ব্রিটিশ এক কোম্পানির সঙ্গে সম্প্রতি একটি সমঝোতা চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ৷ ফলে ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রার সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ স্থাপিত হবে৷
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ছবি: Ministry of Railways
বিজ্ঞাপন
২৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেললাইন স্থাপনের কাজ ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা৷
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, ‘‘চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানটি নকশা প্রণয়ন, অর্থায়ন, লাইন নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে৷ এ কাজে সহযোগিতা করবে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশন৷’’
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বলছে, ‘‘এই রেলপথের মাধ্যমে বছরে প্রায় ২০ লাখ ইউনিট কনটেনার পরিবহন সম্ভব হবে৷’’ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ‘‘দক্ষিণ অঞ্চলের জন্য এ রেললাইনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে বরিশাল বিভাগ প্রথমবারের মতো রেল সংযোগের আওতায় আসবে৷’’ এটি রেল খাতের সবচেয়ে বড় প্রকল্প বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷
উল্লেখ্য, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নে রামনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে এই সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠছে৷ এতে ব্যয় হবে ১,১৪৪ কোটি টাকা৷
তবে জাহাজ ভেড়ার অবকাঠামো নির্মিত হয়ে যাওয়ায় আগেই সেখানে জাহাজ ভিড়তে শুরু করেছে৷ কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৩ আগস্ট পায়রা বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম উদ্বোধন করেন৷
এদিকে, বন্দরের মূল অবকাঠামো নির্মাণ, তীর রক্ষা বাঁধ ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণে কয়েকদিন আগে চীনের দু'টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে সরকার৷
জেডএইচ/ডিজি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের মূলকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর
বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দরের অবস্থান চট্টগ্রামে৷ সে কারণে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরটিকে বলা হয় বন্দর নগরী৷ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ঘিরে চোরাচালানি, দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও কাজ এগিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: cpa.gov.bd
প্রধান সমুদ্র বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর৷ প্রতিবছর কয়েক লাখ কন্টেইনার এই বন্দর থেকে পরিবহন হয়৷ বন্দর কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর থেকে কন্টেইনার পরিবহনের পরিমাণ ছিল ৫,৫৬,৭৮১ টি৷
ছবি: gemeinfrei
বহু পুরনো বন্দর
কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত এই বন্দর চালু হয়েছিল উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনামলের শুরুর দিকে৷ উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‘‘ইংরেজ শাসনের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সেলামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলি নদীতে কাঠের জেটি নির্মাণ করেন, পরে ১৮৬০ খৃষ্টাব্দে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মিত হয়৷’’
ছবি: Getty Images
পৃথিবীর নব্বইতম ব্যস্ত বন্দর
সমুদ্র সংক্রান্ত পত্রিকা লয়েড-এর প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর হচ্ছে পৃথিবীর ৯০তম ব্যস্ত সমুদ্র বন্দর৷ প্রতিনিয়ত এই বন্দরের চাহিদা বাড়ছে৷ বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্য পোশাক খাত অনেকটা এই বন্দরের উপরই নির্ভরশীল৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: imago
রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতি
রাজনৈতিক অস্থিরতায় মাঝেমাঝেই ক্ষতির শিকার হয় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর৷ কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী, কনটেইনার পরিবহনের প্রায় ৯৫ শতাংশ সড়কপথ এবং ৫ শতাংশ রেলপথে হয়ে থাকে৷ হরতাল, অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পণ্য পরিবহনে বিঘ্ন ঘটে৷ এতে করে আমদানি পণ্য যেমন বন্দরে আটকে যায়, তেমনি রপ্তানির জন্য পণ্য জাহাজে তোলা যায় না৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
চোরাচালান, দুর্নীতি
চোরাচালানের জন্য মাঝেমাঝেই চট্টগ্রাম বন্দর পত্রিকার পাতায় স্থান করে নেয়৷ এছাড়া চুরি, ডাকাতির ঘটনাও ঘটে৷ বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture-alliance/dpa
সতর্ক নিরাপত্তা বাহিনী
চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা রক্ষায় অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে নিয়োজিত রয়েছে কোস্টগার্ড৷ গত বছর এক সংবাদ সম্মেলনে কোস্টগার্ড দাবি করে, আগের বছরের তুলনায় ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে নৌ-দস্যুতা ৫০ ভাগ কমেছে৷ ২০১২ সালে ৫৮৬ কোটি, ২০১১ সালে ৩০২ কেটি টাকার চোরাচালানি পণ্য আটক করা হয়েছে বলেও ফেব্রুয়ারি মাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: REUTERS
ভারত, ভুটানের আগ্রহ
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারে প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং ভুটানের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে৷ এই আগ্রহের বাস্তবায়ন সম্ভব হলে বাংলাদেশের বাড়তি অর্থ আয়ের একটি উপায় তৈরি হবে৷ তবে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
প্রয়োজন আরো নৌবন্দর
চট্টগ্রাম এবং মংলায় সমুদ্রবন্দর চালু থাকলেও আরো একটি সমুদ্র বন্দরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বাংলাদেশে৷ এই চাহিদার কথা বিবেচনা করে নভেম্বরে বাংলাদেশের পটুয়াখালিতে পায়রা সমুদ্র বন্দর স্থাপনের কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: dapd
গতি মন্থর
তবে পায়রা সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হলেও কাজ আগাচ্ছে খুব ধীর গতিতে৷ বিশেষ করে বন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় জমিই এখনো পুরোপুরি অধিগ্রহণ সম্ভব হয়নি৷ আর বন্দরের সংযোগ সড়কও তৈরি হয়নি৷ ফলে কবে নাগাদ তৃতীয় সমুদ্র বন্দর চালু হবে, তা এখনো জানা যাচ্ছে না৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Getty Images
তথ্যের ঘাটতি
উল্লেখ, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের আনুষ্ঠানিক ওয়েবসাইটে (http://cpa.gov.bd/portal/) তথ্যের বেশ ঘাটতি রয়েছে৷ বন্দরে পণ্য পরিবহন সংক্রান্ত হালনাগাদ কোনো তথ্য সাইটটিতে নেই৷ সর্বশেষ ২০১১ সালের বিভিন্ন পরিসংখ্যান রয়েছে সাইটটিতে৷