আশঙ্কা ছিল এবার কুরবানির ঈদে বাংলাদেশে ভারতীয় গরু আসবে না৷ তাই ঈদে গবাদি পশুর বাজার থাকবে চড়া৷ তবে সে আশঙ্কা কেটে গেছে৷ দাম একটু বেশি হলেও, কুরবানির জন্য পশুর সংকট আর নেই৷ কারণ শেষ পর্যন্ত ভারতীয় গরু এসেছে বাংলাদেশে৷
বিজ্ঞাপন
[No title]
ভারতের শাসক দল বিজেপি গরুকে ‘গোধন' বলে মনে করে এবং দেশের বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে গোমাংস নিষিদ্ধ করার জন্য ইতিমধ্যে নানা উদ্যোগও তারা নিয়েছে৷ এই পটভূমিতে গত মার্চ মাসে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বিএসএফ সদস্যদের বাংলাদেশে গরু পাচার পুরোপুরি বন্ধ করতে বলেন৷ বলা বাহুল্য, তাঁর এ বক্তব্যের পর, বাংলাদেশে গরু আসা অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়৷ এমনকি সীমান্তে কড়াকড়ি শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম নাকি ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়৷ স্বাভাবিকভাবেই সেটা ছিল চিন্তার কারণ৷ কিন্তু কুরবানি (বানানভেদে কোরবানি) ঈদের আগে পরিস্থতি আবারো পাল্টে যায়৷ সীমান্তের বেশ কিছু অংশে কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও, কিছুটা জায়গায় শিথিল হয় সীমান্ত৷ আর ব্যবসায়ীরাও অবলম্বন করেন নতুন কৌশল, বেছে নেন মূলত কুড়িগ্রামের সীমান্ত৷ ফলে ভারত থেকে গরু আনতে আর তেমন বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের৷
ঘরে বসেই যেভাবে কিনতে পারেন কুরবানির গরু
সামনেই কুরবানির ঈদ৷ পবিত্র এই ধর্মীয় উৎসবে প্রায় সব মুসলমানই সামর্থ অনুযায়ী পশু কুরবানি দেয়ার চেষ্টা করেন৷ যাঁরা সবচেয়ে কম ঝামেলায় ঈদের গরু বা অন্য গবাদি পশু কিনতে চান, তাঁরা চাইলে ঘরে বসেই কাজটা সেরে নিতে পারেন৷
ছবি: Getty Images/J Mitchell
এখনই পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত এখনইডটকম
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি ঈদ-উল-আজহা, অর্থাৎ কুরবানির ঈদ৷ আরবি শব্দ ‘ঈদ-উলয়আজহা’-র অর্থ ত্যাগের উৎসব৷ ত্যাগের মানসিকতা থেকেই এই ঈদে সব মুসলমানই সামর্থ অনুযায়ী পশু কুরবানি দেন৷ এবারের ঈদে কেউ যদি কুরবানির পশু কিনতে চান, তাহলে www.akhoni.com-এ চোখ রাখুন৷ হ্যাঁ, এটি একটি অনলাইন পোর্টাল৷ সুলভ মূল্যে পণ্য ঘরে পৌঁছে দেয়াই তাদের কাজ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
সন্তোষজনক সেবার আশ্বাস দেয় এখানেইডটকম
ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে আপনার মোবাইলেই ইংরেজিতে www.ekhanei.com লিখে প্রবেশ করতে পারেন পশু কেনার এই সাইবার হাটে৷ এখানেইডটকম-এর ওয়েবসাইটে আপনি যেমন দেখবেন তেমন পশুই পাবেন৷ তার মানে, ছবিতে পশুর যেমন রং, গড়ন, ওজন ইত্যাদির উল্লেখ আছে, ঠিক সেরকমই সরবরাহ করা হবে৷ তাছাড়া ক্রেতা সাধারণকে সন্তোষজনক সেবা দেয়ার জন্য বাছাই করা বিক্রেতাদেরই এখানে পশু বিক্রি করতে দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/J Mitchell
ইন্টারনেটে গবাদি পশুর সবচেয়ে বড় বাজার বিক্রয়ডটকম
অনলাইন কেনাকাটার জগতে বিক্রয়ডটকম খুবই পরিচিত৷ যাঁরা এখনো চেনেন না, তাঁরা এই কুরবানির পশু ক্রয় উপলক্ষ্যেই www.bikroy.com-এ একবার ঢুঁ মারতে পারেন৷ গত বছরও ক্রেতাদের ঘরে বসেই কুরবানির পশু পছন্দ করার সবচেয়ে বড় আয়োজন রেখেছিল বিক্রয়ডটকম৷ এবারও সেই নিশ্চয়তা দিচ্ছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hibbeler
বাঙালির জন্য ঈদের মাংস
বাঙালিরা যেমন পছন্দ করেন তেমন মাংস সরবরাহ করে থাকে বলেই সম্ভবত এই অনলাইন পোর্টালটির নাম www.bengalmeat.com৷ ‘হালাল’ এবং ‘নিরাপদ’ মাংসের আশ্বাসও দেয় বেঙ্গলমিটডটকম৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman.
আরো দুটি বড় বাজার, তবে...
www.clickbd.com এবং www.kaymu.com-এও পেয়ে যেতে পারেন পছন্দের কুরবানির পশু৷ তবে দরকষাকষিসহ অন্য কিছু বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করলে ঠকে যাওয়ার ঝুঁকি কম থাকবে৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman.
যেভাবে কিনবেন...
প্রথমেই যেখান থেকে কিনতে চান সেই পোর্টালে যেতে হবে৷ বিক্রয়ডটকম থেকে কিনতে হলে ব্রাউজারে www.bikroy.com লিখে ‘এন্টার ’ দিন৷ তারপর আপনার শহরটি বেছে নিন৷ দেখবেন অনেক পণ্যের কথা লেখা আছে৷ ‘পোষা প্রাণী ও জীবজন্তু’ ক্যাটাগরিতে গিয়ে ছবি দেখে পশু পছন্দ করুন৷ ফোন করেই দাম চূড়ান্ত করতে পারেন৷ দর কষাকষির সময় পশু ঘরে পৌঁছানোর খরচ, হাসিল বা ট্যাক্সসহ অন্যান্য খরচ কে দেবে তা-ও ঠিক করে নিতে ভুলবেন না যেন!
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
6 ছবি1 | 6
কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আতাউর রহমান বিপ্লব ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘গত ১০-১২ দিন আগে থেকেই কুড়িগ্রাম সীমান্ত হয়ে ভারতীয় গরু আসা শুরু করে৷ এবার ভারত থেকে যে গরু এসেছে, তার শতকরা ৭৫ ভাগই এসেছে ঐ সীমান্ত থেকে৷''
তিনি জানান, ‘‘আসামের বন্যার কারণে বিএসএফ-এর ক্যাম্প সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ সেখানে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়াও আর নেই৷ তাই ভারতীয় গরু ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে ভাসিয়ে আনা হয়েছে৷ আর মোবাইল ফোনে পাঠানো কোড নাম্বার মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা গরু পেয়েছেন৷বিএসএফ এবং বিজিবি-ও এ বিষয়ে নমনীয় ভাব দেখিয়েছে৷''
অবশ্য লালমনিরহাটের পানবাড়ি, ধবলগুড়ি, আমবাড়ি, বিরামপুর, সমশানগঞ্জ ও হাইতভাঙা এবং চাপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা ও খুলনার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়েও বাংলাদেশে ভারতীয় গরু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা৷
লালমনিরহাটের ব্যবসায়ী হাবিল সরদার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সীমান্ত এলাকায় কম দামে গরু কিনে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আমাদের খবর দেন৷ খবর পেলে আমাদের রাখালরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে যায়৷ সেখান থেকে গরু বাংলাদেশে নিয়ে এসে স্থানীয় কাস্টমস কর্মকর্তাদের খবর দেয়া হলে, গরুগুলোকে বাজেয়াপ্ত করে নাম মাত্র মূল্যে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কাছে তাঁরা বিক্রি করে দেন৷ এরপর ব্যবসায়ীরা কাস্টমসের কাছ থেকে একটি ক্রয় রশিদ পান, যেখানে নম্বর দেওয়া থাকে৷ এতে বাংলাদেশে গরুটি বৈধ হয়ে যায়৷''
ভারতের সিদ্ধান্তে সমস্যায় বাংলাদেশ
বাংলাদেশের মানুষ যেন গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দেয় সেজন্য ভারত থেকে বাংলাদেশ গরু পাচার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
ছবি: S. Rahman/Getty Images
সীমান্তরক্ষীদের নতুন দায়িত্ব
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ২,২১৬ কিলোমিটার সীমান্ত পাহারা দেয়ায় নিয়োজিত প্রায় ৩০ হাজার ভারতীয় সৈন্যকে নতুন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ সেটা হলো, ভারতীয় গরু যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশে পৌঁছতে না পারে৷ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএসএফ সদস্যদের এই নির্দেশ দেন যেন ‘বাংলাদেশের মানুষ গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দেয়’৷
ছবি: Str/AFP/Getty Images
গরু পবিত্র
হিন্দুদের কাছে গরু একটি পবিত্র প্রাণী৷ তাই ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করতে চায়৷ রাষ্ট্রীয় স্বেচ্ছাসেবক সংঘ আরএসএস এর পশ্চিমবঙ্গের মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘গরু জবাই কিংবা চোরাই পথে চালান, আর হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ করা বা হিন্দু মন্দির ধ্বংস করা একই কথা৷’’
ছবি: Shaikh Azizur Rahman.
চার যুগের ইতিহাস
ভারত থেকে চোরাই পথে আসা গরুই এতদিন বাংলাদেশের মানুষের মাংসের প্রধান উৎস ছিল৷ গত চার দশক ধরে সেটা হয়ে আসছে৷ এর সঙ্গে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য জড়িয়ে আছে৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman.
দাম বেড়ে গেছে
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় গরুর মাংস রপ্তানিকারক বেঙ্গল মিট এর সৈয়দ হাসান হাবিব গত জুলাই মাসে রয়টার্সকে জানান, ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তাঁর কোম্পানির মাংস রপ্তানি প্রায় ৭৫ শতাংশ কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Asia News Network/Jofelle P. Tesorio
চাকরি হারিয়েছে প্রায় ৪,০০০
বাংলাদেশ ট্যানারস অ্যাসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট শাহীন আহমেদ জানিয়েছেন, জুন পর্যন্ত চামড়া শিল্পে কর্মরত প্রায় চার হাজার কর্মীর চাকরি গেছে৷ আর ১৯০টি ট্যানারির মধ্যে ৩০টি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
ভারতীয় গরুর মাংস ভালো
বেঙ্গল মিট এর সৈয়দ হাসান হাবিব বলেন, তিনি এখন নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে মাংস আমদানির চিন্তা করছেন৷ কিন্তু ভারতীয় মাংস ও চামড়ার মান ভালো বলে জানান তিনি৷ উল্লেখ্য, ভারত গরুর মাংসের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক৷
ছবি: AFP/Getty Images
ভারতের সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন মাংসের জন্য বাংলাদেশকে নতুন উৎস খুঁজে বের করতে হবে কেননা ভারত তার সিদ্ধান্তে অটল থাকবে৷
ছবি: S. Rahman/Getty Images
7 ছবি1 | 7
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ সব সীমান্ত দিয়ে এবার তিন লাখেরও বেশি ভারতীয় গরু এসেছে বাংলাদেশ৷
জবাই করতে হবে নির্দিষ্ট স্থানে
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবার ঢাকায় পশু কুরবানির জন্য ৫৯৫টি স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে৷ এর মধ্যে দক্ষিণে ৩২৪ এবং উত্তরে ২৭১টি ‘স্পট' নির্দিষ্ট করা হয়েছে বল খবর৷ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন রকিব উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘স্পটগুলোতে প্রয়োজনীয় পানি ও বর্জ্য পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এক লাখ গারবেজ ব্যাগ বা ময়লা ফেলার ব্যাগ কাউন্সিলরদের সহায়তায় বিতরণও করা হচ্ছে৷''
শুধু তাই নয়, তাদের প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী ঈদের দিন কাজ করবে বলেও জানান ক্যাপ্টেন রকিব উদ্দিন৷