1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তাদের দেখার কেউ নেই!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৮ এপ্রিল ২০১৮

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আহত পোশাক শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক কাজ করতে পারছেন না৷ শারীরিক অক্ষমতা ছাড়াও দুর্ঘটনাজনিত আতঙ্কের কারণে তাঁদের এই অবস্থা হয়েছে৷ কোনো ধরনের কাজ করতে গেলেই তাঁরা ভীত হয়ে পড়েন৷

ছবি: Getty Images

দাতব্য সংস্থা অ্যাকশন এইড রানা প্লাজা ধসে আহত দুইশ' শ্রমিকের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখেছে, তাঁদের মধ্যে শতকরা ৪৮ ভাগ কোনো কাজ করতে পারেন না৷ শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় তাঁদের এ অবস্থা হয়েছে৷

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর থেকে প্রতিবছর অ্যাকশন এইড এই জরিপ চালিয়ে আসছে৷ এবারের জরিপে দেখা যায়, জীবিত শ্রমিকদের মধ্যে ১২ শতাংশের শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ ২২ শতাংশ শ্রমিক এখনও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত৷ ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ শ্রমিক এখনো কোনো কাজ করতে পারছেন না৷ আর দুর্ঘটনার আগে রানা প্লাজার পাঁচটি পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মাত্র ২১ দশমিক ৬ শতাংশ এখন পর্যন্ত পোশাক কারাখানার কাজে ফিরে যেতে পেরেছেন৷

ফারাহ কবীর

This browser does not support the audio element.

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা গত তিন বছর ধরে রানা প্লাজার শ্রমিকদের নিয়ে একটিপ্রকল্পের আওতায় কাজ করি৷ এবছরই প্রকল্পটি শেষ হয়েছে৷ আমরা প্রতিবছরই গবেষণা করেছি৷ এবছর সাক্ষাৎকারভিত্তিক গবেষণায় যে চিত্র উঠে এসেছে প্রায় ৫০ ভাগের সবাই-ই যে কাজ করতে অক্ষম, তা নয়৷ তাঁরা কাজ করতে পারছেন না৷ এর মূল কারণ হলো তাঁদের মধ্যে এখনো সেই ভয় কাজ করে৷ বিল্ডিংয়ের ভিতরে গেলে মনে হয় সেটা ভেঙে পড়বে৷ তাঁদের ট্রমাটা অনেক বিশাল৷ এটা বোঝাও অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না৷ আবার তাঁরা অন্য কোনো কাজও পায়নি৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমরা তাঁদের তিন বছর ধরে সাইকো সোশ্যাল কেয়ার, ফিজিও থেরাপি, নতুন কাজের ট্রেনিং দেয়ার কাজ করেছি৷ গত জুলাইতে আমাদের সেই প্রকল্প শেষ হয়ে গেছে৷ এর কিছু সুফলও পাওয়া গেছে৷ কিন্তু তাঁদের তো এই চিকিৎসা ও সেবা অব্যাহতভাবে এখনো প্রয়োজন৷ তাই সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে৷ তাদেরকে হেলথ কার্ড দিতে হবে৷ তাঁরা যে এলাকায় থাকেন, সেই এলাকায় যাতে সহজেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা পান, তা নিশ্চিত করতে হবে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকার কমবেশি সহায়তা করেছে৷ আর আইন অনুযায়ী মালিকরা আহত শ্রমিকদের এক লাখ টাকা করে দিয়েছে৷ সরকার সেটা আইন পরিবর্তন করে বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল৷ আর কোনো বিশেষ উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়েনি৷''

নুজহাত জেবিন

This browser does not support the audio element.

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সরকার তো করবেই৷ কিন্তু প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মালিকপক্ষ এবং ব্র্যান্ডের৷ তারা তো শ্রমিকদের এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কাজে নিয়োগ করেছে৷ তাঁদের ইন্সুরেন্সও করা হয়নি৷ তাই দায়িত্ব নিতে হবে মালিকপক্ষ এবং ব্যান্ডকে (ক্রেতা)৷''

এই গবেষণার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের ম্যানেজার নুজহাত জেবিন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই শ্রমিকরা এখন শারীরিকভাবে দুর্বল এবং তাঁদের ভীতি এখনো কাটেনি৷১১০ জন শ্রমিক পুরোপুরি শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে গেছেন৷ আরো সাতশ'র মতো আছেন গুরুতর আহতের তালিকায়৷ তাঁদের জন্য ধারাবাহিক একটা স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা আছে৷ কিন্তু আমরা যাঁদের নিয়ে কাজ করেছি, আমাদের প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা আর ধারাবাহিক কোনো স্বাস্থ্য সেবার আওতায় নেই৷ কেউ কেউ আবার থাকতেও পারেন৷ কিন্তু এটাতো হলো রিকারিং ইনজুরি৷ একটা থেকে আরেকটা আসে৷ তাই তাঁরা সুস্থ হতে অনেক সময় নেবেন৷ তাঁদের ট্রমা থেকে বের করে আনতে আরো কাউন্সেলিং দরকার৷ সেটার কোনো ধারাবাহিক ব্যবস্থা নেই৷''

তিনি বলেন, ‘‘তাঁদেরতো কাজে যুক্ত করতে হবে৷ ট্রমার কারণে হয়তো পোশাক কারখানার কাজে যেতে পারবেন না৷ আবার তাঁদের সে সুযোগ অবারিত না-ও হতে পারে৷ তাই তাঁদের নতুন স্কিল ডেভেলপমেন্ট দরকার৷ আবার কোনো একটা কাজে স্কিল ডেভেলেপ করে দেয়ার পর তাঁরা সে কাজে সফল না-ও হতে পারে৷ তখন তাঁদের জন্য আবার ভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া দরকার৷ সবার ওপরে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷''

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে ১,১৫৩ জন শ্রমিক নিহত হন৷ আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ২,৪৩৮ জনকে৷ মোট পাঁচটি পোশাক কারখানায় পাঁচ হাজারের মতো শ্রমিক কর্মরত ছিলেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ