতাম৷ তখনও একইভাবে ঘরের দরজায় বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দিয়ে আমরা সেসব উপকরণ সংগ্রহ করতাম৷ আসলে সেসময় সারা দেশের মানুষই নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেদের সামর্থ্য ও সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশ স্বাধীন করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন৷ যেমন আমাদের এসব কাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জনশক্তি আমাদের সহযোগিতা করেছিল৷''

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইডেন কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন মাহফুজা৷ চাকরি জীবন শেষ করেছেন অধ্যক্ষ হিসেবে৷ বর্তমানে তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক, ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন এর প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট, খেলাঘরের চেয়ারপারসন, অপরাজেয় বাংলাদেশের সভাপতি, পেশাজীবী নারী সমাজের সভাপতি, দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহ-সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য৷ এছাড়া আরো অনেক সমাজসেবামূলক সংগঠনের সাথে জড়িয়ে রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজা খানম৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ