জঙ্গিবাদ নজরদারিকারী ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে আইএসের একটি বার্তার বরাত দেওয়া হয়৷ সেই বার্তায় আইএস বলেছে, ‘‘আল্লাহর ইচ্ছায় খেলাফতের সৈনিকরা ছদ্মবেশে ঢাকার মালিবাগে মুরতাদ পুলিশের দিকে বোমা ছুড়লে তিন জন আহত হয়েছে৷ যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর৷''
এদিকে, রোববার রাতে পুলিশসহ তিনজন যে বিস্ফোরকে আহত হয়েছেন, সেটি একটি শক্তিশালী ককটেল ছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া৷
স্তম্ভিত করে দেয়া গুলশান হামলা
ঘটনাটি কাঁপিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়, আলোড়ন উঠেছিল দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে৷
ছবি: bdnews24.com
গুলশানে হামলা
বিশ্ব মানচিত্রে পরস্পরের সঙ্গে লাগোয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ অর্ধ শতাব্দী পূর্বে স্বাধীন হয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষতার চেতনায়৷ দেড় দশক ধরে নানা জায়গায় মুসলিম জঙ্গিবাদ ছড়ালেও খানিকটা যেন নিরাপদেই ছিল দেশটি৷ রাজনৈতিক সহিংসতা ছিল৷ তার অনেকগুলোতে জঙ্গিদের ব্যবহারের কথাও তদন্তে উঠে আসে৷ তবে ঘোষণা দিয়ে বড় ধরণের হামলা আর হয়নি৷ এই ঘটনায় স্তম্ভিত হয়েছে গোটা দেশ৷
ছবি: bdnews24.com
যেভাবে শুরু
তখন ছিল রমজান৷ ঘটনার দিন ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের একটি রেস্টুরেন্ট ঢুকে পড়ে৷ স্প্যানিশ ওই রেস্টুরেন্টটির নাম হোলি আর্টিজান৷ ঢোকার সময়ই তারা বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে৷
ছবি: bdnews24.com
জিম্মি দশা
অস্ত্রধারীরা রেস্টুরেন্টে ঢোকার পর সেখানে জিম্মি সংকট শুরু হয়৷ বাইরে চলে নানা গুজব৷ হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকজন রেস্টুরেন্টকর্মী বের হয়ে আসতে সক্ষম হন৷ বাংলাদেশে এর আগে ১৯৭৭ সালে ঢাকায় আরেকটি জিম্মি সংকট ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়েছিল৷ তখন মুম্বাই থেকে টোকিওগামী একটি জাপানি বিমানের যাত্রীদের জিম্মি করে বিমানটি ঢাকায় নামিয়েছিল দেশটির বামপন্থি বিদ্রোহী দল ‘ইউনাইটেড রেড আর্মি’৷
ছবি: picture-alliance/abaca
কোথায়
অবস্থানগত কারণেও এই ঘটনা আলোচনায় ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে৷ কারণ, রেস্তোরাঁটি ঢাকার গুলশান এলাকায়৷ বিভিন্ন দেশের দূতাবাস রয়েছে এই এলাকায়৷ কয়েকটি দূতাবাস তো রেস্টুরেন্টের একেবারেই কাছে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press Agency/M. Hasan
টার্গেট বিদেশি, টার্গেট হোলি আর্টিজান
ঢাকার অভিজাত এই এলাকার রেস্টুরেন্টটিতে পোষা প্রাণী নিয়ে প্রবেশ করা যেতো৷ এর ভেতরে উন্মুক্ত লন ছিল, সেখানে বাচ্চারা খেলাধুলা করতে পারতো৷ ওই এলাকায় থাকা বিদেশিদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছিল রেস্টুরেন্টটি৷ বিদেশিদের টার্গেট করতেই এই রেস্টুরেন্টকে বেছে নেয়া হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন৷
ছবি: bdnews24.com
প্রাণহানি পুলিশেরও
জিম্মি সংকট শুরুর পর ঘটনা সামলাতে এগিয়ে যায় পুলিশ বাহিনী৷ কিন্তু প্রথম দিকেই জঙ্গিদের হামলায় বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম প্রাণ হারান৷ এতে আতঙ্ক আরো বাড়ে৷
ছবি: bdnews24.com
ডাক পড়ে সেনাবাহিনীর
পুলিশ হতাহত হওয়ার পর অভিযান নিয়ে নতুন করে চিন্তা শুরু হয়৷ এক পর্যায়ে জঙ্গিদের কবল থেকে ওই রেস্টুরেন্টটি মুক্ত করার অভিযান রাতে কার্যত স্থগিত হয়ে যায়৷ শেষ পর্যন্ত ডাক পড়ে সেনাবাহিনীর৷ সাঁজোয়া যান নিয়ে সেনা সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করেন৷
ছবি: bdnews24.com
আইএস সংশ্লিষ্টতা
রাতে জিম্মি দশা চলাকালে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসতে থাকে৷ তবে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তা অস্বীকার করে৷
ছবি: Reuters/A.Konstantinidis
কিভাবে ঘটনার শেষ
ঘটনার অবসান হয় প্রায় ১২ ঘণ্টা পর সেনা অভিযানে৷ অবশ্য তার আগেই জঙ্গিরা সেখানে থাকা ২০ জনকে খুন করে৷ মরদেহ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারির জিম্মি সংকটের অবসান ঘটে৷ জীবিত উদ্ধার করা হয় এক জাপানি ও দুই শ্রীলঙ্কানসহ মোট ১৩ জনকে৷
ছবি: bdnews24.com
আলোচিত সেই বাড়ি
ঘটনার পর রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় গুলশানের সেই বাড়ি৷ যে রেস্টুরেন্টে হামলা হয়েছিল, তার মালিক ঘটনার পর বাড়িটি ফিরিয়ে নেন৷
ছবি: bdnews24.com
নতুন ঠিকানায় হোলি আর্টিজান
গত বছরের ১ জুলাই রাতে যখন হামলা হয়, তখন হোলি আর্টিজান ছিল গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর বাড়িতে৷ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর জানুয়ারিতে এসে গুলশান এভিনিউর র্যাংগস আর্কেডের দ্বিতীয় তলায় নতুন করে চালু হয় রেস্টুরেন্টি৷
ছবি: bdnews24.com
জঙ্গিবাদ ও বিচার
এই ঘটনার পর আইএস দায় স্বীকার করলেও বাংলাদেশ সরকার এর জন্য স্থানীয় জঙ্গি সংগঠন জেএমবির পুনর্গঠিত একটি শাখাকে দায়ী মনে করে৷ ঘুরে ফিরে এর সঙ্গে জড়িত হিসাবে একই ব্যক্তিদের নাম আসতে থাকে৷ সরকার তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে৷ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আগাম পদক্ষেপে তাদের বহু ঘাঁটি ও অবস্থানস্থল ধ্বং হয়ে গেছে৷ সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, এই ঘটনার তদন্ত শেষ করতে ৫ ব্যক্তিকে খোঁজা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
12 ছবি1 | 12
সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘আমরা তদন্ত করছি, কারা এর সাথে জড়িত, কী উদ্দেশ্যে এটা করেছে বের হয়ে যাবে, একটু সময় দিন৷ প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, পুলিশের মনোবল দুর্বল করার জন্যে এ ধরনের অপচেষ্টা করা হচ্ছে, ভীতি তৈরি করা হচ্ছে৷''
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল গুলিস্তানে পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ছোড়া হয়েছিল৷ তখনও আইএসের নামে দায় স্বীকারের বার্তা এসেছিল৷ তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলা হলেও তার অগ্রগতির কোনো খবর জানা যায়নি৷
২০১৬ সালে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে৷ ওই ঘটনায় ১৭ জন বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হয়েছিলেন৷ ওই ঘটনারও দায় স্বীকার করে বার্তা দিয়েছিল আইএস৷