তামাক ও ঠান্ডা পানীয়ের কারণে পশ্চিমবঙ্গে স্বাস্থ্য সঙ্কট
পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৯ অক্টোবর ২০১৭
বিজ্ঞানের আশীর্বাদে মানব সভ্যতা যেমন সমৃদ্ধ হয়েছে, তেমনই বেড়েছে তার গতি৷ কিন্তু এই গতিময় জীবনচর্যার ফলে অনেক বিপদ ঘনিয়ে আসছে, বাড়ছে স্বাস্থ্য সঙ্কট৷ নেতিবাচক খাদ্যাভ্যাস ও নেশা গ্রাস করছে পশ্চিমবঙ্গকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Khanna
বিজ্ঞাপন
ভারতের এক শীর্ষ পুষ্টি গবেষণা সংস্থার রিপোর্টে উঠে আসা তথ্য উদ্বেগ জাগানোর মতো৷ সেই রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গের যে ছবি তুলে ধরা হয়েছে, তা দেখে বোঝা যাচ্ছে, নেতিবাচক খাদ্যাভ্যাস ও নেশা কীভাবে সচেতন বাংলাকে ক্রমশ গ্রাস করছে৷
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর অধীনে কাজ করে পুষ্টি গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন (এনআইএন)৷ সংস্থাটি এ মাসের গোড়ায় তাদের শতবর্ষ উপলক্ষে শহুরে ভারতের স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে৷ তাতে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে দু'টি তথ্য এতদিন আমাদের অজানা ছিল৷ এক, ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তামাকজাত দ্রব্য সেবন করা হয় পশ্চিম বাংলায়৷ দুই, দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্বনযুক্ত ঠান্ডা পানীয় পান করা হয় পশ্চিমবঙ্গে৷
বড় রাস্তা তো বটেই, এখন পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে উঠেছে গুমটি দোকান৷ সেখানে তামাকজাত পণ্যের বিপুল পসরা৷ শুধু সিগারেট বা বিড়ি নয়, গুটখা, জর্দা বা পানমশলার মতো দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে দেদার৷
এক চুমুকেই ঠান্ডা
গরমের দাবদাহ শুরু হতে না হতেই কলকাতার রাস্তাঘাটে হরেক পানীয়ের সম্ভার৷ চিনা পরিব্রাজক ই-সিঙ সপ্তম শতাব্দীর শেষের দিকে বাংলায় পেয়েছিলেন নানা পানীয়ের সুলুক সন্ধান৷ এ যুগেও সেই ধারা অব্যাহত৷
ছবি: DW/P. Samanta
গেলাসই গন্তব্য
অতীতে বাবুর বাড়ির অতিথি আপ্যায়নে শ্বেতপাথরের গেলাসে কেওড়ার গন্ধ মেশানো জলপানের চল ছিল৷ হাল আমলে অতিথিদের জন্য বরাদ্দ কাঁচের গেলাসে স্কোয়াশ বা রঙিন সরবত৷ তৃষ্ণার্ত পথচারীরা অবশ্য দইয়ের ঘোল, ঠান্ডা জল বা বেলের পানা পেলেই খুশি হন৷ উত্তর কলকাতার একটি সরবতের দোকানে৷
ছবি: DW/P. Samanta
লাল-নীল-সবুজের মেলা
রঙিন পানীয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি৷ তাই বঙ্গজীবনে রঙ-বেরঙের ফ্লেভারের উৎপত্তি৷ এক বিন্দু রঙিন সিরাপ ঢেলে দিলেই মন ভালো হয়ে যায় জ্বালাপোড়া গরমেও৷ রাস্তাঘাটে তীব্র গরমে এমন বন্ধু আর কে আছে?
ছবি: DW/P. Samanta
খেয়ে আরাম খাইয়ে আরাম
যতই কৃত্রিম, রঙিন পানীয় বাজার দখল করুক না কেন, আজও বহাল তবিয়তে টিকে রয়েছে বিশুদ্ধ পাতিলেবুর জল৷ আদি ও অকৃত্রিম, বর্ণহীন লেবু জলের বিকল্প বাঙালি আজও পায়নি৷ দমদম স্টেশন চত্বরে লেবুজলের পসরা৷
ছবি: DW/P. Samanta
এসো শ্যামল সুন্দর
আগে গ্রামবাংলায় উনুনের মরা আগুনে কাঁচা আম পুড়িয়ে তার ফ্যাকাসে তুলতুলে শাঁস চটকে চিনি, বাতাসা বা মিছরি দিয়ে সরবত তৈরি হত৷ বোতলবন্দি ‘কর্পোরেট’ আমপান্নার যুগেও অবশ্য কলকাতার রাস্তার ধারে আম-পুদিনার বিক্রিতে ভাটা পড়েনি৷
ছবি: DW/P. Samanta
ছাতু-জল থইথই
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘‘একসময় ভাল ছাতু-মাখিয়ে বলে আমার নাম ছিল৷’’ কাজেই ছাতুর সরবত কেবল বিহারি-মারোয়াড়িদেরই একচেটিয়া নয়৷ ঠেলাগাড়ি চেপে পথচারীর নাগালেই থাকে ছাতুর সরবত৷ বেলাশেষে কত উপার্জন হলো, মানিকতলায় সেটাই গুনছেন বিক্রেতা৷
ছবি: DW/P. Samanta
হাত বাড়ালেই ঠান্ডা
সেকালে বাঙালির বিশেষ পানীয়কে পানা বলা হতো৷ যেমন চিনির পানা, বেলের পানা ইত্যাদি৷ এ কালেও সেই পানীয়ের দেখা মেলে৷ বিপুল চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসেছে কৃত্রিম পানীয়ের সম্ভার৷ সুইচ টিপলেই শীতল স্রোত৷
ছবি: DW/P. Samanta
তাপহরা তৃষাহরা
কয়েক দশক আগেও পশ্চিমবঙ্গের ঘরে ঘরে ফ্রিজের এত চল ছিল না৷ রাস্তায় রাস্তায় বরফের গোলা বা সামান্য বরফকুচি মেশানো কাঁচা আমপোড়া, পুদিনাপাতার সরবত ছিল বাঙালির গ্রীষ্মের স্বর্গ৷ কলকাতার ভিড়ে ভরা ফুটপাতে এ কালেও এক চুমুকে স্বর্গলাভ হয় বৈকি! যেমন এই কলেজ স্ট্রিটে৷
ছবি: DW/P. Samanta
সরবত যেন কুটিরশিল্প
পশ্চিমবঙ্গে তেলেভাজার পাশাপাশি অন্যতম জনপ্রিয় লগ্নি সরবতেই৷ অল্প খরচে, কম মজুরিতে, ন্যূনতম স্থানে অনায়াসে খুলে ফেলা যায় সরবত তৈরির ব্যবসা৷ উপমহাদেশের গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ায় চোখ বুঁজে কমপক্ষে তিন মাস দেদার আয়৷
ছবি: DW/P. Samanta
কু ঝিক ঝিক পানীয়
গরম পড়তেই রেলের প্ল্যাটফর্মের দৃশ্যও বদলে গেছে৷ কেক-বিস্কুট-প্যাটিসের দোকানে রাতারাতি হাজির সারি সারি পানীয়ের বোতল৷ কুঁজো, জালা বা ঘটির যুগ আর নেই৷ প্যাকেজিংয়ে মোড়া যুগে বোতলই আমাদের সভ্যতার ধারক ও বাহক৷ পথচারী, ট্রেনযাত্রী বা অফিসকর্মী সকলেই বোতলের গুরুত্ব স্বীকার করেছেন৷
ছবি: DW/P. Samanta
বাণিজ্যে বসতে সরবত
‘প্যারামাউন্ট’ কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় প্রাচীন সরবতের দোকান৷ ডাকসাইটে রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বহু নায়ক-গায়ক-খেলোয়াড়ের স্মৃতিধন্য এই খানদানি সরবতী বিপণী কলেজ স্কোয়্যারের অলঙ্কার৷
ছবি: DW/P. Samanta
প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে
কাজের ফাঁকে দু’চুমুকে যদি গরম থেকে নিস্তার পাওয়া যায়, তবে তাই সই! কলকাতার অন্যতম প্রাচীন ঘোলের দোকান ‘কপিলা আশ্রম’-এ সরবত প্রেমীদের ভিড়৷ বিধান সরণীতে৷
ছবি: DW/P. Samanta
সকল রসের ধারা
চিনা পরিব্রাজক ই-সিঙের ডায়েরি থেকে জানা যায়, সেকালে বাঙালিদের মধ্যে তালের রস, খেজুরের রস জনপ্রিয় ছিল৷ আমবাঙালির হাতে এখন সেগুলি সবসময় না পৌঁছালেও অনায়াসে জুটে যায় রসরাজ ইক্ষুশর্করা৷ হেদুয়ার ফুটপাতে সে-ই রাজা৷
ছবি: DW/P. Samanta
এলাম-দেখলাম-জয় করলাম
ঠান্ডা পানীয়ের বিজ্ঞাপনী ভাষা রপ্ত করেছে নব্য বঙ্গ৷ তর্ক-বিতর্ক-আড্ডা-স্লোগানে নিজেদের প্রমাণ করতে তারা বেছে নিয়েছে বোতলবন্দি ঠান্ডা পানীয়ের ‘জোশ’৷
ছবি: DW/P. Samanta
সরবতী সঙ্গ সুধা
দহনজ্বালা জুড়াতে চাইলে করুণাধারায় এসো৷ তাই কি প্রখর গ্রীষ্মে সম্পর্কের ভাঙ্গাগড়ার খেলায় বান্ধবীর সঙ্গে দু’দণ্ড শান্তির খোঁজ?
ছবি: DW/P. Samanta
শীতল জমায়েতে উষ্ণতা
কলেজ ক্যান্টিন হোক বা ‘প্যারামাউন্ট’– বন্ধুবান্ধবদের হইচই আর ঠান্ডা আমোদ জমে ওঠে গেলাসে রাখা সরবত ঘিরেই৷
ছবি: DW/P. Samanta
আমার সন্তান যেন থাকে পানীয়তে
কোনও কোনও সম্পর্ক অনিবার্য৷ মা ও সন্তানের মধ্যে জীবন যেন মরুদ্যানের মতো৷ সব প্রতিকূলতা, রুক্ষতার বিপরীতে শাশ্বত বিজ্ঞাপন৷ তৃষ্ণা মেটায়, আশ্রয় জোগায়৷
ছবি: DW/P. Samanta
মেঘ দে, পানি দে
জাতীয় পানীয় বলতে যদি কিছু থাকে, তাহলে সেটা জল বা পানি৷ পানি শব্দটি এসেছে সংস্কৃত পানীয় থেকে৷ গরমে রঙিন বা কৃত্রিম পানীয়ের থেকে স্রেফ সাদা পানির আবেদন সততই তীব্র৷ তাই করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা, ‘পানি দে’৷ নগরজীবনের ভিড়,কোলাহল,ব্যস্ততা থেকে ছুটি চায় মন৷ গতির সঙ্গে পাল্লা না দিয়ে মানুষ চায় ক্ষণিকের বিশ্রাম৷ সদা ব্যস্ত নাগরিকের সেই তৃষ্ণা মেটে কি?
ছবি: DW/P. Samanta
17 ছবি1 | 17
জনতার পকেটের স্বার্থে, স্বাস্থ্যের বিনাশকে ত্বরান্বিত করতে এসে গেছে তামাকযুক্ত মশলার ছোট প্যাকেট৷ মাত্র ২-৩ টাকা ফেললেই মুখে ফেলার মতো নেশার সামগ্রী পাওয়া সম্ভব৷ সাধারণভাবে এই গুটখা জাতীয় নেশার সামগ্রীর চল পশ্চিমবঙ্গে ছিল না৷ কয়েক বছর আগে বাংলার বাইরে থেকে আসা শ্রমিক শ্রেণির মানুষদের মধ্যে এই নেশার আধিক্য দেখা যেতো৷ কিন্তু, ছবিটা দ্রুত বদলেছে৷ এখন রিকশাচালক থেকে স্যুট পরা সেলসম্যান, ঝালমুড়ি বিক্রেতা থেকে সরকারি দপ্তরের ক্লার্ক, সকলেই ছোট প্যাকেট কেটে নেশার দ্রব্য মুখে চালান করে দিচ্ছেন৷ কলকাতা শহরে এলে আপনি দেখতে পাবেন, রাস্তাঘাটে উড়ছে সেই ফেলে দেওয়া মোড়ক৷ দেখতে পাবেন, সরকারি ভবনের সিঁড়ির কোণ কিংবা রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে তামাক চিবিয়ে ফেলা লাল বর্জ্যের দাগ৷ এনআইএন-এর সমীক্ষা বলছে, রাজ্যের ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ তামাকজাত পণ্য সেবন করেন, যা ভারতের সব রাজ্যের থেকে বেশি৷
কৌশিক দাস
This browser does not support the audio element.
পশ্চিমবঙ্গের ঠান্ডা পানীয়ের প্রতি আসক্তি নিয়ে আলোচনার আগে একবার সমীক্ষায় প্রকাশিত শহুরে ভারতের স্বাস্থ্য সঙ্কটের ছবিটায় চোখ রাখা যেতে পারে৷ ১৬টি রাজ্যের ১ লক্ষ ৭২ হাজার মানুষের উপর সমীক্ষা চালিয়েছে এনআইএন৷ তাদের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, প্রতি ছয় জন ভারতীয়ের মধ্যে অন্তত একজন ধূমপান করেন৷ প্রতি তিন জনের একজন মদ্যপান করেন নিয়মিত৷ এ ধরনের নেশাগ্রস্ততার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজের চাপ ও শারীরিক কসরতের প্রতি অনাগ্রহ৷ তার জেরে ক্রমশ শহুরে ভারতীয়দেরমধ্যে রোগের প্রকোপ৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতি ছয় জনের মধ্যে একজন পুরুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন৷ ৩১ শতাংশ পুরুষের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, মহিলাদের মধ্যে এই হার ২৬ শতাংশ৷ এরই সঙ্গে বাড়ছে হাইপারলিপিডেমিয়া, অর্থাৎ রক্তে স্নেহ পদার্থের পরিমাণ, যা ডেকে আনতে পারে হৃদরোগ৷
প্রগতির শিকার: ভারতে ফুটপাথের দাঁতের ডাক্তার
ভারতে রাজপথের দাঁতের ডাক্তাররা প্রগতির শিকার হতে চলেছেন৷ বিশেষ করে বড় শহরগুলোর মানুষজন ক্রমেই ‘হাইজিন’ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠছেন৷ তবুও ফুটপাথের দাঁতের ডাক্তাররা এখনও উধাও হননি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
বাসস্টপের দাঁতের ‘ক্লিনিক’
১৪ বছর আগে আল্লাহ বক্স তাঁর ছেলে, ভাই আর ভাগ্নেকে নিয়ে ব্যাঙ্গালোরের এই বাসস্টপটির কাছে তাঁদের ‘ডেন্টাল ক্লিনিক’ চালু করেন৷ এখানে দিনে ২০ জন পর্যন্ত রোগীর চিকিৎসা করা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
‘হাঁ করুন!’
‘গরীব মানুষদেরও ভালো দাঁত চাই,’ বলেন আল্লাহ বক্স৷ তবে ডিগ্রিধারী ডেন্টিস্টদের সমিতির বক্তব্য হলো, লাইসেন্সপ্রাপ্ত দাঁতের ডাক্তাররা গরীব রোগীদের কাছ থেকে অনেক কম ‘ফি’ নিয়ে থাকেন৷ কাজেই ফুটপাথের ডাক্তারদের বস্তুত কোনো প্রয়োজন নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
হাসতে গেলে দাঁত চাই
ডেন্টাল সিমেন্ট দিয়ে তৈরি এই ধরনের দাঁতের পাটি ভারত এবং চীনে তৈরি করা হয়৷ এক সেট দাঁতের দাম ইউরোর মাপে মাত্র দশ ইউরো, কাজ দেয় অন্তত চার বছর৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
দাঁতের রকমফের
নানা ধরনের দাঁতের পাটি অথবা একক দাঁত পাওয়া যায়৷ এ রকম একটি দাঁতের দাম এক ইউরোর চেয়ে কম৷ তবে নতুন দিল্লির মতো বড় শহরে সমৃদ্ধশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি আজ দাঁতের চিকিৎসা করাতে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ চায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
পটু হাত, কিন্তু সরঞ্জামের অভাব
আল্লাহ বক্সের সুযোগ্য পুত্র ইমরান পাশা একটি দাঁতের পাটি বসাতে চলেছেন৷ বাবার মতোই তাঁর দাঁতের ডাক্তার হিসেবে কোনো অনুমোদিত প্রশিক্ষণ নেই৷ দাঁতের ডাক্তারি সংক্রান্ত ১৯৪৮ সালের একটি আইনের কল্যাণে আল্লাহ বক্সের মতো মানুষেরা তাঁদের পেশা চালাতে পারছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
রাস্তার ক্লিনিকের দিন ফুরোয়নি
ভারতে প্রতিবছর ৩০ হাজার দাঁতের ডাক্তার ডিগ্রি নিয়ে বেরোন, কিন্তু শহরাঞ্চলে প্রতি দশহাজার অধিবাসীর জন্য থাকেন মাত্র একজন দাঁতের ডাক্তার; গ্রামাঞ্চলে প্রতি আড়াই লাখ মানুষের জন্য একজন! কাজেই আল্লাহ বক্সের মতো ‘ডেন্টাল ওয়ার্কার’-দের দিন এখনও ফুরায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
দাঁত থাকলে দাঁতের মূল্য বোঝা যায়
নতুন দাঁত লাগানোর পর শক্ত কিছু একটা কামড়ে দেখতে হয়, দাঁত ঠিকমতো বসেছে কিনা!
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
7 ছবি1 | 7
বিজ্ঞাপনের দৌলতে ঠান্ডা পানীয়ের জনপ্রিয়তা এখন বিশ্বজুড়ে৷ গ্রীষ্মপ্রধান উপমহাদেশ সেখানে ব্যতিক্রম নয়৷ হাতের কাছেই পাওয়া যায় কার্বোনেটেড ঠান্ডা পানীয়, গলা ভিজিয়ে নিলেই হলো! কিন্তু, এই পানীয় পানেও যে পশ্চিমবঙ্গ সব রাজ্যকে পিছনে ফেলেছে, এটা এনআইএনের প্রতিবেদন প্রকাশের আগে কে জানতো? ভারতে ৫৭ শতাংশ শহুরে পুরুষ ঠান্ডা পানীয় পান করেন, মহিলাদের মধ্যে এই হার ৫৩ শতাংশ৷ আর সবচেয়ে বেশি কার্বোনেটেড পানীয় পান করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ৷ আশ্চর্যজনকভাবে মহারাষ্ট্রে সবচেয়ে কম ঠান্ডা পানীয় গ্রহণ করা হয়৷ কলকাতার শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল সিএমআরআই-এর চিকিৎসক কৌশিক দাস আরেক বিপদের কথা শোনালেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ঠান্ডা পানীয়ের জেরে ডায়াবেটিসের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন কোম্পানি জিরো শ্যুগার বা ক্যালোরি ট্যাগ দিয়ে পানীয় বাজারে ছেড়েছে৷ অনেকে সেটা নিশ্চিন্তে পান করছেন৷ কিন্তু, এ ধরনের পানীয়ে এমন রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলি ক্যান্সার ডেকে আনতে পারে৷ ফলে হিত করতে গিয়ে বিপরীতে আরও বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষকে৷''
তামাক, মদ, কার্বনযুক্ত পানীয়ের ক্ষতি সামলাতে প্রয়োজন ছিল নিয়মিত শারীরিক কসরতের৷ কিন্তু, সময় বা ইচ্ছের অভাবে অধিকাংশ শহুরে মানুষই সেটা করেন না৷ এনআইএন-এর সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মাত্র ২৮ শতাংশ পুরুষ নিয়মিত শারীরিক কসরত করেন৷ মহিলাদের মধ্যে এই হার খুবই কম, মাত্র ১৫ শতাংশ৷ অধিকাংশই ভোরে হাঁটেন, একাংশ যোগাভ্যাসও করে থাকেন৷ তাঁদের বক্তব্য, কাজের চাপ সামলে সময় বের করাই কঠিন৷ বিশ্বায়নের দাবি মেনে এত মানুষ এখন নাইট শিফটে কাজ করেন যে, তাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার ধরনটাই বদলে গিয়েছে৷ কার্যত অসহায়ভাবে পেশার তাগিদে তাঁরা শরীরের ক্ষয় মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন৷ তাই কসরত না করলে ঠান্ডা পানীয়, তামাক বা মদ থেকে দূরে থাকুন, এমনটাই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা৷
এরপরও কি কোলা খাবেন?
আপনি কি কোলার ফ্যান? নীচের এই তথ্যগুলো জানার পর হয়ত আপনার মনে পরিবর্তন আসতে পারে৷
ছবি: Fotolia/ Nitr
চিনি
একজন মানুষের প্রতিদিন গড়ে ৪০ গ্রাম চিনি প্রয়োজন৷ অথচ এক গ্লাস বা ২৫০ মি.লি. কোলা পান করলেই কিন্তু শরীরে ৪০ গ্রামের চেয়েও বেশি চিনি ঢুকে পড়ে, যা ঠিক নয়৷
ছবি: bit24 - Fotolia
লাইট কোলাতেও সমস্যা
এক গবেষণায় জানা গেছে, কোলা লাইট-এ যে সুইটনার ব্যবহার করা হয় সেটা রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মারাত্মক হতে পারে৷ সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রেও রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যাওয়াটা ঠিক নয়, কারণ সুইটনার রক্তে থাকা উপকারী ব্যাক্টিরিয়া মেরে ফেলতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
অনেকে মনে করেন চিনির বিকল্প হিসেবে সুইটনার ভালো৷ কিন্তু কোলায় থাকা সুইটনারে থাকে অ্যাসপারটেম, যা মাথাব্যথার কারণ হতে পারে৷ এছাড়া চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া, হতাশা, মাথা ঘোরা, স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়া, ওজনগত সমস্যা, মাংসপেশীতে ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে৷
দাঁতের ক্ষতি
কোলায় শুধু যে চিনি থাকে তা নয়৷ এতে আরও আছে ফসফরিক এসিড, যা দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করে৷
ছবি: picture-alliance / OKAPIA KG, Germany
হাড়
কোলা পান করলে দাঁত ছাড়াও হাড়ের ক্ষতি হতে পারে৷ হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের মধ্যে যারা খেলাধুলা করে ও কোলা পান করে তাদের আহত হওয়ার সম্ভাবনা, যারা কোলা পান করে না, তাদের চেয়ে তিনগুণ বেশি৷