মিশরের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ২০টি মানবাধিকার সংস্থা৷ তা সত্ত্বেও আব্দেল ফাতাহ এল-সিসিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ জানিয়েছেন, মিশরের কাছে অস্ত্র বিক্রি চালিয়ে যাবে তার দেশ৷
বিজ্ঞাপন
অবশ্য মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাতাহ এল-সিসির ফ্রান্স সফরকে সামনে রেখে ২০টি মানবাধিকার সংস্থা ওই বিবৃতিটি দেয়ার পরই এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মাক্রোঁ৷ বন্ধুপ্রতিম মুসলিমপ্রধান দেশটিতে মানবাধিকার পরিস্থিতি যে ভালো নেই তা মেনে নিয়েও বলেছিলেন, ফ্রান্স সরে গেলে সেই জায়গা নিয়ে নিতে পারে চীন বা পশ্চিমা কোনো দেশ৷ সেই আশঙ্কাকে দূরে রাখতে মিশরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সব অর্থ বজায় রাখার পথেই হাঁটছেন মাক্রোঁ৷ সোমবার প্যারিসে মিশরের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে তাই সরাসরি বলেছেন, ‘‘প্রতিরক্ষা এবং অর্থনীতি সংক্রান্ত সহযোগিতার বিষয়গুলোর সঙ্গে আমি অন্য বিষয় বা শর্তকে জড়াবো না৷’’ বরং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চলমান লড়াই জারি রাখার জন্য এমন সম্পর্ক ধরে রাখাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন তিনি৷ তবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট দাবি, এল-সিসিকে অস্ত্র বিক্রি জারি রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে আশ্বস্ত করলেও বৈঠকের এক পর্যায়ে মিশরের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথাও জানিয়েছেন৷
এসিবি কেএম এপি, এএফপি, রয়টার্স)
পশ্চিমা অস্ত্রে সহিংস মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা
মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে মোট অস্ত্রের চার ভাগের তিন ভাগই সরবরাহ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলো৷ সহিংসতা বা মানবাধিকার বিবেচনায় না নিয়েই বিক্রি হয় অত্যাধুনিক সব অস্ত্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Dietsch
পাঁচ বছরের তথ্য
ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসি সিআইপি এক প্রতিবেদনে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের অস্ত্র বিক্রির পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে৷ দেখা গেছে, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এই পাঁচ বছরে ব্যাপক পরিমাণ অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বিক্রি করা হয়েছে৷
ছবি: U.S. Marine Corps photo by Cpl. Gabino Perez/AP Photo/picture alliance
বিক্রিতে শীর্ষে কারা!
স্বাভাবিকভাবেই এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ মধ্যপ্রাচ্যে বিক্রি করা মোট অস্ত্রের ৪৮ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের৷ এরপর রাশিয়া ১৭ শতাংশ অস্ত্র বিক্রি করে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও পরের অবস্থানগুলোতে রয়েছে যথাক্রমে ফ্রান্স (১১%), জার্মানি (৫%), যুক্তরাজ্য (৫%), ইটালি (৩%) এবং চীন (২%)৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ক্রয়ে শীর্ষে সৌদি আরব
অস্ত্র ক্রয়েও স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাধর রাষ্ট্র সৌদি আরব৷ দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের মোট অস্ত্রের ৪৮ শতাংশ নিজেই ক্রয় করে৷ এরপরের অবস্থানগুলোতে রয়েছে যথাক্রমে মিশর (১৪%), আলজেরিয়া (১০%), আরব আমিরাত (৯%), ইরাক (৮%), কাতার (৮%), ইসরায়েল (৫%) এবং তুরস্ক (৪%)৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Huwais
সহিংসতায় উসকানি
অঞ্চলটিতে কেবল ছোটখাট অস্ত্র নয়, বরং বড় এবং বিধ্বংসী অস্ত্রও বিক্রি করা হচ্ছে৷ ফলে ব্যাপকভাবে যেসব সহিংসতা ছড়াচ্ছে, তাতে এসব অস্ত্রও বড় ভূমিকা রাখছে৷ সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সরবরাহ করা বিমান, বোমা, মিসাইল এবং সাঁজোয়া যান নিয়ে ইয়েমেনে হামলা হচ্ছে৷ মিশরে তথাকথিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নাম করে ব্যবহার হচ্ছে মার্কিন যুদ্ধবিমান, ট্যাংক ও হেলিকপ্টার৷
ছবি: Mohammed Hamoud/Anadolu Agency/picture alliance
গৃহযুদ্ধের মদদ
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি বিরাজমান৷ সেসেব দেশে যুদ্ধরত দুই পক্ষেই দেখা যায় মার্কিন ও ইউরোপিয়ান অস্ত্র৷ ইরাক, ইয়েমেন, সিরিয়া এবং লিবিয়ায় যুদ্ধরত সব পক্ষই মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করছে৷ সিরিয়া এবং লিবিয়ায় রুশ অস্ত্রও দু’ পক্ষের কাছে রয়েছে৷ এমনকি তুরস্ক ও আরব আমিরাত লিবিয়ায় যেসব অস্ত্র সরবরাহ করেছে, সেগুলোও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই তৈরি করা৷
ছবি: Esam Omran Al-Fetori/Reuters
ব্যবসা, ক্ষমতা
বিশ্বে কোটি কোটি টাকার অস্ত্রের বাজার রয়েছে৷ ফলে সহিংসতা বা যুদ্ধে একদিকে মানুষের প্রাণহানি হলেও সে অস্ত্র বিক্রি করে ঠিকই লাভবান হচ্ছে নানা দেশের অস্ত্র উৎপাদনকারীরা৷ এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বেশ ক্ষমতাধর লবি বজায় রাখেন৷ এছাড়া বৈশ্বিক রাজনীতিতে বিভিন্ন অঞ্চলে নিজ দেশের ‘বন্ধুত্ব’ ধরে রাখাও নানা ধরনের অস্ত্র সরবরাহ চুক্তির অন্যতম একটি কারণ৷