1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঢাকায় নগর দারিদ্র্য

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ নভেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশে রাজধানীমুখী মানুষের সংখ্যা কমছেনা৷ যে কারণে নগর-দারিদ্র্যও কমছে না৷ নগর গবেষক এবং জনসখ্যা বিজ্ঞানীরা মনে করেন, গ্রামের মানুষ এখনো মনে করছে শহরে কাজের সুযোগ বেশি তাই শহরে এসে নতুন করে নগর-দারিদ্র্য বাড়াচ্ছে৷

ঈদে বাড়ি ফেরা
ছবি: dapd

বিশ্বব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী, প্রতি বছর কাজের জন্য গ্রাম থেকে ঢাকায় আসছে পাঁচ লাখ মানুষ৷ তাদের তিন-চতুর্থাংশই বস্তিতে বসবাস করেন৷ সরকারি জমিতে আগে তারা ঘর (বস্তি) তুলে বসবাস করলেও এখন সে সুযোগ তেমন নেই৷ এ কারণে রাজধানীতে ব্যক্তি মালিকানার বস্তি গড়ে উঠেছে৷ এসব বস্তিতে ভাড়া বেশি, কিন্তু সুযোগ-সুবিধা কম৷ তারপরও গ্রামের মানুষ ঢাকায় আসছে৷ নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘ঢাকায় প্রতিবছর সাত লাখ নতুন মানুষ যুক্ত হচ্ছে৷ এবং এদের শতকরা ৯০ ভাগই দরিদ্র৷ তারা নানা কারণে গ্রামে সহায়-সম্বল হারিয়ে ঢাকামূখী হয় কাজের জন্য, আয়ের জন্য৷''

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং জনসংখ্যা বিজ্ঞানী অধ্যাপ ড. এ কে এম নুর-উন নবী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকা শহরে গ্রামের মানুষ আসা কিছুটা কমেছে, কিন্তু জনস্রোত থামেনি৷ আগে গড়ে প্রতিদিন ঢাকায় ২৪শ' নতুন লোক যোগ হতো, এখন যোগ হয় ১৭শ'৷ সংখ্যায় কমছে৷ কিন্তু প্রবণতা কমেনি৷ আর যারা আসেন তাদের বড় অংশই নিম্নবিত্ত৷ তারা মনে করেন, ঢাকায় কাজ পাওয়া যাবে৷''

ড. নজরুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

স্বাধীনতার পর যেমন ছিল এখন ঢাকা শহরের লোকসংখ্যা তার চারগুণ হয়ে প্রায় ২ কোটিতে পৌঁছেছে৷ ২০৫০ সাল নাগাদ লোকসংখ্যা সাড়ে তিন কোটির বেশি হতে পারে বলে আভাস রয়েছে৷ এদিকে গ্রামীণ দরিদ্রের সংখ্যার তুলনায় শহুরে দরিদ্রের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ ১৯৯১ থেকে ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে শহুরে দরিদ্রের সংখ্যা ৬০ লাখ থেকে বেড়ে ৮০ লাখ হয়েছে৷ আর একই সময়ে গ্রামীণ দরিদ্রের সংখ্যা কমেছে৷ গ্রামীণ দরিদ্রের সংখ্যা ৫ কোটি ৫০ লাখ থেকে কমে ৪ কোটি ৬০ লাখ হয়েছে৷

২০১৬ সালে বিশ্বব্যাংক পরিচালিত আরবান স্লাম সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে বস্তিবাসীদের প্রতি ১০ জনে ৯ জনের জন্ম ঢাকার বাইরে৷ এর মধ্যে এক পঞ্চমাংশ দরিদ্র৷ নগর গবেষক অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন ঢাকা শহরের ৪০ ভাগ মানুষ বস্তিতে বসবাস করেন৷ ঢাকায় বস্তির জায়গাও আর নাই৷ তাই ঢাকার পাশে গাজীপুরসহ আরো কয়েকটি এলাকায় বস্তি সম্প্রসরাতি হচ্ছে৷ ঢাকার পাশের উপ শহরগুলো বস্তির শহরে পরিণত হচ্ছে৷ অনেকে সেখানেই কাজ করেন৷ আবার কেউ কেউ ঢাকায় কাজ করলেও থাকেন গাজীপুর বা ঢাকার আসপাশে উপ শহরের বস্তিতে৷''

এই পরিস্থিতি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শহুরে দরিদ্রদের পরামর্শ দানকারী সংগঠন ‘কোয়ালিশন'-এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রেবেকা সান-ইয়াত একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,‘‘শহরগুলোতে আয়ের উৎস রয়েছে৷ আপনি যদি শহরে অবকাঠামো তৈরি করেন, তবে কিভাবে ভাবতে পারেন যে গ্রামের লোকজন শহরে আসবে না? যদি গ্রামে আয়ের উৎস এবং মিল-কারখানা থাকতো তবে লোকজনকে ঢাকায় আসতে হতো না৷''

ড. এ কে এম নুর-উন নবী

This browser does not support the audio element.

তবে অধ্যাপক ড. এ কে এম নুর উন নবী বলেন, ‘‘এটা উন্নয়নের সমস্যা৷ গ্রামে যে উন্নয়ন হচ্ছে না, অবকাঠামো হচ্ছেনা তা কিন্তু ঠিক নয়৷ গ্রামে কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হচ্ছে৷ কিন্তু কেউ কেউ তাতে সন্তুষ্ট নয়৷ ঢাকায় একজন রিকশা চালকেরও আয় অনেক৷ তাই গ্রামের নদী ভাঙা বা অন্য কারণে বিপদগ্রস্থ মানুষ ঢাকায় আসছে৷ এখন গ্রামে কৃষি শ্রমিকও তেমন আর পাওয়া যায় না। তারা বেশি আয়ের জন্য ঢাকা আসেন৷ তাদের কাছে কষ্টের বস্তিজীবন আয়ের বিবেচনায় সহনীয়৷''

অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘গ্রাশের তুলনায় ঢাকায় গরিব আবাসন, শিক্ষা এবং চিকিৎসা সুবিধা সংকুচিত৷ তারপরও তারা আসছেন, কারণ, তারা জানেন, ১০ বছর কষ্ট করে ঢাকা থাকতে পারলে তার অর্থিক ভিত শক্ত হবে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘নগরে যে দরিদ্রের সংখ্যা বাড়ছে তারা নুতন৷ আগে যারা এসেছেন তারা কিন্তু দরিদ্র বা অতি দরিদ্র নয়৷ এর সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে চাপ তা-ও ঢাকাকে চাপের মুখে রাখছে৷ তাই ঢাকার পরিস্থিতি খারাপই বলতে হবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ