তিনজন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। ভুয়া নথি নিয়ে বাংলাদেশিরা বসবাস করছেন বলে অভিযোগ।
বিজ্ঞাপন
হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি নাগরিক অবৈধ ভাবে কাজ করছেন এবং থাকছেন তামিলনাড়ুতে। সম্প্রতি এমনই দাবি করেছে তামিলনাড়ুর পুলিশ। পুলিশ সূত্র দ্য হিন্দু সংবাদপত্রকে জানিয়েছে, অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিকদের খুঁজে বার করার জন্য বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকেই অভিযোগ উঠেছে বার বার। ভুয়া আধারকার্ড নিয়ে সেখানে বাস করছেন বাংলাদেশি নাগরিকেরা। তবে তামিলনাড়ু পুলিশ জানিয়েছে, তাদের হাতে নির্দিষ্ট প্রমাণ আছে।
দ্য হিন্দু সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, তামিলনাড়ুর তিরুপুর, চেঙ্গালপাত্তু, এরোদে, কুড্ডালুর এবং কাঞ্চিপুরম অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি নাগরিক বসবাস করছেন। বিভিন্ন জায়গায় মূলত শ্রমিকের কাজ করছেন তারা।
কী ভাবে জানা গেল
পুলিশ সূত্রের দাবি, গত এক বছরে দেশে দুইবার লকডাউন হয়েছে। সে সময় বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকেরা যে যার নিজের রাজ্যে ফিরে গেছেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছেন বলে দাবি করা বহু বাঙালি শ্রমিক নিজেদের রাজ্যে ফেরেননি। বিষয়টি নজরে আসায় তদন্ত শুরু করে পুলিশ। দেখা যায়, অনেকেই যে নথি নিয়ে বাস করছেন, তা ভুয়া। পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হিসেবে সেই পরিচয়পত্রে তাদের পরিচয় থাকলেও আসলে তারা অবৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। পুলিশের দাবি, স্থল সীমান্ত পার করে পশ্চিমবঙ্গ অথবা আসাম হয়ে তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছেন। কিছু অসৎ এজেন্টের মাধ্যমে তারা নিজেদের ভুয়া আধার কার্ড তৈরি করে নেন। ওই নথি দেখিয়েই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তারা কাজে যোগ দেন।
চিকিৎসা পর্যটনে ভারতের সেরা হাসপাতালগুলো
প্রতি বছর কয়েক লাখ বাংলাদেশি কেবল চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। সেখানকার চিকিৎসা পর্যটনে সেরা কয়েকটি হাসপাতালের কথা জেনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/X. Galiana
ভারতে মেডিক্যাল ভিসা
প্রতি বছর কয়েক লাখ বাংলাদেশি কেবল চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। ২০১৯ সালে মেডিক্যাল ভিসায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছিলেন দুই লাখ ২৫ হাজার ৬৬৮ জন।
ছবি: Getty Images/AFP/X. Galiana
কলকাতায় ভিড় নেই
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রোগী কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসেন। এছাড়া আসেন বিপুল পরিমাণ আফগান রোগী। যে কারণে চিকিৎসা পর্যটনে কলকাতা দেশের মধ্যে অন্যতম। দক্ষিণ ভারতেও বহু রোগী চিকিৎসা করাতে যান।
ছবি: Getty Images/AFP/X. Galiana
চিকিৎসা পর্যটনের তালিকা
ভারতে বেশ কিছু সংস্থা চিকিৎসা পর্যটনের ব্যবস্থা করে। বিভিন্ন হাসপাতাল চেইনের সঙ্গে তাদের টাই আপ করা থাকে। তারই ভিত্তিতে বিদেশি রোগীদের কোন হাসপাতালে যাওয়া উচিত, তার পরামর্শ দেয় তারা।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.Nath
এক নম্বরে অ্যাপোলো
কলকাতায় সবচেয়ে বেশি বিদেশি রোগী, বিশেষ করে বাংলাদেশের রোগী আসেন অ্যাপোলো হাসপাতালে। মাসে প্রায় ছয় হাজার রোগী গড়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসা করান।
ছবি: DW/P. Samanta
এএমআরআই হাসপাতাল
অ্যাপোলোর পরেই রয়েছে এএমআরআই হাসপাতাল। সাধারণত এই হাসপাতালেও মাসে গড়ে পাঁচ হাজার বাংলাদেশের রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন। এএমআরআই হাসপাতালের একাধিক ব্রাঞ্চ আছে। সল্টলেকের ব্রাঞ্চে বিদেশি রোগীর সংখ্যা বেশি। তবে এই মুহূর্তে কার্যত কোনও বিদেশি রোগী নেই এই হাসপাতালগুলিতে।
ছবি: DW/P.Samanta
রবীন্দ্রনাথ টেগোর হাসপাতাল
হার্টের চিকিৎসার জন্য বহু রোগী বিশিষ্ট চিকিৎসক দেবী শেঠির তৈরি রবীন্দ্রনাথ টেগোর হাসপাতালে যান। এছাড়াও ফোর্টিস, মেডিকা, রুবি জেনারেল হাসপাতালেও বহু বিদেশি চিকিৎসা করাতে আসেন।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
দ্বিতীয় সারির হাসপাতাল
অ্যাপোলো বা এএমআরআই হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ যাঁরা সামলাতে পারেন না, তাঁদের জন্য রয়েছে দ্বিতীয় সারির হাসপাতাল। ভিআইপি রোড এবং বাইপাসের ধারে এমন আরও অসংখ্য হাসপাতাল রয়েছে। রয়েছে চোখের হাসপাতালও। অপেক্ষাকৃত কম খরচে এই হাসপাতালগুলিতে বহু মধ্যবিত্ত বিদেশি চিকিৎসা করাতে আসেন।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
ক্যান্সার চিকিৎসা
ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য অবশ্য সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুম্বইয়ে যান, টাটার ক্যান্সার হাসপাতালে। তবে কলকাতাতেও টাটা ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরি করেছে। এখন সেখানেও বহু বিদেশি চিকিৎসা করাতে আসছেন।
ছবি: Murali Krishnan
ভেলোর এখনও প্রথম
যাদের হাতে অর্থ বেশি, তাঁরা এখনও দক্ষিণ ভারতের ভেলোরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পছন্দ করেন। দক্ষিণ ভারতের ভেলোর অত্যন্ত নামকরা চিকিৎসা কেন্দ্র। বহু মানুষ মাসের পর মাস থেকে সেখানে চিকিৎসা করান। বিশেষ করে ক্রনিক অসুখের চিকিৎসায় ভেলোর এক নম্বরে।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Vatsyayana
দক্ষিণের অ্যাপোলো, মিঅট
দক্ষিণ ভারতেও অ্যাপোলো হাসপাতালের চেইন রয়েছে। চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে বহু বিদেশি চিকিৎসার জন্য যান। দিল্লির অ্যাপলো হাসপাতালেও প্রচুর বিদেশি রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন। এ ছাড়াও দক্ষিণ ভারতে রয়েছে মিঅট হাসপাতাল চেইন।
ছবি: Adnan Abidi/Reuters
নেত্রালয়ে চোখ
চোখের চিকিৎসার জন্য কয়েক দশক ধরে এক নম্বর দক্ষিণ ভারতের নেত্রালয়। তবে গত কয়েক বছরে কলকাতাতেও বেশ কিছু ভালো চোখের হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। দিশা, প্রিয়ম্বদা বিড়লা এর মধ্যে অন্যতম। নেত্রালয়ের ব্রাঞ্চ তৈরি হয়েছে কলকাতায়।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Anand
সরকারি হাসপাতাল
বিদেশি রোগীরা ভারতের সরকারি হাসপাতালে খুব বেশি যান না। তবে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল সায়েন্সে (এইমস) কিছু কিছু বিদেশি রোগী দেখা যায়। অন্য হাসপাতাল থেকে রেফার করলে তবেই তারা এইমসে আসেন।
সরকারি হাসপাতাল চিকিৎসা পর্যটনে নেই
চিকিৎসা পর্যটনের সঙ্গে বিশাল অঙ্কের ব্যবসা জড়িত। ফলে বিদেশি রোগীদের ভারতের সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয় না। বস্তুত, ভারতের সরকারি হাসপাতালগুলিতে বেড পাওয়াও খুব কঠিন। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বক্তব্য, এখনও দেশের সরকারি হাসপাতালগুলি যে কোনও বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
ছবি: picture-alliance/dpa
13 ছবি1 | 13
দ্য হিন্দুকে তামিলনাড়ু পুলিশের এক সূত্র জানিয়েছে, লকডাউনের সময় কাজ না থাকায় এদের অনেকেই মাদক পাচার, নারী পাচারের মতো অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি এমন কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, জুনের শেষ সপ্তাহে তিরুপুর থেকে তিনজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মাদকপাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে। তিনজনেই বাংলাদেশের নাগরিক। পুলিশ সূত্রের দাবি, কাগজ দেখতে চাইলে ওই ব্যক্তিরা আধার কার্ড দেখিয়ে দেন। ফলে প্রাথমিক ভাবে বোঝা যায় না, তারা কোথাকার নাগরিক। তবে আধার কার্ড খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়, অবৈধভাবে সেই কার্ড তৈরি করা হয়েছে। ঠিকানা অনেকসময়ই ভুয়া হয়। এখনো পর্যন্ত যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা করা হয়েছে।
ভারতে টানা ১৮২ দিন বসবাস করলে আধার কার্ড তৈরি করা যায়। বিদেশি নাগরিকও তা তৈরি করতে পারেন। আইনে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। ফলে বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও বৈধ ভাবে তারা ভারতের আধারকার্ড ব্যবহার করছেন কি না, এই বিষয়টিও পুলিশকে মাথায় রাখতে হয়।
শ্রীলঙ্কার তামিল নাগরিকদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক হয়েছে তামিলনাড়ুতে। এক সময়ের এলটিটিই গোষ্ঠীও তৈরি হয়েছিল সেই বিতর্ককে কেন্দ্র করে। শ্রীলঙ্কা থেকে অবৈধ ভাবে তারা ভারতে এসে তামিলনাড়ুতে বসবাস করেন বলে অভিযোগ। সংস্কৃতি এবং ভাষা এক হওয়ায় তাদের সব সময় চিহ্নিত করা যায় না। সেই বিতর্কের মধ্যেই বাংলাদেশি নাগরিকদের বিষয়টি সামনে এনে বিতর্ক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে তামিলনাড়ুর পুলিশ। এর আগে অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশেও অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ভোটে বিজেপি বরাবর অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে। সিএএ আইন নিয়েও দেশ জুড়ে বিতর্ক চলছে। যএখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো দেশ থেকে হিন্দুরা এলে তাদের শরণার্থীর সম্মান দেওয়া হবে। কিন্তু মুসলিমদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। তামিলনাড়ু পুলিশের সাম্প্রতিক বক্তব্য গোটা বিতর্কেই নতুন মাত্রা যোগ করেছে।