বিশ্বায়নের যুগে শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ-মাংসও বিশাল মাত্রায় কৃত্রিম উপায়ে সর্বত্র, সব ঋতুতে পাওয়া যাচ্ছে৷ কিন্তু তার পরিণাম কি ভালো? ডেনমার্কের এক বিকল্প কুইজিন এক্ষেত্রে এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
কোপেনহেগেন শহরে শীতকালে তাপমাত্রা শূন্যের উপর উঠতেই চায় না৷ এমন সময় শাক-সবজি খেতে কার মন চায়? কিন্তু নতুন ধারার নর্ডিক রান্নার উদ্যোক্তারা ঠিক সেই কাজই করছেন৷ ‘রাডিও' নামের রেস্তোরাঁয় শুধু স্থানীয় উপকরণ প্লেটে তুলে দেওয়া হচ্ছে৷ নিউ নর্ডিক কিচেন-এর আবিষ্কর্তা ক্লাউস মায়ার বলেন, ‘‘এমন খাবার তৈরি হচ্ছে, যা স্থানীয় প্রকৃতির প্রতিফলন৷ ২০০০ সালের শুরুতে যে স্প্যানিশ খাবারের রমরমা দেখা যাচ্ছিল, তাতে খুঁটিনাটি বিষয়ই প্রাধান্য পেত৷ প্রকৃতি থেকে তা বড্ড দূরে সরে গিয়েছিল৷ তখন আমরা বললাম, প্রকৃতির কাছে ফিরে যাবার সময় এসে গেছে৷''
শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ৬টি খাবার
ঋতু পরিবর্তনের সময় দেখা দেয় বাড়তি কিছু অসুখ-বিসুখ৷ তাই চাই বাড়তি সচেতনতা, অর্থাৎ বাড়াতে হবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা৷ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমনই কিছু খাবারের কথা পাবেন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Fotolia/Thomas Francois
কমলা
কমলালেবু তে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি৷ প্রতি ১০০ গ্রামের মধ্যে ৫০ মিলিগ্রামই ভিটামিন সি থাকে৷ ফিগার সচেতনদের জন্য বলছি, এই ফল শুধু খেতেই মজা নয়, এতে রয়েছে খুবই কম ক্যালোরি৷ এক গ্লাস কমলার রস প্রতিদিন সকালে পান করলেই দিনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি-র অভাব পূরণ হয়ে যাবে৷ তবে শুধু কমলার রস নয়, ভেতরের সাদা অংশে থাকে যথেষ্ট আঁশ, তাই পুরো কমলা খেলে আরো বেশি উপকার পাবেন৷
ছবি: Fotolia/travelbook
কপি
যে কোনো কপিই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী৷ সবচেয়ে ভালো পাতাকপি বা সবুজ কপি৷শরীরের রোগপ্রতিরোধ বাড়াতে শুধু ভিটামিন এ, সি এবং ই রয়েছে কপিতে, তা নয়৷ রয়েছে ‘পলিফেনল’৷ তবে রান্না করার সময় কপি পুরো সেদ্ধ না করে আধা সেদ্ধ করবেন৷ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে পুরো খাদ্যগুণ বজায় থাকে৷ ‘‘এ সব খাবার সারা বছর সচেতনভাবে খেলে ঋতু পরিবর্তনের সময়ও কারো কোনো সমস্যা হয় না৷’’ বলেন, বন শহরের খাদ্য বিশেষজ্ঞ আনিয়া গাল৷
ছবি: eyetronic/Fotolia
দই
দুধ এবং দুধের তৈরি দইয়ে থাকা ‘ল্যাকটিক অ্যাসিড’ ব্যাকটেরিয়া, যা পেট বা অন্ত্র পরিষ্কার রাখে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ‘ইমিউন সিস্টেম’-কে আরো শক্তিশালী করে৷ তবে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি বা মিষ্টি দই না খেয়ে প্রকৃতিক উপায়ে তৈরি টক বা সাদা দই, মানে ঘরে পাতা দই খাওয়াই উত্তম!
ছবি: Fotolia/arck
রসুন
রসুনে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর মতো ‘অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট’, ‘সেলেনিউম’সহ বেশ কয়েকটি উপাদান৷ নিয়মিত রসুন খাওয়া পাকস্থলীর নানা সমস্যা, অর্থাৎ ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক থেকে রক্ষা করে৷ প্রতিদিন দুই বা তিন কোয়া কাঁচা রসুন থেতলে বা অল্প গরম করে খেলে ভালো৷ রসুন বেশি সময় ধরে রান্না করলে তার খাদ্যগুণ কমে যায়৷ রসুনে রয়েছে আঁশ, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও প্রোটিন৷
ছবি: Fotolia/Floydine
চা
চা পান করতে ইচ্ছে করছে? কোনো অসুবিধা নেই, কারণ চা স্বাস্থ্যকর এবং ভেতর থেকে শরীরকে গরমও রাখে৷ বিশেষ করে সবুজ চা, কালো এবং সাদা চা৷ এতে থাকা ‘পলিফেনল’ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়৷ এছাড়া সবুজ চায়ে থাকা ‘অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট’ রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে৷ তবে কেউ চাইলে সামান্য ঠান্ডা চা-তে মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন৷ এতে থাকে ‘অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল’ উপাদান৷
ছবি: Fotolia/gaai
মুরগির স্যুপ
তারপরও যদি কাউকে ঠান্ডা ধরেই ফেলে তাহলে দাদি, নানিদের রেসিপি অনুকরণ করতে পারেন, যা অ্যামেরিকান গবেষকরাও খুঁজে পেয়েছেন৷ ঠান্ডায় মুরগির স্যুপ পান করুন, এতে স্বাসনালীর কষ্ট তো দূর হবেই, এছাড়া গরম স্যুপের ভাপ গলার খুসখুসে ভাবটাও কমিয়ে দেবে৷
ছবি: Fotolia/Thomas Francois
6 ছবি1 | 6
সারা বিশ্বেই নামি শেফ-রা নর্ডিক রান্না থেকে অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন৷ বছর দশেক আগে ‘নর্মা' নামের রেস্তোরাঁয় এই আন্দোলন শুরু হয়েছিলো৷ এখন ‘নর্মা' থ্রি স্টার রেস্তোরাঁর মর্যাদা পেয়েছে৷ ব্রিটেনের ‘রেস্তোরাঁ ম্যাগাজিন' চার বার এটিকে বিশ্বের সেরা রেস্তোরাঁর স্বীকৃতি দিয়েছে৷ ক্লাউস মায়ার বলেন, ‘‘আমরা ভাবিনি, যে ‘নিউ নর্ডিক কুইজিন' হাতে গোনা ‘এলিট' শ্রেণির হাতে সীমাবদ্ধ হবে৷ অনেক মানুষের জীবনে তা দাগ কাটবে – এটাই আমাদের স্বপ্ন ছিল৷''
খাবারের ক্ষেত্রে পুরানো ঐতিহ্যে ফিরে যাওয়া নিয়ে বহুকাল ধরে আলাপ-আলোচনা চলছে৷ ‘ক্লিন ইটিং' বা ‘স্লো ফুড' ধারায় বিশাল আকারে প্রক্রিয়াকরণ করা খাদ্যের উপকরণ একেবারেই ব্যবহার করা হয় না৷
‘পেলিও ডায়েট' আন্দোলন তো আরও একধাপ এগিয়ে গেছে৷ তারা প্রস্তর যুগের মতো রান্না করে৷ এমনকি তাদের কয়েকটি রেস্তোরাঁও আছে৷ রেস্তোরাঁ সমালোচক লার্স বিয়েরেগার্ড বলেন, ‘‘দৈনন্দিন কাজকর্ম, আমাদের সম্পর্ক, আমাদের সমাজে এমন সারল্য না পেলেই মুশকিল৷ নিজেদের রান্নাঘরে আমরা সেই সারল্যের খোঁজ করতে পারি৷''
খাবারে ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি প্রবণতার তুলনায় গত প্রায় ১০ বছর ধরে ‘নিউ নর্ডিক কুইজিন'-এর সমাদর বেড়েই চলেছে৷ দৈনন্দিন জীবনেও সেটি স্থান করে নিয়েছে৷ তবে ভাইকিং-রা খেতে বসলে তাদের এমন দেখাতো না৷