চীনের আপত্তি সত্ত্বেও তাইওয়ানে গেছেন মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যানসি পেলোসি। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব চীনের।
বিজ্ঞাপন
নিজের অবস্থানেই অনড় থাকলেন মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যানসি পেলোসি। বুধবার আরো ছয় মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যকে নিয়ে তাইওয়ান পৌঁছেছেন তিনি। তাইওয়ানের পার্লামেন্টে গিয়ে বক্তৃতা করেছেন তিনি। দেখা করার কথা দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও। দ্বীপরাষ্ট্রে পৌঁছে শান্তির বার্তা দিয়েছেন পেলোসি। জানিয়েছেন, অ্যামেরিকা তাইওয়ানের পাশে আছে।
চীনকে রুখতে তাইওয়ানের এলিট ইউনিট- ফ্রগম্যান
03:07
গত ২৫ বছরে পেলোসির মাপের কোনো মার্কিন প্রতিনিধি তাইওয়ান সফরে যাননি। ফলে মার্কিন স্পিকারের সফর ঘিরে যথেষ্ট উত্তেজনা ছিল। চীন আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, পেলোসি শেষপর্যন্ত তাইওয়ানে পৌঁছালে তারা চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। বস্তুত, এদিন পেলোসি দ্বীপরাষ্ট্রে পৌঁছানোর অব্যবহিত আগে প্রায় ২১টি চীনের যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের আকাশ প্রদক্ষিণ করে গেছে। বেজিংয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও ডেকে পাঠানো হয়।
এদিন তাইওয়ানে নেমেই দেশের পার্লামেন্টে যান পেলোসি। সেখানে বক্তৃতায় তিনি বলেন, অ্যামেরিকার সঙ্গে তাইওয়ানের বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। তাইওয়ানের শান্তি যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, অ্যামেরিকা সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল। এদিন তাইওয়ান পার্লামেন্টের স্পিকারের সঙ্গেও দেখা করার কথা ছিল পেলোসির। কিন্তু কোভিডের জন্য স্পিকার দেখা করতে পারেননি। তার জায়গায় আইনসভার সহসভাপতির সঙ্গে বৈঠক করেন পেলোসি। এরপর তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও বৈঠক হওয়ার কথা তার। দেখা করবেন হংকং এবং তাইওয়ানের গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীদের সঙ্গেও।
চীন ও তাইওয়ান, কার কত সামরিক শক্তি
চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। তাইওয়ানে যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। দেখে নেয়া যাক, চীন ও তাইওয়ান কার সামরিক শক্তি কেমন।
ছবি: Li Tao/Xinhua/Imago Images
জনসংখ্যার নিরিখে
চীনের জনসংখ্যা ১৩৯ কোটি ৮০ লাখ। তাইওয়ানের জনসংখ্যা মাত্র দুই কোটি ৩৬ লাখ। জনসংখ্যার বিচারে চীন ও তাইওয়ানের কোনো তুলনাই চলে না। উপরের ছবিটি চীনের একটি স্টেশনের।
ছবি: Ji Haixin/HPIC/dpa/picture alliance
প্রতিরক্ষা বাজেট
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার, ২০২২-এর হিসাব অনুযায়ী, সামরিক খাতে চীন বিপুল খরচ করে। খুব কম দেশই এতটা খরচ করে বা করতে পারে। চীনের প্রতিরক্ষা বাজেট হলো ২৩ হাজার কোটি ডলার। সেই তুলনায় তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা বাজেট এক হাজার ৬৮০ কোটি ডলার। উপরের ছবিটি তাইওয়ানের সেনার।
ছবি: Ann Wang/REUTERS
সেনার সংখ্যা
চীনের সক্রিয় সেনার সংখ্যা ২০ লাখ। আর তাইওয়ানের এক লাখ ৭০ হাজার মাত্র। ফলে সেনাসংখ্যার হিসাবেও চীন ও তাইওয়ানের কোনো তুলনা চলে না। উপরের ছবিটি চীনের সেনার প্যারেডের।
ছবি: Kevin Frayer/Getty Images
কার কাছে কত ট্যাঙ্ক
চীনের কাছে আছে পাঁচ হাজার ২৫০টি ট্যাঙ্ক। আর তাইওয়ানের কাছে এক হাজার ১১০টি। ফলে তুলনা অসম। উপরে চীনের ট্যাঙ্কের ছবি।
ছবি: Jeff Widener/AP Photo/picture alliance
যুদ্ধবিমানের সংখ্যা
চীনের কাছে তিন হাজার ২৮৫টি যুদ্ধবিমান আছে। তাইওয়ানের কাছে আছে মাত্র ৭৪১টি। তবে তাইওয়ানের কাছে এফ ১৬ যুদ্ধবিমান রয়েছে।ছবিতে তাইওয়ানের এফ ১৬ যুদ্ধবিমান।
ছবি: Daniel Ceng Shou-Yi/Zuma/picture alliance
নৌবহরের সংখ্যা
চীনের নৌবহর ৭৭৭টি। তাইওয়ানের মাত্র ১৭৭টি। উপরে চীনের যুদ্ধজাহাজের ছবি।
ছবি: picture-alliance/ dpa
প্রশান্ত মহাসাগরে কে কত খরচ করে
ট্রেন্ডস ইন ওয়ার্ল্ড মিলিটারি এক্সপেন্ডিচার ২০২১ অনুযায়ী, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি খরচ করে অ্যামেরিকা, ৮০ হাজার কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে আছে চীন। তারা ২৯ হাজার কোটি ডলার খরচ করে। তাইওয়ান সেখানে খরচ করে এক হাজার তিনশ কোটি ডলার। তবে তারা সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের থেকে বেশি অর্থ খরচ করে। উপরের ছবিতে প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ।
ছবি: ASSOCIATED PRESS/picture alliance
কাকে বাছবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলি
যদি এরকম পরিস্থিতি আসে, বাধ্য হয়ে কাউকে সমর্থন করতে হচ্ছে, তাহলে কাকে সমর্থন করবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলি? দ্য স্টেট অফ সাউথইস্ট এশিয়া ২০২২ জানাচ্ছে, লাও, কম্বোডিয়া ও ব্রুনেই নিশ্চিতভাবে চীনের দিকে যাবে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন্স, মিয়ানমারের অ্যামেরিকার দিকে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
ছবি: U.S. Navy/ZUMAPRESS.com/picture alliance
8 ছবি1 | 8
এর আগে মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে গেছিলেন। তাইওয়ান থেকে তিনি জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় যেতে পারেন। তবে তার তাইওয়ান সফর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
চীনের প্রতিক্রিয়া
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পেলোসির সফর তাইওয়ানের শান্তি বিঘ্নিত করবে। ওয়াশিংটনকে এর জন্য ভুগতে হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে বেজিং। তাইওয়ানকে চীনের অংশ বলে মনে করে বেজিং। যদিও তাইওয়ান স্বশাসিত। গত কয়েকবছরে বেশ কিছু আইন করে তাইওয়ান এবং হংকংয়ের উপর আরো বেশি আধিপত্য তৈরির চেষ্টা করেছে চীন। তাইওয়ানের আকাশে বার বার চীনের যুদ্ধজাহাজ পাঠানো হয়েছে। অ্যামেরিকার সঙ্গে সরাসরি তাইওয়ানের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও, মার্কিন কূটনীতি বরাবরই তাইওয়ানের পাশে থেকেছে। কিছুদিন আগে বাইডেনও তাইওয়ান নিয়ে চীনকে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন, তারপরেই পেলোসির এই সফর কূটনীতির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।