সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ব়্যাবের সিনিয়র এএসপি মো. জাফর উল্লাহ গত ৫ই মার্চ প্রতিবেদন জমা দিতে এলেও জামিন শুনানির এখতিয়ার না থাকায় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর বেঞ্চ তা ফিরিয়ে দেয়৷ এরপর বিষয়টি বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চে এলে সোমবার হাজির হয়ে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দেন জাফর উল্লাহ৷
আদালত প্রতিবেদন গ্রহণ করে জানিয়েছে, বিষয়টি যেহেতু তদন্তাধীন, তাই ওই প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করা হবে না৷ আর যে আসামিদের জামিনের আবেদন পেয়ে আদালত তদন্ত কর্মকর্তার কাছে অগ্রগতি জানতে চেয়েছিল, তাদের শুনানি শেষে তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে দেয়া হয়৷ আদালতে আসামিপক্ষের শুনানি করেন এসএম মাসুদ হোসেন দোলন, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট গাজী মো. মামুনুর রশীদ৷
ঢাকায় সাগর-রুনির বন্ধুদের মানববন্ধন
সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনির হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার ঢাকার কারওয়ানবাজারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়৷ সাংবাদিক দম্পতির কাছের মানুষ, বন্ধুরা ছাড়াও আরো অনেকে এতে অংশ নেন৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: DW
ফেসবুক আহ্বানে সমবেত সবাই
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পূর্তিতে মঙ্গলবার খুনিদের বিচার চেয়ে ঢাকার কারওয়ান বাজারে সার্ক ফোয়ারায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়৷ একটি ফেসবুক ইভেন্টের মাধ্যমে সাগর-রুনির বন্ধু, সহকর্মীরা এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রতীকী প্রতিবাদ
খুনিদের গ্রেপ্তার এবং বিচারের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নেয়াদের অনেকের মুখ ছিল কালো কাপড় বাঁধা৷ প্রতিবাদের অংশ হিসেবে এটা করেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
সার্ক ফোয়ারা ঘিরে অবস্থান
সাংবাদিক দম্পতির খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার বিকেলে সার্ক ফোয়ারা ঘিরে অবস্থান করেন প্রতিবাদকারীরা৷ বলাবাহুল্য, হত্যাকাণ্ডের পর দু’বছর পেরিয়ে গেলেও আজও হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে কিংবা প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি নিরাপত্তা বাহিনী৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘জানতে চাই, বিচার চাই’
মানববন্ধনে অংশ নেয়া এক ব্যক্তির হাতে থাকা প্ল্যাকার্ড লেখা, ‘‘কার ছায়ায়/কার মায়ায়/সাগর-রুনির খুনি? জানতে চাই/বিচার চাই৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
দীর্ঘতম ৪৮ ঘণ্টা!
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাগর-রুনি খুন হওয়ার পরপরই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন জানান, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে৷ কিন্তু সেই ৪৮ ঘণ্টা আজও শেষ হয়নি বলে মনে করেন প্রতিবাদকারীরা৷ কেননা, সাগর-রুনির খুনিরা আজও গ্রেপ্তার হয়নি৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
এদিকে, সাগর-রুনির পরিবারের উদ্যোগে ঢাকার দৃক গ্যালারিতে চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়৷ এই প্রদর্শনীতে লেখা রয়েছে, ‘‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’’৷ লেখাটি পড়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘কতটা দুঃখ আর হতাশা থেকে এই লেখা তা আমাদেরও বুঝতে হবে৷’’
ছবি: DW/H. Swapan
‘ক্রাইম সিন, ডু নট ক্রস’
‘ক্রাইম সিন, ডু নট ক্রস’ শিরোনামের চিত্র প্রদর্শনীটি এই নিয়ে দ্বিতীয়বার আয়োজন করা হলো৷ সাংবাদিক দম্পতির পরিবারসহ সাংবাদিক নেতারা বারবার হত্যাকারীদের বিচার চেয়ে আসলেও নিরাপত্তা বাহিনী এখনো প্রকৃত খুনিদের ধরতে পারেনি৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
‘আন্দোলন থামিও না’
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশে সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মুনীর বলেন, ‘‘আন্দোলন থামিও না, যত সাংবাদিক মারা গেছে সবার বিচারের দাবিতে তোমরা আন্দোলন চালিয়ে যাও৷ আমার মেঘের জন্য আমি বিচার চাই৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
‘সরকার আন্তরিক’
গত দুই বছরে খুনিরা গ্রেপ্তার না হলেও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘‘রহস্য উদঘাটনে সরকার আন্তরিক৷’’
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
পেরিয়ে গেল দুই বছর
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় নিজেদের ভাড়া বাসার বেডরুমে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি৷ সেসময় একই বাসায় অবস্থান করলেও প্রাণে বেঁচে যায় সাংবাদিক দম্পতির একমাত্র সন্তান মেঘ৷
ছবি: DW
10 ছবি1 | 10
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার রুনি৷ হত্যারহস্যের কিনারা করতে না পারায় হাইকোর্টের নির্দেশেই ২০১২ সালের ১৮ই এপ্রিল মামলাটি'র তদন্তের ভার ব়্যাবকে দেয়া হয়৷ ব়্যাব তদন্তের দায়িত্ব নেয়ার পর সন্দেহভাজন ১৬ জনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়৷ আলামত হিসেবে জব্দকৃত ছুরি ও পোশাকের নমুনাও পাঠানো হয়৷ কিন্তু তাতেও খুনি শনাক্ত করা যায়নি৷
হত্যাকাণ্ডের এক বছর আট মাস পর ঘটনায় 'জড়িত' সন্দেহে ৮ জনকে চিহ্নিত করার পর ৭ জনকে গ্রেফতার করে ব়্যাব৷ তাদের ৫ জনই আবার চিকিত্সক নেতা ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই হত্যা মামলার আসামি৷ ১৮ই ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আটক আসামিদের মধ্যে বকুল মিয়া, রফিকুল ইসলাম ও কামরুল হাসান অরুণের জামিনের আবেদন জানানো হয়৷ পৰে তাঁদের আইনজীবী বলেন,'দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এ মামলায় অভিযোগপত্র হয়নি৷ মামলার তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ার পরও আসামিদের আটকে রাখা হয়েছে৷'
মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান ডয়চে ভেলেকে জানান, 'ব়্যাব আদালতে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দিলেও তাঁরা অন্ধকারে আছেন৷ এই মামলার তদন্ত নিয়ে কী হচ্ছে তাঁরা তার কিছুই জানেন না৷ এমনকি এ মাসেই তাঁরা ব়্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, কিন্তু ব়্যাব কিছু জানায়নি৷ বরং অনেকটা এড়িয়ে গেছে৷' নওশের রোমান বলেন, 'আদালত তদন্তের স্বার্থে রিপোর্ট এখন প্রকাশ না করার কথা বলেছেন৷ কিন্তু তাতে হতাশা কাটছেনা৷'' তিনি বলেন, তাঁরা চান মামলার তদন্ত কোন পর্যায়ে আছে তা যেন স্পষ্ট করা হয়৷