এই যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি, সেখানে তরুণ বা নতুন ভোটারদের কথা বিবেচনায় রাখা হয়েছে কতটুকু?
বিজ্ঞাপন
যে-কোনো স্বাভাবিক সাধারণ নির্বাচনে তরুণ এবং নতুন শব্দ দুটি প্রায় সমার্থক হয়ে থাকে। আগের নির্বাচনে যাদের বয়স ১৪ ছিল, এবার তারা ১৯ বছরের তরুণ। এরাই নতুন ভোটার।ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
শফিক রেহমানের কাছে বাংলাদেশের মিডিয়া অনেকভাবে কৃতজ্ঞ থাকবে। তিনি নতুন অনেক কিছু চালু করেছেন, মিডিয়া কীভাবে রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, সেটাও সম্ভবত তিনিই প্রথম দেখিয়েছিলেন। একটা ঘটনা বলি।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে একটা প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হয়েছিল তরুণ ভোটারদের নিয়ে। শফিক রেহমানের এই সাময়িকীটি তখন সরাসরিই বিএনপির পক্ষ নিয়েছিল। যায়যায়দিন সে সময় তরুণদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়, অনেকটা নেশার মতো। আমার স্পষ্ট মনে আছে, একেবারে নির্বাচনের দিনেই ম্যাগাজিনটি বাজারে এসেছিল, আর সেই সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে ‘এক কোটি নতুন ভোটার'-এর কাছে সরাসরিই আহ্বান জানানো হয়েছিল বিএনপিকে ভোট দেওয়ার জন্য। নির্বাচনের দিন সকালে ম্যাগাজিনটি হাতে নিয়ে আমার মনে দুটি প্রশ্ন জেগেছিল। প্রথমত, একটা মিডিয়া এভাবে প্রকাশ্যে কোনো একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিতে পারে কি-না। দ্বিতীয়ত, আহ্বানটি কেবল নতুন এক কোটি ভোটারের কাছেই কেন? অন্য সকল ভোটারের কাছে বিশেষ অনুরোধের কথা কেন গুরুত্ব দিয়ে বলা হলো না?
নির্বাচনে প্রথম ভোটারদের প্রত্যাশার কথা
নির্বাচন নিয়ে সব ভোটারেরই কিছু প্রত্যাশা থাকে৷ পরবর্তী নির্বাচনে এই প্রথম যারা ভোট দেবেন, তারা কী আশা করছেন? কেমন প্রার্থী পছন্দ তাদের? এসব জানতে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার প্রথম ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে...
ছবি: NurPhoto/IMAGO
নির্বাচন নিয়ে আশাভঙ্গ হবার ইঙ্গিতই পাচ্ছি: ইমরান নাফিস, লেখক ও চাকুরিজীবী
বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ নিয়ে যারাই কাজ করছে বা করবে, আমার ভোটটা তাদেরই দেয়ার চিন্তা করছি। কারণ, নির্বাচিত প্রতিনিধি বাচাই করার মধ্যেই বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্তে একটা ব্যাপার খুবই হতাশাজনক, সেটা হলো, এখানে রাজনৈতিক বিশ্বস্ততার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। সামনের নির্বাচনেও এমন হতে পারে।আমি আগামী নির্বাচন নিয়ে আশাভঙ্গ হবার ইঙ্গিতই পাচ্ছি।
ছবি: DW
পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সুযোগ চাই: অন্নি ইসলাম, চাকুরীজীবি
একটি স্বাধীন দেশে সরকার নির্বাচিত হবে ভোটের মাধ্যমে। সে দেশের সরকার পরিচালিত হবে আইনের শাসন এবং মেধাবীদের মাধ্যমে। এটিকে রাজনীতি বললে এটাই আমার রাজনৈতিক আদর্শ। আমি মনে করি, আগামী নির্বাচন হবে একটি উৎসবমুখর নির্বাচন, যেখানে দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজন ভোটকে একটি উৎসব মনে করবে। আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো- দেশের বহুল প্রচলিত এ ধারণাকে আমি লালন করে আমার প্রথম ভোট প্রদান করবো।
ছবি: DW
নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে যাচ্ছে: আবির মিনহাজ, আইনজীবী
আমার রাজনৈতিক দর্শন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। কিন্তু শুধু দলীয় আদর্শে জাতীয়তাবাদ থাকা মুখ্য নয়, বরং জাতীয়তাবাদের আদর্শকে ধারণ করে যারা রাজনীতি করবে, তাদের পক্ষেই আমার সমর্থন। আগামী নির্বাচন নিয়ে আমি বেশ আশাবাদী, কারণ, জীবনের প্রথম ভোট প্রদান করবো একটি ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের অধীনে। তবে আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারা, সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে যাচ্ছে।
ছবি: DW
আশা করছি আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে: আদিবা সায়মা খান, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের বৈধতা নিয়ে ফ্যাসিবাদী সিস্টেম চালু করবে না, যে জুলাই গণহত্যার বিচারের নিশ্চিত আস্বাস দিতে পারবে এবং নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং নিপীড়িত শ্রেণির অধিকার লঙ্ঘন করবে না - আমি তাদেরই সাপোর্ট দেবো। আগামী নির্বাচন আশা করছি অংশগ্রহণমূলক হবে এবং নাগরিকরা নিজের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সঠিক প্রার্থী বেছে নেবে।
ছবি: DW
দলগুলো নিজেদের বিভিন্ন দ্বন্দ্ব নিয়ে ব্যস্ত, তাই এখনো কারো প্রতি আশা রাখতে পারছি না: মোঃ মিরাজুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক
প্রথমবার ভোটার হিসেবে আমি আশাবাদী। আমার আদর্শ এমন দলকে সমর্থন দেওয়া, যারা খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা খাতে উন্নয়ন করবে, সেই সাথে স্বাধীন বিচার বিভাগ ও বাক স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বাস্তবেই কাজ করবে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি বা অন্যান্য দলগুলো নিজেদের বিভিন্ন দ্বন্দ্ব নিয়ে ব্যস্ত৷ তারা এখন পর্যন্ত কোনো আশানুরূপ প্রতিশ্রুতি বা বাস্তবায়নের রূপরেখা দেয়নি। তাই এখন পর্যন্ত কারো প্রতি আশা রাখতে পারছি না।
ছবি: DW
নির্বাচন হোক শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতের: ম্যাগনোলিয়া মন্ডল রিয়া, শিক্ষার্থী, নটর ডেম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
একজন নতুন ভোটার হিসেবে ভোট দেওয়ার সুযোগকে শুধু একটি অধিকার নয়, বরং দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব মনে করি। ভোট দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে আমার অংশগ্রহণের সুযোগ। আমার কাছে রাজনীতি মানে, মানুষের কল্যাণ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। আমি চাই এমন প্রার্থীরা নির্বাচিত হোক, যারা সৎ, যোগ্য এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে এবং দেশের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করবে। নির্বাচন হোক শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ এবং সমান সুযোগ নিশ্চিতের।
ছবি: DW
নির্বাচনে আমরা সকলের রাষ্ট্র বিনির্মাণে আমাদের ভোটাধিকার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রয়োগ করতে পারবো: দনওয়াই ম্রো, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রথম ভোটার হিসেবে দেশের বৈচিত্র্যময় জাতিস্বত্বার অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে আমি ডানে বাম, বামে ডান, তথা মধ্যম পন্থা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে, দেশের স্থিতিশীলতা অর্জনে নির্বাচন ছাড়া আমাদের আর দ্বিতীয় কোনো পথ নেই। আমি বিশ্বাস করি, বহুলপ্রত্যাশিত নির্বাচনটি হবে এবং আমরা সকলের রাষ্ট্র বিনির্মাণে আমাদের পবিত্র আমানত ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবো।
ছবি: DW
জনগণকে খুশি করাই যে রাজনীতির মূল কাজ, সেটি আশা করছি নেতা এবং নেতা হতে ইচ্ছুকগণ বুঝতে পারবেন: দীপ্তি চৌধুরী, গণমাধ্যম ও উন্নয়ন কর্মী
আমার ধারণা, এবারের নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতির মোড় ঘোরানো ঘটনা হবে। এখানে চিরকাল রাজনীতিবিদরা এলিট শ্রেণি এবং জনগণ প্রলেতারিয়েত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।দলীয় নেতা নয়, বরং জনগণকে খুশি করাই যে রাজনীতির মূল কাজ, সেটি আশা করছি নেতা এবং নেতা হতে ইচ্ছুকগণ বুঝতে পারবেন।
ছবি: DW
আশা করি নির্বাচন অবাধ, রাজনৈতিক দলগুলোর হস্তক্ষেপহীন ও উৎসবমুখর হবে: হাবিবুর রহমান মোল্লা, চোখ হারানো জুলাই যোদ্ধা ও শিক্ষার্থী
যারা চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস করবে না, নিজেদের নতুন করে বাহুবলী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না করে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করবে, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪-এর জুলাইকে লালন করবে, জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করবে, তাদেরকেই বিবেচনায় নেয়া হবে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, যেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকবে না, উৎসবমুখর নির্বাচন হবে বলে আশাবাদী। এর জন্য কমিশনকে নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামোর উন্নয়নে মনযোগী হতে হবে।
ছবি: DW
9 ছবি1 | 9
প্রথম প্রশ্নটির জবাব জনাব শফিক রেহমান সেই সংখ্যার সম্পাদকীয়তেই দিয়েছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন মিডিয়া হাউজের উদাহরণ দিয়েছিলেন, বলেছিলেন- পত্রিকা বা টেলিভিশন সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিতে পারে, নিয়ে থাকে। এবার আসি দ্বিতীয় প্রসঙ্গে, তরুণ বা নতুন ভোটারদের গুরুত্বের বিষয়ে। পুরাতন ভোটারদের পরিবর্তে নতুন ভোটাররা যে আসলেই একটা জাতীয় নির্বাচনে নিয়ামকের ভূমিকায় থাকতে পারে, বিষয়টা সেবারই প্রথম আমি উপলব্ধি করতে পারি ওই প্রচ্ছদ প্রতিবেদনটি পড়ে। সেদিন আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটি অবশ্য একটু নেতিবাচকই ছিল। আমি ভাবছিলাম— এমনিতেই সরকারি দল হিসেবে জনসমর্থনের দিক দিয়ে আওয়ামী লীগ একটু পিছিয়ে, এর মধ্যে যদি এরকম প্রভাবশালী একটা মিডিয়া প্রকাশ্যে বিএনপির পক্ষ নেয়, তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা কি কিছুটা একপেশে হয়ে যায় না? সাংবাদিক হিসেবে আমি তো ভোটের একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখতে চেয়েছিলাম। পরে অবশ্য আমার কাছে যায়যায়দিনের সেই ভূমিকাটিকে যথার্থই মনে হয়েছে। কোনো একটা রাজনৈতিক পলিসির পিছনে বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতাকারী হিসেবে মিডিয়া ভূমিকা রাখতেই পারে। যায়যায়দিনের সেদিনের সেই অবস্থান নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল বলে আমার ধারণা। বিপুল ব্যবধানে সেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল বিএনপি। এতদিন পরে এসে আমার এখনও মনে হয়, তরুণ বা নতুন ভোটারদের ওই কনসেপ্টটা আসলেই ‘ইউনিক' ছিল।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কি-না, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই সংশয় আছে। কেন এমন সংশয়, তা নিয়ে লম্বা আলোচনা করা যায়। কিন্তু তারপরও এটা সবাই মানবেন, ফেব্রুয়ারি না হয় এপ্রিল, কিংবা জুন— নির্বাচন হবেই। নির্বাচনকে সামনে রেখেই বর্তমানে আবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি। এই রাজনীতি নির্বাচনকে এগিয়ে বা পিছিয়ে নিতে যেমন হচ্ছে, তেমনি হচ্ছে নির্বাচনে নিজ দলের জন্য একটা ভালো ফল পাওয়ার জন্যও। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি এই মুহূর্তে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলন করছে। তারা পিআর বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন চায়। একদিকে তারা পিআর পদ্ধতির দাবি তুলছে, অন্যদিকে আরো মাস কয়েক আগেই তারা ঘোষণা করেছে তিনশ' আসনে তাদের প্রার্থীদের নামের তালিকা। যতদূর জানা গেছে, বিএনপিও তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা ঠিক করার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এসবই নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক নমুনা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি, সেখানে তরুণ বা নতুন ভোটারদের কথা বিবেচনায় রাখা হয়েছে কতটুকু? কোনো সন্দেহ নেই, আগামী নির্বাচনে এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে।
নির্বাচন নিয়ে জনমনে শঙ্কা-সংশয়
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য ও সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েও মানুষের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সাথে কথা বলেছেন রাজনীতিবিদ, বিশ্লেষক, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীরা।
জনমনে স্বস্তি ফেরেনি, নির্বাচন হবে কীভাবে?: রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাধারণ সম্পাদক, সিপিবি
নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার তিনটি কারণ আছে। প্রথমত, জনজীবনে স্বস্তি ফেরেনি, এর মধ্যে নির্বাচন হবে কীভাবে? দ্বিতীয়ত, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আরও কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ দরকার ছিল। যেমন, রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনি যাত্রায় শামিল করার দরকার ছিল, যেটা তারা করেনি। তৃতীয়ত, সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনবিরোধী অবস্থান নিয়েই কথা বলছে। ফলে মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
ছবি: DW
রাজনৈতিক অনৈক্য ও নিরাপত্তাহীনতা নির্বাচনে বাধা : মনিরা শারমিন, যুগ্ম আহবায়ক, এনসিপি
মানুষের মধ্যে শঙ্কার অনেক কারণ আছে। মূলত দলগুলোর মধ্যে ঐক্য তৈরি হয়নি। এটা নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বড় প্রভাবক। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে এখন তো সবার মাঠে থাকার কথা। বিশেষ করে একটি দল যারা শুরু থেকেই নির্বাচনের কথা বলছে তারাও কিন্তু মাঠে নামেনি। তারাও জানে, রাজনৈতিক ঐক্য ছাড়া নির্বাচন সম্ভব না৷ মানুষ গত তিনটা নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচনহীনতার একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।
ছবি: Privat
জামায়াত-এনসিপির শর্ত শঙ্কা তৈরি করেছে : ডা. জাহেদ উর রহমান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
কতগুলো যৌক্তিক কারণেই সংশয় তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ মাঠে নেই। মূল দল জামায়াত ও এনসিপি নানা ধরনের শর্ত দিচ্ছে নির্বাচন নিয়ে। যেগুলো দেখে মনে হতে পারে তারা নির্বাচন চায় না। এটাই মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি করেছে। এই মুহূর্তে সবার নির্বাচনের মাঠে থাকার কথা। কিন্তু জামায়াত-এনসিপি যেসব শর্ত দিচ্ছে সেগুলো পূরণ না হলে তারা নির্বাচন করবে না। ফলে আদৌ নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা তো আছেই।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
নির্বাচন ছাড়া সরকারের বিকল্প নেই : রোকসানা খন্দকার, আইনজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব দেখা যাচ্ছে। কয়েকটি দল শর্ত দিচ্ছে, এটা না হলে, ওটা না হলে তারা নির্বাচনে যাবে না। এই শর্তের কারণে মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে যতই শঙ্কা থাক, বর্তমান সরকার কিন্তু বুঝতে পেরেছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থান নেই এতে মানুষ দারুনভাবে ক্ষুব্ধ। ফলে যত শঙ্কাই থাক না কেন, নির্বাচন দেওয়া ছাড়া এই সরকারের কোন বিকল্প নেই।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
আইন শৃঙ্খলা হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ: মোস্তফা ফিরোজ, সিনিয়র সাংবাদিক
তিনটা দলকে গুরুত্ব দেন ড. ইউনূস। এর মধ্যে জামায়াত ও এনসিপি পিআর সিস্টেমে নির্বাচন চায়। তাদের এই দাবির কারণে এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। আর বিএনপিও অগোছালো। তারেক রহমান দেশে নেই, প্রার্থী বাছাই করে যে তারা মাঠে নামবে সেটাও দেখা যাচ্ছে না। এসব কারণে অনিশ্চয়তা। আর আইনশৃঙ্খলা হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। পুলিশ আসলে প্রস্তুত না। সেনাবাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। এই কারণেও শঙ্কা বেড়েছে।
ছবি: Privat
নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে : সাইদুর রহমান, রাজনীতি ও নির্বাচন বিষয়ক সম্পাদক, ইত্তেফাক
ভোট ব্যবস্থাপনার প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা আছে। ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিত নিশ্চিত করার পাশাপাশি আরেকটি চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশনকে কঠিন সংকটের মুখোমুখী ফেলতে পারে। সেটি হল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিস-ইনফরমেশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে ছবি বা ভিডিও বানিয়ে ছড়িয়ে দেয়া। ভোট না হওয়া পর্যন্ত শঙ্কা থাকবে। এখনো নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ চাই : অর্পিতা সাহা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জীবনের প্রথম ভোট হিসেবে আমি চাই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে। এই নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হয়। যেখানে প্রতিটি দল সমান সুযোগ পাবে। আমার প্রত্যাশা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এমন সরকার নির্বাচিত হবে, যারা সত্যি জনগণের আশা ও কল্যাণ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে। বর্তমান সরকারের প্রতি জনগণের অনেক প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু সেই প্রত্যাশাগুলো পূরণ হয়নি। তাই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
নির্ভয়ে ভোট দিতে চাই : রাতুল হাসান রাফি, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জনগণ ভেবেছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই হবে পরিবর্তনের প্রতীক। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে, দুর্নীতি কমাবে, উন্নয়নের গতি বাড়াবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল ব্যর্থতাই বেশি। জনগণের আস্থা টিকিয়ে রাখতে হলে আর সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই। ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে। একেবারেই স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক, যেখানে কোনো দল বিশেষ সুবিধা না পায়। জীবনের প্রথম ভোট হিসেবে আমি নির্ভয়ে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই।
জাতীয় নির্বাচনে একজন তরুণ ভোটার হিসাবে আমার প্রধান প্রত্যাশা হলো সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব পাওয়া। আমি চাই শিক্ষা, কর্মসংস্থান প্রযুক্তিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হোক। দুর্নীতি কমানোসহ নারী হিসাবে আমার সমান সুযোগ ও নিরাপদ পরিবেশ প্রত্যাশা করি। সবশেষে, আমি এমন নেতৃত্ব চাই যারা ন্যায়ভিত্তিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়বে।
ছবি: Privat
নির্বাচন যেন অবাধ সুষ্ঠু হয় : আবু বকর অনিক, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আমি এখনও কোন নির্বাচনে ভোট দেইনি। জীবনে প্রথম ভোট দেবো রাকসু নির্বাচনে। আর ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে চাই। সেই নির্বাচনটি যেন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়। যাতে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত করতে পারে এবং একজন প্রকৃত স্বদেশপ্রেমী প্রতিনিধির মাধ্যমে সংসদে তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হয়।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
10 ছবি1 | 10
২০০১ সালে, কিংবা যে-কোনো স্বাভাবিক সাধারণ নির্বাচনে তরুণ এবং নতুন শব্দ দুটি প্রায় সমার্থক হয়ে থাকে। আগের নির্বাচনে যাদের বয়স ১৪ ছিল, এবার তারা ১৯ বছরের তরুণ। এরাই নতুন ভোটার। ১৫, ১৬ বা ১৭ বছর বয়স থাকার কারণে যারা আগের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি, এবার তারা প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাচ্ছে। হিসেবটা এরকমই থাকার কথা। কিন্তু আমাদের আসন্ন নির্বাচনে বিষয়টা অন্য রকম হয়ে যাবে। ২০২৪ এর জানুয়ারিতে যে নির্বাচনটা হলো, যেটাকে আমরা ‘আমি ও ডামি'র নির্বাচন বলি, তার ঠিক আগে আগে এক ভদ্রলোকের একটা কথা আমাকে খুব স্পর্শ করেছিল। তিনি একটা বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। তিনি জানালেন, তার বয়স ৩১ বছর, কিন্তু তিনি কোনোদিন জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। ২০০৮ এর নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি, কারণ, তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছর। এরপর ২০১৪ আর ২০১৮তে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। আর সবশেষ ২০২৪ যে প্রক্রিয়ায় ভোটের আয়োজন করা হয়েছে, ভোট দেওয়ার আগ্রহই তিনি হারিয়ে ফেলেছেন! তাই এবার আসন্ন এই নির্বাচনে, ৩৩ বছর বয়স্ক সেই ভদ্রলোক কিন্তু তরুণ না হলেও নতুন ভোটারই হবেন। ফলে এবার নতুন ভোটারের সংখ্যা দাঁড়াবে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি, প্রায় তিনগুণ। আমার বিবেচনায় এই নতুন ভোটাররাই আসন্ন নির্বাচনের ফলাফলকে নিয়ন্ত্রণ করবে।
হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ দুটি নির্বাচন আমরা দেখেছি। দুটিই অবশ্য ছাত্রসংসদ নির্বাচন, ডাকসু ও জাকসু। সে বিবেচনায় এই দুটি ছিল তরুণদের নির্বাচন। দুটি নির্বাচনেই ইসলামি ছাত্র শিবিরের প্রবল প্রাধান্য দেখা গেছে। সামনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচন হবে। সেগুলোতেও মোটামুটি একই ধরনের ফল হবে বলে অনেকে ধারণা করছে। এখান থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে। সেটা হচ্ছে— তরুণদের মধ্যে ছাত্র শিবিরের রাজনীতির প্রতি আগ্রহ। কেবল তরুণরাই নন, তরুণীরাও বিপুলভাবে ছাত্র শিবিরের রাজনীতির দিকেই ঝুঁকেছে! এই প্রবণতাটা শুরুতে আমার কাছে খুব স্বাভাবিক বলে মনে হয়নি। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম, তখনও ইসলামি ছাত্র শিবির ছিল। তারা কখনোই নির্বাচনে খুব একটা সুবিধা করতে পারতো না। তাদের ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রতি তরুণদের, বিশেষ করে তরুণীদের আগ্রহ ছিল খুবই কম। এবারের ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের ফল আগের সেই মানসিকতার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে না। তাহলে কি বর্তমানের এই ছেলে-মেয়েদের চিন্তাভাবনা পালটে গেছে? নাকি ইসলামি ছাত্র শিবিরই পরিবর্তন এনেছে তাদের রাজনীতিতে?
সাংবাদিকতার সংকট ও করণীয় সম্পর্কে সাংবাদিকদের কথা
বাংলাদেশে সাংবাদিকরা কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন? আর্থিক নিরাপত্তাই বা কতটুকু? এসব সংকট থেকে উত্তরণের উপায়ই বা কী? এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন সাংবাদিকরা। ছবিঘরে তাদের কথা
ছবি: Shamima Nasrin Lucky
সংবাদপত্রের সংস্কার দরকার: শামসুল হক জাহিদ, সম্পাদক, দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস ও মিডিয়া সংস্কার কমিশনের সদস্য
এখানে যেটা হয়েছে বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ নিজেদের স্বার্থে সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেল করেছে। ফলে সংবাদমাধ্যমে যাদের আসার কথা না তারাও এসে গেছে। এতে বহু প্রতিষ্ঠান বের হওয়ার কয়েকদিন পরই সাংবাদিকদের বেতন দিতে পারছে না। এখন সংবাদপত্রের সংস্কার দরকার। এখানে যে কয়টা থাকা দরকার, তার চেয়ে অনেক বেশি আছে। ভালো পত্রিকাও এখন চালাতে কষ্ট হচ্ছে।
গত ১৫-২০ বছরে সাংবাদিকতাকে দুর্বৃত্তায়নে পরিণত করা হয়েছে। এতে মাঠ পর্যায়ের রিপোর্টাররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সাধারণ মানুষের কাছে শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। অপশাসনের সহযোগী হয়েছে। গণমাধ্যমের মালিক ও শীর্ষ কর্তারা নিজেদের স্বার্থে এটা ব্যবহার করেছে। ৬ বছর আগে ওয়েজবোর্ড দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অভিন্ন ওয়েজবোর্ড সরকারের বিবেচনায় আছে।
ছবি: Private
বিভুদার শেষ চিঠি সাংবাদিকদের আর্থিক দৈন্যদশার চিত্র:মাইনুল হাসান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি
বিভুরঞ্জন সরকার পুরো সাংবাদিক কমিউনিটির অর্থনৈতিক দৈন্যদশার চিত্র তুলে ধরেছেন। সংবাদমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হলেও অন্যান্যগুলোর মতো সাংবাদিকতার বা সাংবাদিকদের মর্যাদা বাড়েনি। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও প্রতিনিয়ত বেতন-ভাতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের পরে আশাবাদী ছিলাম উত্তরণ ঘটবে, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
ছবি: Private
সাংবাদিক হয়রানি ও নির্যাতন রেকর্ড ভঙ্গ করেছে: খায়রুল আলম,
সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
গত ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ সাংবাদিক নির্যাতন ইতিহাসের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। আওয়ামী লীগ আমলে আদর্শিক কারণে কোনো সাংবাদিকের চাকরি গেছে এমন নজির নেই। কিন্তু এখন প্রায় ৫ শতাধিক সাংবাদিক বেকার হয়েছেন৷ তাদের দুর্বিষহ দিন কাটছে। কারণ, অনেকেই ছিলেন বেতনের উপর নির্ভরশীল। একদিকে গ্রেপ্তারের ভয়, মামলা-হয়রানি, অন্যদিকে উপার্জন-ক্ষমতা হারিয়ে তাদের অজানা আতঙ্ক গ্রাস করেছে।
ছবি: Private
বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকরা: ইলিয়াস হোসেন,
সদস্য সচিব, বিজেসি ও হেড অব নিউজ আরটিভি
বাংলাদেশের সাংবাদিকরা সব সময় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। নিজের অফিসেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আবার গণমাধ্যম দেখার জন্য সরকারের যে প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোও ঠিকমতো ফাংশন করছে না। প্রেস কাউন্সিল নামে মাত্র। একজন চাকরিচ্যুত হলে পাওনা-দেনার বিষয়টিও ঠিকমতো হচ্ছে না। অধিকাংশ গণমাধ্যমে হাতে গোনা কয়েকজনের বেতন একটু ভালো, আর অধিকাংশই মোটের উপর কোনোভাবে খেয়ে-পরে চলার মতো।
আমাদের দেশে সাংবাদিকদের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় কোনো শৃঙ্খলা নেই। মালিকরাই বেতন নির্ধারণ করেন। ওয়েজবোর্ড যেটা আছে, সেটাও কেউ মানে না। ফলে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনাচার হচ্ছে। শৃঙ্খলা না থাকায় সারা জীবন কাজ করার পর শেষ জীবনে সাংবাদিকরা পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে যাচ্ছে।
ছবি: Private
আর্থিক নিরাপত্তা নেই বলেই সাংবাদিকরা স্বাধীন হতে পারে না: আনিস আলমগীর,
সিনিয়র সাংবাদিক
বাংলাদেশের সাংবাদিকরা কখনোই স্বাধীন ছিল না। নিরপেক্ষতার আড়ালে তাদের মালিকপক্ষের মতামত বা ইচ্ছা ফলো করতে হয়। কেউ যদি সত্য সংবাদ লিখতে চায় ও সরকারের রোষানলে পড়ে, তাহলে তার চাকরিটাই যায়। আর্থিক নিরাপত্তা নেই বলেই সাংবাদিকরা স্বাধীন হতে পারে না। পারিবারিক আর্থিক নিশ্চয়তা না থাকলে বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে কারো সাংবাদিকতায় আসা উচিত না। কারণ, যে কোনো মুহূর্তে চাকরি যেতে পারে।
ছবি: Private
এখন হয়েছে মব সন্ত্রাসের ভয়: রাশেদ মেহেদী,
সম্পাদক, ভিউজ বাংলাদেশ
সাংবাদিকদের পেশাগত স্বীকৃতি আগে দরকার। সবাই বলে আগে ওয়েজবোর্ড দরকার। আসলে ওয়েজবোর্ডের চেয়ে অন্যান্য কর্পোরেট চাকরির মতো যোগ্যতা অনুযায়ী বেতনের ব্যবস্থা করা জরুরি। কোনো সরকারের আমলেই বুক ফুলিয়ে সাংবাদিকতা করা যায়নি। আগে গোয়েন্দা সংস্থা হুমকি দিতো, আর এখন হয়েছে মব ‘সন্ত্রাসের’ ভয়। সরকার মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে এবং কোথাও কোথাও উৎসাহ দিয়েছে।
ছবি: Private
সাংবাদিকরা মার খান সব গ্রুপের হাতে: শাহনাজ শারমীন,
বিশেষ প্রতিনিধি, একাত্তর টিভি
সাংবাদিকতার ইতিহাসে কখনোই এই পথ মসৃণ ছিল না। টিকে থাকতে বরাবরই যুদ্ধ করতে হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা কমেনি, বরং অনলাইন হয়রানি ও নজরদারি দিন দিন বাড়ছে । রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হাতে আবার পুলিশের হাতেও মার খাচ্ছেন বা মৃত্যুকেও বরণ করছেন সাংবাদিকরা। ৫ আগষ্টের পর সংবাদপত্র অফিসের সামনে গরু জবাই দেওয়া মিছিল স্লোগান, এমনকি সরাসরি হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
ছবি: Private
অনেকেই নিরাপত্তাহীনতা, মানসিক চাপ, বিচারহীনতা, মামলা-হামলায় হয়রানি ও আর্থিক সংকটে ভুগছেন: শেখ জামাল, সম্পাদক, দৈনিক মুখপাত্র
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। তারা শারীরিক নিরাপত্তাহীনতা, মানসিক চাপ, বিচারহীনতা, মামলা-হামলায় হয়রানি, চাকরিচ্যুত ও আর্থিক সংকটে ভুগছেন। এছাড়াও গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে রাষ্ট্র। সংকট মোকাবিলায় আইনি ও পেশাগত সুরক্ষা জোরদার করা দরকার, এ জন্য সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে সততা ও সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
ছবি: Private
10 ছবি1 | 10
আমার মনে হয়, দ্বিতীয়টিই ঘটেছে। শিবিরের রাজনীতিতেই অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। কয়েকটা ঘটনা— ঢাকসুতে তাদের প্যানেলে অমুসলিম ছাত্রকে প্রার্থী করা, নিজ সংগঠনের বাইরের লোককে প্রার্থী করা, বিজয়ের পর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সময়কালে নিহত বুদ্ধিজীবী কবরে পাশে দাঁড়িয়ে জিয়ারত করা, এসব কিন্তু সেই রাজনীতির সেই পরিবর্তনটাই ইঙ্গিত করে। কাজটি যে জামায়াতের অনুমোদনক্রমেই হয়েছে, সেটাও এরই মধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। কেবল শিবিরের বিষয়ে অনুমোদনই নয়, জামায়াতের অভ্যন্তরেও পরিবর্তনের আভাস কিন্তু মিলছে। নির্বাচনে বিজয়ী হলে জামায়াত এখন আর দেশে শরিয়া আইন কায়েম করতে চায় না। তারা বরং সব ধর্মের লোকের সমন্বয়ে একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তুলতে চায়।
এই যে জামায়াতের মতো কট্টর ইসলামপন্থি দলের এরকম মৌলিক পরিবর্তন, এর পিছনে প্রধানতম কারণ কিন্তু ওই নতুন ভোটার। তরুণ ও নতুন ভোটারদের তারা গুরুত্ব দিতে চাইছে। তারা বুঝতে পেরেছে, এরাই আসলে নিয়ন্ত্রণ করবে আগামী নির্বাচন। তরুণ এবং তরুণী— সকলেই রয়েছে তাদের বিবেচনায়। কট্টর ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পরিবর্তে তারা এখন ওয়েলফেয়ার পলিটিক্স করছে। তাদের এ কাজে সবচেয়ে বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে পূর্ববর্তী সরকারের অপরাজনীতি। শিক্ষাঙ্গণের হলগুলোতে ছাত্রলীগের নিবর্তনমূলক কর্মকাণ্ডের বিপরীতে ছাত্রশিবিরের কল্যাণমূলক কাজগুলোকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে পছন্দ করেছে তার প্রমাণ এরই মধ্যে ডাকসু ও জাকসুতে পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরাও শিবিরকে তাদের জন্য অধিকতর নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করেছে।
তরুণদের এমন মনোভাব কি দেশের রাজনৈতিক দলগুলো উপলব্ধি করতে পেরেছে? আমার মনে হয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনগুলো দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর চোখ খুলে দেওয়ার কাজটি করেছে। তাদের সামনে নতুন এক বাস্তবতাকে উপস্থাপন করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে— রাজনৈতিক দলগুলো সেসব নতুন দৃশ্যাবলীকে কতটুকু দেখতে চাইবে? সেই বাস্তবতাকে কতটুকু মেনে নেবে? নির্বাচন যদি ফেব্রুয়ারিতেই হয়, তাহলে তার এখনো প্রায় ৫ মাস বাকি। চাইলে এরই মধ্যে অনেক কিছুই সংশোধন করা সম্ভব। রাজনৈতিক দলগুলো কি সেটা করতে চাইবে? চাইলে কীভাবে করবে? অনেক হয়তো বিষয়টাকে অতি সরলীকৃতভাবে দেখতে পারে। তারা হয়তো ভাববে—ঠিক আছে, প্রার্থী তালিকায় একটা বড়সংখ্যক তরুণকে বরং যুক্ত করা যাক, তাহলেই তরুণ ও নতুন ভোটাররা হুমড়ি খেয়ে আমাদেরকে ভোট দেবে! এটা যে তেমন একটা কার্যকর পদ্ধতি হবে না, তার নির্মম উদাহরণ হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি'র ক্রমহ্রাসমান জনপ্রিয়তা। এ দলের সবাই তরুণ, অথচ তারপরও তরুণদের মধ্যেই এদের গ্রহণযোগ্যতা প্রত্যাশাকে স্পর্শ করতে পারেনি। বিষয়টা আসলে নেতার বয়স নয়, বরং নীতির চরিত্রের মধ্যে নিহিত। দলগুলো যদি তাদের নীতি, কর্মসূচি প্রণয়নে তরুণ ও নতুন ভোটারদের প্রত্যাশাকে বিবেচনায় রাখে, কেবল তাহলেই সম্ভবত কিছু প্রাপ্তিযোগ হতে পারে।
যে ছয়টি বিষয়ে পরিবর্তন চান সব শ্রেণি, পেশার মানুষ
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ দুর্নীতি, নারীবিদ্বেষ, চাঁদাবাজি, নিরাপত্তাহীনতা, বিচারহীনতা ও অনৈক্য - এই ছয়টি বিষয় নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা ৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Arafatul Islam/DW
‘দুর্নীতি, বিচারহীনতা রয়ে গেছে, আমাদেরকে এসব সমস্যা দূর করতে হবে’: ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, সংগীতশিল্পী
২০২৪ সালের ৫ ই আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের আগে যে সকল সমস্যা ছিল, যেমন, দুর্নীতি, বিচারহীনতা- তার সবই রয়ে গেছে৷ আমাদেরকে এসব সমস্যা দূর করতে হবে। নির্বাচনে ফিরতে হবে, রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা ফেরাতে হবে, বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। স্বৈরশাসকদের যেসকল অপরাধ ছিল তার বিচার করতে হবে।
ছবি: DW
‘যে মুক্তির স্বপ্ন দেখে নারীরাও পথে নেমেছিল, সেই মুক্তি আজ নারীবিদ্বেষী সামাজিকতার নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে’: ড.নাভিন মুরশিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক
জুলাই অভ্যুত্থানের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল আকাশছোঁয়া। অথচ অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় এবং হতাশাজনক যে পরিবর্তনটি আমরা দেখছি, তা হলো, তীব্র নারীবিদ্বেষ। আমার কাছে সবচেয়ে দুঃখজনক এটাই যে, যে মুক্তির স্বপ্ন দেখে নারীরাও পথে নেমেছিল, সেই মুক্তি আজ নারীবিদ্বেষী সামাজিকতার নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে।
ছবি: DW
‘নির্বাচিত সরকার আসলে দেশের পরিবর্তন সম্ভব হবে বলে আশা করি’: আমিরুল ইসলাম, সিএন জি চালক
জুলাই অভ্যুত্থানের ফলে দেশে কোনো পরিবর্তন আসেনি৷ আগে দেশে যে সকল সমস্যা ছিল তা এখনো রয়েছে। দেশের বিচার ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে হবে। দেশে একটি সুস্থ নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচিত সরকার আসলে দেশের পরিবর্তন সম্ভব হবে বলে আশা করি৷
ছবি: DW
‘স্বপ্ন ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছে’: মীর হুযাইফা আল মামদূহ, গবেষক
শেখ হাসিনার পতনের প্রক্রিয়াতে যেভাবে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাতে আমাদের সবার একটা আশা তৈরি হয়েছিল যে, আমরা হয়ত এমন একটা রাষ্ট্র পাবো, যেই রাষ্ট্র কল্যাণরাষ্ট্র হবে, যাতে কেউ কোনো পরিচয়, বিশ্বাস কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে বিচার্য হবে না, বরং সব ছাপিয়ে নাগরিক তার মর্যাদা পাবে। কিন্তু নানা কারণেই তা আর হয়নি, সেই স্বপ্ন ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছে।
ছবি: DW
‘দেশের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি ও দলের স্বার্থের প্রাধান্য বেশি’: সৌমিক আহমেদ, অভিনেতা ও উদ্যোক্তা
জুলাই আন্দোলনের আশা-প্রত্যাশা একটাই ছিল - পরিবর্তন আর মুক্তি। কিন্তু সাধারণ মানুষের আর পরিবর্তন হয়নি, সে একই হানাহানি, রেষারেষি যেন আমাদের রক্তে মিশে গিয়েছে। বর্তমানেও দেশের স্বার্থ থেকে ব্যক্তি ও দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে দেখা যাচ্ছে, যা মোটেও কাম্য ছিল না।
জুলাইয়ের গণভ্যুত্থান মানুষের ভেতরের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, বঞ্চনা ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থেকেই জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু আজ বর্ষপূর্তির আগমুহূর্তে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন উঠছে—এই আশা কতটা পূরণ হয়েছে?বাস্তবতা বলছে, সেই প্রত্যাশার অনেকটাই অপূর্ণ। ‘জুলাই স্পিরিট’ আজ বিভক্তির রাজনীতিতে ক্ষয়প্রাপ্ত। কার ভূমিকা কতটা ছিল—তা নিয়ে কৃতিত্বের লড়াই শুরু হয়েছে, যার ফলে বৈষম্যবিরোধী ঐক্যটিই ভেঙে পড়েছে।
ছবি: DW
‘চাঁদাবাজি, খুন, হত্যা বেড়েই চলেছে’: অদ্বিতীয়া, শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য খাত তে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, বিশেষ করে মানুষের নিরাপত্তার যে বিষয়টা, সেটা কোনোভাবেই এখন নিশ্চিত হচ্ছে না। প্রায় রোজ অপরাধ হয়েই যাচ্ছে, আর অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। চাঁদাবাজি, খুন, হত্যা বেড়েই চলেছে। কোন সমাধান হচ্ছে না বা সমাধানের কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।