ঢাকায় বাসে সামনে বসা কলেজ ছাত্রীর গায়ে হাত দিয়ে পিটুনি খেয়েছেন এক যুবক৷ বৃহস্পতিবার সকালে এই ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে আপলোড হওয়ার পর তা ভাইরাল হয়ে যায়৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টার দিকে ফেসবুকে ভিডিওটি আপলোড করেন জেবা সাজিদা মৌ নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী৷ সঙ্গে সঙ্গে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে, একদিনের মধ্যে সেটি প্রায় পৌনে ছয় লাখ বার দেখা হয়ে যায়৷ এই সময়ের মধ্যে তাতে লাইক পড়ে প্রায় দশ হাজার, শেয়ার করা হয় নয় হাজারের বেশি অ্যাকাউন্ট থেকে৷
ভিডিওতে দেখা যায়, কলেজ ড্রেস পরা একটি মেয়ে পেছনের সিটের এক যুবকের ওপর চড়াও হয়েছেন, তাকে চড়-থাপ্পড় মারছেন৷ এ সময় তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘তুই আমার কলেজের সামনে এখন, তোকে আজকে মেরেই ফেলব৷’’ তখন আশপাশের লোকজন তাকে বলে, ‘‘এই স্যরি বল৷’’ যুবকটি ‘‘স্যরি’’ বললে মেয়েটিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনার স্যরি, লুচ্চামি করবেন, মেয়েদের গায়ে হাত দেবেন৷’’
জেবা সাজিদা মৌ এর ভিডিওটি অনেকেই তাঁদের ফেসবুক পাতায় শেয়ার করেছেন৷
এ সময় ওই যুবক প্রশ্ন করে, ‘‘আপনি আমাকে একবারও বলেছেন?’’ তখন পাশ থেকে আরেক নারীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এই মিয়াঁ, আপনাকে বলবে কেন?’’ এই পর্যায়ে পাশের অন্য যাত্রীরাও ওই যুবকের ওপর চড়াও হয়, চড়-থাপ্পড় মেরে তাকে বাস থেকে নামিয়ে দেয়৷
ভিডিও আপলোড করার পর ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন মৌ৷ যৌন নিপীড়ককে শক্ত জবাব দেওয়ায় কলেজছাত্রীর প্রশংসা করতে দেখা যায় তাঁকে৷
ওই আলাপচারিতায় ঘটনার বিবরণে তিনি জানান, মেয়েটি প্রথমে প্রতিবাদ করলে আশপাশের যাত্রীরা তাকে বলতে থাকেন, ‘‘মা, চুপ করো’’, ‘‘মা, চুপ করো’’৷ তখন তিনি মেয়েটির পক্ষে দাঁড়ান৷ এরপর মেয়েটি নিপীড়কের মুখে চড় কষিয়ে দিলে অন্যরাও তাঁকে ধরেন৷
এএইচ/এসিবি
গতবছর জুলাইয়ের ছবিঘরটি দেখুন...
ইভ টিজিং থেকে বাঁচতে কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন নারীরা
বাংলাদেশে ইভ টিজিং আর নারী নির্যাতনের হার বেড়ে চলছে৷ ফলে আত্মরক্ষার জন্য মার্শাল আর্ট বা কারাতে প্রশিক্ষণে ঝুঁকছেন নারীরা৷ আত্মরক্ষার পাশাপাশি শারীরিক সুস্থ্যতার বিবেচনায় অনেকেই আজকাল কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ইভ টিজিং আজও এক বড় সমস্যা
বাংলাদেশে নারীদের জন্য ইভ টিজিং একটি বড় সমস্যা৷ পথ চলতে নারীরা হরহামেশাই ইভ টিজিং-এর শিকার হন৷ ইভ টিজিং-এর কারণে অনেক নারী শিক্ষার্থীর স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়েছে৷ এমনকি এর বঞ্চনা সইতে না পেরে অনেকে আত্মহননের পথও বেছে নিয়েছেন৷ (প্রতিকী ছবি)
ছবি: DW/M. Mamun
আত্মরক্ষার পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতা
তাই এবার আত্মরক্ষার জন্য মার্শাল আর্ট বা কারাতে (বানানভেদে ক্যারাটে) প্রশিক্ষণের দিকে ঝুঁকছেন বাংলাদেশের নারীরা৷ তবে শুধু আত্মরক্ষা নয়, পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতার জন্যও অনেকে আজকাল এই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷ যেমন ঢাকার রামপুরার বনশ্রী এলাকার একটি স্কুলে কারাতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
নারীদের কারাতে শিখতে উৎসাহ দেওয়া
ঢাকার বনশ্রী এলাকায় ওসমানী স্পোর্টস স্কুলে নানা রকম খেলাধুলার সঙ্গে কারাতে প্রশিক্ষণ দেন প্রশিক্ষক আশেক ওসমানী৷ তাঁর মতে, নারীদের মধ্যে কারাতে প্রশিক্ষণের প্রতি উৎসাহ দিনে দিনই বাড়ছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
নারীদের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ
মাত্র দু’জন শিক্ষর্থীকে নিয়ে শুরু করা এ স্কুলে এ মুহূর্তে কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন দেড়শ’ জনেরও বেশি প্রশিক্ষণার্থী৷ তাছাড়া ওসমানী স্পোর্টস স্কুলে অর্থিকভাবে অসচ্ছল নারীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই নারী অথবা শিশু
ওসমানী স্পোর্টস স্কুলে প্রশিক্ষণ নিতে আসাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী৷ তবে মোটের ওপর বাংলাদেশে কারাতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে শিশু শিক্ষার্থীর হার সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
যৌন হয়রানি বেড়ে যাওয়ায় কারাতে শেখা
আইরিন পেশায় ডাক্তার৷ ছোটবেলা থেকেই কারাতের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল৷ কিন্তু সে সময় বাসার আশেপাশে কারাতে শেখার তেমন কোনো জায়গা না থাকায় শেখার সুযোগ হয়নি তাঁর৷ তবে দেশে ইভ টিজিং এবং যৌন হয়রানি বেড়ে যাওয়ায় এখন কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
আত্মরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন মুমতাহিন
মুমতাহিন জাহান পড়েন ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে৷ পড়ালেখার কারণে অনেক সময়ই তাঁকে রাত-বিরেতে চলতে হয়৷ তাই নিজের আত্মরক্ষার কথা ভেবেই তিনি কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সমাজের অমূলক ভ্রান্ত ধারণা ভাঙতে কারাতে
ইশরাত জাহান গৃহিনী৷ স্কুল পড়ুয়া একমাত্র কন্যাকে তিনি কারাতে স্কুলে নিয়ে আসেন নিয়মত৷ নিজে স্কুলে পড়ার সময়ে একবার কারাতে প্রশিক্ষণে ভর্তি হলেও পরিবার ও মানুষের চাপে তিনি সেটা করতে পারেননি৷ মেয়েদের কারাতে শেখা ঠিক নয় – এই ধরনের অমূলক ভ্রান্ত ধারণা ভাঙতেই তাই আজ নিজের মেয়েকে কারাতে শেখাচ্ছেন ইশরাত৷ তাঁর মতে, বাংলাদেশের মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল জানা খুবই জরুরি৷
ছবি: DW/M. Mamun
মফস্বলের নারীদের জন্যও চাই আত্মরক্ষার কৌশল
কারাতে প্রশিক্ষক আশেক ওসমানী শহরের বাইরে থেকে আসা নারীদের জন্য একটি নতুন প্রকল্প শুরুর কথা ভাবছেন৷ তাঁর মতে, শহরের চেয়ে গ্রামে ইভ টিজিং-এর হার কোনো অংশে কম নয়৷ তাই মফস্বল এলাকার কিছু স্কুলের পাঁচজন করে শিক্ষার্থীকে আত্মরক্ষার কৌশল শেখাতে চান তিনি৷ উদ্দেশ্য – তাঁর কাছে শেখা শিক্ষার্থীরাই আবার স্কুলের বাকি শিক্ষার্থীদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখাবে৷ এতে করে মফস্বলের নারীরাও আত্মরক্ষার কৌশল শিখতে পারবেন৷