চীন তাইওয়ান আক্রমণ করলে অ্যামেরিকা তাতে হস্তক্ষেপ করবে এবং লড়াইয়ে সামিল হবে। টোকিও-তে মন্তব্য বাইডেনের।
বিজ্ঞাপন
অ্যামেরিকা ওয়ান চায়না পলিসিতে চলে। তারা বিশ্বাস করে, তাইওয়ানের সায়ত্ত শাসনের অধিকার আছে। বস্তুত, তাইওয়ানের সঙ্গে ১৯৭৯ সালে এবিষয়ে চুক্তিও করে অ্যামেরিকা। সোমবার টোকিও-তে সাংবাদিকদের মুখোমুকি হয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়, চীন তাইওয়ান আক্রমণ করলে অ্যামেরিকার অবস্থান কী হবে। বাইডেন জানান, সেক্ষেত্রে অ্যামেরিকা সরাসরি তাইওয়ানের পাশে দাঁড়াবে। যুদ্ধে অংশ নিয়ে তাইওয়ানকে সাহায্য করবে। কারণ, অ্যামেরিকা এবিষয়ে চুক্তিবদ্ধ।
বাইডেনের এই বক্তব্য কূটনৈতিক মহলে রীতিমতো সাড়া পড়ে যায়। প্রশ্ন ওঠে সত্যিই কী সরাসরি যুদ্ধে যোগ দেয়ার বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ অ্যামেরিকা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, তাইওয়ানকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করার কথা অ্যামেরিকার। চুক্তিতে বলা হয়েছে, তাইওয়ান যাতে নিজেকে রক্ষা করতে পারে, তার জন্য সবরকম সহায়তা দেবে অ্যামেরিকা। কিন্তু সরাসরি যুদ্ধের কথা কোথাও বলা নেই।
মার্কিন নেভি সিলের মতোই শক্তিশালী তাইওয়ানের যে বাহিনী
তাইওয়ানের নৌবাহিনীর বিশেষ ইউনিট এআরপিতে সুযোগ পাওয়া মার্কিন নেভি সিলে সুযোগ পাওয়ার মতোই অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার৷ সেই বাহিনীর প্রশিক্ষণের কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক
ছবি: ANN WANG/REUTERS
কঠিন প্রশিক্ষণ
তাইওয়ানের নৌবাহিনীর অভিজাত ইউনিট এআরপিতে যোগ দিতে দশ সপ্তাহের একটি প্রাথমিক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হয়৷ এই প্রশিক্ষণ উতরে যেতে পারেন কম মানুষই৷ ২০২২ সালে এই ইউনিটে ৩১ জন অংশ নিতে এলেও মাত্র ১৫ জন চূড়ান্তভাবে সুযোগ পাবেন৷ তাইওয়ানের দক্ষিণে জুয়োইং নৌ ঘাঁটিতে এই প্রশিক্ষণ চলছে৷ শারীরিক ও মানসিকভাবে তারা কতটা প্রস্তুত, তা দেখা হয়েছে প্রশিক্ষণে৷ এর মধ্যে একটি ছিল শীতল কংক্রিটের উপর ঘুমানো৷
ছবি: ANN WANG/REUTERS
চরম ঠান্ডা পানিতে স্নান
সারাদিন সমুদ্রে কাটান প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা৷ এপর বরফশীতল ঠান্ডা পানি দিয়ে স্নান করানো হয় তাদের৷ তবুও ক্লান্ত শরীরে কাঁপতে কাঁপতে তারা দাঁড়িয়েছিলেন৷ বুট ক্যাম্পের লক্ষ্য হলো অংশগ্রহণকারীদের মনকে ইস্পাত কঠিন করে গড়ে তোলা৷ অভিযান যতই কঠিন হোক না কেন, সহযোদ্ধা এবং নৌবাহিনীর প্রতি আনুগত্য অটুট রাখতে হবে, এভাবেই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷
ছবি: ANN WANG/REUTERS
জীবন যেন সমুদ্রসৈকত
সমুদ্রসৈকতে একটি প্রশিক্ষণ অনুশীলনে অংশ নিয়েছিলেন ইউ গুয়াং-ক্যাং নামে এক ব্যক্তি৷ আপাতদৃষ্টিতে ছবি দেখে এটিকে সাধারণ শরীরচর্চা মনে হতে পারে৷ তবে লং মার্চ থেকে শুরু করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানিতে থাকা-সবটাই সহ্য করতে হয়েছিল তাদের৷ এই প্রশিক্ষকরা অত্যন্ত কঠোর৷ প্রশিক্ষণের মাঝে বিরতি খুব কম৷ বিরতির সময় অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত৷ এক ঢোক পানি গলায় ঢালা কিংবা শৌচাগারে যাওয়ার সময়ের জন্য বিরতি দেয়া হয় তাদের৷
ছবি: ANN WANG/REUTERS
যুদ্ধসজ্জা
একজন প্রশিক্ষণার্থীকে ক্লান্তির সঙ্গেও লড়াই করতে হয়৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তাকে আঠালো ক্যামোফ্লেজ পেইন্ট মাখানো হয়েছিল৷ শেষ সীমা পর্যন্ত লড়াই করেন অনেকেই৷ এই প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য যুদ্ধের কঠিন চ্যালেঞ্জকে সইয়ে নেওয়া৷ নৌবাহিনীর নেতৃত্ব চান, মারাত্মক কঠিন পরিস্থিতিতেও যাতে কর্মক্ষম থাকেন প্রশিক্ষণ নিতে আসা ব্যক্তিরা৷
ছবি: ANN WANG/REUTERS
দড়ির চ্যালেঞ্জ
প্রশিক্ষণের দীর্ঘসময় তারা সমুদ্রে বা জলাশয়ে কাটান৷ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শ্বাস ধরে রাখা, সম্পূর্ণ যোদ্ধার বেশে সাঁতার কাটা এবং সমুদ্র থেকে শত্রুপক্ষকে আক্রমণ করা–এই সবই প্রশিক্ষণের অংশ৷ তাদের হাত এবং পা অনেক সময় দড়ি দিয়ে বাঁধা থাকে৷ অনুগ্রহ করে বাড়িতে এই চেষ্টা করবেন না!
ছবি: ANN WANG/REUTERS
ব্রেকিং পয়েন্টের কাছাকাছি
শুধু শক্তি এবং সহনশীলতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় তা কিন্তু নয়৷ অত্যন্ত কঠিন স্ট্রেচিং ব্যায়ামও করতে হয়৷ আলোকচিত্রীর ছবিতে ধরা পড়েছে গত সপ্তাহের ছবি৷ ব্রেকিং পয়েন্টের কাছাকাছি এসে পঁচিশ বছর বয়সি ওউ ঝি-জুয়ান ব্যথার কারণে কেঁদে ফেলেছিলেন৷ চাপের কারণে কেউ যদি প্রশিক্ষকদের কাছে ফিরে আসেন, তবে তাদের এআরপি প্রশিক্ষণ থেকে বিতাড়িত করা হয়৷
ছবি: ANN WANG/REUTERS
চরম কঠিন প্রশিক্ষণ
যোদ্ধার বেশে প্রশিক্ষণ নিতে হয় তাদের৷ প্রশিক্ষকরা চরম অত্যাচার, হেনস্তাও করে তাদের৷ ছবিতে যে যুবককে দেখা যাচ্ছে, তিনি প্রতি ছয় ঘণ্টায় এক ঘণ্টা বিরতি পেয়েছিলেন৷ এটা তাদের খাওয়ার সময়—রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য রসুনের কোয়ার মতো জিনিস খেতে হয়৷ চিকিৎসকের সহায়তা পান তারা৷ এই সময় ঘুমিয়ে নেওয়া যায়৷
ছবি: ANN WANG/REUTERS
স্বর্গের পাথুরে রাস্তা
চূড়ান্ত পর্যায়ের অনুশীলনকে ‘স্বর্গের রাস্তা’ বলা হয়৷ প্রশিক্ষণার্থীদের একাধিক বাধার মোকাবেলা করতে হয় এই পর্যায়ে৷ পাথুরে পথ ধরে কার্যত নগ্ন হয়ে তারা হামাগুড়ি দিতে বাধ্য হন৷ পাশাপাশি পুশ-আপ করতেও হয় তাদের৷ এর আগে একাধিক পরীক্ষার ফলে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তারা৷ কারণ তার আগের সপ্তাহগুলিতে প্রায় একটুও ঘুম হয়না তাদের৷ এরপরও ৩০ বছর বয়সি প্রশিক্ষণার্থী ফু ইউ বলেছিলেন, ‘‘আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না৷’’
ছবি: ANN WANG/REUTERS
অবশেষে
সু-ডে-ইউ ঘণ্টা বাজিয়ে এআরপি বুট ক্যাম্পের সমাপ্তি চিহ্নিত করেছিলেন৷ তিনি সেই ‘ভাগ্যবান’দের একজন৷ তিনি ওই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন৷ ২৬ বছর বয়সি প্রশিক্ষক চেন শো-লিহ বলেছিলেন, ‘‘আমরা কাউকে কোনও জোর করিনি, সবাই এখানে স্বেচ্ছায় এসেছিলেন৷ তাই আমরা এত কঠোর আচরণ করি৷ শিবির থেকে নির্মমভাবে বাদও দিতে হয়৷ ’’
ছবি: ANN WANG/REUTERS
9 ছবি1 | 9
বাইডেন অবশ্য জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর তার আশঙ্কা আরো বেড়েছে। ইউক্রেনকে সাহায্য করা হচ্ছে, তাইওয়ানকেও সাহায্য করা হবে। চারদিনের এশিয়া সফরে গেছেন বাইডেন। দুইদিন দক্ষিণ কোরিয়ায় থেকে সোমবার বিকেলে তিনি টোকিও পৌঁছেছেন। সেখানে কোয়াডের বৈঠক করার কথা তার।
বাইডেনের এই মন্তব্যের পর পেন্টাগনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অস্টিন। তিনি জানিয়েছেন, অ্যামেরিকার চীন নীতি বদলায়নি। তাইওয়ানকে সবরকম সাহায্যের কথাই বলেছেন বাইডেন। সম্প্রতি ইউক্রেন-যুদ্ধের কথা মাথায় রেখেই নিজের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তিনি। কিন্তু অস্টিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, অ্যামেরিকার সামরিক নীতিতে বদল ঘটেনি। এবং প্রয়োজনে তাইওয়ানকে অস্ত্র দিয়েই সাহায্য করা হবে।
চীনের প্রতিক্রিয়া
বাইডেনের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে চীন। তারা জানিয়েছে, চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অ্যামেরিকার নাক গলানোর কোনো অধিকার নেই। তাইওয়ানের সঙ্গে সমস্যা চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অ্যামেরিকা তা নিয়ে মন্তব্য করে ভুল বার্তা দিচ্ছে। অ্যামেরিকা যুদ্ধে নামলে চীনও যে ছেড়ে কথা বলবে না, তা-ও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
বস্তুত, তাইওয়ানের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তেজনা চলছে চীনের। তাইওয়ানের একাধিক অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করছে শি জিনপিংয়ের সরকার। তাইওয়ানের আকাশে একাধিকবার চীনের যুদ্ধবিমানের মহড়া দেখা গেছে। সব মিলিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে চীন-তাইওয়ান সম্পর্কও ক্রমশ খারাপ হচ্ছে।