1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তবু অনন্ত জাগো-১

২৯ নভেম্বর ২০১১

আজীবন আপনজনের অকালমৃত্যুর তীব্র শোক বহন করতে হয়েছে রবীন্দ্রনাথকে৷ শোকের মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করেছেন – ‘‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে/তবুও শান্তি তবু আনন্দ তবু অনন্ত জাগে’’৷

Rabindranath Tagore (1861 - 1941) undatierte Aufnahme
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - ফাইল ফটো

এ যেন নির্লিপ্ত এক তপস্বীর উপলব্ধি, যিনি দুঃখে সুখে আকীর্ণ পৃথিবীর মধ্যে থেকেও তার ঊর্ধে অবারিত যে মুক্তির অসীম আকাশ, তার মধ্যে আপন চিত্তকে পরিব্যাপ্ত করে দিয়েছেন৷

‘‘দীর্ঘ জীবনপথ, কত দুঃখতাপ, কত শোকদহন,'' কোন কিছুই তাঁকে বিচলিত করতে পারেনি৷ বলেছেন, ‘‘মৃত্যু তাঁর জীবনকে কত সঞ্চয় দিয়ে গেছে''– তাঁর পত্নীর অকালমৃত্যু, পুত্র-কন্যা-দৌহিত্রের অকালমৃত্যুসহ আরো কতো মৃত্যু – ভেঙে পড়েননি কখনো, স্থিতধী থেকেছেন সর্বদা সর্ব অবস্থায়৷

চৌদ্দ বছর বয়সে প্রথম মৃত্যুশোক, মায়ের মৃত্যুতে৷ ‘‘কী হইয়াছে ভালো করিয়া বুঝিতেই পারিলাম না৷ প্রভাতে উঠিয়া যখন মা'র মৃত্যুসংবাদ শুনিলাম তখনো সে কথাটার অর্থ সম্পূর্ণ গ্রহণ করিতে পারিলাম না৷ ... কেবল যখন তাঁর দেহ বহন করিয়া বাড়ির সদর দরজার বাহিরে লইয়া গেল... তখনই শোকের সমস্ত ঝড় যেন একেবারে এক দমকায় আসিয়া মনের ভিতরটাতে হাহাকার তুলিয়া দিল৷''

বালক রবীন্দ্রনাথ মানসিক আশ্রয় পেলেন দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ আর নতুন বৌঠান কাদম্বরী দেবীর কাছে৷ কাদম্বরী দেবী হয়ে ওঠেন তাঁর সৃষ্টিকর্মের সবচেয়ে বড়ো অনুপ্রেরণার উৎস৷ তাঁর দীর্ঘজীবনের সবচেয়ে সুখের সময় কেটেছে এঁদের আশ্রয়েই৷ অপর্যাপ্ত স্নেহে-ভালবাসায় ভরা স্বপ্নের এই দিনগুলি রবীন্দ্রনাথ ভুলে যাননি কখনও৷ এঁদেরই বাড়িতে একদিন এক আকস্মিক অভিজ্ঞতা হলো তাঁর৷ রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'আধ্যাত্মিক' অভিজ্ঞতা৷ সেই অভিজ্ঞতার অভিঘাতে রচিত হলো আশ্চর্য কবিতা 'নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ'৷

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে লেখা চিঠিছবি: Hasibur Rahman

সম্পূর্ণ নতুন এক প্রাণসত্তা নিয়ে জেগে উঠলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক কবি, বিশ্বকবি, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷

রবীন্দ্রনাথের লেখার উৎস খুলে গেলো পুরোপুরি৷ মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে রচিত হলো তেরোটি গ্রন্থ৷ এর মধ্যে তিনটি গ্রন্থ জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে এবং চারটি কাদম্বরী দেবীকে উৎসর্গিত৷ ‘ভগ্ন হৃদয়' গ্রন্থের উৎসর্গপত্রে রবীন্দ্রনাথ কাদম্বরীর উদ্দেশ্যে লিখলেন, ‘‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা''...

রবীন্দ্রনাথের জীবনে তখন সোনালি রঙের সৃষ্টিমুখর উচ্ছল দিন৷ কৌতুকপ্রিয়, সংগীতপ্রিয়, বন্ধুবৎসল রবীন্দ্রনাথের যেন মনে হচ্ছিলো ‘‘এমনি করেই যায় যদি দিন যাক না৷''

১৮৮৩-তে বাইশ বছর বয়সে বিয়ে হলো রবীন্দ্রনাথের৷ প্রচলিত প্রথা লঙ্ঘন করে বিয়ে হলো বরের বাড়িতেই৷ বিয়ের রাত্রে শিলাইদহে বড়ো ভগ্নিপতি সারদাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়ের আকস্মিক মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছালো বাসি বিয়ের দিন – উৎসব অকস্মাৎ শোকে স্তব্ধ হয়ে গেলো৷

রবীন্দ্রনাথের বিয়ের কয়েক মাস পরে, ১৮৮৪ সালের ১৯ শে এপ্রিল বৌঠান কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করলেন৷ মৃত্যুর বিষাদময় ভয়ংকর রূপের সঙ্গে সত্যিকার নিষ্ঠুর পরিচয় ঘটলো রবীন্দ্রনাথের৷

শোকাহত রবীন্দ্রনাথ তিনটি বই মৃতা বৌঠানকে উৎসর্গ করলেন৷ ‘শৈশব সংগীত'-এর উৎসর্গপত্রে তিনি লিখলেন, ‘‘এ কবিতাগুলিও তোমাকে দিলাম৷ বহুকাল হইল তোমার কাছে বসিয়াই লিখিতাম, তোমাকেই শুনাইতাম৷ সেই সমস্ত স্নেহের স্মৃতি ইহাদের মধ্যে বিরাজ করিতেছে৷ তাই মনে হইতেছে, তুমি যেখানেই থাক না কেন এ লেখাগুলি তোমার চোখে পড়িবেই৷''

কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়িছবি: DW

সমস্ত জীবনভর তিনি গদ্যে পদ্যে চিঠিতে এই মৃত্যু এবং এই মানুষটির কথা শ্রদ্ধা ও অনুরাগে স্মরণ করেছেন৷ ‘‘আমার তেইশ বছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হইল তাহা স্থায়ী পরিচয়৷ তাহা তাহার পরবর্তী প্রত্যেক বিচ্ছেদশোকের সঙ্গে মিলিয়া অশ্রুর মালা দীর্ঘ করিয়া গাঁথিয়া চলিয়াছে৷ জীবনের মধ্যে কোথাও যে কিছুমাত্র ফাঁক আছে৷ তাহা তখন জানিতাম না৷... জীবনের এই রন্ধ্রটির ভিতর দিয়া যে একটা অতলস্পর্শ অন্ধকার প্রকাশিত হইয়া পড়িল, তাহাই আমাকে দিনরাত্রি আকর্ষণ করিতে লাগিল৷ আমি ঘুরিয়া ফিরিয়া কেবল সেইখানে আসিয়া দাঁড়াই, সেই অন্ধকারের দিকেই তাকাই এবং খুঁজিতে থাকি–যাহা গেল তাহার পরিবর্তে কী আছে৷''

পরিবর্তে রবীন্দ্রনাথ খুঁজে পেলেন কাজ আর কাজ ৷ শুধু কবিতা, গান বা নাটক লেখা নয়, নতুন কর্মযজ্ঞে নিজেকে উৎসর্গ করলেন তিনি৷ জমিদারির দায়িত্বগ্রহণ, পত্রিকা সম্পাদনা, নানা ধরনের সামাজিক দায়িত্ব গ্রহণ করাসহ অজস্রমুখী কাজের সঙ্গে তিনি যুক্ত হলেন৷ শুরু হলো রবীন্দ্রনাথের জীবনের নবতর অধ্যায়৷ শোককে তিনি পরিণত করলেন সৃষ্টিতে বিভিন্নমুখী নির্মাণ কর্মে৷ শোকের মধ্যে তিনি খুঁজে পেলেন বহুধা বিকশিত প্রাণশক্তি৷

কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর পর রবিপ্রতিভা আরো ভাস্বর হয়ে উঠলো৷ পাশাপাশি মৃত্যুও প্রসারিত করে দিলো তার গাঢ় কালো ছায়া৷ ১৮৯৯-এ অতি প্রিয় ভাইপো বলেন্দ্রনাথের মৃত্যু ঘটলো অকস্মাৎ, মাত্র ঊনত্রিশ বছরে বয়সে৷ এই প্রতিভাবান যুবক স্বল্প বয়সসীমার মধ্যেই বাংলা গদ্য রচনায় সৃষ্টিশীলতার পরিচয় দেন৷ বলেন্দ্রনাথের বিয়েতে রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'নদী' কাব্য উৎসর্গ করেছিলেন৷

প্রতিবেদন: ফরহাদ খান

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ