1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তাঁরা যখন ঘরের মানুষ

৯ জুলাই ২০১৮

একেবারে ছোটবেলার কথা৷ বাসায় একাধিক কাজের লোক ছিলেন৷ পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য বাবাকে যেতে হতো বহুদূর৷ ছয় ভাইবোনের বিরাট সংসার সামলাতে মা'কে সাহায্য করতে আসতেন তাঁরা৷

ছবি: DW/Mustafiz Mamun

একজন আয়ার দায়িত্ব ছিল আমাকে আর আমার পিঠাপিঠি বড় ভাইয়ের দেখাশোনা করা৷ তাঁকে আমরা ‘আইয়া' বলে ডাকতাম৷ যতটুকু মনে পড়ে, তিনি যখন চলে যান তখন আমার খুব মন খারাপ হয়েছিল৷ আমি বলতাম, ‘‘আইয়ার জন্য পরান পুড়ে৷''

এরপর অনেক কাজের লোক এসেছেন আমাদের বাসায়৷ তাঁদের সবার মধ্যে একটা বিষয় খুব কমন ছিল৷ তা হলো, তাঁরা সবাই আমার মা'কে খুব ভালোবাসতেন৷ তাঁরা কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে গেলেও বারবার এসেছেন মায়ের কাছে৷ এমনকি আমার মা মারা যাবার পরও অনেকে এখনো আমাদের বাড়িতে আসেন৷ আমার মায়ের জন্য তাঁরা মন খারাপ করেন৷

শ্রেণিবৈষম্য থাকলেও এভাবেই মানুষে মানুষে সম্পর্ক হয়৷ সেই সম্পর্ক দেনা-পাওনার বাইরেও অন্য এক সম্পর্ক৷ সেখানে নানান আবেগ কাজ করে৷

হংকংয়ে বেড়ে চলেছে গৃহকর্মী নির্যাতন

01:53

This browser does not support the video element.

আসলে বাড়িতে যখন কোনো কাজের লোক অনেকদিন থাকেন, তখন অজান্তেই তাঁরাও পরিবারের সদস্য হয়ে যান৷ অনেকের ভিন্নরকমের অভিজ্ঞতা আছে৷ কিন্তু আমাদের বাড়িতে অভিজ্ঞতা কম-বেশি অনেকটা এমনই ছিল৷ এমনকি যেসব নারীর শিশু সন্তান ছিল, তাঁরা সেই সন্তানকেও নিয়ে আসতেন৷ সেই শিশুরাও আমাদের বাড়ির সদস্য হয়ে যেতো৷

অনেক মজার স্মৃতিও থাকে এদেরকে নিয়ে৷ একটা ঘটনা বলি৷ স্কুলের পর ঢাকায় পড়াশুনা করতে আসি৷ থাকি বোনের বাসায়৷ সেখানেও এক বুয়া বহু বছর ধরে কাজ করতেন৷ তাঁকেও দেখেছি ঠিক বাড়ির লোকদের মতোই আচরণ করতে৷ বয়স্ক হলেও সেই বুয়া ছিলেন নায়ক মান্নার বিরাট ভক্ত৷

একবার হলো কি, চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে দেখি মান্না অভিনীত কোনো এক চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে কোনো এক চ্যানেলে৷ আমি চ্যানেলের সাউন্ড বাড়িয়ে দিলাম৷ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বুয়া হাজির দরজার সামনে৷ স্ক্রিনে তখন মান্নার ফাইটিং দৃশ্য৷ মান্না তাঁর দিগ্বিজয়ী অ্যাকশনে ঘায়েল করছেন সব শত্রুকে৷ কিছুক্ষণ পর দেখি বুয়া নিচু কণ্ঠে বলছেন, ‘‘মার, মার অরে৷'' তাকিয়ে দেখি, তিনি খুব সিরিয়াস৷ হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ি৷

বহুবার এমন হয়েছে, বুয়া তাঁর বাড়িতে রান্না করা খাবার নিয়ে এসেছেন আমাদের জন্য৷ তাঁর এই যে বাড়তি ভালোবাসা, তা কোনোভাবেই মাস গেলে বেতন দিয়ে মাপা সম্ভব নয়৷

যোবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলেছবি: Zobaer Ahmed

আমি বলছি না, সবার অভিজ্ঞতা এক হবে৷ কিন্তু এই কাজের লোকগুলোই অনেক সময় পরিবারের গুরুদায়িত্ব পালন করেন৷ এমন অনেক সময় হয়েছে যে, বাড়ি তাঁদের ওপর পুরোপুরি ছেড়ে যেতে হয়েছে৷ আমার পরিবারের অভিজ্ঞতা হলো, তাঁরা খুব ভালোভাবেই তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছেন৷

বলছি না যে, সবার অভিজ্ঞতা এক হয়৷ অনেকেরই কাজের লোক নিয়ে বিব্রতকর অভিজ্ঞতাও হয়েছে৷ এছাড়া এখন সময় বদলেছে৷ কাজের লোকদের চাহিদা বেড়েছে৷ বেড়েছে তাঁদের ব্যস্ততা৷ এখন সবাই খুব পেশাদার৷ তাই কাজের লোকদের সঙ্গে সেই যে পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি  হওয়ার সুযোগ, তা-ও সংকুচিত হয়ে গেছে৷ তবে পুরোপুরি পেশাদার হওয়াও ভালো৷

আমাদের সমাজে বাড়ির লোকদের কাজকে ‘কাজ' হিসেবে মূল্যায়ণ করা হয় না৷ তাই কাজের বুয়াদের কাজকেও শ্রমের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া হয় না৷ যে যার যার মতো করে বেতন দেন৷ শুধু মাস শেষে বেতন আর উৎসবে কিছু উপরি৷ এর বাইরে বুয়াদের শ্রমের কোনো কাঠামো না থাকার ফলে কাজের প্রশিক্ষণেরও সুযোগ নেই৷

তবে ইদানিং কিছু এজেন্সির মতো প্রতিষ্ঠান কাজের লোক সরবরাহ করে থাকেন৷ এটি ভালো উদ্যোগ৷ এই উদ্যোগকে আরো পেশাদার পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে৷ তবে সবার মঙ্গল হবে৷

এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ