একাদশ সংসদ নির্বাচনে চলচ্চিত্র, নাটক, সংগীত ও ক্রীড়া অঙ্গনের বেশ কয়েকজন তারকা মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন বড় তিন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে৷ কারণ কী?
বিজ্ঞাপন
নাট্য ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর আওয়ামী লাগ থেকে দু'বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন৷ তিনি মন্ত্রীও৷ এবারও তিনি নিলফামারী থেকে নির্বাচন করবেন৷ সংগীত শিল্পী মমতজও আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য৷ তারানা হালিম সংসদ সদস্য হয়েছেন সংরক্ষিত আসনে৷ তিনি এখন তথ্য প্রতিমন্ত্রী৷ ফুটবলার আরিফ খান জয় আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং উপমন্ত্রী৷ তাঁরা সবাই এবারো নির্বাচন করতে চান৷
‘আমি রাজনীতির মানুষ, মুক্তিযুদ্ধ করেছি’
তারকা ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে আলেচানা চলছে৷ তিনি এবার নির্বাচন করবেন আওয়ামী লীগের হয়ে৷ হিরো আলম এখন মিডিয়ার আকর্ষণ৷ তিনি নির্বাচন করতে চান জাতীয় পার্টি থেকে৷
আওয়ামী লীগ থেকে এবার নির্বাচন করতে চান আরো এক ঝাঁক তারকা৷ তাঁদের মধ্যে আছেন নায়ক ফরুক (আকবর হোসেন পাঠান), সারাহ বেগম কবরী, রোকেয়া প্রাচী, খলনায়ক ডিপজল, শমী কায়সার প্রমুখ৷
বিএনপি থেকে সংগীত শিল্পী বেবী নাজনীন, কনকচাঁপা, মনির খান, নায়ক হেলাল খান প্রমুখ৷
এবার নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে নায়ক ফারুক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি রাজনীতির মানুষ৷ আমার জীবন শুরু হয়েছে রাজনীতি দিয়ে৷ আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি৷ পরে আমি চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করি৷ এখন আবার রাজনীতি করছি৷ আমি সিনেমায় মাটির কথা বলেছি, মানুষের কথা বলেছি৷ সেটা ছিল অভিনয়৷এখন বাস্তবে মাটি ও মানুষের জন্য কাজ করতে চাই৷ আর সেজন্যই আমি এবার সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পত্র কিনেছি৷''
‘রাজনীতিকেও সংস্কৃতিসমৃদ্ধ করা দরকার’
ফারুক গাজীপুর-৫ আসন থেকে মনোনায়নপত্র কিনলেও তাঁকে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাভানেত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী) থেকে নির্বাচন করতে বলেছেন বলে তিনি জানান৷ তিনি এখন সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাকে নিয়ে হয়তো বা নেত্রীর ভিন্ন চিন্তা আছে৷ সেজন্যই আমাকে গুলশান-বনানী এলকা থেকে নির্বাচনের জন্য বলেছেন৷ আমি এমপি হলে যা মানুষ এবং আমার দলের যাতে কল্যাণ হয় তাই করব৷ রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন এটা তো সাধারণ কথা৷ আমি মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই৷''
ফেনী-৩ থেকে আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচন করতে চান অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী৷ তিনি রাজনীতিকে পরিশীলিত করতেই সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান৷ আর তাঁর এলাকার নারীদের জন্য কাজ করতে চান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান৷ আমি সংস্কৃতির চর্চা করি৷ আমি মনে করি, রাজনীতিকেও সংস্কৃতিসমৃদ্ধ করা দরকার৷ তাহলে রাজনীতি আরো পরিশীলিত হবে৷ রাজনীতি শুদ্ধ হবে৷ দেশের জন্য শুদ্ধ রাজনীতি খুব প্রয়োজন৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশ বা মানুষের সেবা করার উৎকৃষ্টতম পথ হচ্ছে রাজনীতি৷ আমি আমার এলাকার নারীদের জন্য কাজ করতে চাই৷ আমাদের এলাকার নারীরা অনগ্রসর৷ তাঁদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানে নতুন প্রকল্প নিয়ে কাজ করব৷''
‘অভিনয় করলেও দীর্ঘদিন রাজনীতিতে জড়িত’
চলচ্চিত্র নায়ক হেলাল খানও এবার নির্বাচনের মাঠে৷ তিনি সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসন থেকে বিএনপি'র টিকেটে সংসদ নির্বাচন করতে চান৷ অভিয়নয় ছেড়ে নির্বাচন ও রাজনীতি কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি অভিনয় করলেও দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত৷ আমি প্রবাসে ছিলাম৷ আইটি ব্যবসা করি৷ আমি দেশের জন্য ও প্রবাসীদের জন্য কাজ করতে চাই৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘সিনেমায় অশ্লীলতা ঢুকে গেছে৷ আমরা বিরোধী দলে থাকায় কোনো কাজ করতে পারিনি৷ সংসদ সদস্য হলে এটা নিয়েও কাজ করতে চাই৷ কাজ করতে চাই আইটি সেক্টরের উন্নয়নে৷''
জানা গেছে, তিনটি দল থেকেই এবার তারকা প্রার্থীরা মনোনয়ন পাবেন৷ তবে কতজন পাবেন তা জানতে আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে৷
নৌকা আর ধানের শীষে আস্থা
নিজের দলের চাইতে বাংলাদেশে বহু রাজনীতিকরই আস্থা বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে৷ তাই বড় দুই দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে যেতে চান এসব দলের নেতারা৷ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতীকের কারবার দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters
৩৯-এ ২০
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত মোট ৩৯টি রাজনৈতিক দল৷ এর মধ্যে ২০টির সম্পর্ক আওয়ামী লীগ বা বিএনপির জোটে৷ এদের অনেকেই দল দু’টির প্রতীকে নির্বাচন করতে চায়৷ কেউ কেউ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলেও নিজের প্রতীকেই নির্বাচন করতে চায়৷ আবার কোনো কোনো দলের নেতাদের একটি অংশ নিজের দলের প্রতীকে ও অন্য অংশ বড় দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে চায়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
নৌকায় যারা
১৫ নভেম্বর ছিল কে কোন প্রতীকে নির্বাচন করতে চায়, তা নিশ্চিত করার শেষ দিন৷ সেদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সই করা চিঠিতে মোট ১৫টি দলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা আটটি৷
ছবি: Mustafiz Mamun
থাকছে ইনু-মেননের দল
হাসানুল হক ইনু বর্তমান আওয়ামী লীগের জোটের সরকারের মন্ত্রী৷ আগেও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন৷ এবারও তাঁর দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নৌকায় নির্বাচন করবে৷ একই কথা প্রযোজ্য আরেক বামপন্থি নেতা রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টির ক্ষেত্রেও৷
ছবি: privat
আরো যারা
এছাড়া নৌকায় আরো যেসব দল নির্বাচন করবে তারা হলো, নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির তরিকত ফেডারেশন, দীলিপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দল, আরশ আলীর গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি-জেপি৷
ছবি: bdnews24
লাঙল ও কুলা
জাতীয় পার্টি নিজস্ব প্রতীক লাঙল নিয়ে নির্বাচনে করবে৷ বিকল্পধারা নিজস্ব প্রতীক কুলায় নির্বাচন করতে চায়৷ তবে তারা কিছু আসনে নৌকাও চায় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে৷ তাদের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টেরও মুক্তিজোট ও বিজেপি (মতিন) নামে দুটি নিবন্ধিত দল নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চায়৷ (ফাইল ছবি)
ছবি: picture-alliance/dpa
অনিবন্ধিত দলগুলো
আওয়ামী লীগের প্রতীকে যেসব অনিবন্ধিত দলের নেতা নির্বাচন করবেন সেগুলো হলো, গণ আজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাসদ, কৃষক শ্রমিক পার্টি ও তৃণমূল বিএনপি৷
ছবি: bdnews24.com
ধানের শীষে যারা
৩৯টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ১১টি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে বলে বিএনপি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে৷ ১৫ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ঐক্যফ্রন্ট ধানের শীষে
ঐক্যফ্রন্ট জানিয়েছে যে, তারা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে৷ ঐক্যফ্রন্টের নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের দল জেএসডি ও কাদের সিদ্দিকীর কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ৷ অনিবন্ধিত দল নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাও অংশ নেবেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে৷ সম্প্রতি জোটে যোগ দিয়েছেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এমএস কিবরিয়ার পুত্র রেজা কিবরিয়া৷
ছবি: bdnews24.com
বিশ দলীয় জোটও আছে
বিএনপির জোটের নিবন্ধিত দল এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিশ, বিজেপি, জাগপা ও মুসলিম লীগ ধানের শীষে ভোট করতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে৷ জামায়াতের নিবন্ধন না থাকায় তাদের নেতারাও তাকিয়ে আছে বিএনপির দিকে৷
ছবি: bdnews24.com
দ্বি-দলীয় রাজনীতি
নিবন্ধিত ৩৯টি দলের মধ্যে সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলসহ প্রায় অর্ধেক নিজের প্রতীকে অংশ নেবে নির্বাচনে৷ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এক জাতীয় দৈনিককে বলেছেন, ‘‘দ্বিদলীয় ব্যবস্থা গড়ে ওঠার পেছনে অন্যতম একটি কারণ বাম দলগুলোর ব্যর্থতা৷ এছাড়া দুর্বৃত্ত ও কালো টাকার মালিকরা নির্বাচনে আসে দুই দলের হয়ে৷ তারাই জয়ী হয়৷ এখানে নীতি-আদর্শ বলে কিছু নেই৷’’