1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঢাকায় পোপ ফ্রান্সিস

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩০ নভেম্বর ২০১৭

খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু পোপ ফ্রান্সিস তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন৷ তাঁর এই সফরে আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যু৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘রোহিঙ্গা সংকটে পোপ বাংলাদেশের পক্ষে আছেন৷''

Bangladesch Besuch Papst Franziskus
ছবি: Bangabhaban Press Wing

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসেন পোপ৷ তাঁকে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ৷ এরপর তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন৷ সন্ধ্যায় তিনি বঙ্গভবনে বক্তৃতা দেন৷ রাতে তাঁর সম্মানে দেওয়া রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একান্ত বৈঠকে অংশ নেয়ার কথা আছে তাঁর৷

পোপ তিন দিনের সফরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও আন্তঃধর্ম সমাবেশ, যুব সমাবেশ এবং খ্রিষ্টধর্মীয় সমাবেশে অংশ নেবেন৷

শুক্রবার সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলিত হবেন পোপ৷ এদিন বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভ্যাটিকান দূতাবাসে সাক্ষাতের পর আর্চবিশপ হাউসে তিনি আন্তঃধর্মীয় নেতা ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন৷

ইমতিয়াজ আহমেদ

This browser does not support the audio element.

আগামী ২ ডিসেম্বর সকালে মাদার তেরেসা হাউস সফরসহ খ্রিষ্টধর্মের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পোপ ফ্রান্সিস৷ বিকালে নটরডেম কলেজে যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন তিনি৷

মার্কিন ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের জাতীয় সাপ্তাহিক ‘অ্যামেরিকা'-য় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পোপ বাংলাদেশের সব গরিব মানুষের প্রতিনিধি হয়ে এসেছেন৷ তিনি বিপন্ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শরণার্থী, গার্মেন্টস শ্রমিক, জলবায়ু উদ্বাস্তুতে রূপান্তরিত মানুষের হয়ে কথা বলবেন৷ একইভাবে এশিয়ার ক্যাথলিক মুখপত্র ইউসিএ-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন, আধুনিক দাসত্ব, সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন ধর্মীয় নিপীড়ন পোপের সফরে প্রাধান্য পাবে৷''

বাংলাদেশের দিক থেকে পোপের সফরে রোহিঙ্গা বিষয়টিই সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ রোহিঙ্গাদের নিয়ে তিনি কী বলেন, মিয়ানমারে এড়িয়ে গেলেও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেন কিনা, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন বাংলাদেশের নাগরিকরা৷

আব্দুল সৈয়দ

This browser does not support the audio element.

বৃহস্পতিবার সকালে পোপ ফ্রান্সিস ঢাকায় আসার ঠিক আগমূহুর্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা এখন খুব বিপদে আছি৷ ঠিক এমন সময়ে পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশে আসছেন৷ মিয়ানমার থেকে এখানে তাঁর আসা অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে৷''

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘বহুদিন পর পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশে আসছেন৷ ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের নেতা হিসেবে তাঁর কাছে আমরা তার মনোভাব জানতে পারবো৷ তিনি মিয়ানমারে যাওয়ার আগে আমাদের সমর্থন দিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন৷ কাজেই তিনি আমাদের পক্ষেই আছেন৷''

মিয়ানমারের রাখাইনে গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস৷ ওই ঘটনার পর ২৭ আগস্ট তিনি সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে খবর এসেছে যে, আমাদের রোহিঙ্গা ভাই ও বোনদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে৷ আমি তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি৷ ঈশ্বরের কাছে তাঁদের রক্ষার জন্য প্রার্থনা করছি৷''

লালু মাঝি

This browser does not support the audio element.

কিন্তু মিয়ানমার সফরে রোহিঙ্গাদের কথা বললেও রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেননি পোপ ফ্রান্সিস৷ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেখা যাক, পোপ বাংলাদেশে এসে কী বলেন৷ আমাদের দিক থেকে তো আশা থাকবে তিনি যেন রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গাই বলেন৷ শোনা যাচ্ছে, মিয়ানমার সরকার নাকি তাঁকে রোহিঙ্গা শব্দটি বলতে বারণ করেছে৷ বললে নাকি মিয়ানমারে খ্রিষ্টানদের ওপর নির্যাতন হতে পারে৷ কিন্তু বাংলাদেশে তিনি হয়ত আরো স্পষ্ট করে বলবেন৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে তো একটা কনসেনসাস তৈরি হয়েছে৷ তারা তো রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন৷ তাই বাংলাদেশ আশা করছে পোপ কোনোভাবে ঘুরিয়ে নয়, সরাসরি রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থানের কথা জানাবেন৷''

পোপের সফরসূচিতে আগে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দেখা বা কথা বলার কোনো কর্মসূচি না থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা অন্তর্ভূক্ত হয়েছে৷ শুক্রবার দুপুরের পর পোপ ফ্রান্সিস রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ঢাকায় কথা বলতে পারেন৷ এ জন্য বাংলাদেশে অশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে ঢাকা আসবে৷ তাঁদের আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা (আইওএম)-এর তত্ত্বাবধানে ঢাকা আনা হচ্ছে৷ জানা গেছে, শুক্রবার বিকেল ৫টার পর কাকরাইলের আর্চ বিশপ হাউজের মাঠে শান্তির জন্য আন্তঃধর্মীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন পোপ৷ এখানেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে তিনি কথা বলতে পারেন৷ এই দিন সকাল ১০টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে খ্রিষ্টধর্মীয় উপাসনা ও যাজকদের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন পোপ ফ্রান্সিস৷ ওই অনুষ্ঠান শেষেও রোহিঙ্গাদের কথা তিনি শুনতে পারেন৷

পোপের সঙ্গে দেখা করতে যে ১৫ জন রোহিঙ্গা ঢাকায় আসছেন, তাঁদের মধ্যে দু'জনের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছে ডয়চে ভেলে৷ তাঁরা বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে জানান, ‘‘আমরা এখন ঢাকার পথে আছি৷ পোপ আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন৷ তাই আইওএম আমাদের ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছে৷''

তাঁদের মধ্যে লালু মাঝি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আমাদের নির্যাতনের কথা বলব৷ আমরা বার্মায় ফিরে যেতে চাই৷ তাই আমাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে৷ নিরাপত্তা দিতে হবে৷''

প্রতিনিধি দলে থাকা আরেকজন রোহিঙ্গা শরণার্থী আবুল সৈয়দ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আমাদের কষ্ট, দুঃখ-দুর্দশার কথা পোপকে বলবো৷ আমাদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ অনেককে হত্যা করা হয়েছে৷ আমরা আমাদের নাগরিকত্ব ফেরত চাই৷ আমরা বার্মায় ফিরে যেতে চাই৷ আমাদের দাবি আছে, সেই দাবিগুলো তুলে ধরবো৷

সূত্র জানায়, পোপের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এবং শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি তুলে ধরা হবে৷

১৯৮৬ সালে পোপ জন পল (দুই)-এর সফরের ৩ দশক পর বাংলাদেশেএলেন পোপ ফ্রান্সিস৷ ভ্যাটিক্যানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে এসেছেন তিনি৷ বাংলাদেশের আর্চ বিশপ কার্ডিনাল ডি রোজারিও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘সফরে বিপন্ন রোহিঙ্গা ও জলবায়ু উদ্বাস্তুসহ দরিদ্র মানুষদের প্রাধান্য দেবেন পোপ৷''

প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনাদের কোনো মন্তব্য থাকলে জানান নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ