1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তথ্যপ্রযুক্তিতে বাঙালি গবেষকের নয়া দিশা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৪ অক্টোবর ২০১৮

ক্রমশ প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠতে থাকা মানব সভ্যতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চলেছে অ্যাপ্লিকেশন, অর্থাৎ অ্যাপ৷ বাঙালি বিজ্ঞানীর সাম্প্রতিক গবেষণা সেই নির্ভরতাকে আরো বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে৷

Dipsubhra Guha Roy
ছবি: Payel Samanta

আজকাল ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের মানুষের হাতে হাতে স্মার্টফোন আর নানা গ্যাজেটের পসরা নিঃসন্দেহে প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতিকে তুলে ধরছে৷ কিন্তু এ সবই মূলত বিদেশি সংস্থা৷ ভারতীয় সংস্থা কই? ধরা যাক, স্মার্টফোনের কথা৷ ভারতে স্মার্টফোন পৌঁছে গিয়েছে কোটি কোটি মানুষের হাতে৷ কিন্তু সেই স্মার্টফোন বিক্রিতে রমরমা চীন, দক্ষিণ কোরিয়া বা ফিনল্যান্ডের বহুজাতিক সংস্থার৷ এ দেশে মেধা ও প্রযুক্তি থাকলেও ব্যবহারিক জীবনে তার প্রতিফলন কোথায়?

গবেষণা ও তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার রসদ ভারতের আছে৷ তারই প্রমাণ রেখেছেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তথা গবেষক দীপশুভ্র গুহরায়৷ সম্প্রতি তিনি দেখিয়েছেন, দেশীয় পরিকাঠামোয় অল্প খরচেই প্রযুক্তির হদিস মেলা সম্ভব৷ অ্যাপ নির্ভর ভুবনে পরিবর্তন আনতে পারে তাঁর গবেষণা৷

কীভাবে সেই পরিবর্তন আসতে পারে? উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসতের বাসিন্দা বছর সাতাশের দীপশুভ্র বলেন, ‘‘বিভিন্ন অ্যাপের ক্ষেত্রে ‘মেসেজ লস', ‘এন্ড টু এন্ড ডিলে' সমস্যা দুটিই গুরুত্বপূর্ণ৷ আমার তৈরি প্রোটোটাইপ ও অ্যালগোরিদম্ একসঙ্গে কাজ করলে অ্যাপের অনেক সমস্যা থেকেই মুক্তি পাওয়া যাবে৷ বিশ্বে এখনো পর্যন্ত কেউই এই গবেষণায় সফল হতে পারেননি৷''

এ ধরনের গবেষণা উচ্চশিক্ষার স্তরে হয়ে থাকে৷ কিন্তু তা প্রায়োগিক স্তর পর্যন্ত পৌঁছায় কি? তথ্যপ্রযুক্তি ইঞ্জিনিয়ার সোমনাথ মিত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ে তহবিলের ঘাটতির জন্য নতুন গবেষণার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে৷ শুধু জ্ঞান আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেই তো হবে না, অর্থ না পেলে সেটার প্রয়োগ হবে কী করে!''

দীপশুভ্র গুহরায়

This browser does not support the audio element.

মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈকত মৈত্রের মতে, ‘‘ভারতে প্রযুক্তি তৈরি হচ্ছে না৷ তার কারণটাই হচ্ছে, আমাদের দেশে কিছু গবেষণার ফল পাওয়া গেলে তা নিয়ে প্রথমে যতটা উৎসাহ থাকে, পরবর্তীতে তার কিছুই থাকে না৷ ফলো আপ করে সেটা এগিয়ে না নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রযুক্তি গড়ে উঠছে না৷ ফলে ভারতের বদলে চীন থেকে আসছে প্রযুক্তি৷ এখন দরকারমতো ভারতীয় গবেষকদের প্রযুক্তি তৈরি করতে হবে৷ তা থেকে প্রোডাক্ট তৈরি করে আন্তর্জাতিক মানের ভারতীয় ব্যবসা গড়ে তুলতে হবে৷

সাধারণ মানুষের জীবনে এর ব্যবহারিক প্রয়োগ কী হতে পারে? তরুণ গবেষক বলেন, ‘‘বাড়ির বাইরে থেকেই আমি বাড়িতে থাকা একজন অসুস্থ মানুষের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করতে চাই৷ এক্ষেত্রে সঠিক সময়ে কাজটা করাই লক্ষ্য৷ বাজারে বহু অ্যাপ আছে, যা ব্যবহার করে এই কাজটা করা যেতে পারে৷ কিন্তু ‘মেসেজ লস', ‘এন্ড টু এন্ড ডিলে'র কারণে কাজটা বিঘ্নিত হতে পারে৷ তখন তো রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে৷ এ সময়েই আমার পরীক্ষামূলক যন্ত্র বা প্রোটোটাইপের সঙ্গে আমার তৈরি অ্যালগোরিদম্ ব্যবহার করলে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না৷ একইরকমভাবে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাতেও ঠিকভাবে কাজ করা যাবে৷ সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করা আর কোনো তথ্য হারিয়ে না যাওয়া, এই দুটো সমস্যাই সমাধান করা হয়েছে আমার যন্ত্র আর অ্যালগোরিদম্ ব্যবহার করে৷''  

শুধুমাত্র চার দেওয়ালের গণ্ডির মধ্যে যে এই প্রযুক্তির ব্যবহারিক প্রয়োগ সীমাবব্ধ থাকবে না বলে জানালেন দীপশুভ্র৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘সেন্সর পরিবর্তন করলেই ব্রিজ, রেলের ট্র্যাক, সিগন্যাল, গাড়ির ব্রেক থেকে শুরু করে চাষের জমিতে জল দেওয়া অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক সময়ে সঠিক বার্তা পাওয়া যাবে৷ এতে স্বাভাবিকভাবে পথ দুর্ঘটনাও এড়ানো যাবে৷ পাশাপাশি পরিবেশ নজরদারি সেন্সরগুলোকেও নজর রাখা যাবে৷ পরিকল্পনা চলছে এ ধরনের কাজ করার৷''          

মাত্র হাজার ছয়েক টাকা ব্যয় করে সেটা কী করে সম্ভব? এই খরচ সামান্য বাড়তে পারে, তবে তা খুব বেশি কিছু নয় বলেই দাবি করেন তরুণ গবেষক৷ তিনি জানান, তাঁর অ্যালগোরিদম্ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে৷

বছর দুয়েকের এই গবেষণায় তাঁর অসুবিধাও ছিল কিছু৷ সহযোগী গবেষক বিপাশা মাহাতো জানালেন, ‘‘আমাদের সার্ভারের সমস্যাটা অনেকটাই ছিল প্রথমদিকে৷ তবে এখন অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছি৷''

সৈকত মিত্র

This browser does not support the audio element.

ভবিষ্যতে যে এ নিয়ে বিস্তর পরিকল্পনা রয়েছে, তা জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য৷ সৈকত মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘ল্যাবরেটরিতে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তা আশাব্যঞ্জক৷ ভবিষ্যতে এটা আরো কাজে আসবে৷'' তবে তাঁর বক্তব্য, প্রযুক্তি গবেষণা শুধুমাত্র রিসার্চ আর্টিকেলের মধ্যে না রেখে তার বাস্তবায়ন করতে হবে৷ সমাজের কাজে লাগাতে হবে, মানুষের কাজে লাগাতে হবে৷ ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কাজে লাগাতে পারলেই প্রযুক্তির প্রয়োগ সার্থক হবে৷

তথ্য বিজ্ঞানী ডঃ মহম্মদ আফতাবউদ্দিন বলেন, ‘‘যে কোনো গবেষণার লক্ষ্য হচ্ছে পারফেকশনে পৌঁছানো৷ দীপশুভ্রর গবেষণা সেই লক্ষ্যে একটি পদক্ষেপ৷ এটা বাস্তবে প্রয়োগ করা গেলে অনেক তথ্যগত ভুল কমিয়ে আনা যাবে৷''   তিনি জানিয়েছেন, ইন্টারনেট অফ থিংস বা আইওটি বিনিয়োগের মস্ত বড় জায়গা৷ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এটি ভবিষ্যতে অপরিহার্য হয়ে উঠবে৷ সোমনাথ জানান, ‘‘মেক ইন ইন্ডিয়া প্রজেক্টের পর থেকে ভারতে এ ধরনের উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷ ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট পলিসির জোরে ভারতীয় টেকনোলজির উন্নতি হচ্ছে৷ ২০৩০ সালে ভারত বিশ্বে টেকনোলজিতে যথেষ্ট ভালো কিছু করে দেখাতে পারবে৷ জাদুঘর, কারাগার, প্রশাসনের দপ্তর, রেলপরিষেবা, স্মার্ট গাড়িতে আইওটির প্রয়োগ অবশ্যাম্ভাবী৷ সে ক্ষেত্রে দেখা যাক, এই গবেষণা কতটা কাজে আসতে পারে৷''

 

তবে সাইবার বিশেষজ্ঞ সৌরভ সামন্ত এ ব্যাপারে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে সন্দিহান৷ তাঁর মতে, ‘‘নিরাপত্তার জন্য উনি তথ্য সংরক্ষণ করেছেন অ্যামাজন ক্লাউডে৷  অ্যামাজন একটা প্ল্যাটফর্ম দেয়, কিন্তু অ্যামাজনে যে তথ্যগুলো থাকবে, তার নিরাপত্তার দায়িত্ব ওই সংস্থার নয়৷'' আরেক সাইবার বিশেষজ্ঞ সৈয়দ রেজা একইরমভাবে দীপশুভ্র গুহরায়ের গবেষণায় নিরাপত্তার দিকটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ তাঁর মতে, ‘‘এটা দেখতে হবে যে, অ্যামাজনে কীভাবে তথ্যগুলো রাখা হচ্ছে, ডিভাইসের অথেন্টিকেশন টোকেন কতটা নিরাপদে রয়েছে, সেটা জরুরি৷''     

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ