বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায়৷ এবার জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবি তুলেছে তামাকবিরোধী জোট ‘অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স- আত্মা'৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার আত্মা'র ভার্চুয়াল সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায়। এখনও দেশে প্রায় ৪ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
আইন সংশোধনীর যেসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয় সেগুলো হচ্ছে, ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান' বিলুপ্ত সহ সকল পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহণে ধূমপান নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি' বা সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং প্যাকেটবিহীন জর্দা-গুল বিক্রয় নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টস (এইচটিপি) সহ সকল ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধিসহ তামাকপণ্য মোড়কজাতকরণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা। ধূমপানের হার হ্রাসে পুরুষের ভূমিকাও বাড়ছে৷
ধূমপান কীভাবে ছাড়বেন
ধূমপান ক্ষতিকর তা সকলেই জানি৷ ধূমপান যে মস্তিষ্ককে তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে দেয় অথবা ধূমপায়ীদের যে অপারশনের আগে বেশি অ্যানেস্থেটিকের প্রয়োজন হয় – এসব হয়ত জানি না৷ সমীক্ষার মাধ্যমে এ রকমই তথ্য জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের গবেষকরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Bonß
সচেতন হোন, বেশি দিন বাঁচুন
যেসব পুরুষ মদ্যপান, ধূমপান ও লাল মাংসের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খান, তাঁদের তুলনায় যাঁরা মদ্যপান, ধূমপান ও লাল মাংস এড়িয়ে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর খাবার খান – তাঁদের আয়ু ১৭ বছর পর্যন্ত বেশি হতে পারে৷ জানাচ্ছে জার্মানির হাইডেলব্যার্গ শহরের ক্যানসার গবেষণাকেন্দ্র৷ তাদের ২২,০০০ নারী ও পুরুষকে নিয়ে করা গবেষণায় নিকোটিন সেবনের কারণে মহিলাদের গড় আয়ু সাত আর পুরুষদের নয় বছর কমে গেছে৷
ছবি: Christian Kaufmann
ধূমপায়ী শতকরা ৫০ জনেরই অপারেশন লাগে
বয়সের সাথে দৃষ্টিশক্তি কমবে, সেটাই স্বাভাবিক৷ তবে সুইডেনে দশ বছর ধরে করা এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যাঁরা দিনে ১৫টির বেশি সিগারেট খান, তাঁদের চোখে ছানি পড়া বা অন্যান্য সমস্যা সময়ের আগেই দেখা দেয় এবং অপারেশনও করতে হয়৷ তবে গবেষকরা জানান, ধূমপান ছেড়ে দিলেই নাকি চোখের সুস্থতা আবার ধীরে ধীরে ফিরতে থাকে৷
ছবি: Fotolia/MAST
ধূমপায়ীদের অ্যানেস্থেটিক ও ব্যথার ওষুধ বেশি লাগে
তুলনামূলকভাবে ধূমপায়ীদের বেশি মাত্রায় অ্যানেস্থেটিক এবং ব্যথার ওষুধেরও প্রয়োজন হয়৷ এ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের ইস্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকদল৷ ৯০ জন ধূমপায়ী নারীর জরায়ু অপারেশনের সময় দেখা গেছে যাঁরা ধূমপান করেননি তাঁদের তুলনায় যাঁরা বেশি পরিমাণে ধূমপান করেছেন, তাঁদের বেশি আর যাঁরা কিছুটা কম করেছেন, তাঁদের অনেক কম অ্যানেস্থেটিক দিতে হয়েছে৷ পেইনকিলার বা ব্যথার ওষুধের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য৷
ছবি: Dean Treml/Red Bull via Getty Images
দাঁত পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি
ধূমপান শুধু ফুসফুসেরই ক্ষতি করে না৷ যাঁরা ধূমপান করেন না, তাঁদের চেয়ে ধূমপায়ীদের দাঁত পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তিনিগুণ বেশি৷ দীর্ঘদিন ধরে করা জার্মান পুষ্টি গবেষণা কেন্দ্রের এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে এই তথ্য৷ তবে আনন্দের কথা যে, ধূমপান ছেড়ে দিলে দাঁত পড়ার ঝুঁকিও কমে যায়৷
ছবি: Fotolia/contrastwerkstatt
ধূমপান মস্তিষ্ককে বুড়িয়ে দেয়
বয়সের সাথে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু ধূমপান মস্তিষ্কের বুড়িয়ে যাওয়াকে আরো ত্বরান্বিত করে৷ ৫,১০০ পুরুষ ও ২,১০০ নারীকে নিয়ে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে করা এক গবেষণায় বেরিয়ে আসা এই তথ্যটি প্রকাশ হয়েছে ‘আর্কাইভ অফ জেনারেল সাইকিয়াট্রি’ ম্যাগাজিন-এ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gerten
ধূমপান ছাড়তে বন্ধু অ্যাপের সাহায্য নিন
অনেক কাজই একসাথে করলে সফলতা আসে তাড়াতাড়ি৷ সেকথা ভেবেই হয়ত সুইজারল্যান্ডের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা ধূমপান ছাড়ার সহজ পন্থা হিসেবে মোবাইলে একটি ‘ইন্টারঅ্যাক্টিভ স্মোক ফ্রি বাডি অ্যাপ’ চালু করেছে৷ এই অ্যাপটি ধূমপায়ীদের মোবাইল ফোন মারফত বা মুঠোফোনের মাধ্যমেই ধূমপান ছাড়তে সহায়তা দেয়৷
ছবি: DW/M. Müller
6 ছবি1 | 6
আত্মা'র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় প্রায় ৪০ জন সদস্যের উপস্থিতিতে অনলাইনে আত্মার কার্যক্রম তুলে ধরেন অপর কো-কনভেনর মিজান চৌধুরী৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
প্রকৃতির মাদক গবেষণাগার
রসায়নবিদদের দায়ী করে কোনো লাভ নেই, বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক পদার্থ প্রকৃতির নিজেরই সৃষ্টি৷ অনেক ফুল, বীজ এবং পাতায় রয়েছে ভয়াবহ বিষ, যেগুলো জীবননাশকারী মাদকও বটে৷
ছবি: picture alliance/ZB
গাঁজা বা ক্যানাবিস: ধোঁয়া ওড়াও বা কাপড় বানিয়ে পরো
গাঁজার পাতায় সাইকোঅ্যাকটিভ সাবসটেন্স টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল বা টিএইচসি রয়েছে৷ এটি মানুষকে আনন্দ এবং শান্তির অনুভূতি দেয়৷ পাশাপাশি কিছুটা বেদনার অনুভূতিও জাগায়৷ স্ত্রী উদ্ভিদের ফুলে উচ্চ মাত্রায় টিএইচসি থাকে৷ এ কারণে এসব ফুল থেকে মারিজুয়ানা উৎপন্ন হয়৷ ক্যানাবিসের কিছু প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে সুতাও উৎপাদন হয়৷
ছবি: Fotolia/Opra
অ্যাসপিরিনের চেয়েও ভালো
পপি ফুলের গাছ থেকে আফিম হয়৷ পপি ফুলের বীজ শুকিয়ে এটি তৈরি করা হয়৷ আফিমে উচ্চ মাত্রার মরফিন রয়েছে, যা ব্যথানাশক হিসেবে ভীষণ কার্যকর৷
ছবি: picture alliance/dpa/D.Ramik
ম্যাজিক মাশরুম
মাশরুম বা ব্যাঙের ছাতা এক ধরণের রাসায়নিক শিল্পী৷ কয়েকটির মধ্যে সাইকোঅ্যাকটিভ পদার্থ রয়েছে৷ এদের মধ্যে একটি হলো ধূসর রঙের প্লুটেয়াস স্যালিসিনাস৷ এটির মধ্যে সিলোসাইবিন রয়েছে, যার কারণে দৃষ্টি এবং মানসিক বিভ্রান্তি বা হ্যালুসিনেশন দেখা দেয় অনেকটা এলএসডি’র মতো৷ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলো বমি বমি ভাব এবং প্যানিক অ্যাটাক বা আতঙ্কগ্রস্ত হওয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/Wildlife
ড্রাগ স্ন্যাক
কোকা উদ্ভিদের পাতা, যাতে অনেকটা কোকেইনের মতো পদার্থ রয়েছে৷ এটি একই সাথে ব্যথানাশক এবং উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার অনেক দেশে কোকা পাতা চিবানো সাধারণ একটা ব্যাপার৷ এই পাতাগুলো পচিয়ে এবং শুকিয়ে অন্য রাসায়নিকের সঙ্গে মিশিয়ে কোকেইন উৎপাদন করা হয়৷
ছবি: Reuters
সুন্দর বিষাক্ত ফুল
এঞ্জেলস ট্রাম্পেটস দেখতে দারুণ সুন্দর, কিন্তু খেতে গেলেই এর ভয়াবহতা টের পাবেন৷ এই উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে মাদকীয় রাসায়নিক রয়েছে, যা মানবদেহে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে৷ যখন আপনি এই উদ্ভিদটি খাবেন বা পুড়িয়ে ধোঁয়া নেবেন, আপনার হৃদস্পন্দন অনেক বেড়ে যাবে এবং হ্যালুসিনেশন হবে৷ এই ফুল খেয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে৷
ছবি: picture alliance/dpa
ধুতুরা ফুল
ইন্টারনেটে ধুতুরা ফুলের আর একটি নাম থর্নঅ্যাপেলস৷ সেখানে এটিকে প্রাকৃতিক ড্রাগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে৷ এই উদ্ভিদটিতে হ্যালুসিনেশন সৃষ্টিকারী পদার্থ রয়েছে, এ ছাড়া অনেকেই এটি গ্রহণের ফলে বাস্তবজ্ঞান হারিয়ে ফেলে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/R. Koenig
হাওয়াইয়ান বেবিস
আরগাইরিয়া নারভোসা যদিও এশিয়ার উদ্ভিদ, কিন্তু এটি ‘হাওয়াইয়ান বেবি উডরোজ’ নামে পরিচিত৷ এর বীজে এলএসডি’র মতো পদার্থ রয়েছে৷ এটি গ্রহণ করলে চোখে যেন রঙিন দৃশ্য ভাসে আর বমিবমি ভাব ও সাইকোসিস হয়৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/R. Koenig
ক্যাকটাস
মেক্সিকো ও টেক্সাসের পেয়োটি ক্যাকটাসে রয়েছে হ্যালুসিনেশন সৃষ্টিকারী উপাদান৷ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন সাইকোট্রপিক সাবসটেন্সের তালিকাভুক্ত এই উপাদানটি অবৈধ৷ এটি চিন্তা প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করে এবং সময় ও নিজের সম্পর্কে ভাবনা সাময়িকভাবে কেড়ে নেয়৷ ক্যাকটাস ছোট ছোট করে কেটে সেদ্ধ করে বা চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/WILDLIFE
জয়ফল থেকে সাবধান
জয়ফল বেশি খেলে মাদকদ্রব্যের মতো কাজ করে, কেননা, এতে হ্যালুসিনেশন সৃষ্টিকারী পদার্থ মাইরিস্টিসিন রয়েছে৷ কিন্তু মশলা হিসেবে ব্যবহার করলে জয়ফল ক্ষতিকর নয়৷ এটি বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, বমিবমি ভাব এবং ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে৷
ছবি: picture alliance/CTK/R. Pavel
সাইকেডেলিকের পাতা
চিরসবুজ ক্র্যাটম গাছ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রায় প্রত্যেকটি অঞ্চলেই দেখা যায়৷ এর পাতায় রয়েছে ওপয়েডের মতো পদার্থ মিট্রাজিনাইন৷ ব্যথানাশক হিসেবে এর পাতা কবিরাজী ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ এছাড়া এটি খেলে খাওয়ার রুচি বাড়ে এবং ডায়রিয়া নিরাময় হয়৷ তবে অতিরিক্ত গ্রহণে নেশা হয়৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/Sunbird Images
প্রকৃতির সবচেয়ে ভয়াবহ ঘাতক
এই তামাক উদ্ভিদটি বিষাক্ত৷ এটি নেশাজাত রাসায়নিক উৎপাদন করে৷ যেমন এর পাতায় রয়েছে নিকোটিন এবং অন্যান্য অ্যালকালয়েড৷ এই পাতা শুকিয়ে পোড়ানোর পর ধোঁয়া গ্রহণ করলে শরীরে নানা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ প্রবেশ করে৷