1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তাঁদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে গরু ও গন্না

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
১৬ এপ্রিল ২০১৯

পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে রাজনীতির অলিন্দে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে ভোট প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ করে গরু ও গন্না (‌আখ)‌৷ আগামী দিনে এই দুই বিষয় গবেষণার বিষয় হতে পারে৷

Dharmendra und Hema Malini
ছবি: Getty Images/AFP/STRDEL

আয়তন ও সংসদে আসন সংখ্যার হিসেবে ‌ভারতের সহচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশ৷ দেশের মোট ৫৪৩টি আসনের মধ্যে উত্তরের এই রাজ্য থেকে নির্বাচিত হন ৮০ জন প্রতিনিধি৷ একেকজন প্রার্থী নির্বাচন করেন গড়ে ১৬ লক্ষ ভোটদাতা৷ পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে এই রাজ্য কার্যত ‘‌মোদী সুনামি'‌তে বয়ে গিয়েছিল৷ এককভাবে ভারতীয় জনতা পার্টি দখল করেছিল ৭১টি আসন৷ সঙ্গী ‘‌আপনা দল'‌ পেয়েছিল আরো ২টি৷ এই রাজ্য থেকে মোট ৭৩টি আসন নিয়ে সিংহাসনে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ এ যাবৎ ভারতে ৭জন প্রধানমন্ত্রী উপহার দিয়েছে এই রাজ্য৷

গত কয়েকদিন ধরে রাজ্যটির ১১টি লোকসভা কেন্দ্র ঘুরে যা বোঝা গেল, তা হলো, উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাংশে এবার নির্বাচনের প্রধান ইস্যু হলো গরু ও গন্না (আখ)৷ সঙ্গে স্থানীয় আরো কিছু বিষয় থাকলেও মোটের ওপর এই দুই ইস্যুই ভোটারদের প্রভাবিত করছে বেশি৷

কৃষি প্রধান এই রাজ্যে আখ ও গম চাষ হয়৷ আখের দাম নিয়ে বিজেপি-‌শাসিত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ‘‌ন্যূনতম সমর্থন মূল্য'‌ ও ‘‌স্টেট অ্যাশিওর্ড প্রাইস'‌ নির্ধারণ করেছে৷ যার ফলে যাঁতাকলে পড়েছে চিনি মিলগুলি৷ পরোক্ষে প্রভাব পড়েছে চাষিদের ওপর৷ এই অঞ্চলে আজও প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে চাষিদের৷ ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন গন্না বা আখ চাষিরা৷ পাশাপাশি আরো এক সমস্যার নাম গরু৷ প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া গরু৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স্ক গরু পুষে তার খাবার জোগানো গরিব কৃষকের পক্ষে সম্ভব হয় না৷ এই গরুর সংখ্যা এতটাই বেশি যে, সরাসরি সমস্যায় পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে৷ পথে-‌ঘাটে ঘুরে বেড়ানো তো আছেই, সেই সঙ্গে বড় সমস্যা হলো, খাবারের আশায় কৃষকের ক্ষেতে ঢুকে পড়ে ফসল নষ্ট করে এমন গরুর দল৷ এদিকে, কেন্দ্রে ও রাজ্যে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতে গরু এখন ‘‌গো-মাতা'৷ গো-‌‌রক্ষার নামে গো-‌মাংস ভক্ষন, গরু বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷ উল্টে গো-‌শালা চালু করার কথা বলা হচ্ছে৷ স্বভাবতই মাংস বিক্রির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েছেন৷ খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপে ক্ষিপ্ত দেশের সংখ্যালঘু সমাজ৷ ফসল নষ্টের কারণে দিশেহারা সাধারণ কৃষক৷ পথচলতি মানুষও ভবঘুরে গরুর সমস্যায় জেরবার৷ সর্বোপরি ক্রমশ গরুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ও অর্থনীতির চক্র৷ নির্বাচনে এর প্রভাব কতটা পড়বে তা অবশ্য সময়ই বলবে৷

স্থানীয় স্তরে আখ ও গরু বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে, নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য:সৌম্য বন্দোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

বিস্তীর্ণ অঞ্চল ঘুরে এসেছেন বাঙালি সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানালেন, ‘‌‘‌পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠভূমিতে ১১৯টি চিনি কল আছে৷ একদিকে দু-‌রকমভাবে আখের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷ অন্যদিকে চিনি বিক্রির উর্ধ্বসীমা ৩৪ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷ এর ফলে বিপুল পরিমাণ বকেয়া টাকার দায়ে কার্যত ধুঁকছে চিনি কলগুলো৷ স্বভাবতই সমস্যায় রয়েছেন কৃষকরা৷ গতবার এই অঞ্চল ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল বিজেপি৷ সেই প্রথম বিজেপি সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করে সফল হয়েছিল৷ এবার জাতিগত পাটিগণিতের সঙ্গে সপা-‌বসপা-‌আরএলডির মহাজোটের রসায়ন কিন্তু বিজেপি'‌কে চিন্তায় ফেলেছে৷ পাশাপাশি স্থানীয় স্তরে গন্না (‌আখ) ও গরু দুটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এবার নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য৷ তাই সুকৌশলে দেশপ্রেম, পাকিস্তানে এয়ারস্ট্রাইক, অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিশাইলে সাফল্যের মতো বিষয়গুলিতে প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি৷ এতকিছুর পরেও তৃণমূল স্তরে স্থানীয় ইস্যুগুলো মানুষের মনে রয়েই গেছে৷'‌'‌

এবার রাজ্যে ৭ দফায় ভোটগ্রহণ চলছে৷ প্রথম দফায় ১১ এপ্রিল ৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে৷ দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৮ এপ্রিল ভোটগ্রহণ হবে আরো ৩টি কেন্দ্রে৷  দ্বিতীয় দফার নির্বাচন হতে চলেছে মথুরা, আগ্রা ও ফতেপুর সিক্রিতে৷ এই তিনটি আসনও বিজেপি'‌র দখলে ছিল৷ এবার উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে মথুরায় বিজেপি প্রার্থী প্রখ্যাত অভিনেত্রী হেমা মালিনী৷ ফতেপুরে কংগ্রেস প্রার্থী আরেক প্রখ্যাত অভিনেতা রাজ বাব্বর৷ সমাজের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, হেমা মালিনী নয়, তাঁরা ভোট দেবেন প্রধানমন্ত্রী মোদীকে দেখে৷ অর্থাৎ, মোদী হাওয়া এখনও বইছে মথুরায়৷ আগ্রায় লড়াই মহাজোটের বহুজন সমাজ পার্টি বনাম বিজেপি'‌র৷ ওদিকে, ফতেপুর সিক্রি কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী রাজ বাব্বর চিন্তায় ফেলেছেন শাসক দলের নেতাদের৷

গতবার এই ১১টির সবকটিই ছিল বিজেপির দখলে৷ প্রশ্ন হলো, এবার কী হবে?‌ নরেন্দ্র মোদী, তথা ভারতীয় জনতা পার্টিকে ক্ষমতাচ্যুত করার ডাক দিয়ে হাত ধরেছে এই রাজ্যের দুই প্রধীন প্রতিদ্বন্দ্বী সমাজবাদী পার্টি (‌সপা)‌ ও বহুজন সমাজ পার্টি (‌বসপা)‌৷ এই দুই দলের প্রধান অখিলেশ যাদব ও ‘‌বহেনজি'‌ মায়াবতীর ‘‌মহাজোট'-‌এ শামিল হয়েছেন রাষ্ট্রীয় লোকদল (‌আরএলডি)‌ প্রধান, তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিংয়ের পুত্র অজিত সিং৷

ক'‌দিন আগে গাজিয়াবাদ, গৌতমবুদ্ধনগর, মেরঠ, বাগপত, কৈরানা, মুজফ্‌ফরনগর, বিজনোর ও সাহারনপুর ঘুরে যে ছবি ধরা পড়েছে, তাতে স্পষ্টতই এই আসনগুলিতে বিজেপি'‌র জন্য মোটেই ‘‌কেক ওয়াক'‌ নয়৷ মথুরা ছাড়া অনেকটা একই ছবি ধরা পড়েছে আগ্রা ও ফতেপুর সিক্রিতে৷ জাঠ, মুসলিম ও দলিত ভোট একমঞ্চে আসার ইঙ্গিত মিলছে, যা রাজ্যটির মূলত উচ্চবর্ণ ও বানিয়া ভোটব্যাঙ্কের ওপর নির্ভরশীল গেরুয়া শিবিরে ধসের সম্ভাবনার জন্য যথেষ্ট৷ ওয়াকিবহাল মহলের অনেকেই মনে করছেন, পাঁচ বছর আগের মহাজোটের অস্ত্রে ‘‌মোদী সুনামি'‌ এবার মৃদু বাতাসে পরিণত হয়েছে৷ অন্তত এই রাজ্যে৷ রাজধানী-‌লাগোয়া গাজিয়াবাদ ও গৌতমবুদ্ধনগরে পদ্মের রমরমা৷ মথুরায় গরু ও গন্না সমস্যা ছাপিয়ে যেতে পারেন হেমা মালিনী৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ