মানুষ আবহমানকাল ধরে সমুদ্রকে বশে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ সাঁতার ও উইন্ড সার্ফিং ছাড়া কাইট সার্ফিং-ও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ ফ্রান্সের এক কিশোরী এ ক্ষেত্রে সবার নজর কাড়ছে৷ এমনকি বিশ্বকাপেও অংশ নিচ্ছে সে৷
বিজ্ঞাপন
ফ্রান্সের কাইট সার্ফার কাপুসিন দেলানোয়া বাতাস ও ঢেউয়ের ধাক্কা কাটিয়ে পানির উপর বিচরণ করে৷ বয়স মাত্র ১৩৷ সময় পেলেই সে পানির টান উপেক্ষা করতে পারে না৷
জার্মানির উত্তরে সিল্ট দ্বীপে কাইট সার্ফ বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় সেই সবচেয়ে কমবয়সি প্রতিযোগী৷ বিশ্বের সেরা সার্ফারদের মধ্যে সেখানে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা চলে৷ উত্তর সাগর অনিশ্চয়তা ভরা, পানিও খুব শীতল৷ এমন জায়গায় বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ৷ কাপুসিন বলে, ‘‘আমি সবচেয়ে কমবয়সি, কিন্তু মেয়েরা আমার প্রতি ভালো আচরণ করছে৷ আমাকে নানা পরামর্শ দিচ্ছে৷ ওয়ার্ল্ড ট্যুরে এত কমবয়সি হওয়া বেশ ভালো৷ দারুণ সুযোগ৷''
অ্যাডভেঞ্চার, আর কাইট সার্ফিং
02:31
ফ্রিস্টাইলার হিসেবে কাপুসিন ব্রাজিল থেকে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসেছে৷ পরিবারের সঙ্গে বিগত ৬ বছর ধরে সে সেখানেই থাকে৷ তার ভাই কামি-ও বিশ্বকাপে পরিচিত মুখ৷ তাদের বাবা রেনা পেশায় চিকিৎসক৷ তিনিই সন্তানদের কাইট সার্ফিং শিখিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘৬ বা ৭ বছর বয়সে কাপুসিন কাইট সার্ফিং শুরু করে৷ ভাইকে কোনো এক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেখে সে বলে, সেও চেষ্টা করতে চায়৷ বললাম তার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে হবে৷ সে রাজি হয়ে গেল৷''
এখন সে বিশ্ব মানের কাইট সার্ফারদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামার ছাড়পত্র পেয়েছে৷ ১৪টি দেশের ২৫ জন অ্যাথলিট বিশ্বকাপে পয়েন্ট পাবার দৌড়ে নামেন৷ স্কিপারদের মিটিং-এ বিধিনিয়ম ও শর্তাবলী স্থির করে দেওয়া হয়৷ তারপর প্রতিযোগীরা পানিতে নামেন৷ কাপুসিন জুরির সদস্যদের কাছে নিজের কেরামতি দেখাতে ১২ মিনিট সময় পাচ্ছে৷
পেটার ভজনি/এসবি
সার্ফিংয়ের সবচেয়ে ভয়ংকর জায়গা
হাঙর উপদ্রুত জলরাশি, তার নীচে ওৎ পেতে থাকা ধারালো প্রবাল আর বিশাল বিশাল ঢেউয়ের মাঝেই সার্ফিংয়ে নামে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ৷ অনেক সময় যা প্রাণঘাতীও হয়ে উঠে৷ এ রকম কিছু স্থানের খবর রয়েছে ছবি গ্যালারিতে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Bielmann
হাওয়াইয়ের নির্মম তরঙ্গ
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ওয়াহু দ্বীপের উত্তর উপকূলে বাঞ্জাই পাইপলাইনকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাণঘাতী তরঙ্গের এলাকা বলে মনে করা হয়৷ এটি সার্ফিং এলাকা হিসাবেও বিখ্যাত৷ এখানে অল্প পানিতে এমন একটি প্রবাল রয়েছে যেখানে, ৮০’র দশক থেকে এখানে সাত ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন৷ এরপরও মানুষ ও মুখো হওয়া ছাড়েনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Bielmann
তাহিতির টিহপু
ফরাসি পলিনেশীয় দ্বীপপুঞ্জের তাহিতি দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলে টিহপুতে এ রকম আরেকটি প্রবাল রয়েছে৷ যেখানে পানির উপরিতলের মাত্র এক মিটার নীচেই রয়েছে ধারালো ওই প্রবাল৷ এখানে মাঝে মাঝেই উঁচু উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়ে উপকূলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Boissy
ক্যালিফোর্নিয়ার ম্যাভরিক্স
ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চলে সানফ্রান্সিসকোর ম্যাভরিক্সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সার্ফিং প্রতিযোগিতা হয়৷ এই প্রতিযোগিতার নাম ‘ম্যাভরিক্স ইন্টারন্যাশনাল’৷ এত বড় প্রতিযোগিতার ভেন্যু হলেও এটা সার্ফিংয়ের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ জায়গা নয়৷ এখানকার ঢেউগুলো এত গতিতে আসে যে, জেট স্কি’কে সার্ফারের সঙ্গে ধরে রাখতে আলাদা ব্যবস্থা নিতে হয়৷ সেই সঙ্গে পানির তলের উঁচু-নীচু পাথুরে কাঠামো পরিস্থিতিকে আরো অনিশ্চিত করে রাখে৷
ছবি: Getty Images/E. Shaw
পিয়াহি
হাঙরের আক্রমণে যেমন ভবিষ্যতবাণী চলে না, তেমনি চলে না, এই জায়গার ঢেউ নিয়েও৷ এখানকার ঢেউ হরহামেশাই ১৮ মিটার অতিক্রম করে৷ পানির নীচের কাঠামোর কারণে এটা হয়ে থাকে৷ এখানে একজন সার্ফারের উপর দিয়ে ৫০ ফুট উঁচু ঢেউ চলে যেতে পারে৷ এলাকাটি হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাউই-এ অবস্থিত৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Bielmann
প্রেইরা ডু নর্টে
তবে উঁচু ঢেউয়ের সার্ফিংয়ে এটাই সর্বোচ্চ রেকর্ড নয়৷ এর জন্য যেতে হবে পর্তুগালে৷ এখানেই মার্কিন সার্ফার গেরেট ম্যাকনামারা সবচেয়ে উঁচু সার্ফিংয়ের রেকর্ড করেন৷ যেখানে ঢেউয়ের উচ্চতা ছিল ৭৮ ফুট বা ২৪ মিটার৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Leong
শিপস্টার্ন ব্লাফ
অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ার দক্ষণে শিপস্টার্ন ব্লাফে বড় বড় ঢেউ তৈরি হয়৷ যা আছড়ে পড়ে পাশের শক্ত খাড়া পাথুরে দেয়ালে৷ সঙ্গে আছে তীব্র ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং প্রচুর হাঙর৷ এখানে তাই খুব অভিজ্ঞরাই সার্ফিং করতে পারেন৷
ছবি: Imago/UIG
ওয়াইমেয়া সাগর
বড় বড় ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সার্ফিং করার জন্য যে সব স্থান বিখ্যাত, ওয়াইমেয়া সাগর তার একটি৷ হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ওয়াহুতে এর অবস্থান৷ এখানে ৬০ ফুট উঁচু ঢেউয়ের সাক্ষাৎ মেলে৷ এখানে বড় ঢেউয়ের সার্ফিংয়ের একটা প্রতিযোগিতাও হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Tanner
হাঙরের আক্রমণে বন্ধ যে সৈকত
হাঙরের বারংবার আক্রমণে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের বালিনা শহরের সৈকতগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Hunt
পানির নীচে ‘হা’ করা হাঙর
সার্ফিংয়ে আপনি যেমন সফল হতে পারেন, তেমনি যে কোনো সময় পড়ে যেতে পারেন পানিতেও৷ এমন আশঙ্কা থাকে সব সময়ই৷ কিন্তু যেখানে সার্ফিং করছেন, সেই এলাকাটা যদি এমন হয়, নীচে ‘হা’ করে আপনাকে গিলতে অপেক্ষা করছে অসংখ্য হাঙর, তাহলে কেমন হবে? ঘটনাটা অনেকটা এরকমই৷ পৃথিবীর সবচেয়ে হাঙর উপদ্রত দক্ষিণ আফ্রিকার সিল আইল্যান্ড এরপরও সার্ফিংয়ের জন্য বিখ্যাত স্থান৷