1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তারকা সাংবাদিকতা বনাম সেল্ফ সেন্সরশিপ

খালেদ মুহিউদ্দীন
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

সেনাপ্রধান ও তার পরিবারের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহার নিয়ে আল জাজিরা টেলিভিশনের রিপোর্টের জোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷

ফাইল ছবিছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

দেশের গণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে সেই প্রতিক্রিয়া প্রকাশ ও প্রচার করা হয়েছে৷

কিন্তু আল জাজিরার প্রতিবেদনে কী আছে তা নিয়ে কোনো দেশি মাধ্যম কথা বলেনি৷ কিছু যে বলা হয়নি সেটার একটি ব্যাখ্যামূলক সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে ইংরেজি দৈনিক দি ডেইলি স্টার৷ ওই সম্পাদকীয়তে সরকারের প্রশংসা করা হয়েছে যে, তারা সোশ্যাল মিডিয়াতে আল জাজিরার প্রতিবেদনটি প্রচার বা প্রকাশে কোনো বাধা দেয়নি৷ কিন্তু দেশের আর সব গণমাধ্যমের মতো ইংরেজি পত্রিকাটিও প্রতিবেদনের বিষয় নিয়ে একটি কথাও বলেনি, যা তার নিজের ভাষাতেই ‘অ্যাবসার্ড’৷ 

আমি মনে করি, আল জাজিরার রিপোর্টটি ভালো না মন্দ তা নিয়ে সরকারের মতো অনেকেরই দ্বিধা বা সংশয় থাকতে পারে৷ কিন্তু কী এমন আছে ওই রিপোর্টে যে আমরা তার কথা উল্লেখ পর্যন্ত করতে পারবো না? ডেইলি স্টার সম্পাদকীয় জানাচ্ছে দেশের সাংবাদিকদের মাথার উপর ঝুলছে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের তরবারি৷

আমার প্রশ্ন, দেশে কি সাংবাদিকতা বন্ধ আছে তবে? মানে, কোন বিষয়ে প্রতিবেদন করা যাবে বা যাবে না তা কি নির্ভর করছে সরকারের সম্মতির উপর? আল জাজিরার রিপোর্টটি বাতাসে ভাসার পরপর কি সরকার সতর্ক করেছিল সম্পাদকদের বা টেলিভিশন প্রধানদের? কীভাবে সতর্ক করেছিল, লিখে, টেলিফোনে নাকি সশরীরে এসে? নাকি সংবাদ ব্যবস্থাপকেরা আগের অভিজ্ঞতা থেকে জানেন, এই রিপোর্টটি প্রকাশ হলে তাদের জেল, জরিমানা হবে৷ ঠিক কোন কোন রিপোর্ট সম্পর্কে তারা একথা জানেন?

প্রশ্নটি আরো সরল ও সরাসরি করলে এভাবে বলা যায় যে, অমুক বা অমুক অমুকের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো কিছু প্রচার বা প্রকাশ করা যায়-এরকম কোনো তালিকা রয়েছে কিনা৷ দেশের সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করতে পারেন, আপনি বুঝি জানেন না? না, আসলেই জানি না৷ মানে, দেশের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে লিখতে পারলে প্রধান সেনাপতিকে নিয়ে কিছু বলা যাবে না কেন? প্রধানমন্ত্রীর কট্টর সমালোচনা করা হয় এবং তা প্রকাশও করা হয়, তবে কোন সমালোচনা বা কোন আলোচনা প্রচার বা প্রকাশ করা যাবে না?

আল জাজিরাতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সেনাপ্রধানের ভাইয়ের মুক্তি, বিদেশ গমন ও বিদেশে অবস্থানের কথা বলা হয়েছে৷ এই ঘটনা তো দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে৷ এখন কেন তবে তার প্রকাশ নিয়ে কথা বলা পর্যন্ত বন্ধ?

খালেদ মুহিউদ্দীন, প্রধান, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগছবি: DW/P. Böll

তৃণমূল পর্যায়েও কি সবাইকে ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে কি রিপোর্ট করা যাবে আর কোনটা যাবে না এরকম তালিকা ধরিয়ে দিয়েছেন আমাদের মাননীয় সংবাদ ব্যবস্থাপকেরা? নাকি তাদের জন্য আলাদা নিয়ম? আজকেও দেখছি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে একজন সংবাদকর্মীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে৷ আমাদের সংবাদ ব্যবস্থাপকেরা যে এরকম কিছুর ভয়েই আছেন, ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয়তে তা পরিস্কার৷

আমার প্রশ্ন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন কি শুধু সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? মানে আল জাজিরাতে প্রতিবেদনটি প্রচারিত হওয়ার পর সারা দেশের কত মানুষ, কত বিশিষ্ট মানুষ এটা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন৷ তাদেরও কি সরকার বা বিশেষ কোনো প্রতিষ্ঠান চিনে রাখছে? দেশে কি এরকম ভয়ের পরিস্থিতি রয়েছে, নাকি কেউ কেউ এরকম একটা জুজু তৈরি করে নিজেদের জন্য নিরাপদ একটি বৃত্তির সংস্থান করছেন?

সাংবাদিকতার ছাত্র হিসেবে জানি, কিছু কিছু দেশে গণমাধ্যম মানেই চূড়ান্ত সেন্সরশিপ, কিন্তু আমাদের দেশের সেন্সরশিপটা আমি বুঝি না৷ এই গণমাধ্যমেই সরকারের বিরুদ্ধে বা খোদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যায় এমন অনেক কিছু প্রকাশ হয়, টকশো বা আলোচনা সভাতে পত্র পত্রিকার সম্পাদকেরা এমন অনেক কথাই জোর দিয়ে বলেন৷ আবার এইবারের বিষয়টিই দেখুন না, আল জাজিরা একটি প্রতিবেদন প্রচার করছে৷ সরকার তা প্রচার করতে বাধাও দেয় নাই৷ তারপরও এর কনটেন্ট নিয়ে দেশি মাধ্যমগুলো একটি শব্দ পর্যন্ত বলতে পারছে না৷ এ কেমন সেন্সরশিপ?

আমি আবারও জানতে চাই, এই সেন্সরশিপ কি সবার ওপরেই প্রযোজ্য? মানে গণমাধ্যমেও দাবার মতো রাজা, রানি বা বোড়ে এরকম আছে কিনা? যদি এটা সেল্ফ সেন্সরশিপ না হয়ে সরকারের গড়ে তোলা ভীতির দেয়াল হয় তবে সে দেয়াল ভাঙার বা তাতে আঘাতের কোনো পরিকল্পনা কি আমাদের সংবাদ ব্যবস্থাপকদের আছে? নাকি আমাদের গান শোনার তালিকায় এখন শুধু দুটি গান, আগে কি সুন্দর গান গাইতাম আর এই বেশ ভালো আছি৷

সাংবাদিক নেতারা বা শিক্ষকেরা কি বিষয়টা একটু দেখবেন? আমার ছোট মাথায় আর কুলায় না৷

খালেদ মুহিউদ্দীন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক৷ ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান।
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ