টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের থিম সং-এর তালে তালে ‘ফ্ল্যাশমব’ তৈরির হিড়িক শুরু হয়েছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে৷ শিক্ষার্থীরা নিজেরা ভিডিও তৈরি করে তা প্রচার করছেন ইউটিউবে৷ এ ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ক্রিকেট পাগল বাঙালির ক্রিকেট উন্মাদনা ইউটিউবে ঝড় তুলেছে৷ ভিডিও শেয়ারিং এই সাইটটিতে প্রায় প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের থিম সং দিয়ে তৈরি ‘ফ্ল্যাশমব'৷ নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে এরকমই এক ভিডিও তৈরি করে সাড়া জাগিয়েছেন মার্কিন প্রবাসী বাঙালি তরুণ প্রজন্ম৷ এই উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত শেখ মিনহাজ হোসেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘সত্যিকার অর্থে অসাধারণ অল রাউন্ড টিম ওয়ার্ক না হলে এমন একটা ইভেন্ট করা সম্ভব হতো না! আজ সব জায়গায় যখন আমাদের ফ্ল্যাশ মবটাকে আলাদা দৃষ্টি নিয়ে দেখাচ্ছে, আলাদাভাবে ‘এম্ফাসাইজ' করছে; গর্বে বুক ফুলে যাচ্ছে!''
টাইমস স্কয়ারে তৈরি বাঙালি তরুণদের ‘ফ্ল্যাশমব' ইউটিউবে প্রদর্শন হয়েছে প্রায় দেড়লাখ বার৷ ভিডিওর নিচে মন্তব্য করেছেন অসংখ্য দর্শক৷ ইউটিউবে সিজান সায়মন লিখেছেন, ‘‘অসাধারণ ব্যাপার৷ তবে দুঃখের কথা হচ্ছে, এটা (ফ্ল্যাশমব) আমার দোকানের সামনেই হয়েছে, অথচ আমি তা জানতাম না৷'' মস্কোতে আয়োজিত একইরকম একটি ফ্ল্যাশমবও প্রচার হয়েছে ইন্টারনেটে৷ বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একইরকম ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে প্রকাশ করেছেন৷ আর ফেসবুকে সেসব শেয়ার করছেন অসংখ্য মানুষ৷
জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ সামহয়্যার ইন ব্লগে খলিলুর রহমান ফয়সাল লিখেছেন সিলেটে ‘ফ্ল্যাশমব' আয়োজন করার কথা৷ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা লিখেছেন, ‘‘ক্যাম্পাসের মিনি অডিটরিয়ামে যেদিন থেকে মহড়া শুরু তখন থেকেই সাজ সাজ রব৷ ড্যান্স গ্রুপ কোম্পানী ঈগল আমাদের টাইটেল স্টেপ গুলো শিখিয়ে দিচ্ছিল৷ দিনরাত খেটেও তরুণ প্রাণে বিশ্রাম নেই প্রতিটি স্টেপ মুহূর্তেই আয়ত্ত করে নিচ্ছে৷ যে আগে কখনো ড্যান্স করেনি সেও হিপ হপের দোলায় মাথা নাড়াচ্ছে৷''
অন্য দেশের নাচই গ্রহণ করে চলেছে জার্মানি
জার্মানরাও নাচতে ভালোবাসেন৷ তবে অন্য দেশের নাচই নাচতে বেশি পছন্দ করেন তাঁরা৷ কোনো নাচের ট্রেন্ড জার্মানিতে হয়ত থাকে শুধুমাত্র একটি গ্রীস্মে, আবার কোনো নাচ প্রতিষ্ঠত হয়ে যায় স্থায়ীভাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবচেয়ে বড় কথা ‘বিশেষ কিছু’
নাচের দিক থেকে যে জার্মানরা ভীষণ এগিয়ে আছে বা অত্যন্ত প্রতিভাধর, তা বলা যায় না৷ সত্যিকার অর্থেই জার্মানির প্রায় সব নাচের ‘স্টাইল’ বা কৌশলই ভিনদেশ থেকে আমদানি করা৷ জার্মানদের নাচ বলতে আঞ্চলিক, ঐতিহ্যবাহী এবং লোকনৃত্য – যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে তেমন পছন্দ নয়৷ বরং অ্যামেরিকান ‘হিপহপ’ নাচ বেশ অনেকদিন থেকেই জার্মানিতে জনপ্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাচ, নাকি নাচের লড়াই ?
‘চাপয়িরা’ নাচ এখনো আগের মতো বেশ জনপ্রিয়, যা এরই মধ্যে পুরুষদেরও পছন্দের নাচ হয়ে উঠেছে৷ চাপয়িরা নাচ হচ্ছে, আফ্রিকান – একটি ব্রাজিলিয়ান শিল্পকর্ম, যা নাচ এবং লড়াইয়ের কৌশল মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এবং যার মধ্য দিয়ে শরীরের নানা অনুভূতি প্রকাশ করা হয়৷ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জার্মানিতে এই নাচের চর্চা হচ্ছে এবং বড় শহরগুলোতে এ নাচের কোর্স রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দক্ষিণ অ্যামেরিকার জনপ্রিয় নাচ ‘সালসা’
জার্মানিতে নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো প্রায় সবাই ‘সালসা’ নাচের ভক্ত৷ যদিও অনেক জার্মানেরই কোমর দোলানো ‘সালসা নাচ’ নাচতে বেশ কষ্ট হয়৷ নৃত্য গবেষণা কেন্দ্রের ক্রিস্টিয়ানে রোজেনব্যার্গ-আহলহাউস বলেন, আসলে প্রতিটি দেশেরই কিছু নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে৷ জার্মানরা উত্তেজনাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে, যেখানে কিছু কিছু দেশের মানুষ শরীর দোলানোকেই বেশি পছন্দ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কঠিন হলেও সুন্দর, আকর্ষণীয়
শরীর দোলানোর দিকে থেকে ‘সালসা’ নাচের সাথে আর্জেন্টিনার ‘ট্যাঙ্গো’ নাচের বেশ মিল৷ কিন্তু যাঁরা একবার এই নাচ শেখার চেষ্টা করেছে, তাঁরা জানে কত কঠিন এই নাচ৷এর নিদির্ষ্ট কোনো ধাপ নেই, ছেলেরা আগে পা ফেলবে আর মেয়েরা ছেলেদের অনুসরণ করবে – এটাই নিয়ম৷ কেমন সেকেলে মনে হচ্ছে, তাই না? সে কারণেই এবার এমন এক ট্যাঙ্গো কোর্স শুরু হয়েছে, যেখানে মেয়েরা আগে পা ফেলবে আর ছেলেরা তার সাথে সাথে পা ফেলে অনুসরণ করবে৷
ছবি: Scott Griessel/Fotolia
প্রাচ্যের ধ্বনি
গুরুগম্ভীরতার দিন শেষ, তবে প্রাচ্যের ‘বেলি ড্যান্স’ এখনো সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়, বিশেষকরে মেয়েদের কাছে৷ নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের নাচের স্কুলের শিক্ষিকা আঙ্গেলা ভুকো বলেন, ‘‘বেলি ড্যান্সের ট্রেন্ড আগের মতো না হলেও এর স্থিতিশীল একটা চাহিদা রয়েছে৷ ক্লাসে শুধু নাচের মুদ্রাই শেখানো হয় না, জানানো হয় মিশরীয় এই নাচের ইতিহাসও৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
মন-মেজাজ ভালো করা ‘বলিউড’ নাচ
ভারতীয় পপ নাচ – যা জার্মানরা বলিউড ছবির মাধ্যমে চেনেন, সে নাচ জার্মানিতে ‘সালসা’ বা অন্য নাচের মতো এখনো এতটা জনপ্রিয় হয়নি৷ তবে বলিউড নাচের আলাদা স্টাইলের কারণে আজকাল বিভিন্ন জায়গায় এই নাচ দেখা যায়৷ তবে ঐতিহাসিক ভারতীয় নাচ খুবই কঠিন, বলেন আঙ্গেলা ভুকো৷ কিন্তু বলিউড নাচ খুবই সহজ৷ মন ভালো করা আনন্দের গান আর সাথে খানিকটা শরীর দোলানো – ব্যাস, হয়ে গেলো বলিউড ড্যান্স৷
ছবি: picture alliance/Sascha Radke
বিপরীতমুখী নৃত্য শৈলী
অ্যামেরিকায় তিরিশ এবং চল্লিশের দশকে ফুল ফোটার সময় হলে আনন্দে হেলেদুলে এই নাচ নাচা হতো৷ এই নাচ এখন আবারো জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে, বলেন নাচের শিক্ষক ও ট্রেন্ড গবেষক মার্কুস স্যোয়ফেল৷ অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ‘সুয়িং গান’ শুনতে যেমন আজকাল ভালো লাগছে, তেমনি এই নাচও আবার ফিরে আসছে৷ ঠিক ফ্যাশনের মতোই, পুরনো স্টাইল যেমন নতুন হয়ে বারবার ফিরে আসে৷
ছবি: picture alliance/dpa
কোরিয়ার ধর্মীয় নাচ
গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ার ‘গাংনাম স্টাইল’ নাচ ‘হিট’ হয়েছিল৷ পার্টিতে নাচার জন্য যে কেউ ইন্টারনেট দেখে এই নাচ শিখে নিতে পারতো, এখনও পারে৷ এই নাচ শেখার জন্য ইউটিউবে যথেষ্ট নমুনা দেওয়া আছে৷ তাছাড়া জার্মানির নাচের স্কুলগুলোও এই নাচ শেখানোর ব্যাপারে বেশ উৎসাহী৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বার্লিনে ৩১ ডিসেম্বর রাতে বহু মানুষ ‘গাংনাম’ নৃত্যের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করেছে৷
ছবি: Reuters
কলোম্বিয়া থেকে আসা ফিটনেস ড্যান্স
‘জুম্বা’ অর্থাৎ জাদুমন্ত্র, যা সারা বিশ্বের মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছে৷ আসলে এটাকে নাচ না বলে বরং বলা যেতে পারে ‘অ্যারোবিক’, যার সঙ্গে রয়েছে ল্যাটিন অ্যামেরিকার নাচের ছন্দ ও মুদ্রা৷ এই ‘কনসেপ্ট’ এসেছে আসলে কলোম্বিয়া থেকে, যা বর্তমানে জার্মানির ফিটনেস সেন্টারগুলোতে খুবই জনপ্রিয়৷ সারা বিশ্বে নাকি এরই মধ্যে জুম্বা নাচের ভক্তের সংখ্যা প্রায় ১২ মিলিয়ন ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভিন্ন স্বাদের নাচ
‘বারলেক ড্যান্স’, যা পুরনো দিনে মূলত পুরুষদের আকর্ষণ করার জন্য নাচা হতো, সেই নাচে অনুপ্রাণিত হয়ে অ্যামেরিকান নাগরিক দিটা ফন টিজ সম্প্রতি জার্মান নারীদের মধ্যেও এই নাচ পরিচিত করানোর চেষ্টা করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
ফয়সাল লিখেছেন, ‘‘শুধু বাংলাদেশ ও ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা থেকেই কাজটা করেছি৷ আমাদের সব পরিশ্রম উৎসর্গ করলাম টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নেয়া বাংলাদেশ টিমের প্রতি৷''
প্রসঙ্গত, টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের থিম সং-এ বাংলা এবং ইংরেজি ভাষার মিশ্রণের সমালোচনাও করেছেন কেউ কেউ৷ জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক ফেসবুকে এই বিষয়ে লিখেছেন, ‘‘সত্যি বলতে কি, চার ছক্কা হই হই গানটা প্রথম শোনার পর আমার ভালো লাগেনি৷ মনে হয়েছে, কথা ঠিক মানসম্পন্ন নয়৷ বল গড়াইয়া গেল কই, বল উড়ায়া গেল কই... ঠিক সুন্দর কথা নয়৷ উড়ায়া তো শব্দ নাই, রবীন্দ্রনাথের মতো শব্দ যেন মিলের প্রয়োজনে বানাতে হয়েছে৷ তারপর ইংরেজি বাংলা খিচুড়ি৷
তবে গানটির বর্তমান জনপ্রিয়তা বিবেচনায় এনে তিনি লিখেছেন, ‘‘এখন মনে হচ্ছে, এটাই সবচেয়ে সুন্দর গান৷ আর যে হারে এটা নিয়ে ফ্ল্যাশমব হচ্ছে সারা পৃথিবী জুড়ে, তাতে হয়তো গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাশমবের গান হিসেবে এটার ঠাঁইও হয়ে যেতে পারে৷''