তামিম ইকবাল আবার সমালোচনার মুখে৷ পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তার রানই সবচেয়ে বেশি৷ কিন্তু ধীর গতিতে ব্যাট করার অভিযোগে সমালোচনাই চলছে তার৷ অথচ প্রশংসা এবং সম্মান তার প্রাপ্য৷
ফাইল ফটোছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
বিজ্ঞাপন
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুটিতে খুব বাজেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ৷ তৃতীয় ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় এক জয়ের সান্ত্বণাও জোটেনি ভাগ্যে৷
শেষ ম্যাচটা হলে হয়ত আবার হারতেই হতো৷ হয়ত পেতেই হতো হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা৷ দলের সার্বিক অবস্থা যে এমনই তা অস্বীকার কী করে করব আমরা? ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব জায়গাতেই যে একেবারে ছন্নছাড়া ছিল মাহমুদুল্লাহর দল!
পরিসংখ্যানের সঙ্গে একটু ক্রিকেটীয় বোধ যোগ করে দেখুন, এই ছন্নছাড়া দলের ব্যাটিংয়ে যিনি সবচেয়ে বেশি ধারাবাহিক এবং দায়িত্বশীল ছিলেন, তিনি কিন্তু তামিম ইকবাল৷
দুই ম্যাচে ১০৪ রান করে দু' দলের মধ্যে তিনিই সেরা৷ হ্যাঁ, সবচেয়ে বেশি রান তার৷
স্ট্রাইকরেট ১১৯.৫৪-কে যারা খুব খারাপ বলছেন, তারা একটু ভেবে দেখুন, এমন হওয়ার কারণ আসলে কী৷
প্রথম ম্যাচে ৭২ রানের উদ্বোধনী জুটি পেয়েছিল বাংলাদেশ৷ বিপিএল-এ যেভাবে একপ্রান্ত আগলে রেখে অন্যপ্রান্তের ব্যাটসম্যানকে দিয়েছিলেন মেরে খেলার সুযোগ, সেভাবেই ব্যাট করছিলেন তামিম৷ কিন্তু অন্যপ্রান্তে মোহাম্মদ নাঈম সেই দায়িত্বটা নেননি বা নিতে পারেননি৷ ফলে খোলস ছেড়ে আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করতে হলো তামিমকেই৷ আর তা করতে গিয়েই ৩৪ বলে ৩৯ করে আউট৷ তারপর নাঈমও আউট হয়ে গেলেন ৪৩ রান করে৷ তার স্ট্রাইকরেট আরো খারাপ৷ ৪৩ রান করতে লেগেছে ৪১ বল৷ তামিম আউট হওয়ার পরেও হাতে ছিল নয় ওভার৷ ওই নয় ওভারে মাত্র ৭০ রান তোলার দায় তার ঘাড়েই বেশি করে চাপাতে চাওয়া খুবই নির্মম এবং হাস্যকর৷
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/T. Mehedi
দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিতীয় ম্যাচেও নেতৃত্বের ভূমিকাই নিতে চেয়েছিলেন তামিম৷ শুরুতেই নাঈম আউট হয়ে যাওয়ায় নিজের উইকেটও ছুঁড়ে দেয়ার ঝুঁকি নিতে যাওয়া হতো বোকামি৷ তামিম সেই বোকামি করেননি৷ অন্যপ্রান্তে নিয়মিত উইকেট পড়তে থাকায় সেদিনও কিছুটা রয়ে-সয়েই ব্যাট করতে হয়েছে তাকে৷ সেভাবে খেলেই করেছেন ৫৩ বলে ৬৫৷
তামিমের স্ট্রাইকরেট নিয়ে কথা বলার আগে স্কোরবোর্ডে একটু চোখ বুলিয়ে নিন৷ দেখবেন, সেদিন তামিম ছাড়া আর মাত্র দু'জন দু' অঙ্কে পৌঁছেছিলেন৷ সেই দু'জনের স্ট্রাইকরেট তামিমের চেয়েও খারাপ৷
তারপরও যারা তামিমের সমালোচনা করছেন, তাদের একটা জবাব অবশ্য মাহমুদুল্লাহ দিয়েছেন৷ বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক যথার্থই বলেছেন, এই সিরিজে মোটা দাগে বাংলাদেশের একটাই প্রাপ্তি আর তা হলো তামিমের ব্যাটিং৷
গত কয়েক বছর বাংলাদেশ দলে ‘অটোমেটিক চয়েস' ছিলেন পাঁচজন৷ সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাশরাফি এবং মাহমুদুল্লাহ৷ সাকিব দলে নেই অনাকাঙ্খিত কারণে৷ শুধু ওয়ানডে খেলা মাশরাফির ক্যারিয়ার নিভু নিভু৷ বাকি তিনজনের বিকল্প কবে খুঁজে পাওয়া যাবে তা কারো জানা নেই৷
বিকল্প এলে জোর করে দলে থাকার চেষ্টা মাশরাফি, তামিমরা কোনোদিন করবেন বলে মনে হয় না৷ মাশরাফির সিদ্ধান্ত মাশরাফি নেবেন৷
তামিমকে তার ১৩ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতার ওপর আস্থা রেখে স্বাভাবিকভাবে খেলতে দিলে উপকারটা বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই হবে৷
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ম্যাচ জেতানো নায়কেরা
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জেতা ১৩টি ম্যাচে সেরার স্বীকৃতি টাইগাররা পেয়েছেন ১২ বার৷ বাকি একটি পুরস্কার যায় পরাজিত দলে৷ টাইগারদের মধ্যে দুইবার করে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়েছেন শুধু মোহাম্মদ আশরাফুল ও ইমরুল কায়েস৷
ছবি: Getty Images/R. Kinnaird
মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, ১৯৯৯
১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ অংশ নেয় ক্রিকেট বিশ্বকাপে৷ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যাত্রাটি শুরু হয় ছয় উইকেটের হার দিয়ে৷ বাংলাদেশ প্রথম জয় তুলে নেয় তৃতীয় ম্যাচে, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে৷ এই ম্যাচে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু৷ বাংলাদেশের ২২ রানে জেতা ম্যাচে ৬৮ রান (অপরাজিত) করেন তিনি৷ পাশাপাশি ৩ ওভার বল করে ১টি উইকেটও নিয়েছিলেন বিসিবির বর্তমান নির্বাচক৷
ছবি: M. Mohammad
খালেদ মাহমুদ সুজন, ১৯৯৯
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে আসরের দ্বিতীয় জয়টিও পেয়ে যায় বাংলাদেশ৷ ৬২ রানে জেতা সেই ম্যাচে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন খালেদ মাহমুদ সুজন৷ ব্যাট হাতে ২৭ রান করার পর বোলিংয়ে ৩ উইকেটও নিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/R. Kinnaird
মাশরাফি বিন মোর্তজা, ২০০৭
১৯৯৯ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে দুই ম্যাচে জয় পেলেও বিশ্বকাপে পরের জয়ের জন্য ৮ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে৷ ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সেই জয়ের দেখা পায় টাইগাররা৷ ৪ উইকেট নিয়ে সেবার ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়েছিলেন মাশরাফি বিন মোর্তজা৷
ছবি: Getty Images/C. Rose
মোহাম্মদ আশরাফুল, ২০০৭
২০০৭-এর আসরে বিশ্বকাপের তৃতীয় জয়টিও পেয়ে যায় বাংলাদেশ৷ গ্রুপ পর্যায়ের সেই ম্যাচে বারমুডাকে হারায় টাইগাররা৷ ব্যাট হাতে ৩২ বলে হার না মানা ২৯ রান করায় ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ নির্বাচিহ হন মোহাম্মদ আশরাফুল৷ ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল ৭ উইকেটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Singh
মোহাম্মদ আশরাফুল, ২০০৭
২০০৭ সালের সেই আসরেই প্রথম বারের মতো সুপার এইটে উঠে সাউথ আফ্রিকাকেও হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ৷ ৮৩ বলে ৮৭ রান করে আবার ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন মোহাম্মদ আশরাফুল৷ ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল ৬৭ রানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Dennis
তামিম ইকবাল, ২০১১
২০১১ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে তিনটি জয় পায় বাংলাদেশ৷ গ্রুপ পর্যায়ে প্রথমে আয়ারল্যান্ডকে হারায় ২৭ রানে৷ ওই ম্যাচে ৪৩ বলে ৪৪ রান তুলে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন তামিম ইকবাল৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
ইমরুল কায়েস, ২০১১
২০১১ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায়ের আরেক ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ৷ সেই ম্যাচে ১০০ বলে ৬০ রান করে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন ইমরুল কায়েস৷ বাংলাদেশ জয়ী হয়েছিল ২ উইকেটে৷
ছবি: Getty Images/M. Lewis
ইমরুল কায়েস, ২০১১
২০১১ সালের সেই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচে আরেকটি জয়ও পেয়ে যায় সহ-আয়োজক বাংলাদেশ৷ ওই ম্যাচে নেদারল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিল টাইগাররা৷ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে ১১৩ বলে ৭৩ রান করে ম্যাচ সেরা হন ইমরুল কায়েস৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
মুশফিকুর রহিম, ২০১৫
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ৷ তবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলেও ম্যাচে ম্যান অব ম্যাচ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের৷ তবে আফগানিস্তানকে ১০৫ রানে হারানোয় ৫৬ বলে ৭১ রানের অবদান রেখে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম৷
ছবি: Getty Images/C. Spencer
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ২০১৫
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে টাইগাররা দ্বিতীয় জয়টি পায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে৷ ওই ম্যাচে ১৩৮ বলে ১০৩ রান তুলে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ৷ বাংলাদেশ ওই ম্যাচ জিতেছিল ১৫ রানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khan
সাকিব আল হাসান, ২০১৯
২০১৯ সালে বিশ্বকাপ মিশনের প্রথম ম্যাচে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় পায় বাংলাদেশ৷ ম্যাচে অলরাউন্ডার নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন সাকিব৷ ব্যাট হাতে করেছেন ৮৪ বলে ৭৫ রান আর বল হাতে ১০ ওভারে ৫০ রান দিয়ে নেন এক উইকেট৷ বাংলাদেশ জিতে যায় ২১ রানে৷