1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তাঁদের কথা কেউ বলে না

আশীষ চক্রবর্ত্তী২৬ জানুয়ারি ২০১৩

ক’দিন পরই ঢল নামবে একুশে বইমেলায়৷ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও আসবেন অনেকে, বই কিনতে, বইকে ঘিরে মানুষের আনন্দমেলায় শরিক হতে৷ সেখানে তাঁদের হয়ত দেখবেনও না৷ তাঁরা বইমেলার নেপথ্যের কর্মী৷

'Little Magazine Chattar' at the Amar Ekushey book fair 2012 is attracting attention in it's own merit. Copyright: DW/Harun Ur Rashid Swapan Dhaka, 24.02.2012
ছবি: DW

ক'দিন পরই ঢল নামবে একুশে বইমেলায়৷ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও আসবেন অনেকে, বই কিনতে, বইকে ঘিরে মানুষের আনন্দমেলায় শরিক হতে৷ সেখানে তাঁদের হয়ত দেখবেনও না৷ তাঁরা বইমেলার নেপথ্যের কর্মী৷

তাজমহলে কত শ্রমিকের ঘাম-রক্ত মিশে আছে বলতে পারেন? কে রাখে তাঁর খোঁজ! সবার আগ্রহ শাহজাহানের অমর প্রেমের নিদর্শনের দিকে৷ কথাটা ফরিদা, আরিফের কথা ভাবলেও খুব মনে পড়ে৷ একুশে বইমেলাকে ঘিরে তাঁদের কবে থেকেই নাওয়া-খাওয়া হারাম৷ বইয়ের পর বই বেরোচ্ছে তাঁদের হাত দিয়ে৷ কিন্তু ক'জন চেনেন তাঁদের? সংবাদ মাধ্যম, প্রকাশক, লেখক, পাঠক – কে কতটুকু গুরুত্ব বা মর্যাদা দেয় তাঁদের?

ফরিদা বা আরিফের চেয়ে অনেক ভালো আছেন ঝন্টু চৌধুরী৷ একসময় স্বপ্ন ছিল ঢাকাই ছবির নায়ক হবেন৷ হতে পারেননি৷ সেই ব্যর্থতা বইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে দিয়েছে তাঁকে৷ প্রতি বছর বইমেলা আসে তাঁর জন্য উপার্জনের বড় একটা সুযোগ হয়ে৷ মাসে গড়ে কমপক্ষে ৪০-৫০ হাজার টাকা আয় – এটা অন্য চাকরি করে সম্ভব নয়৷ সবাই যাঁদের চেনেন ‘প্রুফ রিডার' হিসেবে, সংবাদ পত্রের জগতে হালে যাঁদের পোষাকি নাম হচ্ছে ‘সম্পাদনা সহকারি', ঝন্টু চৌধুরী তাঁদেরই একজন৷

ক'দিন পরই ঢল নামবে একুশে বইমেলায়৷ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও আসবেন অনেকে, বই কিনতে, বইকে ঘিরে মানুষের আনন্দমেলায় শরিক হতেছবি: DW

সম্প্রতি দৈনিক কালের কণ্ঠ সাব-এডিটর পদে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে তাঁকে৷ এটা তাঁর যোগ্যতারই স্বীকৃতি৷ কিন্তু এ স্বীকৃতি এবং সম্মান তো সংসার চালানোর নিশ্চয়তা নয়৷ সেই নিশ্চয়তার অনেকটাই দেয় বানান এবং বাক্য ঠিক করে চেনা-অচেনা অনেক লেখকের লেখা ছাপার যোগ্য করার কাজ৷ ঝন্টু চৌধুরীর বড় আয় আসে সেখান থেকেই৷ এই তৃপ্তির পাশেই ভীষণ কষ্টদায়ক এক সত্যের বাস৷

ঝন্টু চৌধুরী জানালেন প্রুফ রিডারদের অনেকেই এখনো সম্মান করেন না, বানান ঠিক করাকে চাল থেকে পোকা বাছার সঙ্গে তুলনা করে হেয় করার চেষ্টা করেন অনেকে৷ তাঁর কথায়, ‘‘প্রুফ রিডিংকে অনেকেই ভালো চোখে দেখেন না৷ অনেকেই মন্তব্য করেন, এরা পোকা বেছে খায়৷''

ফরিদার সেই কষ্ট নেই৷ কোলের সন্তান রেখে বাইরে যাওয়া সম্ভব নয় বলে ঘরে বসেই কাজ করেন৷ সংসারের যাবতীয় কাজের পাশাপাশি উদয়াস্ত খেটে যান কম্পিউটার নিয়ে৷ কম্পোজ করেন৷ এবারের বইমেলাতেও থাকছে তাঁর কম্পোজ করা অন্তত ৬-৭টি বই৷ সংসারের অভাব একটু হলেও ঘোচাতে পারছেন, ঢাকার গৃহিনী ফরিদার এটাই সবচেয়ে বড় তৃপ্তি৷ সঙ্গে আছে একটা গর্ব, তাঁর কাজ এত ভালো যে সবাই চোখ বুজে আস্থা রাখতে পারেন তাঁর ওপর৷

Week 4/13 Culture: Story of Proof Reader - MP3-Mono

This browser does not support the audio element.

ফরিদা বললেন, ‘‘আমি এমনই কাজ করি যে আমার কম্পোজ করা কাজের কোনো প্রুফ দেখা লাগে না৷''

বাংলাবাজারে ‘শিল্পাঙ্গন' নামে ছোট একটি প্রতিষ্ঠান খুলেছেন আরিফ হোসেন৷ তিন জন কাজ করেন সেখানে৷ পেস্টিংয়ের কাজ৷ ভালো কাজের স্বীকৃতি বইমেলা এলে তাঁরা পান টাকার অঙ্কে৷ সারা বছর যে প্রতিষ্ঠানের খরচ তোলাই দায়, বইমোলা এলে সেখানেই মাসে আয় হয় গড়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা৷

আরিফ জানালেন বইমেলাকে ঘিরে এবারও শিল্পাঙ্গন খুবই ব্যস্ত৷ বললেন, ‘‘মেলার সময় আমাদের বলতে গেলে চব্বিশ ঘণ্টাই কাজ চলে৷ একেবারে বিশ্রাম না নিলে চলে না বলে দিনে ৪-৫ ঘণ্টা ঘুমাই৷''

গত দু-তিন মাস ধরে ঝন্টু চৌধুরীও অনেক ব্যস্ত৷ খুব আনন্দ নিয়েই করে যাচ্ছেন বইমেলার বইয়ের বানান ঠিক করার কাজ৷ ‘পোকা দেখার কাজ' বলে যাঁরা তাঁকে ছোট করার চেষ্টা করেন তাঁদের পাত্তা না দিলেও তাঁর চলে, কারণ, যে যা-ই বলুক তাঁদের কাজের গুরুত্ব যে দেশবরেণ্য তারকা লেখকদেরও কেউ কেউ বোঝেন ঝন্টু সেটা জানেন৷ স্বয়ং জাফর ইকবাল তাঁকে যে উৎসাহ দিয়েছেন তার গুরুত্ব অস্বীকার করেন কী করে!

‘‘প্রখ্যাত সাহিত্যিক মোহাম্মদ জাফর ইকবালের একটি বইয়ের প্রুফ দেখে দিয়েছিলাম৷ এক বইমেলায় তাঁর সঙ্গে দেখা৷ তিনি একটি বইয়ে মন্তব্য লিখে দিয়েছিলেন – ঝন্টু এত বানান কী করে আপনি মাথায় রাখেন, তা ভাবার মতো বিষয়৷ উনার মতো একজন লেখক আমার বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন যে, আমাকে অনেক কিছু জেনে বা মাথায় রেখে কাজ করতে হয়, এটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ