নবজাতক চুরির ঘটনা নতুন নয় বাংলাদেশে৷ গত ছয় মাসে পাঁচটি শিশু চুরি হয়ে যাওয়ার পরও চোর চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেয়া হয়নি৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে না পারলে শিশু চুরির ঘটনা বন্ধ করা কঠিন৷
বিজ্ঞাপন
গত বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে রাজধানী ঢাকার প্রধান সরকারি হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২১২ নম্বর লেবার ওয়ার্ড থেকে চুরি হয়ে যায় রুনা বেগমের দুটি নবজাতক জমজ শিশুর একটি৷ মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লার বাসিন্দা রুনা বেগম (২৭) মঙ্গলবার ভোরে দুটি জমজ পুত্রের মা হন৷ কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়৷
সিসি ক্যামেরায় এই চুরির দৃশ্য ধরা পড়লেও, পুলিশ শুক্রবার পর্যন্ত চোরকে আটক বা নবজাতককে উদ্ধার করতে পারেনি৷ তাদের পরিবারের সদস্যরা এখন চুরি যাওয়া শিশুটির জন্য হাসপাতালেই অবস্থান করছেন৷
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে স্পষ্ট যে, একজন নারী শিশুটিকে নিয়ে গেছে৷ রুনার স্বামী কাওসার আহমেদ, যিনি নৈশ প্রহরীর কাজ করেন, অভিযোগ করেন যে এই চুরির সঙ্গে হাসপাতালের কতিপয় নিরপত্তা প্রহরী জড়িত৷ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তাঁরা সিসি ক্যামেরারর ফুটেজ পুলিশকে দিয়েছেন চোর আটক এবং শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য৷ অন্যদিকে পুলিশ জানায় যে, তারা অপরাধীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছেন৷ এছাড়া এই ঘটনার পর হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ও নবজাতক চুরির ঘটনা আগেও ঘটেছে৷ গত ২৩শে এপ্রিল এই ওয়ার্ড থেকে আরো একটি শিশু চুরি হয়৷ ১৮ই মার্চ নাদিম নামের এক শিশুচোর হাতেনাতে ধরাও পড়ে৷ নাদিম পেশাদার শিশুচোর চক্রের সদস্য বলে জানায় পুলিশ৷ এর আগে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে আরো দুটি শিশু চুরি হয় হাসপাতাল থেকে৷ ২০১০ সালেও হাসপাতালের ওই ওয়ার্ড থেকে একটি নবজাতক চুরি হয়৷ অথচ এ সব ঘটনার কার্যকর কোনো তদন্তই হয়নি এখনও পর্যন্ত৷ অতীতে চুরি হওয়া শিশু উদ্ধারের কোনো নজির নেই এই হাসপাতালে৷
‘শিশু কাঁদলে, তাকে কোলে তুলে নিন’
বাচ্চা কাঁদলে কোলে তুলে নেয়াটাই স্বাভাবিক, বিশেষ করে উপ-মহাদেশের বাবা-মা এবং পরিবারের মানুষদের কাছে৷ এ নিয়ে তাঁদের মনে কোনো প্রশ্ন নেই৷ কিন্তু জার্মানিতে? চলুন বিস্তারিত জানা যাক এই ছবিঘর থেকে৷
ছবি: Fotolia/st-fotograf
শিশুরা কাঁদে কেন?
যে কোনো শিশুই চিৎকার করে কেঁদে তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর জানিয়ে দেয়৷ তারপরও কারণে-অকারণেই ওরা কাঁদে৷ এই সুন্দর ভুবনের সাথে মানিয়ে নিতে ওদের যেমন কিছুটা সময় লাগে, তেমনই নতুন মা-বাবারও লাগে খানিকটা সময় সব কিছু গুছিয়ে নিতে৷ যা খুবই স্বাভাবিক৷
ছবি: Fotolia/S.Kobold
আমার কান্না কেউ কি শুনছে না?
মাঝে মাঝে শিশুরা চিৎকার করে ওঠে, বিশেষ করে কাছাকাছি অনেকক্ষণ কোনো শব্দ শুনতে না পেলে৷ অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই হয়ত তখন কাঁদে তারা৷ মজার ব্যাপার, ঐ মুহূর্তে কেউ কাছে গিয়ে কথা বললে বা কোলে তুলে নিলে সাথে সাথেই শিশুদের কান্না থেমে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাঙালি বাবা-মায়ের সন্তান
দেশে সন্তান জন্মের পর থেকেই সে বাচ্চা কোলে কোলে থাকে৷ বাচ্চা কাঁদুক আর না কাঁদুক৷ নতুন মা সারাক্ষণই তাঁর শিশুটিকে নিয়ে ব্যস্ত আর সেই শিশু সর্বক্ষণই পেয়ে থাকে মায়ের শরীরের উষ্ণতা৷ শিশুকে কোলে নেওয়ার জন্য বাবা-মা ছাড়াও আত্মীয়স্বজন থাকেন৷ এছাড়া, বাচ্চাকে শুধু দেখাশোনা করার জন্য আলাদা লোকও অনেক সময় রাখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/Joker
জার্মান শিশু
জার্মানিতে কোনো শিশু কাঁদলেই চট করে কোলো তুলে নেওয়া হতো না কয়েক বছর আগ পর্যন্তও৷ শিশু কাঁদলে ওকে শুইয়ে রাখা হতো৷ এক সময় সেই ছোট্ট শিশু কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পরতো৷ কারণ, মা সারাক্ষণ বাচ্চাকে কোলো নিলে বাড়ির অন্য কাজ কে করবে? রাতে প্রতিদিন ঘড়ি ধরে একই সময়ে বাচ্চাকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হতো ঘর অন্ধকার করে৷ বলা বাহুল্য জার্মানিতে গ্রীষ্মকালে প্রায় ১১টা পর্যন্ত বাইরে সূর্যের আলো থাকে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Timothy Clary
সময় পাল্টেছে, বদলেছে চিন্তাধারা
একদিকে যেমন জার্মানির মতো উন্নত দেশগুলিতে প্রযুক্তি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশেরও কিছু বিষয় গ্রহণ করতে শুরু করেছে তারা৷ শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. গেন কামেদা বলেন, পশ্চিমের সংস্কৃতিটা এমন যে শিশুরা মায়ের শরীরের উষ্ণতা কম পায়, কারণ এ দেশে বাচ্চারা বিছানায় বেশি সময় থাকে আর এটাই হয়ত শিশুদের রাতে কান্নাকটি করার বড় কারণ৷
ছবি: Yuri Arcurs/Fotolia
নতুন বাবা-মা
নতুন মা-বাবার নানা প্রশ্ন, শিশুটির কান্নার কারণ তাঁরা বুঝতে পারেন না৷ ক্ষুধা, শরীর খারাপ, ক্লান্ত নাকি আদর, কি চায় বেবিটি? আসলে শরীরের উষ্ণতা পেলে শিশুরা সব কিছুই ভুলে যায়, যদি না বড় কোনো শারীরিক কষ্ট থেকে থাকে, বলেন ডা. কামেদা৷ তাঁর পরামর্শ, পিতা-মাতা হলে অনেককিছুই বাদ দিতে হয়, তাই বাইরে গেলে শিশুকে কোলে করে সঙ্গে নেবার চেষ্টা করবেন – যাতে শিশুটি শরীরের উষ্ণতা পায়৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ডাক্তারের পরামর্শ
নতুন বাবা-মায়ের জন্য ডাক্তার কামেদার আরো পরামর্শ, শিশুর কাছাকাছি থাকুন, শিশুকে সময় দিন, কোলে তুলে নিন৷ অল্প কিছুদিন পরেই দেখবেন, শিশু শুধু কাঁদেই না, বরং খুব শীঘ্রই তারা হাসতে শিখবে, হাসাবে মা-বাবাকেও৷
ছবি: Fotolia/st-fotograf
7 ছবি1 | 7
অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালে অস্থায়ী আয়াদের একটি অংশ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে শিশুচোর চক্রকে সহায়তা করে৷ তারা ওষুধ পাচারসহ নানা অপরাধের সঙ্গেও জড়িত৷ এই সব আয়ারা হাসপাতালের কোনো বৈধ কর্মচারী নন৷ ইউনিয়ন নেতাসহ হাসপাতালের প্রভাবশালী কর্মকর্তারা তাদের হাসপাতালে কাজ করার সুযোগ দেন৷ তারা অর্থের বিনিময়ে রোগিদের সহায়তা করে৷ আবার প্রভাবশালীরা তাদের নানা অবৈধ কাজেও ব্যবহার করে থাকেন৷
মায়ের দুধের নানা গুণ
১লা আগস্ট ছিল আন্তর্জাতিক মাতৃদুগ্ধ পান দিবস৷ এই দিবস পালন করা শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর থেকেই৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, মায়ের দুধ শিশুদের জন্য ম্যাজিক পানীয়৷ বিস্তারিত জানতে এই ছবিঘরটি দেখুন৷
শিশু পেটে আসার পর থেকেই মায়ের বুকে দুধ তৈরি হওয়া শুরু হয়৷ এর জন্য সাহায্য করে প্রোজেস্টেরন এবং প্রোলাকটিন নামের দুটি হরমোন৷ এই দুধ শিশুকে জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পান করানো যায়৷ তবে শিশু কতটা দুধ পাবে তা নির্ভর করে প্রথম স্তন্যপানের ওপর৷ অর্থাৎ শরীরের প্রোলাকটিন হরমনই মায়ের নার্ভ সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেভাবেই প্রয়োজনীয় দুগ্ধ উৎপাদন করে৷
ছবি: Svetlana Fedoseeva - Fotolia.com
শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভালো
মায়ের দুধ শিশুদের শরীরে ম্যাজিকের মতো কাজ করে৷ শিশুর জন্মের প্রথম সপ্তাহে মায়ের দুধ পান করলে তা বাচ্চাকে অন্ত্র সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং হজম করতে ও দুধ পান করার সময় পেটে বাতাস জমা থেকে রেহাই পেতেও সহায়তা করে৷ মায়ের দুধ শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অ্যালার্জির বিরুদ্ধে কাজ করে৷ তাছাড়া মায়ের দুধ পান করার কারণে শিশুর মুখের তালু এবং মাড়ি শক্ত হয়৷
ছবি: Fotolia/Marcito
মায়ের দুধে কী আছে?
মায়ের দুধে কী আছে তার হিসেব অনেক লম্বা৷ এতে রয়েছে মিনারেল, ভিটামিন, ফ্যাট, পানি ইত্যাদি৷ মায়ের দুধে বিশেষ এক রকম ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা শিশুর চোখের জ্যোতি বাড়াতেও সাহায্য করে থাকে৷
ছবি: Getty Images
শালদুধ
সদ্য প্রসূতির স্তন থেকে বের হওয়া প্রথম দুধ৷ হলদেটে রং-এর এই দুধ পরিমাণে কম হলেও এতে থাকে শ্বেতকণিকা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা৷ শালদুধ শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারি, যা শিশুর জীবনের প্রথম টিকা হিসাবেও কাজ করে৷ শালদুধে থাকে আমিষ ও প্রচুর ভিটামিন-এ৷ শালদুধ শিশুর পেট পরিষ্কার করে এবং শিশুর জন্ডিস হবার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়৷
ছবি: imago/Xinhua
মায়ের দুধই কি যথেষ্ট?
নবজাতকের মা এক লিটারের মতো দুধ উৎপাদন করে থাকেন৷ শিশুরা সাধারণত প্রতিবার ২০০ থেকে ২২৫ মিলিগ্রাম দুধ পান করে৷ তবে একজন শিশুর যতটা দুধ প্রয়োজন শিশু চাইলে ঠিক ততটুকুই পায়৷
ছবি: Royal Holloway, University of London
কত বয়স পর্যন্ত স্তন্যপান করা উচিত
মায়ের দুধ শিশুদের আদর্শ পুষ্টিকর খাবার৷ তবে এ দুধ কতদিন শিশু পান করবে – সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জার্মানির জাতীয় মাতৃদুগ্ধ পান কমিশনের পরামর্শ: কমপক্ষে ছয়মাস মায়ের দুধ পান করানো উচিত৷ তবে চার মাসের পর থেকে নবজাতকদের মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবারও দেয়া যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দেশ ভেদে রয়েছে পার্থক্য
মায়ের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে একেক দেশে একেক রীতি প্রচলিত৷ যেমন মধ্য আফিকার ‘বফি’-তে সাধারণত সাড়ে চার বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করানো হয় বাচ্চাদের৷ অবাক করার মতো হলেও অনেক মা ১৬,০০০ লিটার দুধ উৎপাদন করে থাকেন৷ তবে সারা বিশ্বে গড়ে মায়েরা ৩০ মাস পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ পান করিয়ে থাকেন৷
ছবি: imago/blickwinkel
অন্য নারীর নয়, মায়ের দুধ চাই
বহুদিন আগে কিন্তু শিশুদের অন্য নারীর বুকের দুধ পান করানো হতো৷ পরবর্তীতে ১৮ শতক থেকে একটি প্রচারাভিযান চালানো হয়, যেখানে বলা হয় যে, মা-রাই যেন শিশুকে নিজের বুকের দুধ পান করান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রকাশ্যে দুধ পান করানো
মা তাঁর শিশুকে প্রকাশ্যে দুধ পান করাচ্ছেন – এটা কিছু দেশের মানুষের কাছে তেমন পছন্দ নয়৷ তাই সেসব দেশে মা শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছে এমন ছবি কেউ ফেসবুকে দিলে সেগুলো ফেসবুক থেকে মুছে ফেলা হয়৷
ছবি: Getty Images
শুধু শিশু নয়, মায়েরও উপকার হয়
যে মা তাঁর শিশুকে বুকের দুধ পান করান সেই মায়ের জরায়ু, স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়৷ তাছাড়া দুধ খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে সন্তান ও মায়ের মধ্যে তৈরি হয় এক নিবিড় সম্পর্ক৷
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো চক্রের সহায়তায় এখানে একের পর এক শিশু চুরির ঘটনা ঘটছে৷ সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্যে ‘শিশুচোর' নারীর অবাধ ও সাবলীল বিচরণে তাঁদের এমন অভিযোগের সত্যতাও মেলে৷
হাসপাতালের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘‘হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্যই সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে৷ তিনটি মনিটরে ১৬টি করে ক্যামেরার মাধ্যমে সব দৃশ্য তিনিও পর্যবেক্ষণ করেছেন৷'' তবে বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকানো না গেলে শিশু চুরি বন্ধ করা কঠিন বলে জানান তিনি৷
কিন্তু শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘‘গত ছয় মাসে এ নিয়ে পাঁচবার শিশু চুরির ঘটনা ঘটেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে৷ তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতক চুরি ঠেকাতে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না৷ তারা একটু সচেতন না হলে এখানে পুলিশের একার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব না৷ কারণ প্রতিদিনই অনেক নবজাতক জন্ম নিচ্ছে হাসপাতালে৷ কার সন্তান কে নিয়ে যাচ্ছে এটা দেখার দায়িত্ব যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের৷''