তাইওয়ানে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা এখনো ৬০র নিচে৷ অথচ উহানের খুব কাছে হওয়ার সেখানে ভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি ছিল৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাইওয়ান ভাইরাসকে আটকে দিতে সক্ষম হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Song
বিজ্ঞাপন
গত বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর বিশ্বজুড়ে এক লাখ ২৬ হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন, মারা গেছেন সাড়ে চার হাজারের বেশি মানুষ৷
উহানে করোনা প্রাদুর্ভাবের পর বলা হয়েছিল, চীনের মূলভূখণ্ডের বাইরে তাইওয়ানে এই ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে৷ অথচ চীনে ৮০ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হলেও তাইওয়ানে এই সংখ্যা এখনো পঞ্চাশের নিচে৷
‘পাবলিক হেল্থ পলিসি’ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞ ডা. জেসন ওয়াং বলেন, তাইওয়ান সম্ভাব্য সংকটের ভয়াবহতা আগেই বুঝতে পেরেছিল এবং ভাইরাসের চেয়ে এগিয়ে থাকতে সক্ষম হয়েছে৷
বলেন, ‘‘২০০২ ও ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর তাইওয়ান ন্যাশনাল হেল্থ কমান্ড সেন্টার (এনএইচসিসি) গঠন করে পরবর্তী সংকট মোকাবেলায় প্রস্তুত হয়েই ছিল৷’’
করোনায় আক্রান্ত মন্ত্রী-এমপিরা
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস এখন সারা বিশ্বে চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ আক্রান্ত এক লাখ ১৩ হাজার ৭০২ জন, মারা গেছেন চার হাজারের বেশি মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/AA/F. Bahrami
নাদিন ডোরিয়াস
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং কনজারভেটিভ এমপি নাদিন ডোরিয়াস করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন৷ নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে আছেন তিনি৷ তার সঙ্গে দেখা করায় লেবার এমপি র্যাচেল মাস্কেলকেও কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে৷ যুক্তরাজ্যে ৩৮২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ছয় জন৷
ছবি: picture-alliance/empics/S. Rousseau
ফ্রঁঙ্ক রিয়েস্তা
ফ্রান্সের সংস্কৃতিমন্ত্রী ৪৬ বছরের ফ্রঁঙ্ক রিয়েস্তা করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন৷ ফরাসি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, কোয়ারেন্টাইনে তিনি ভালো আছেন৷
ছবি: AFP/B. Guay
আরো পাঁচ ফরাসি এমপি
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ছাড়াও আরো পাঁচজন ফরাসি এমপির করোনা ধরা পড়েছে৷ তারা সবাই ‘আইসোলেশনে‘ আছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Guay
নিকোলা জিঙ্গারেত্তি
চীনের পর ইটালিতেই করোনার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি৷ দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে, মারা গেছেন ৬৩১ জন৷ রোগের বিস্তার ঠেকাতে মঙ্গলবার থেকে দেশটি ‘লকডাউন’ হয়ে আছে৷ ইটালির ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা নিকোলা জিঙ্গারেত্তিও গত সপ্তাহ থেকে করোনার চিকিৎসা নিচ্ছেন৷
ছবি: Reuters/Y. Nardi
ডেভিড সাসোলি
গত সপ্তাহে ইটালি সফর করে আসার পর ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ডেভিড সাসোলি নিজেই কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন৷
ছবি: Imago Images/Pacific Press/
ইরান
ইরানে শীর্ষ পর্যায়ের ২০ জনের বেশি মন্ত্রী-এমপি ও রাজনীতিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন৷ মারা গেছেন দুই জন৷
করোনা সংক্রমিত একজনের সঙ্গে করমর্দন করায় যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর টেড ক্রুজ স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে আছেন৷ এছাড়া রিপাবলিকান দলের পাঁচজন এমপির করোনা রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে৷
ছবি: picture-lliance/dpa/AP/A. Harnik
7 ছবি1 | 7
উহানে করোনা প্রাদুর্ভাবের পরপরই তাইওয়ান সরকার চীনের মূলভূখণ্ড ছাড়াও হংকং, ও ম্যাকাওর উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷ এছাড়া ওই সময় সরকার সার্জিক্যাল মাস্ক রপ্তানি নিষিদ্ধ করে, যেন তাদের মজুদে সংকট দেখা না দেয়৷
এছাড়া তাইওয়ান সরকার ন্যাশনাল হেল্থ ইনসুরেন্স এবং ইমিগ্রেশন ও কাস্টম বিভাগ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো সমন্বয় করে৷ এরমাধ্যমে তারা জনগণের ভ্রমণের তথ্য নিয়ে শুরুতেই সম্ভাব্য রোগীদের শনাক্ত করে ফেলে৷
তাইওয়ানে যারা ভ্রমণ করেছেন তাদের জন্যও একটি প্রোগ্রাম চালু করা হয়৷ সেখানে একটি ‘কিউআর কোড' স্ক্যান করে ভ্রমণকারীরা তাদের ভ্রমণের ও অসুস্থতার লক্ষণ সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে৷ তারপর ভ্রমণকারীদের কাছে তাদের স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা নিয়ে একটি ম্যাসেজ যায়৷ এভাবে কাস্টম কর্মকর্তারা নিম্ন ঝুঁকির ভ্রমণকারীদের ছেড়ে দিয়ে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকাদের পরীক্ষায় অধিক গুরুত্ব দিতে পেরেছেন৷
ওয়াং বলেন,‘‘নতুন নতুন প্রযুক্তি যথাযথভাবে ব্যবহার করে তাইওয়ান সরকার অনেক কিছু করতে সক্ষম হয়েছে৷ এর মাধ্যমে তারা লোকজনের জরুরি প্রয়োজন বুঝে সে অনুযায়ী সেবা দিতে সক্ষম হয়েছে৷''
জনগণ স্বেচ্ছায় সরকারের নির্দেশ অনুসরণ করাও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন ওয়াং৷
তিনি বলেন, ‘‘সার্স ভাইরাসের সময় তাইওয়ানের বেশিরভাগ মানুষকে তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে৷ তাদের ওই স্মৃতি এখনো তাজা, যা তাদের করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করেছে৷
তারা ঐক্যবদ্ধ থেকে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের নেওয়া সব ব্যবস্থা নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চলেছে৷''
এসএনএল/কেএম
প্লেগ থেকে করোনা: রোগের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
করোনা ভাইরাস প্রাকৃতিকভাবে নয়, তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীনের গবেষণাগারে, এমন গুজব হরহামেশাই ছড়াচ্ছে৷ শুধু করোনা নয়, যুগে যুগে বিশ্বব্যাপী ছড়ানো সব মরণব্যাধী নিয়েই এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিস্তার লাভ করেছে৷
ছবি: zecken.de
প্লেগের কারণ ইহুদিরা
১৪ শতকে ইউরোপে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে৷ কারো জানা ছিল না কোথা থেকে এর উৎপত্তি৷ একটা সময়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে ইহুদিরা পরিকল্পিতভাবে এই রোগ ছড়িয়েছে৷ প্লেগের পেছনে আছে ইহুদিরাই; এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন জায়গায় তাদের উপর নির্যাতন শুরু হয়৷ জোরপূর্বক উচ্ছেদও করা হয় অনেককে৷
ছবি: picture-alliance/National Museum of Health and Medicine
স্প্যানিশ ফ্লু জার্মানির অস্ত্র
১৯১৮ থেকে ১৯২০ সালে স্প্যানিশ ফ্লু প্রায় আড়াই কোটি থেকে পাঁচ কোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়৷ ১৯৩০ সাল পর্যন্ত এই ভাইরাসের উদ্ভব রহস্য হয়ে ছিল৷ অনেকে মনে করতেন জার্মান সেনাবাহিনী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য এই জীবাণু আবিষ্কার করে৷
ছবি: picture-alliance / akg
এইডস ছড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
১৯৮০-র দশকে যুক্তরাষ্ট্রে এইডস ছড়িয়ে পড়ে৷ পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে এ নিয়ে গুজব ছড়াতে শুরু করে সোভিয়েত গোয়েন্দা বাহিনী কেজিবি৷ বলা হয় ফোর্ট ড্রেট্রিক-এ জীবাণু অস্ত্র হিসেবে মার্কিনিরা এইচআইভি উদ্ভাবন করেছিল, যা পরবর্তীতে প্রয়োগ করা হয় বন্দী, সংখ্যালঘু আদিবাসী সম্প্রদায় এবং সমকামীদের উপর৷ এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বটি আজও জনপ্রিয়৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Press/D. Oliveira
ইবোলার দায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের
নব্বইর দশকে এইডস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে৷ কিন্তু এ সময় আফ্রিকায় নতুন করে ইবোলা ছড়িয়ে পড়ে৷ যুক্তরাষ্ট্র এইডস ছড়িয়েছে এমন ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা এবার দাবি করল ইবোলার জন্যও তারাই দায়ী৷ সঙ্গে অবশ্য ব্রিটেনকেও জড়ানো হল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেন্টাগনের এঁটেল পোকা প্রকল্প
২০১৯ সালে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ক্রিস স্মিথ দাবি করেন পেন্টাগন এঁটেল পোকাসহ বিভিন্ন কীটের মাধ্যমে জীবাণু অস্ত্র তৈরির প্রকল্প চালিয়েছে৷ এই গবেষণা চলেছে ১৯৫০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে৷ স্মিথ সম্প্রতি এ নিয়ে একটি বইও লিখেছেন৷
ছবি: zecken.de
কোভিড-১৯ কৃত্রিমভাবে ছড়ানো
ডিজিটাল যুগে যেকোন ভুল তথ্য আগের চেয়েও দ্রুত ছড়ায়৷ বিভিন্ন রোগের কারণ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রের গোপন জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচির কথা বারবার সামনে আসে৷ একইভাবে এবার ষড়যন্ত্র তত্ত্বপ্রেমীদের দাবি নভেল করোনা ভাইরাস চীনের কোন গবেষণাগারে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা হয়েছে৷ সেখান থেকেই তা পরে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে৷ কেউ কেউ দাবি করছেন যুক্তরাষ্ট্রই জীবাণুটি তৈরি করে চীনে পাঠিয়েছে৷ যদিও এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই৷