1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চরমোনাই পীরের ভাইয়ের বিতর্কিত মন্তব্য

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৪ জানুয়ারি ২০১৭

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির ও চরমোনাই পীরের ভাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের একটি বক্তব্য সম্প্রতি বেশ সমালোচিত হচ্ছে৷ গত বছরের মে মাসে ঢাকায় এক সমাবেশে তিনি বক্তব্যটি দিয়েছিলেন৷

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবিছবি: AFP/Getty Images

তবে নতুন বছরের শুরুতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের নতুন বই প্রকাশিত হওয়ার পর বক্তব্যটি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে৷ কারণ ফয়জুল করীম তাঁর বক্তব্যে যা দাবি করেছিলেন নতুন পাঠ্যপুস্তকে তার প্রতিফলন কিছুটা হলেও পাওয়া গেছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন দলটির প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমেদ আবদুল কাইয়ূম৷ ইউটিউব এবং টিউবচপ নামে সামাজিক যোগাযোগের দু'টি মাধ্যমে ফয়জুল করীমের বক্তব্যটি রয়েছে৷ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের ভাই বলে জানা গেছে৷

ফয়জুল করীম তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘‘১৯১১ সালে বাংলাদেশের রাজধানীর বুকে যে ইউনিভার্সিটির প্রস্তাব করা হয়েছিল একমাত্র হিন্দুদের বিরোধিতার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি৷ সেই ইউনিভার্সিটি স্থাপন করা হয়েছিল ১৯২১ সনে নবাব সলিমুল্লাহর প্রস্তাবে৷ কোনো খ্রিষ্টান, কোনো হিন্দু বা নাস্তিকদের প্রস্তাবে এই ইউনিভার্সিটি করা হয়নি৷ কাজেই ইউনিভার্সিটি মুসলমানদের ইউনিভার্সিটি, এখানে কোনো নাস্তিক থাকতে পারবে না৷’’

এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন সিলেবাসে যে বই আছে তাতে দেব-দেবীর নামে কোরবানি করে খাওয়া বৈধ বলা হয়েছে৷ এছাড়া ‘এই লাল গরুটা’ কবিতার মধ্যে গরুকে দেবী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি৷ 

ফয়জুল করীম বলেছেন, যেই সিলেবাসের মধ্যে নবী (সা:) এর জীবনী থাকবে না, ওমরের জীবনী থাকবে না, যেখানে এমন মহৎ লোকদের জীবনী থাকবে না – এরকম সিলেবাসের বই বাংলাদেশে পড়ানো হবে না, এমনকি পড়তে দেয়া হবে না৷ 

ঐ ভিডিওতে সিলেবাস পরিবর্তনের দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে আরো অনেক কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল৷

চরমোনাই পীরের মুখপাত্র যা বললেন

Ahmed abdul kaiyum - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

এ প্রসঙ্গে চরমোনাই পীরের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি৷ তবে শুক্রবার তাঁর পক্ষে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেন দলের প্রচার সম্পাদক আহমেদ আবদুল কাইয়ূম৷ তিনি দাবি করেন, ‘‘পীর সাহেব ঐ সমাবেশে দাবি তুলেছিলেন বলেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের নতুন বইয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ এ জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছি৷ নির্বাচন কমিশন নিয়ে সংলাপে আমরা যখন রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছি সেখানে রাষ্ট্রপতিকেও ধন্যবাদ জানিয়েছি৷ তবে আমাদের দাবি এখনো পুরোটা মানা হয়নি৷''

এই বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) মুসলমানদের – হিন্দু, খ্রিষ্টান বা নাস্তিকদের নয়৷ এটা বলতে ফয়জুল করীম কী বোঝাতে চেয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল কাইয়ূম বলেন, ‘‘তিনি বুঝাতে চেয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মুসলমান৷ তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় মুসলিম চিন্তাধারা থেকে স্থাপন করেছেন৷ ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ এখানে মুসলমানিত্ব শিখবে৷ এখানে নাস্তিকতার জায়গা হবে না৷''

ডয়চে ভেলে: সিলেবাসে কি নাস্তিক্যবাদী পড়াশোনার ব্যবস্থা আছে?

আবদুল কাইয়ূম: সিলেবাস তো আমরা দেখিনি৷ তবে এখানে মাদ্রাসার ছাত্রদের কম সুযোগ দেয়া হয়৷ হিজাব পরায় বাধা দেয়া হয়৷ নাস্তিক্যবাদী আস্ফালন করা হয়৷

তাহলে এখানে শুধু মুসলমানরাই পড়বে?

- না অন্য ধর্মের লোকরাও পড়বে৷ কিন্তু সংখ্যালঘুদের শিক্ষানীতি চলবে না৷ তারা আলাদাভাবে তাদের ধর্ম পড়বে৷

পাঠ্যপুস্তকে হিন্দু বা অন্য ধর্মের মহাপুরুষদের জীবনী না থাকলে তারা কেন মুসলিম মহাপুরুষদের জীবনী পড়বে?

Farid uddin Masud - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

- তাদের পড়ার দরকার নাই৷ তাহলে আমরা সব ধর্মের জন্য আলাদা আলাদা সিলেবাস ও শিক্ষা ব্যবস্থা চাই৷ একসঙ্গে পড়ার দরকার নাই৷

শোলাকিয়ার ইমামের প্রতিক্রিয়া

শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোনো সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানতো কোনো একক ধর্মের অনুসারীদের হতে পারে না৷ তবে বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে৷ আমাদের হয়ত অনেকেই জানেন না যে রাজা রামমোহন রায় মাদ্রাসায়ও পড়েছেন৷''

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পবিত্র কোরান শরিফে ইহুদি ধর্মের হযরত মুসা, খ্রিষ্টান ধর্মের হযরত ইসার নাম রয়েছে৷ তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে৷ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে কোরান শরীফে ‘জারকিফ' শব্দ দিয়ে বৌদ্ধদের বোঝানো হয়েছে৷ তাই সাধারণ পাঠ্যপুস্তকে অন্য ধর্মের যারা অনুসরণীয় তাঁদের জীবনী থাকতে বাধা কোথায়? যা ভালো তা নিতে দোষের কিছু নেই৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘সাধারণ শিক্ষায় হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান – এ সব ধর্মীয় ভেদ থাকতে পারে না, এটা কূপমন্ডূকতা৷ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে যদি নাস্তিকতা থাকেও তারপরও সব শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠানকে নাস্তিক্যবাদী বলা অনুচিত৷''

সৈফুল আলম ভুঁইয়া

This browser does not support the audio element.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া

এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. সফিউল আলম ভূঁইয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন প্রতিষ্ঠা হয়, তখন এটা কোনো সাম্প্রদায়িক চিন্তা থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়নি৷ নবাব সলিমুল্লাহসহ আরো যাঁরা এটা প্রতিষ্ঠার পেছনে কাজ করেছেন, তাঁরা কোনো সাম্প্রদায়িক চিন্তার মানুষ ছিলেন না৷ তাঁরা বাংলাদেশের সবার উচ্চশিক্ষার জন্য এটা প্রতিষ্ঠা করেন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্তচিন্তার জায়গা৷ এখানে সব ধরনের জ্ঞানের চর্চা হয়৷ এখানে সব ধরনের প্রশ্ন করা যায়৷ আর এই প্রশ্নের মধ্য দিয়েই জ্ঞান বিকশিত হয়৷ কোনো সাম্প্রদায়িক বা কূপমন্ডূকতার জায়গা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই৷’’ সফিউল আলম বলেন, ‘‘শুরু থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনগ্রসর শ্রেণি, সংখ্যালঘুদের অধিকারের কথা বলেছে৷ আর তা বলেই যাবে৷’’

প্রতিবেদনটি আপনার কেমন লাগলো? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ