তাইওয়ানকে চীনের সঙ্গে ‘একত্রিত করার’ ঘোষণা শি জিনপিংয়ের
৯ অক্টোবর ২০২১
তাইওয়ানকে শান্তিপূর্ণভাবে চীনের সাথে একত্রিত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং৷ বেইজিং ও তাইপের মধ্যে চলমান কূটনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার মাঝেই শনিবার এমন ঘোষণা দিলেন চীনা প্রেসিডেন্ট৷
বিজ্ঞাপন
‘‘মাতৃভূমির সম্পূর্ণ পুনরেত্রীকরণের ঐতিহাসিক কাজটি অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে,’’ রাজনীতিবিদ, সামরিক কর্মকর্তা ও সুধীসমাজের লোকজনের সামনে চীনের বিখ্যাত গ্রেট হল অফ দ্য পিপলে দেয়া ভাষণে বলেন জিনপিং৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত দ্বীপ-অঞ্চল তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ করতে দীর্ঘদিন ধরেই তৎপরতা চালাচ্ছে চীন৷
চীন মনে করে তাইওয়ান তাদের দেশেরই অংশ৷ এটি চীন থেকে বেরিয়ে যাওয়া একটি প্রদেশ, যেটি ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে মিশে যাবে৷ তবে গত দুই দশক ধরে তাইওয়ানের বেশ কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলন করে যাচ্ছে৷
চলমান উত্তেজনার মাঝে জিনপিং-এর দেয়া এমন মন্তব্য আলাদা গুরুত্ব বহন করছে, বলে মনে করা হচ্ছে৷ গত শুক্রবার থেকে প্রতিদিন তাইওয়ানের আকাশে ঢুকে পড়ছে চীনের বিমানবাহিনী৷ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সমমনা গণতান্ত্রিক দেশের সহায়তা চাইছে তাইওয়ান৷
যাবললেনশিজিনপিং
সর্বশেষ রাজবংশের পতনের বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানটিতে দেয়া ভাষণে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘‘বিচ্ছিন্নতা দমনে চীনের গৌরবময় ঐতিহ্য আছে৷''
তাইওয়ানে স্বাধীনতা আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদ বলে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘‘এটি পুনরেত্রীকরণের পথে সবচেয়ে বড় বাধা এবং পুনঃশক্তিসঞ্চারের পথে লুকিয়ে থাকা একটি মহাবিপদ৷''
শতবর্ষে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি
১৯২১ থেকে ২০২১, শতবর্ষে পৌঁছে কীভাবে ভাবছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি, দেখুন এই ছবিঘরে...
ছবি: Thomas Peter/Reuters
যেভাবে উদযাপন করবে চীন
বৃহস্পতিবার শতবর্ষে পা রাখলো চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিসিপি৷ এই উপলক্ষে সাজ সাজ রব গোটা চীনজুড়ে৷ দলের নেতৃত্বের সাফল্যের কাহিনী আঁকা নানা ফেস্টুন=ব্যানারে ছেয়ে গেছে গোটা দেশ৷ সোমবার থেকে বেইজিঙের জাতীয় স্টেডিয়ামে চলছে নানা ধরনের অনুষ্ঠান৷
ছবি: Noel Celis/AFP/Getty Images
দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল
ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির পরেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল চীনের সিসিপি৷ ২০১৯ সালে এই দলের সদস্য সংখ্যা ছিল নয় কোটি ১৯ লাখ৷ ১৯৪৯ সালে গৃহযুদ্ধের পর থেকেই দেশটির শাসনে রয়েছে এই দল৷
ছবি: Ng Han Guan/AP/picture alliance
সিসিপির হাতে চীন
সিসিপির আমলে চীন প্রত্যক্ষ করেছে বহু যুদ্ধ, অনাহার ও সামাজিক বদল৷ গত ২০ বছরে লাখ লাখ চীনা নাগরিক দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছেন৷ আর্থসামাজিক ভাঙাগড়া চীনকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি করে তুলেছে৷
ছবি: Aly Song/REUTERS
সমালোচনা
সাফল্যের স্বীকৃতি এলেও বিশ্বজুড়ে বারবার সমালোচিত হয়েছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি নেতৃত্বের নানা সিদ্ধান্ত৷ সাম্প্রতিক সময়ে, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে দেখা গেছে এই প্রবণতা৷
ছবি: Aly Song/REUTERS
সিসিপির সমালোচিত কিছু ইস্যু
হংকঙে গণতন্ত্রপন্থিদের প্রতি সিসিপির মনোভাব, উইগুর মুসলিমদের প্রতি রাষ্ট্রের আচরণ, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা নজরদারী - সব ক্ষেত্রেই সিসিপির ভূমিকা বিশ্বে সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে৷ কিন্তু তা আদৌ আমল পায়নি পার্টির অন্দরমহলে৷
ছবি: Thomas Peter/Reuters
ইতিহাসের পুনর্গঠন
ফেব্রুয়ারিতে জিনপিং ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ দ্য কমিউনিস্ট পার্টি অফ চাইনা’ প্রকাশ করেন যা ৫০০ পাতা দীর্ঘ পার্টির ইতিহাসের দলিল৷ বিশেষজ্ঞদের মত, এই দলিল আসলে সরকারের দুর্বলতা লুকিয়ে সাফল্যের দিকে জোর দেয়৷ তিয়েনআনমেন স্কয়ার বা অনাহারের মতো সময়ের উল্লেখ সেখানে খুবই কম, বরং শি জিনপিঙের দৃঢ় নেতৃত্বের কথাই বেশি৷
ছবি: Thomas Peter/Reuters
বিশ্বে চীনকে উপস্থাপন যেভাবে
বিশেষজ্ঞদের মতে, শি জিনপিঙের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে চীনকে এমনভাবে উপস্থাপন করা, যাতে করে বিশ্বে দেশটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসাবে বিবেচিত হয়৷ এমন শক্তি, যাকে কোনো অর্থনৈতিক ধাক্কা বা অতিমারি, কোনো কিছুই নোয়াতে পারে না৷ বিশেষ করে, পশ্চিমা দেশগুলির চীন সম্পর্কিত ধারণাকে উড়িয়ে দিয়ে নিজের বিকল্প ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে সিসিপির শতবর্ষকে ব্যবহার করছে সরকার, বলছেন তারা৷
ছবি: Thomas Peter/Reuters
7 ছবি1 | 7
তার মতে, শান্তিপূর্ণ পুনরেকত্রীকরণ হলেই তাইওয়ানের জনগণের সব ধরনের চাওয়া-পাওয়া পূরণ হবে৷
তিনি আরো বলেন, ‘‘জাতীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় চীনের জনগনের যে দৃঢ় সংকল্প, তীব্র ইচ্ছা ও সামর্থ্য রয়েছে তাকে খাটো করে দেখা উচিত নয়৷’’
‘‘মাতৃভূমির পূনরেত্রীকের যে ঐতিহাসিক প্রচেষ্টা তা অবশ্যই পূরণ হবে এবং এটি হতেই হবে,’’ বলেন তিনি৷
তাইওয়ানেরপ্রতিক্রিয়া
এদিকে, শি জিনপিংয়ের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে বলা হয়, এই ভূখণ্ডের ভবিষ্যত এখানকার জনগণ নির্ধারণ করবে৷ চীনের ‘এক দেশ দুই নীতি’ মডেল প্রত্যাখান করে প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, এটি পরিষ্কার যে এখানকার জনগণ এই মডেল গ্রহণ করছে না৷
এদিকে তাইওয়ানের মেইনল্যান্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল আলাদা এক বিবৃতিতে চীনের প্রেসিডেন্টের এমন বক্তব্যকে ‘অনুপ্রবেশকারী উত্তেজনামূলক পদক্ষেপ’ উল্লেখ করে চীনকে ‘হয়রানি ও ধ্বংসাত্মক’ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়৷