‘‘ভিডিওতে যে মধ্যবয়সি নারীকে দেখছেন, তিনি একটি রেস্টুরেন্টে সাত জন পুরুষকে আমাদের ধর্ষণ করতে বলেন, কারণ, আমরা ছোট কাপড় পরেছি বলে এটাই নাকি আমাদের প্রাপ্য...’’ ফেসবুক পোস্টটিতে এমনটাই লেখা ছিল৷
বিজ্ঞাপন
অনেক পুরুষই মনে করেন যে, নারীর পোশাকই তাঁকে ধর্ষণের জন্য দায়ী৷ কিন্তু অনেকেই এই যুক্তিকে অসার মনে করেন৷ কারণ, যদি তাই হতো তাহলে ধর্ষকরা ২ বছরের শিশু বা ৮০ বছরের বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করতেন না৷ আবার পুরো শরীর ঢাকা মেয়েদেরও ধর্ষকরা ছাড়েন না৷
কিন্তু নারীর পোশাক ধর্ষণকে উৎসাহিত করে, এমন ধারণা শুধু কতিপয় পুরুষের নয়৷ এমন ধারণা অনেক নারীরও৷ তেমন প্রমাণ পাওয়া গেল ভারতের গুরগাঁওয়ে৷ ভিডিওতে দেখা যায়, একজন মধ্যবয়স্ক নারীকে কয়েকজন তরুণী মিলে তাঁর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে বলেছেন৷ ঐ নারী নাকি পাশের একটি রেস্টুরেন্টে বসে মন্তব্য করেছিলেন যে, ঐ তরুণীরা ছোট কাপড় পরেছেন, তাই তাদের ধর্ষণ করা উচিত৷ সেই ভিডিও রেস্টুরেন্টটির সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া যাবে বলেও বার বার বলছিলেন তারা৷
কিন্তু ভিডিওতে দেখা যায়, ঐ মধ্যবয়স্কা কোনোভাবেই তার মন্তব্যের জন্য অনুতপ্ত নন৷
এ সময় পুলিশ ডাকার কথা বলে দুইপক্ষই৷ এ সময় আরেক নারী নিজেকে দুই সন্তানের জননী বলে পরিচয় দিয়ে ঐ নারীকে বলেন যে, ‘‘আপনাকে তো কেউ বিকিনি পরার জন্য জোর করছে না৷ আপনি কেন অন্য একজন কী পরবে, তাতে জোর করছেন?’’
তিনি বলেন, একজন মানুষ কী পোশাক পরবেন, তা অন্য কেউ ঠিক করে দেবেন, এটা হয় না৷ কেউ যদি বোরখা পরতে চান, তিনি তাই পরবেন, কেউ বিকিনি পরতে চাইলে তাই পরবেন৷ এটা যার যার স্বাধীনতা৷
কিন্তু এসব যুক্তিতে কি কাজ হয়?
শেষ পর্যায়ে অভিযুক্ত নারী ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘‘বন্ধুরা, এই নারীরা ছোট থেকে ছোট কাপড় পরতে চান, কারণ, তারা চান তাদের সবাই দেখুক৷ ঠিক আছে? বাহ, খুব ভালো৷ যেসব নারী ছোট কাপড় পরেন, ধর্ষিত হবার জন্য পরেন!’’
ভিডিওটি মঙ্গলবার ফেসবুকে প্রকাশিত হবার পর ভাইরাল হয়ে যায়৷ সামাজিক যোগাযোগের অন্য মাধ্যমেও ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে৷
জেডএ/এসিবি (এনডিটিভি)
নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশ ভারত
নারী বিষয়ক অধিকার নিয়ে কাজ করা ৫৫০ বিশেষজ্ঞের মতামতের প্রেক্ষিতে পরিচালিত এক জরিপের ফলে ‘নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক’ দেশের তালিকার শীর্ষে এসেছে ভারত৷ থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের জরিপটি ছবিঘরে দেখে আসি জরিপের খুঁটিনাটি৷
ছবি: Imago/Indiapicture
ভারতীয় নারী
‘নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত ভারতে প্রতিদিন একশ’ নারীর ওপর যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের অভিযোগ পায় পুলিশ৷ ২০১৬ সালে ভারতের পুলিশ প্রায় ৩৯ হাজার নারীর ওপর আক্রমণ বা হয়রানির অভিযোগ পেয়েছিল, যা তার আগের বছরের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি ছিল৷ ভারতের নারীরা যৌন হয়রানি বা ধর্ষণ ছাড়াও, পাচার, জোর করে কাজ করানো, আয় বৈষম্য, অ্যাসিড নিক্ষেপ ইত্যাদির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Reuters/P. Ravikumar
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান
২০১১ সালে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন পরিচালিত একই শিরোনামের প্রথম জরিপটিতে নারীদের জন্য ভয়ঙ্কর দেশের তালিকায় আফগানিস্তান ছিল প্রথমে৷ এবার তালিকায় তাদের অবস্থান দুই নম্বরে৷ তালিকায় যে সাতটি বিষয়ের ওপর জরিপ চালানো হয়েছিল, তার চারটি বিষয়ে আফগানিস্তান সবচেয়ে কম পয়েন্ট পেয়েছে৷ লৈঙ্গিক নিপীড়ন, ব্যবহার, নিরক্ষরতা, দারিদ্র ইত্যাদি প্রশ্নে আফগানিস্তান এখনো নারীদের জন্য নরক৷
ছবি: AP
সিরিয়া
সিরিয়ায় তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর উত্থান এবং যুদ্ধ সেদেশের নারীদের জন্য তৈরি করেছে ভয়ংকর পরিবেশ৷ ২০১১ সালে একই তালিকায় সিরিয়া প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে ছিল না৷ তারাই এবার উঠে এসেছে তিন নম্বরে৷
ছবি: picture-alliance/Anadolu Agency/M. Abdullah
আফ্রিকার তিন দেশ
সোমালিয়া, কঙ্গো আর নাইজেরিয়ার নারীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দেশের তালিকায় যথাক্রমে চতুর্থ, সপ্তম এবং নবম স্থানে রয়েছে৷ এদের মধ্যে সোমালিয়া প্রায় দুই দশক ধরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত৷ এর আগের তালিকায় সোমালিয়ার অবস্থান ছিল ৫ নম্বরে৷ এদিকে ২০১১ সালের তুলনায় জরিপের ফল অনুযায়ী রিপাবলিক কঙ্গোর অবস্থান কিছুটা ভালো হয়েছে৷ তারা এর আগে তালিকায় দুই নম্বরে ছিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
সৌদি ও পাকিস্তান
আগের তালিকায় পাকিস্তান ছিল তিন নম্বরে, অর্ধযুগের বেশি সময় পরে চালানো জরিপে তাদের অবস্থান ছয় নম্বরে৷ এদিকে সম্প্রতি নারীবান্ধব নানা পদক্ষেপ নিলেও সৌদি আরব নারী অধিকার ও নিপীড়নের প্রশ্নে, এখনো বিশ্বে নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশের তালিকাতে শীর্ষের দিকেই রয়ে গেছে৷ সৌদির অবস্থান নতুন তালিকায় ৬ নম্বরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
জরিপ
জাতিসংঘের সদস্য ১৯৩ টি দেশের ওপর এই জরিপ চালানো হয়৷ জরিপে তালিকার শীর্ষের দেশগুলো আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের৷ যে যে বিষয় জরিপে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো: স্বাস্থ্যখাত, নারীদের অর্থনৈতিক অবস্থান, সাংস্কৃতিক চর্চা, যৌন নিপীড়ন, যৌনতা ছাড়া অন্যান্য নিপীড়ণ এবং নারী পাচার৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTO
অ্যামেরিকাও তালিকায়
পশ্চিমের একমাত্র দেশ হিসেবে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় অ্যামেরিকা এসেছে ১০ নম্বরে৷ সম্প্রতি ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ আন্দোলন এবং ‘টাইমস আপ’ ক্যাম্পেইনে নারীদের ওপর দেশটিতে প্রচুর যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ হতে শুরু করায় তালিকায় এসেছে দেশটি৷