একুশ আমাদের অহংকার৷ এই অহংকারের কতটা মৌখিক আর কতটা আন্তরিক? ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার কতটা জ্ঞানপ্রসূত, কতটা মেকি, ভড়ংপূর্ণ? আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের কতিপয় ব্যক্তি এবং অভিনেত্রী সাবেরী আলমের কাণ্ড এই ভাবনাতেই ফেলেছে৷
১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস'-এর স্বীকৃতি দেয়৷ তারপর থেকে বিশ্বের অনেক দেশেই বিশেষ মর্যাদায় দিনটি পালন করা হয়৷ এমনকি পাকিস্তানেও ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়৷ অবশ্য বিবিসি বাংলা-র খবর অনুযায়ী, সে দেশের কিছু মানুষ '৫২-র ইতিহাস না জেনেই ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' উদযাপন করেন৷
ইয়াহিয়া, টিক্কা খানের দেশে '৫২-র প্রকৃত ইতিহাস জানানোর চেষ্টা হবে, সাধারণ মানুষ খুব জেনে-বুঝে ভাষাশহিদদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানাবে- এ আশা বাংলাদেশের কোনো সচেতন মানুষই হয়ত করে না৷
বাংলাদেশেই কি সর্বস্তরে ইতিহাস সচেতনতা, শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা কাঙ্খিত মাত্রায় রয়েছে? নেই৷ সে কারণে এ সপ্তাহেই আমরা আদালতকে খুব গুরুত্বপূর্ণ এক নির্দেশনা দিতে দেখেছি৷
২০১০ সালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষা এবং জাদুঘর স্থাপনের নির্দেশনা চেয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) একটি রিট আবেদন করেছিল৷ পরিবেশবাদী সংগঠনটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সে বছরই হাইকোর্ট শহিদ মিনারের পাশে গ্রন্থাগারসহ জাদুঘর নির্মাণ, জাদুঘরে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসসমৃদ্ধ তথ্যপঞ্জিকা রাখা, ভাষা সংগ্রামীদের প্রকৃত তালিকা তৈরি ও প্রকাশ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মাণ ও মর্যাদা রক্ষাসহ আটটি নির্দেশনা দেয়৷
নির্দেশনাগুলো আগামী ছয় বছরেও বাস্তবায়িত হবে কিনা কে জানে৷ তাছাড়া সরকার চাইলে গ্রন্থাগার, জাদুঘর নির্মাণ, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসসমৃদ্ধ তথ্যপঞ্জিকা রাখা, ভাষা সংগ্রামীদের প্রকৃত তালিকা তৈরি ও প্রকাশ, এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মাণ হয়ত করতে পারবে, কিন্তু তাতেই কি শহিদ মিনারের পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষা সম্ভব হবে?
খবরে দেখছি, পুলিশই নাকি একুশে ফেব্রুয়ারির কথা ভুলে যায়!
আরো দেখছি, চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নামে ছাপা পোস্টার, ব্যানারে একুশে ফেব্রুয়ারিতে ‘৩০ লাখ শহীদের প্রতি' শ্রদ্ধা নিবেদনের হিড়িক৷ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাদেরই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে আদালতের নির্দেশে কতটুকু ‘মর্যাদা রক্ষা' সম্ভব'?
আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের অখ্যাত নেতা-কর্মীদের বেশি সমালোচনা করেই বা কী হবে? সর্বত্রই তো পচনের চিহ্ন৷
এক বেসরকারি চ্যানেলের একটি প্রতিবেদনে অভিনেত্রী সাবেরী আলমের কাণ্ড দেখলাম৷ অনেকে যে স্যান্ডেল পায়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে উঠে পড়েন- এ বিষয়ে তাঁর মতামত জানতে চাইলে সাবেরী খুব আবেগপ্রবণ হয়ে বলতে শুরু করেন, ‘‘শ্রদ্ধার ব্যাপারটি কোন জায়গায় রইল আমাদের? মানে, এইগুলো তো পারিবারিক শিক্ষা৷ এগুলো তো আসলে বড় হয়ে শেখার কথা না৷''
সাবেরী নিজে এই শিক্ষায় খুব শিক্ষিত৷ কিন্তু একটু আগে তিনি নিজেও কিন্তু স্যান্ডেল পায়ে শহিদ মিনারের বেদীতে উঠেছিলেন৷ সেই বিষয়ে যেই দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো অমনি ভোল পাল্টে গেল৷ স্বনামধন্য অভিনেত্রী নির্বিকারভাবে বলতে লাগলেন, ‘‘এই বেদীতে স্যান্ডেল পরে উঠলে কিছু হবে না৷ ভাষাটাকে যদি শ্রদ্ধা করি, তাহলে এগুলো গৌণ৷''
পুলিশ যদি একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলে যায়, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যদি টাকার গরমে ভুলে ভরা পোস্টার ছেপে ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতাকে ‘প্রিন্টিং মিসটেক' বলেন, সাবেরী আলমের মতো প্রখ্যাত অভিনেত্রীও যদি ভণ্ডামির এমন দৃষ্টান্ত হন, তাহলে শহিদের রক্ত বৃথা যেতেও পারে৷
ঢাকার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যান প্রাঙ্গণে চলছে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা৷ পয়লা ফেব্রুয়ারি এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ছবিঘরে উঠে এসেছে মেলার জানা অজানা নানা কথা৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রতিষ্ঠাতা চিত্তরঞ্জন সাহা
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘মুক্তধারা’-র স্টল৷ নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গঠনের পরের বছরই চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরেই শুরু হয়েছিল একুশে গ্রন্থমেলার৷ দিনটি ছিল ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়সের সমান তাই গ্রন্থমেলার বয়সও৷
ছবি: DW/M. Mamun
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
এ বছর একুশে গ্রন্থমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ ভালো৷ প্রতিটি প্রবেশপথেই দর্শণার্থীদের তল্লাশি করেন পুলিশ সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রবেশ পথ
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বেশ কয়েকটি প্রবেশপথ থাকায় এ বছর মেলার প্রবেশ পথে আগের বছরগুলোর তুলনায় দর্শকদের দীর্ঘ সারি কম ছিল৷
ছবি: DW/M. Mamun
সব্যসাচী লেখকের অনুপস্থিতি
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চারুলিপি প্রকাশনের স্টলে কবি সৈয়দ শামসুল হকের ছবি৷ এ বছর থেকে আর কখনো একুশের গ্রন্থমেলায় পাঠকরা দেখতে পাবেন না সব্যসাচী এই লেখককে৷ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
না থেকেও আছেন হুমায়ূন
সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নে হুমায়ূন আহমেদের ছবি৷ গত পাঁচ বছর ধরে মেলায় তাঁর উপস্থিত না থকালেও পাঠকদের কাছে তিনি আজও সমান সমাদৃত৷
ছবি: DW/M. Mamun
জাগৃতি প্রকাশনী
ফয়সাল আরেফিন দীপনের জাগৃতি প্রকাশনীতে তাঁর স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলি৷ দীপন চলে যাওয়ার পর প্রকাশনীটির হাল ধরেছেন তিনি৷ এ বছর জাগৃতি প্রকশনী থেকে তিনি প্রকাশ করেছেন ৫২টি নতুন বই৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রতিদিন নতুন বই
প্রতিদিনই মেলায় আসছে নতুন নতুন বই৷ বাংলা একাডেমির তথ্যমতে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলায় আসা নতুন বইয়ের সংখ্যা ২,৭৪৫৷
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় সেলফি তুলছেন মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থী৷
ছবি: DW/M. Mamun
ছুটির দিনে উপচে পড়া ভিড়
ছুটির দিনগুলোতে গ্রন্থমেলায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়৷ সাধারণ দিনগুলোতে মেলার দুয়ার বিকেল ৩টায় খোলা হলেও শুক্র ও শনিবারে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টা থেকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়ন
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্থায়ী বিক্রয় কেন্দ্র ছাড়াও মেলার দু’টি চত্ত্বরে আরো দশটি প্যাভিলিয়ন ও স্টল থেকে পাঠকরা কিনতে পারবেন বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই৷
ছবি: DW/M. Mamun
নতুন বইয়ের স্টল
এবারের মেলায় নতুন বইয়ের একটি স্টল চালু করেছে বাংলা একাডেমি৷ মেলায় প্রকাশ হওয়া প্রতিদিনের নতুন সব বই একই জায়গায় চোখ বোলানোর সুযোগ পাচ্ছেন পাঠকরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের স্টল
দিনাজপুরের কান্তনগর মন্দিরের আদলে তৈরি এ স্টলটি নজর কেড়েছে সবার৷
ছবি: DW/M. Mamun
গ্রন্থমেলার পরিসর
সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে গ্রন্থমেলার একটি প্যাভিলিয়ন৷ এবারের গ্রন্থমেলায় একাডেমি চত্বরে ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ১১৪টি ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ৩২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪৯টি ইউনিটসহ মোট ৪০৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৬৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
একাডেমির প্যাভিলিয়ন রয়েছে দু’টি
এর বাইরে বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা সংস্থাকে মোট ৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১৫টি প্যাভিলিয়ন দেয়া হয়েছে৷ এরমধ্যে একাডেমির প্যাভিলিয়ন রয়েছে দু’টি৷
ছবি: DW/M. Mamun
শিশু প্রহর
প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে ১.৩০ মিনিট শিশু প্রহর৷ মেলার এ সময়টি শুধুই শিশুদের জন্য৷
ছবি: DW/M. Mamun
জনপ্রিয় লেখক
অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে লেখক জাফর ইকবালকে ঘিরে ভক্তরা৷ অটোগ্রাফ নেয়ার পাশাপাশি ভক্তরা লেখকের সঙ্গে সেলফি তোলার সুযোগও হাতছাড়া করছেন না৷
বাংলা একাডেমির মঞ্চে মেলার প্রতিদিনই থাকছে আলোচনা অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সমকালীন প্রসঙ্গ এবং বিশিষ্ট বাঙালি মনীষার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ফুড কোর্ট
এবারের মেলায় বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বসেছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ফুড কোর্ট৷ ফলে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা ভালো মানের খাবার পাচ্ছেন৷