তফসিলের পর বিএনপির ‘অসহযোগ'
১৩ নভেম্বর ২০২৩এর আগে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি৷ এরপর শুক্রবার ও শনিবার বাদে সপ্তাহের পাঁচদিনের মধ্যে দুই দিন করে চারদিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে আসছে৷ সবমিলিয়ে বিএনপি এর আগে চার দফায় নয়দিন অবরোধ এবং একদিন হরতাল পালন করেছে৷
সামনে বিএনপির কী ধরনের কর্মসূচি আসছে? একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে ঢাকা ঘেরাও ও ‘অসহযোগ' আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়েই ভাবছেন বিএনপি নেতারা৷
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এখনই ঠিক করে বলা যাবে না, আমরা কী কর্মসূচি দেবো৷ প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মসূচি দেওয়া হবে৷ আগে তফসিল হোক, সেটা দেখেই সিনিয়র নেতারা বৈঠক করেই কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন৷” ‘অসহযোগ' বা ‘ঢাকা ঘেরাও' এর কোন কর্মসূচি আসছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আসতে পারে৷ পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝেই আমরা চূড়ান্ত করব৷ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করা হবে৷”
এখন পর্যন্ত হরতাল ও অবরোধের যে কর্মসূচি বিএনপি পালন করেছে, তাতে কতটুকু সফলতা এসেছে? জানতে চাইলে রিজভী আহমেদ বলেন, "আমরা মনে করি পুরোপুরি সফল৷ সরকার যে ধরনের নির্যাতন নিপীড়ন চালাচ্ছে তার মধ্যেও জনগণ যে সহযোগিতা করছে তাতে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট৷ সরকার বাস চালানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু জনগণ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না৷ ফলে বাসেও যাত্রী হচ্ছে না, এই কারণে বলছি, আমরা পুরোপুরি সফল৷ আমাদের আন্দোলনে জনগণ সমর্থন দিচ্ছে৷ সামনের দিনেও আমরা সফল হবো ইনশাল্লাহ৷”
সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনে এসে গ্রেফতার এড়ানোর কৌশল নিয়েছে বিএনপি নেতারা৷ এ কারণেই চলমান হরতাল-অবরোধে রাজপথ থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন অনেকে৷ সাময়িক গা ঢাকা দেওয়া নেতারাও তফসিল ঘোষণা হলে চূড়ান্ত আন্দোলনে মাঠে নামবেন৷ বিএনপির মধ্যম সারির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তফসিলের পরদিন ‘অসহযোগ' আন্দোলনের ঘোষণা আসতে পারে৷ তখন আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে৷ পালিয়ে থাকা নেতাকর্মীরাও তখন মাঠে নামবেন৷ সর্বশক্তি নিয়েই তারা মাঠে নামবেন৷
এ দফায় প্রথমেই গ্রেফতার হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ পরে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস-চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক ও মিডিয়া সেলের প্রধান জহির উদ্দিন স্বপনসহ দলটির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা৷ এছাড়া গত কয়েকদিনে সারাদেশে আট হাজারের বেশি বিএনপি নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন বলে দাবি দলটির৷ এমন পরিস্থিতিতে গ্রেফতার এড়িয়ে আন্দোলন জোরদারে কৌশলী বিএনপি৷
সামনের দিনের আন্দোলন নিয়ে বিএনপির ভাবনা জানতে চাইলে দলটির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, "প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মসূচি ঘোষণা হবে৷ এ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতারা কাজ করছেন৷ তবে বিএনপির চলমান আন্দোলনে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহনের বিষয়টি দৃশ্যমান হয়েছে৷ সরকারের দমন পীড়ন উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষই কর্মসূচি সফল করে তুলছেন৷”
বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণা পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা এমনকি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের নেতাদের পরামর্শ নিচ্ছেন৷ এছাড়া জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, সমমনা জোট, এলডিপি ও গণঅধিকার পরিষদসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের৷ পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি ইসলামী দলকে তফসিলকেন্দ্রিক আন্দোলনে পাশে চায় বিএনপি৷
বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতারা সচিবালয় ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়ার কথাও বলেছেন৷ পাশাপাশি জেলা ও উপজেলায় হরতাল-অবরোধ পালনে কঠোর নির্দেশনা দিচ্ছে দলটি৷ সারাদেশ থেকে রাজধানী বিচ্ছিন্ন করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে বিএনপি৷ ঘরে বসে গ্রেফতার না হয়ে তখন রাজপথে গ্রেফতার হওয়ার ব্যাপারেও নির্দেশনা আসবে দলের হাইকমান্ডের৷ এছাড়া বড় শোডাউন দেওয়ার পরিকল্পনা নিতে পারে তারা৷
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এখন যারা বাইরে আছেন তারা কর্মসূচি সফল করতে কাজ করছেন৷ অবরোধ পালনে রাজপথেই আছেন নেতাকর্মীরা৷ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরবে না৷ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ যে কোনো পরিস্থিতিতে আমরা মাঠ ছাড়বো না৷ যে কোনো মুহূর্তে রাজপথে শুধু নেতাকর্মীরাই নন, জনতার বাঁধভাঙা জোয়ার দেখা যাবে৷ জনতার বিজয় সুনিশ্চিত৷”
বিএনপির কর্মসূচিতে প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্নস্থানে বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে৷ আগুনের বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটছে রাজধানীতে৷ ফায়ার সার্ভিস গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩০টিরও বেশি বাসে আগুনের কথা জানিয়েছে৷ যদিও এসব ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপিকে দায়ী করা হলেও রিজভী আহমেদ দাবি করছেন ‘সরকারের এজেন্সি' দিয়ে এসব ঘটনা ঘটিয়ে তাদের দলের নেতা-কর্মীদের বদনাম করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷
তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক চেয়েছেন পিটার হাস
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ইস্যুতে তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস৷ সোমবার ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান৷ দলগুলো হলো- আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি৷
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়৷ যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে (রাজনৈতিক দলগুলোকে) সহিংসতা পরিহার এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না বলে বিবৃতিতে পুনরায় স্পষ্ট করেছে দূতাবাস৷ বিবৃতিতে সংলাপ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে পূর্বশর্ত ছাড়াই সংলাপে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানায়৷ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের জন্য ঘোষণা করা ভিসানীতির বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া হয়৷ এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুন্ন করবে তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি কার্যকর থাকবে৷