তাইওয়ানের সীমানায় তিনটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি যুদ্ধবিমান পাঠালো চীন।
বিজ্ঞাপন
তাইওয়ানের সীমানায় আবার রণতরী পাঠালো চীন। মোট তিনটি রণতরী পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে দুইটি এয়ারক্র্যাফট কেরিয়ার। একটি এয়ারক্র্যাফট কেরিয়ার তাইওয়ানের পূবদিকে এসেছে। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, তাদের তটভূমির দুইশ নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে এই চীনা রণতরী। আর তাইওয়ান খাঁড়ির কাছে চীনের দ্বিতীয় এয়ারক্রাফট কেরিয়ার মহড়া শুরু করেছে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েচে, একটি চীনা যুদ্ধবিমানকেও তাদের সীমানায় দেখা গেছে।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের মার্কিন সফর
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন এখন ্অ্যামেরিকা সফর করছেন। ক্যালিফোর্নিয়ায় মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সঙ্গে বৈঠক করেছেন সাই। দুই নেতা যখন রোন্যাল্ড রেগন প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি ভবনে আলোচনার জন্য ঢুকছেন, তখন সেখান দিয়ে একটা ছোট বিমান উড়ে যাচ্ছিল। তাতে ঝুলছিল একটা ব্যানার। তাতে লেখা 'এক চীন। তাইওয়ান চীনের অংশ'। এরপরই তাইওয়ানে চীনের যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমানকে দেখা যায়।
সাই খুব বড় বিবৃতি দেননি। তিনি বলেন, তাইওয়ান এখন সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে অ্যামেরিকা তাদের পাশে থাকায় তিনি কৃতজ্ঞ।
সাইয়ের অ্যামেরিকা সফরের সময়টাও গুরুত্বপূর্ণ। তাইওয়ান নিয়ে চীন এখন তাদের তৎপরতা বাড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এই সফর যথেষ্ট তৎপর্যপূর্ণ। এর আগেও যখন তাইওয়ান-বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছিল, তখন সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পাওয়েল তাইওয়ান সফর করেছিলেন। তার সফরের পরেই চীন তাইওয়ানের চারপাশ ঘিরে সামরিক মহড়া করে।
ম্যাকার্থি ও সাই কী বললেন?
ম্যাকার্থি বলেছেন, তাইওয়ান বরাবরই অ্যামেরিকার বড় বন্ধু। দুই দেশের মানুষ একসঙ্গে গণতন্ত্র, অর্থনীতি, স্বাধীনতা, শান্তি ও স্থায়িত্ব বজায় রেখে তা আরো আগে বাড়ানোর চেষ্টা করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।
তার মতে, এই দুই দেশের বন্ধুত্ব মুক্ত দুনিয়ার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সাই বলেছেন, অ্যামেরিকা তাদের পাশে থাকায়, তাইওয়ানের কখনো একা লাগে না, একঘরে মনে হয় না।
চীন, অ্যামেরিকা, তাইওয়ানের দীর্ঘ জটিল সম্পর্ক
পেলোসির সফর ঘিরে চীন, তাইওয়ান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এখন উত্তেজনা তুঙ্গে। এই তিন দেশের দীর্ঘ সম্পর্কের ইতিহাস যথেষ্ট জটিল।
ছবি: Rod Lamkey/CNP/picture alliance--Shen Hong/picture alliance/Xinhua
দুই দেশের জন্ম
১৯৪৯ সালে চীনের সিভিল ওয়ারের পর দুইটি স্বঘোষিত চীনা রাষ্ট্রের জন্ম হলো। পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না(পিআরসি) বা গণপ্রজাতন্ত্রী চীন এবং তাইওয়ান ভিত্তিক রিপাবলিক অফ চায়না(আরওসি)। পিআরসি-র ঘোষণা হলো বেজিংয়ে, করলেন মাও জেদং। উপরের ছবিটি মাওয়ের।
ছবি: AP
দীর্ঘদিনের স্থিতাবস্থা
পিআরসি-র নিয়ন্ত্রক হলো চীনা কমিউনিস্ট পার্টি। কিন্তু তাইওয়ানের ক্ষেত্রে তাদের কোনো নির্দেশ চলে না। তাইওয়ানের শাসকরা ১৯৯০ থেকে গণতান্ত্রিক পথে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। তাদেরও পিআরসি-র উপর কোনো প্রভাব নেই। বহুদিন ধরে এই স্থিতাবস্থা চলেছিল। উপরের ছবিটি তাইওয়ান খাঁড়িতে তাদের নৌবহরের।
ছবি: AP
অবস্থার পরিবর্তন
২০০৫ সালে অবস্থার পরিবর্তন হলো। চীন বিচ্ছিন্নতা-বিরোধী আইন পাস করলো। সেখানে বলা হলো, তাইওয়ান যদি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে, তাহলে চীনের সেনার সেখানে গিয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার আছে। এরপর চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা আরো বাড়লো।
ছবি: Roman Pilipey/AP/picture alliance
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
১৯৭০-এর প্রথমভাগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্তরে তাইওয়ানের পরিচিতি ছিল রিপাবলিক অফ চায়না হিসাবে। কিন্তু ১৯৭১ সালে জাতিসংঘে ভোটাভুটি হলো এই নিয়ে যে, পিআরসি বা গণপ্রজাতন্ত্রী চীনই একমাত্র সেখানে থাকবে। এরপর ভ্যাটিকান-সহ মাত্র ১৪টি দেশ তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেয়। উপরের ছবিটি তাইওয়ানের পার্লামেন্টের।
ছবি: Daniel Ceng Shou-Yi/ZUMA Wire/picture alliance
অ্যামেরিকার সিদ্ধান্ত
১৯৭৯ সালে অ্যামেরিকা জানায়, তারা একমাত্র গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকেই স্বীকৃতি দিচ্ছে। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসে তাইওয়ান রিলেশনস আইন পাস হয়। সেখানে বলা হয়েছে, তাইওয়ানকে অস্ত্র বিক্রি করে যাবে অ্যামেরিকা। ওই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে অ্যামেরিকা দায়বদ্ধ থাকবে। উপরের ছবিটি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর।
ছবি: TAIWAN PRESIDENTIAL OFFICE/REUTERS
মার্কিন পার্লামেন্ট সদস্যদের মত
দলমত নির্বিশেষে মার্কিন পার্লামেন্ট সদস্যরা মনে করেন, তাইওয়ান যেন বেজিংয়ের কাছে আত্মসমর্পন না করে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময়, অ্যামেরিকা ও তাইওয়ান হাত মিলিয়ে কমিউনিস্ট চীনের বিরোধিতা করেছে। চীনের যত উত্থান হয়েছে, অ্যামেরিকা ততই তাইওয়ানের পাশে থেকেছে।
ছবি: Artur Gabdrahmanov/Sputnik/dpa/picture alliance
পেলোসির সফর
মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে গিয়ে বলেছেন, ''আমাদের প্রতিনিধিদল তাইওয়ান এসে একটা কথা স্পষ্ট করে দিতে চায়, তা হলো, আমরা কখনোই তাইওয়ানকে পরিত্যাগ করব না। আমাদের দীর্ঘ সম্পর্ক নিয়ে আমরা গর্বিত।''
ছবি: Ann Wang/REUTERS
চীনের দাবি
চীন দাবি করে, তাইওয়ান তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তারা বারবার 'ওয়ান চায়না' বা 'এক চীন' নীতির কথা বলে। যেভাবে হংকং এখন চীনের অংশ, সেইভাবেই তাইওয়ানকেও নিজেদের অংশ করতে চায় চীন। কিন্তু তাইওয়ানের বক্তব্য, হংকংয়ের ক্ষেত্রে দুই তরফই তাতে রাজি ছিল। কিন্তু তাইওয়ান কখনোই চীনের সঙ্গে মিশে যেতে রাজি নয়। তারা আলাদা অস্তিত্ব বজায় রাখতে চায়। উপরের ছবিটি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের।
ছবি: Selim Chtayti/REUTERS
জনগণ বিভক্ত
চীনের সঙ্গে মিশে যাওয়া নাকি স্বাধীনতা ঘোষণা, কোনটা করা উচিত, তানিয়ে তাইওয়ানের সাধারণ মানুষ বিভক্ত।
ছবি: Ann Wang/REUTERS
অনড় চীন
তাইওয়ান সরকার এখন নিজেদের আইল্যান্ড অফ তাইওয়ান বলে। এতে চীনের প্রবল আপত্তি। তাদের দাবি, আগের মতো রিপাবলিক অফ চীন বলা উচিত। বেজিং তাইওয়ানের আলাদা জাতীয় সংগীত ও পতাকাও মানে না। উপরের ছবিতে তাইওয়ানের পতাকা।
ছবি: Chiang Ying-ying/AP Photo/picture alliance
10 ছবি1 | 10
চীনের প্রতিক্রিয়া
চীন এই সফর নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সরকারি সংবাদমাধ্যম শিনহুয়ার রিপোর্ট বলছে, চীানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য চীন যে কোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। অ্যামেরিকা ও তাইওয়ানের মধ্য়ে যোগসাজশ রয়েছে, তা সাইয়ের সফর থেকে স্পষ্ট হয়েছে।