খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু পোপ ফ্রান্সিস তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন৷ তাঁর এই সফরে আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যু৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘রোহিঙ্গা সংকটে পোপ বাংলাদেশের পক্ষে আছেন৷''
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসেন পোপ৷ তাঁকে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ৷ এরপর তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন৷ সন্ধ্যায় তিনি বঙ্গভবনে বক্তৃতা দেন৷ রাতে তাঁর সম্মানে দেওয়া রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একান্ত বৈঠকে অংশ নেয়ার কথা আছে তাঁর৷
পোপ তিন দিনের সফরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও আন্তঃধর্ম সমাবেশ, যুব সমাবেশ এবং খ্রিষ্টধর্মীয় সমাবেশে অংশ নেবেন৷
শুক্রবার সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলিত হবেন পোপ৷ এদিন বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভ্যাটিকান দূতাবাসে সাক্ষাতের পর আর্চবিশপ হাউসে তিনি আন্তঃধর্মীয় নেতা ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন৷
ইমতিয়াজ আহমেদ
আগামী ২ ডিসেম্বর সকালে মাদার তেরেসা হাউস সফরসহ খ্রিষ্টধর্মের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পোপ ফ্রান্সিস৷ বিকালে নটরডেম কলেজে যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন তিনি৷
মার্কিন ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের জাতীয় সাপ্তাহিক ‘অ্যামেরিকা'-য় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পোপ বাংলাদেশের সব গরিব মানুষের প্রতিনিধি হয়ে এসেছেন৷ তিনি বিপন্ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শরণার্থী, গার্মেন্টস শ্রমিক, জলবায়ু উদ্বাস্তুতে রূপান্তরিত মানুষের হয়ে কথা বলবেন৷ একইভাবে এশিয়ার ক্যাথলিক মুখপত্র ইউসিএ-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন, আধুনিক দাসত্ব, সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন ধর্মীয় নিপীড়ন পোপের সফরে প্রাধান্য পাবে৷''
বাংলাদেশের দিক থেকে পোপের সফরে রোহিঙ্গা বিষয়টিই সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ রোহিঙ্গাদের নিয়ে তিনি কী বলেন, মিয়ানমারে এড়িয়ে গেলেও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেন কিনা, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন বাংলাদেশের নাগরিকরা৷
আব্দুল সৈয়দ
বৃহস্পতিবার সকালে পোপ ফ্রান্সিস ঢাকায় আসার ঠিক আগমূহুর্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা এখন খুব বিপদে আছি৷ ঠিক এমন সময়ে পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশে আসছেন৷ মিয়ানমার থেকে এখানে তাঁর আসা অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে৷''
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘বহুদিন পর পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশে আসছেন৷ ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের নেতা হিসেবে তাঁর কাছে আমরা তার মনোভাব জানতে পারবো৷ তিনি মিয়ানমারে যাওয়ার আগে আমাদের সমর্থন দিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন৷ কাজেই তিনি আমাদের পক্ষেই আছেন৷''
মিয়ানমারের রাখাইনে গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস৷ ওই ঘটনার পর ২৭ আগস্ট তিনি সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে খবর এসেছে যে, আমাদের রোহিঙ্গা ভাই ও বোনদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে৷ আমি তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি৷ ঈশ্বরের কাছে তাঁদের রক্ষার জন্য প্রার্থনা করছি৷''
লালু মাঝি
কিন্তু মিয়ানমার সফরে রোহিঙ্গাদের কথা বললেও রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেননি পোপ ফ্রান্সিস৷ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেখা যাক, পোপ বাংলাদেশে এসে কী বলেন৷ আমাদের দিক থেকে তো আশা থাকবে তিনি যেন রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গাই বলেন৷ শোনা যাচ্ছে, মিয়ানমার সরকার নাকি তাঁকে রোহিঙ্গা শব্দটি বলতে বারণ করেছে৷ বললে নাকি মিয়ানমারে খ্রিষ্টানদের ওপর নির্যাতন হতে পারে৷ কিন্তু বাংলাদেশে তিনি হয়ত আরো স্পষ্ট করে বলবেন৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে তো একটা কনসেনসাস তৈরি হয়েছে৷ তারা তো রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন৷ তাই বাংলাদেশ আশা করছে পোপ কোনোভাবে ঘুরিয়ে নয়, সরাসরি রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থানের কথা জানাবেন৷''
পোপের সফরসূচিতে আগে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দেখা বা কথা বলার কোনো কর্মসূচি না থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা অন্তর্ভূক্ত হয়েছে৷ শুক্রবার দুপুরের পর পোপ ফ্রান্সিস রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ঢাকায় কথা বলতে পারেন৷ এ জন্য বাংলাদেশে অশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে ঢাকা আসবে৷ তাঁদের আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা (আইওএম)-এর তত্ত্বাবধানে ঢাকা আনা হচ্ছে৷ জানা গেছে, শুক্রবার বিকেল ৫টার পর কাকরাইলের আর্চ বিশপ হাউজের মাঠে শান্তির জন্য আন্তঃধর্মীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন পোপ৷ এখানেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে তিনি কথা বলতে পারেন৷ এই দিন সকাল ১০টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে খ্রিষ্টধর্মীয় উপাসনা ও যাজকদের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন পোপ ফ্রান্সিস৷ ওই অনুষ্ঠান শেষেও রোহিঙ্গাদের কথা তিনি শুনতে পারেন৷
রোহিঙ্গা নির্যাতনের দেশ মিয়ানমারে পোপ
ছ’দিনের দক্ষিণ এশিয়া সফরের শুরুতেই মিয়ানমারে গেছেন পোপ ফ্রান্সিস৷ মানবতাবাদী সব মানুষেরই আশা, তিনি নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলবেন৷ তাঁর এ সফর রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখবে বলেও আশা অনেকের৷
ছবি: Reuters/M. Rossi
সবার নজর ছিল যেদিকে
মঙ্গলবার সকাল থেকেই সবার নজর ছিল একটি বৈঠকের দিকে৷ মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদ-এ যাচ্ছেন ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগুরু ফ্রান্সিস৷ সেখানে নোবেলজয়ী অং সান সু চির সঙ্গে দেখা হবে, কথা হবে তাঁর৷ সবার আশা, গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে মানবতাবাদী পোপ রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ইতিবাচক কিছু বলবেন৷
ছবি: Reuters/M. Rossi
সাদর অভ্যর্থনা
৫ কোটি ১০ লাখ মানুষের দেশ মিয়ানমারে মাত্র ৭ লাখ ক্যাথলিক খ্রিষ্টানের বসবাস৷ তারপরও সোমবার ইয়াঙ্গনের রাস্তায় নেমেছিল মানুষর ঢল৷ ছবিতে বিমানবন্দরে পোপকে বরণ করে নিচ্ছে শিশুরা৷
ছবি: Reuters/M. Rossi
‘সৌভাগ্য’ উদযাপন
পোপ ফ্রান্সিসকে স্বাগত জানাতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন ক্যাথলিকরা৷ এক ধর্মগুরু জানালেন, তাঁর সঙ্গে মিয়ানমারের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে প্রায় ১৮’শ ক্যাথলিক এসেছেন ইয়াঙ্গনে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখানে পবিত্র পিতাকে দেখতে এসেছি৷ এমন ঘটনা তো শতবর্ষে একবার ঘটে৷’’
ছবি: Reuters/Soe Zeya Tun
সংখ্যালঘুদের হাস্যোজ্জ্বল উপস্থিতি
মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরাও ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে পোপকে স্বাগত জানাতে এসেছিলেন৷
ছবি: Reuters/Soe Zeya Tun
‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’
এর আগে ইয়াঙ্গনে মিয়ানমারের সব ধর্মের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন পোপ ফ্রান্সিস৷ মিয়ানমারের ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের আর্চ বিশপের বাসভবনে অনুষ্ঠিত সভায় পোপ বৈচিত্র্যের মাঝে যে ঐক্য, তার গুরুত্ব মনে রাখার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান৷ তবে সেখানে তিনি রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কিছু বলেননি৷
ছবি: Reuters/Osservatore Romano
মানবিক সংকট
রাখাইনে ব্যাপক হারে হত্যা ও ধর্ষণ চালানোর ফলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘রোহিঙ্গাদের নির্মূল’ করার অভিযোগ তোলে জাতিসংঘ৷ গত আগস্টে রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে মিয়ানমার ছেড়ে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ গত কয়েক দশকে বিভিন্ন সময়ে যাওয়াদের ধরলে এখন ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে বাংলাদেশে৷ এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া সফরে এলেন পোপ ফ্রান্সিস৷
ছবি: Reuters/Soe Zeya Tun
সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ
সোমবার পোপ ফ্রান্সিস মিয়ানমারে পৌঁছানোর পরই তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মিয়ানমারের বিতর্কিত সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং৷ এ বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Savitsky
তারপর বাংলাদেশ
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে যাবেন ভ্যাটিকানের প্রধান ফ্রান্সিস৷ এছাড়া বাংলাদেশ সফরে তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরে যাবেন বলেও আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/M. Rossi
8 ছবি1 | 8
পোপের সঙ্গে দেখা করতে যে ১৫ জন রোহিঙ্গা ঢাকায় আসছেন, তাঁদের মধ্যে দু'জনের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছে ডয়চে ভেলে৷ তাঁরা বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে জানান, ‘‘আমরা এখন ঢাকার পথে আছি৷ পোপ আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন৷ তাই আইওএম আমাদের ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছে৷''
তাঁদের মধ্যে লালু মাঝি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আমাদের নির্যাতনের কথা বলব৷ আমরা বার্মায় ফিরে যেতে চাই৷ তাই আমাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে৷ নিরাপত্তা দিতে হবে৷''
রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার চিত্র
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ রয়টার্সের আলোকচিত্রীর ছবিতে সেইসব নৃশংসতার ছবি ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
একবছরের শিশু
মনকে নাড়া দেয়া ব্যান্ডেজে মোড়ানো তুলতুলে ছোট্ট এই দু’টি পা শহিদের৷ বয়স মাত্র এক বছর৷ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে দাদি তাহেরা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কোল থেকে পড়ে যায় ছোট্ট শহিদ৷ ছবিটি কক্সবাজারে রেডক্রসের এক হাসপাতালে ২৮ অক্টোবর তোলা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কালাবারো, ৫০
রাখাইনের মংদুতে তাঁদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনা সদস্যরা৷ এতে স্বামী, মেয়ে ও এক ছেলেকে হারান কালাবারো৷ তাঁর ডান পায়ে আঘাত করা হয়৷ যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন সেখানেই কয়েক ঘণ্টা মারা যাওয়ার ভান করে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
সেতারা বেগম, ১২
নয় ভাই-বোনের মধ্যে একজন সে৷ সেনারা যখন তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন বাকি আটজন বের হয়ে যেতে পারলেও সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছিল৷ পরে তাকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে পা পুড়ে যায়৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশে পৌঁছেছে সে৷ বাংলাদেশেই তার চিকিৎসা করা হয়৷ এখন তার দুই পা থাকলেও নেই কোনো আঙুল৷
ছবি: Reuters/J. Silva
নূর কামাল, ১৭
নিজের ঘরে লুকিয়ে ছিল সে৷ সেখান থেকে সৈন্যরা তাকে খুঁজে বের করে প্রথমে রাইফেলের বাট, পরে ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে৷ ছবিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
আনোয়ারা বেগম, ৩৬
ঘরে আগুনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে এর মধ্যেই পুড়ে যাওয়া ছাদ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে৷ ফলে শরীরে থাকা নাইলনের কাপড় গলে হাত পুড়িয়ে দেয়৷ ‘‘আমি মনে করেছিলাম, মরে যাব৷ তবে আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মমতাজ বেগম, ৩০
সেনারা তাঁর বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে বলেছিল৷ তখন মমতাজ তাঁদের দারিদ্র্যের কথা জানালে সৈন্যরা বলেছিল, ‘‘যদি তোমার কোনো অর্থ না থাকে, তাহলে আমরা তোমাকে হত্যা করব৷’’ এই বলে, সৈন্যরা তাঁকে ঘরে বন্দি করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ কোনোরকমে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে বের হয়ে দেখেন তাঁর তিন ছেলে মৃত, আর মেয়েকে প্রহার করা হয়েছে, তার রক্ত ঝরছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
ইমাম হোসেন, ৪২
মাদ্রাসায় পড়িয়ে ফেরার পথে তিন ব্যক্তি ছুরি নিয়ে তাঁর উপর হামলা করেছিল৷ পরের দিনই তিনি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন৷ এরপর তিনিও কক্সবাজারে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মোহাম্মদ জাবাইর, ২১
গ্রামের বাড়িতে এক বিস্ফোরণে তার শরীরের এই অবস্থা৷ ‘‘আমি কয়েক সপ্তাহ অন্ধ ছিলাম৷ কক্সবাজারের এক সরকারি হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম,’’ বলেছে সে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
8 ছবি1 | 8
প্রতিনিধি দলে থাকা আরেকজন রোহিঙ্গা শরণার্থী আবুল সৈয়দ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আমাদের কষ্ট, দুঃখ-দুর্দশার কথা পোপকে বলবো৷ আমাদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ অনেককে হত্যা করা হয়েছে৷ আমরা আমাদের নাগরিকত্ব ফেরত চাই৷ আমরা বার্মায় ফিরে যেতে চাই৷ আমাদের দাবি আছে, সেই দাবিগুলো তুলে ধরবো৷
সূত্র জানায়, পোপের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এবং শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি তুলে ধরা হবে৷
১৯৮৬ সালে পোপ জন পল (দুই)-এর সফরের ৩ দশক পর বাংলাদেশেএলেন পোপ ফ্রান্সিস৷ ভ্যাটিক্যানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে এসেছেন তিনি৷ বাংলাদেশের আর্চ বিশপ কার্ডিনাল ডি রোজারিও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘সফরে বিপন্ন রোহিঙ্গা ও জলবায়ু উদ্বাস্তুসহ দরিদ্র মানুষদের প্রাধান্য দেবেন পোপ৷''
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশ যাত্রা
নিজের দেশে সহিংসতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা৷ তবে জাতিসংঘের অনুরোধ সত্ত্বেও সীমান্তে কড়াকড়ি অব্যাহত রেখেছ বাংলাদেশ৷ আজও রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসী মনে করে মিয়ানমার৷
আশ্রয়ের সন্ধান
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের পরিকল্পিত হামলার জের ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর দমনপীড়ন শুরু করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী৷ ফলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের সীমান্তের দিকে ছুটছেন রোহিঙ্গারা৷ সর্বশেষ অস্থিরতায় ইতোমধ্যে প্রাণ গেছে একশ’র বেশি মানুষের৷
ব্যাপক উদ্বাসন
বাংলাদেশের সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার মাঝখান থেকে এক রোহিঙ্গা শিশুকে পার করছেন এক ব্যক্তি৷ মিয়ানমার সরকার দাবি করেছে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা সাতটি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে, একটি চেকপোস্ট এবং এক শহরের দুই প্রান্তে হামলা করেছে৷
ছবি: Getty Images/R.Asad
বৌদ্ধ শরণার্থীরা ছুটছে দক্ষিণের দিকে
নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার বৌদ্ধরাও নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় খুঁজছেন৷ রোহিঙ্গা মুসলমান এবং রাখাইন বৌদ্ধদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ ২০১২ সালে সেখানে রক্তাক্ত দাঙ্গা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রবেশ নিষেধ
বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা আশ্রয়প্রত্যাশী রোহিঙ্গাদের সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন৷ তবে এ সব বাধার মাঝেও তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন৷ বাংলাদেশ ইতোমধ্যে চারলাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
মানবিক সংকট
একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার কর্মী লিখেছেন: ‘‘অনেক রোহিঙ্গাকে আমরা অসুস্থ অবস্থায় পাচ্ছি৷ এর কারণ তাঁরা বাংলাদেশে প্রবেশের আগে দীর্ঘসময় সীমান্তে আটকে ছিলেন৷ অসুস্থদের মধ্যে নারী এবং শিশুদের সংখ্যা বেশি৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Alam
বাংলাদেশে স্বাগত নয়
কক্সবাজারের কুতুপালাং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া একদল রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের একটি দ্বীপে সরিয়ে নিতে চাচ্ছে যেটি বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ সময় পানির নীচে তলিয়ে থাকে৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
নো ম্যান’স ল্যান্ডের আটকে থাকা
পানির মধ্যে দিয়ে হেঁটে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশের চেষ্টা করছে রোহিঙ্গা শিশুরা৷ এই মুহূর্তে ছ’হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
7 ছবি1 | 7
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনাদের কোনো মন্তব্য থাকলে জানান নীচের ঘরে৷