তারা গোল করবেন না, গোল অ্যাসিস্টও করবেন না, কিংবা প্রতিপক্ষকে রুখে দেবেন না বা গোল বাঁচাবেন না৷ তারপরও বিশ্বকাপের ৩২টি দলেই তাঁরা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ তারা কারা?
বিজ্ঞাপন
ফুটবলের অঙ্ক বলে, মাঠে খেলা শুরু করবেন এগার জন৷ এরপর নির্ধারিত সময়ে তিনজন বদলি খেলবেন এবং আরো একজন অতিরিক্ত সময়ে অন্য কারো বদলে নামতে পারবেন৷ অর্থাৎ ২৩ জনের স্কোয়াডের কারো কারো হয়ত পুরো আসরেই মাঠে নামা হবে না৷
কিন্তু কেন তারা এত গুরুত্বপূর্ণ? বিশ্বকাপের মতো বড় আসরের দলের সদস্য হিসেবে নাম থাকায় সারাক্ষণ দলের সঙ্গে থাকতে হবে তাদের৷ অথচ মাঠে না নামতে পারার হতাশা কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে৷ নিজেদের গর্ব চূর্ণবিচূর্ণ করে কোচ কখন একটু সদয় দৃষ্টি দেবেন সে আশায় থাকতে হবে৷ হয়ত কেউ কেউ মনে মনে আশা করবেন, তার জায়গায় যিনি সুযোগ পেয়েছেন, তিনি যেন খারাপ খেলেন৷ তার মানে দলে এক ধরনের বিভক্তি, বা অসম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যার প্রভাব যারা মাঠে খেলবেন তাদের ওপরও পড়বে৷ তাই এই খেলোয়াড়দের মন মানসিকতা ভালো থাকাটা খুব জরুরি পুরো দলের জন্য৷
বিশ্বকাপে বদলি খেলোয়াড়দের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ গোল
ফাইনালে বদলি হিসেবে খেলতে নামা মারিও গ্যোৎসের গোলে ২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল৷ বিভিন্ন সময়ে বদলিরা এমন আরও গুরুত্বপূর্ণ গোল করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/EPA/dpa/K. Krzaczynski
ভিক্টর এসপারাগো
উরুগুয়ের এই স্ট্রাইকার তাঁর প্রজন্মের অন্যতম সেরা ছিলেন৷ কিন্তু ১৯৭০ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে গোল না পাওয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালের শুরুতে তাঁকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল৷ ৯০ মিনিটে দুই দল গোল করতে না পারায় খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়৷ ১০৩ মিনিটের সময় এসপারাগোকে মাঠে নামানো হয়৷ এরপর ১১৭ মিনিটের সময় হেড থেকে গোল করে দলকে সেমিফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন৷ গোলটি দেখতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হার্নান মেডফোর্ড
১৯৯০ সালে কস্টা রিকার এই ফুটবলারের বয়স ছিল ২১৷ শেষ ষোলোতে যেতে সুইডেনের বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে কস্টা রিকার জয় প্রয়োজন ছিল৷ কিন্তু খেলায় প্রথমে গোল করে সুইডেন৷ কস্টা রিকার অধিনায়ক পরে গোল করে খেলায় সমতা আনেন৷ তবে খেলা শেষের মিনিট তিনেক আগে গোল করে মেডফোর্ড কস্টা রিকাকে শেষ ষোলোতে নিয়ে গিয়েছিলেন৷ তাঁকে কিন্তু মাঠে নামানো হয়েছিল ৬০ মিনিটের সময়৷ গোলটি দেখতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Imago/Kicker/Liedel
ইলহান মানসিজ
২০০২ বিশ্বকাপে তুরস্কের সবগুলো ম্যাচে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন তিনি৷ কোয়ার্টার ফাইনালে সেনেগালের বিরুদ্ধে ম্যাচেও তা-ই হয়েছিল৷ ৬৭ মিনিটের সময় তাঁকে মাঠে নামানো হয়৷ অতিরিক্ত সময়ে ‘গোল্ডেন গোল’ করে তুরস্ককে সেমিফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন মানসিজ৷ গোলটি দেখতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: G.Bouys/AFP/GettyImages
জিয়ানি রিভেরা
১৯৭০ সালে জার্মানি ও ইটালির মধ্যকার সেমিফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে পাঁচটি গোল হয়েছিল৷ খেলাটি ইটালি জিতেছিল ৪-৩ গোলে৷ জয়সূচক গোলটি করেছিলেন রিভেরা (বামে হাত উঁচু)৷ মাঠে তিনি নেমেছিলেন দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে৷ গোলটি দেখতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মারিও গ্যোৎসে
২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের কাঁদিয়েছিলেন জার্মানির মারিও গ্যোৎসে৷ ৮৮ মিনিটে তাঁকে মাঠে নামানো হয়েছিল৷ এরপর ১১২ মিনিটের সময় তিনি গোলটি করেন৷ ফলে বিশ্বকাপ জেতানো গোল করা প্রথম বদলি খেলোয়াড় হলেন গ্যোৎসে৷ গোলটি দেখতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture alliance / dpa
5 ছবি1 | 5
উলটোদিকে, মূল দলে জায়গা না দিয়েও এদের অনুপ্রাণিত রাখা কোচের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ, যাতে করে দলের প্রয়োজনে তারা যে কোনো পরিস্থিতিতে মাঠে নামতে প্রস্তুত থাকেন, এবং দলের মধ্যে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি না করেন, যার প্রভাব সামগ্রিক পারফরম্যান্সের ওপর পড়ে৷
‘‘তারা যেন নিজেদেরও দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন, এবং দলকে সমর্থন করেন, তেমন মনোভাব সবসময় বজায় রাখা সত্যিই কঠিন৷'' বলছিলেন ফ্রেঞ্চ কোচ দিদিয়ের দেশঁ৷ ‘‘যারা হয়ত খেলবেনই না, বা খেললেও একেবারে অল্পই খেলবেন, তাদের আমি অনেকটা সময় দিই৷'' যোগ করেন তিনি৷
গত বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার তরুণ মিডফিল্ডার মাসিমো লুয়োঙ্গো স্কোয়াডে সেই চার জনের একজন ছিলেন, যাদের এক সেকেন্ডের জন্যেও কোচ মাঠে ব্যবহার করেননি৷
ব্রাজিল বিশ্বকাপে নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত ছিলেন লুয়োঙ্গো৷ তাই খেলতে না পারার সময়টা তার জন্য ‘কঠিন' ছিল বলে জানান তিনি৷
এপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অনেকজন মিডফিল্ডার ছিলেন৷ আমি সবচেয়ে তরুণ ও নবীনতম ছিলাম৷ ইস্, যদি এক মিনিটের জন্য হলেও বিশ্বকাপে খেলতে পারতাম!'' আফসোস করছিলেন তিনি৷
‘‘মনে হচ্ছিল, আমার পেটে একটা ফুটো হয়ে গেছে, যা কোনোভাবেই বন্ধ করতে পারছিলাম না৷ তাই এই বিশ্বকাপে মাঠে নামার জন্য মরিয়া হয়ে আছি আমি৷''
দলে কখনোই প্রথম বাছাই না হয়েও একবার সুযোগ পেয়ে যদি অসাধারণ কিছু করে দেখানো যায়, তাহলেই কেল্লাফতে৷যেমন ২০১৬ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপেপর্তুগাল দলের খেলোয়াড় এডার৷ ফরোয়ার্ডের এই খেলোয়াড় একটু আধটু গ্রুপ ম্যাচে সুযোগ পেলেও নকআউট রাউন্ডে কোনো সুযোগই পাচ্ছিলেন না৷
ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে ৭৯তম মিনিটে কোচ তাঁর ওপর ভরসা রাখলেন৷ অতিরিক্ত সময়ে জয়সূচক গোলটি করে তিনি কোচের মানই শুধু রাখলেন না, প্রমাণ করলেন নিজেকে৷
দলের অব্যবহৃত খেলোয়াড়রা অন্যভাবেও দলকে সাহায্য করতে পারেন৷ যেমন, গত বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের গোলরক্ষক নিক রিমান্ডো একবারের জন্যও মাঠে নামেননি৷ কিন্তু তিনি অনুশীলনে বেশি বেশি খাটছিলেন৷ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমি চাইছিলাম যেন মূল গোলরক্ষকের ওপর চাপ কম পড়ে৷ তাঁর শক্তিক্ষয় কম হয়৷ তাহলে খেলার সময় তিনি তা কাজে লাগাতে পারবেন৷''
বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা
বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই উন্মাদনা৷ আর সেই উন্মাদনা ঐ গোলপোস্টকে ঘিরেই৷ তাই যারা গোল করেন তারাই হয়ে ওঠেন সবচেয়ে জনপ্রিয়৷ এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে যাঁরা প্রতিপক্ষের জালে অন্তত ১০ বার বল জড়িয়েছেন তাঁদের নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিরোস্লাফ ক্লোজে
ক্লোজে হলেন জার্মানির সৌভাগ্যের প্রতীক৷ যে ম্যাচেই তিনি দেশের হয়ে গোল করেছেন সে ম্যাচেই দল জিতেছে৷ তিনি জার্মানির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা৷ ১৬টি গোল নিয়ে বিশ্বকাপেরও সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি৷ ২০১৪ বিশ্বকাপে ২টি গোল করে তিনি ব্রাজিলের রোনালদোকে টপকে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন৷ অংশ নিয়েছেন ২০০২, ২০০৬, ২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপে৷ জিতেছেন ২০১৪ বিশ্বকাপ৷
ছবি: Patrik Stollarz/AFP/Getty Images
রোনালডো
ব্রাজিলের এই কিংবদন্তীকে বলা হয় বিশ্বের সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকারদের একজন৷ ‘দি ফেনোমেনোন’খ্যাত এই তারকা তিনবারের ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়, দু’বার ব্যালন ডি’অর ও একবার উয়েফার সেরা ক্লাব ফুটবলার এবং ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট জেতেন৷ ব্রাজিলের হয়ে তিনি ৯৮ ম্যাচে ৬২টি গোল করেন, যার ১৫টিই বিশ্বকাপে৷ ১৯৯৮ বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল ও ২০০২ আসরে জেতেন গোল্ডেন বুট৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Ugarte
গ্যার্ড ম্যুলার
পশ্চিম জার্মানির হয়ে খেলেছেন তিনি৷ প্রতিপক্ষের জালে বল ফেলার দক্ষতার জন্য তাঁকে সর্বকালের সেরাদের একজন হিসেবে মানা হয়৷ এই জার্মান কিংবদন্তীর ফিনিশিং ছিল অনবদ্য৷ দেশের হয়ে ৬২ ম্যাচে করেছেন ৬৮ গোল, যার ১৪টিই এসেছে বিশ্বকাপে তাঁর খেলা ১৩ ম্যাচে৷
ছবি: AP
জিস্ট ফুঁতেন
এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ডটি তাঁর৷ একবারই বিশ্বকাপ খেলেছেন এই ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড, ১৯৫৮ সালে৷ সে বিশ্বকাপেই ৬ ম্যাচে করেছেন ১৩ গোল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেলে
‘কালো মানিক’ নাম তাঁর৷ তাঁকে অনেকেই ফুটবলের সর্বকালের সেরা বলেই মানেন৷ ব্রাজিলিয়ান এই মহাতারকার বিশ্বকাপে ১৪ ম্যাচে ১২ গোল৷ এই তালিকায় একমাত্র তিনিই তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সান্দোর পিতার কচিশ
হাঙ্গেরির এই দুর্দান্ত ফিনিশার তাঁর সময়ে সেরাদের একজন ছিলেন৷ ১৯৫২ ও ৫৪ সালে তিনি যে কোনো ইউরোপিয়ান লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন৷ দেশের হয়ে ৬৮ ম্যাচে করেছেন ৭৫ গোল৷ ১৯৫৪ বিশ্বকাপে তিনি ১১ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন৷ একই বিশ্বকাপে দুইবার হ্যাট্রিক করার রেকর্ড তিনিই প্রথম গড়েন৷
ছবি: AP
ক্লিন্সমান
ক্লিন্সমান জার্মানির তারকা ফুটবলার ও কোচ৷ তিনি ২০০৬ বিশ্বকাপে জার্মানির কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ পশ্চিম জার্মানির হয়ে বিশ্বকাপ খেলেছেন প্রথম ১৯৯০ সালে৷ এরপর ’৯৪ ও ’৯৮-এ খেলেছেন একীভূত জার্মানির হয়ে৷ বিশ্বকাপে তাঁরও মোট গোলসংখ্যা ১১৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Berg
হেলমুট রান
পশ্চিম জার্মানির এই কিংবদন্তীর নাম ছিল ‘দ্য বস’৷ ১৯৫৪-র বিশ্বকাপের ফাইনালে হাঙ্গেরির বিপক্ষে জয়সূচক গোলটি করেন তিনি৷ বিশ্বকাপে তাঁর মোট গোলসংখ্যা ১০৷
১৯৮৪ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেন তিনি৷ এরপর ৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দেশের হয়ে ৮০ ম্যাচে গোল করেছেন ৪৮টি৷ ৮৬’র বিশ্বকাপে জিতে নিয়েছিলেন গোল্ডেন বুট৷ বিশ্বকাপে তাঁর গোলসংখ্যা ১০টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/STAFF
গাব্রিয়েল বাতিস্তুতা
আর্জেন্টাইন এই গোল মায়েস্ত্রোর গোলগুলোকে বলা হতো ‘বাতিগোল’৷ বিশ্বকাপে তাঁরও গোলসংখ্যা ১০টি৷ ১৯৯৪, ১৯৯৮ ও ২০০২ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/Allsport/C. Villa
আরো যাঁরা
বিশ্বকাপে দশ গোল করাদের তালিকায় আরো আছেন পেরুর কুবিলাস, জার্মানির টোমাস ম্যুলার ও পোল্যান্ডের লাটো৷ এর মধ্যে টোমাস ম্যুলার এখনো খেলছেন জার্মানির হয়ে৷ তাই তাঁর সামনে আছে গুরুদের টপকে যাবার সুযোগ৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
11 ছবি1 | 11
অনেক খেলোয়াড় তাদের দলকে পরের ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিতে প্রতিপক্ষ দলের মতো খেলেন অনুশীলনে৷ যেমন অস্ট্রেলিয়ার কোচ পোস্টেকোগলু গত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের অনুশীলনের সময় প্রতিপক্ষ চিলি, নেদারল্যান্ডস বা স্পেনের মতো খেলতে বলেন মূল একাদশের বাইরের খেলোয়াড়দের৷ তাতে ম্যাচের মতোই আবহ তৈরি হয়৷ খেলোয়াড়রা প্রস্তুতি নিতে পারেন৷ লুয়োঙ্গো বলছিলেন যে, বিষয়টি কত কঠিন ছিল অন্য খেলোয়াড়দের জন্য৷
‘‘আমাদের যতটা সম্ভব প্রতিপক্ষের মতোই খেলতে হতো মূল একাদশের বিরুদ্ধে৷''
ছাড়া যারা দলের ভেতরে খুব জনপ্রিয় খেলোয়াড় থাকেন তাদের দায়িত্ব বেশি বলে মনে করেন মার্কিন গোলরক্ষক রিমান্ডো৷ তিনি মনে করেন, এরা সবাইকে অনুপ্রাণিত করতে ভুমিকা রাখতে পারেন৷
‘‘খেলতে পারেনি বলে কাউকে তাচ্ছিল্য করা যাবে না৷ যদি করা হয়, তা দলের জন্য একটা বাজে দিক তৈরি করবে৷'' বলছিলেন তিনি৷
মাঝে মাঝে কোচদের কড়াও হতে হয়৷ যেমন বেলজিয়ামের কোচ মার্ক উইলমটস গত বিশ্বকাপের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘‘আমি বলেছিলাম যে, এমন খেলোয়াড় চাই না, যারা নিজের দিকেই শুধু তাকাবে৷ আমি এমন খেলোয়াড়ই চাই, যারা দেশের জন্য খেলবে৷ কাউকে যদি দলের মধ্যে এ সব নিয়ে তাচ্ছিল্য করতে দেখি, তাহলে তাঁকে পত্রপাঠ বাড়িতে পাঠিয়ে দেবো৷''
তবে না খেলতে পারলেও এমন আসরে দলের অংশ হওয়াও যে অনেক বড় ব্যাপার তা মনে করিয়ে দিলেন উইলমটস নিজেই নিজের অভিজ্ঞতা থেকে৷ ১৯৯০ এর বিশ্বকাপে ইটালি দলের সদস্য থাকলেও মাঠে খেলার সুযোগ পাননি৷
‘‘বর্ষীয়ান খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেবার শিখেছি অনেক৷'' বলছিলেন তিনি৷
লুয়োঙ্গোও মনে করেন, ব্রাজিল বিশ্বকাপ তাঁকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমি ঐ অল্প সময়েই অনেক কিছু শিখেছি৷ যখন ক্লাবে ফিরে আসলাম, তখন মনে হচ্ছিল আগাগোড়া আমি ভিন্ন এক খেলোয়াড়৷''
বিশ্বকাপের কোন গ্রুপে কে ফেবারিট
বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই টানটান উত্তেজনা৷ গ্রুপ পর্ব থেকেই উত্তেজনার পারদ যেন তুঙ্গে৷ এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপগুলো নিয়েও চলছে হিসেব-নিকেষ৷ চলুন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে নিই গ্রুপগুলোর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ATP/Mexsport/O. Aguilar
গ্রুপ এ
গ্রুপ এ-তে আছে স্বাগতিক রাশিয়া, ল্যাটিন পরাশক্তি উরুগুয়ে, আফ্রিকার দেশ মিশর ও এশিয়ার সৌদি আরব৷ এর মধ্যে সুয়ারেজ, কাভানির উরুগুয়েকেই ফেবারিট মানছেন সবাই৷ তবে সবার চোখ থাকবে লিভারপুল তারকা মোহামেদ সালাহ’র দিকে৷ তাঁর উপর ভর করে স্বাগতিক রাশিয়া ও সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় রাউন্ডে মিশর যেতে পারবে বলে অনেকেরই মত৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Tallis
গ্রুপ বি
টিকিটাকা কৌশলের স্পেন ও ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালের সঙ্গে বি গ্রুপে আছে মরক্কো ও ইরান৷ বলাই বাহুল্য, কোনো অঘটন না ঘটলে স্পেন ও পর্তুগালই দেখবে দ্বিতীয় রাউন্ডের মুখ৷ এই বিশ্বকাপটি রোনাল্ডোর চতুর্থ বিশ্বকাপ৷ এবারো ফর্মের তুঙ্গে থাকা রোনাল্ডো দলের জন্য কতটা কী করতে পারেন তা দেখার অপেক্ষায় ফুটবলপ্রেমীরা৷ তারকাখচিত স্পেনও এবার শিরোপার জন্য উন্মুখ৷
ছবি: Reuters/D. Staples
গ্রুপ সি
ফ্রান্স, ডেনমার্ক, পেরু ও অস্ট্রেলিয়া নিয়ে গ্রুপ সি৷ শক্তিমত্তায় ফ্রান্স যে এবারের শিরোপার লড়াইয়ে প্রথম সারিতে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ গত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে স্পেন, হল্যান্ড ও চিলির মাঝখানে চ্যাপ্টা হওয়া সকারুদের জন্য এবার দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করার সুযোগ আছে৷ ডেনমার্কেও আছেন কয়েকজন প্রতিভাবান খেলোয়াড়৷ আর ১৯৮২ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেয়া পেরু না হয়ে ওঠে ডার্কহর্স৷
ছবি: Reuters/F. Lancelot
গ্রুপ ডি
দর্শক ফেবারিট আর্জেন্টিনার গ্রুপ এটি৷ আরো আছে ক্রোয়েশিয়া, নাইজেরিয়া ও আইসল্যান্ড৷ মেসিনির্ভর আর্জেন্টিনা যে গ্রুপ পর্ব সহজেই পেরিয়ে যাবে সে বিষয়ে খুব একটা সন্দেহ নেই৷ তবে ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয়া আইসল্যান্ডের ওপর বাজি রাখতে পারেন৷ তারা কিছু একটা দেখাবে নিশ্চিত৷ অন্যদিকে, ক্রোয়েশিয়া ও নাইজেরিয়া দুই দলই নির্ভর করছে তাদের বর্ষীয়ান খেলোয়াড়দের ওপর৷
ছবি: Behrouz Mehri/AFP/Getty Images
গ্রুপ ই
ব্রাজিল এমন একটি দল যারা সবসময়ই শিরোপার দাবিদার৷ তবে ২০০২ সালের পর আর শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি তাদের৷ এবার সে সম্ভবনা কতদূর, তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ চলছে৷ ই গ্রুপে আর যারা আছে, তাদের মধ্যে সুইজারল্যান্ডকে এগিয়ে রাখছেন অনেকেই৷ এছাড়া আছে সার্বিয়া ও কোস্টারিকা৷
ছবি: Vanderlei Almeida/AFP/Getty Images
গ্রুপ এফ
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি আছে এই গ্রুপে৷ জার্মানরাও এবারো শিরোপার দাবিদার৷ ধরে নেয়া যায়, গ্রুপ পর্বে খুব একটা বাধা পাবে না দক্ষিণ কোরিয়া ও সুইডেনের কাছ থেকে৷ তবে হাভিয়ের হার্নান্দেজের মেক্সিকোর সঙ্গে গ্রুপ পর্বে লড়াইটা জমবে বলে মনে হচ্ছে৷ এই গ্রুপে এই দুই দলই ফেবারিট৷
ছবি: imago/ActionPictures
গ্রুপ জি
ইংলিশরা আছে এই গ্রুপে৷ আছে শক্তিশালী বেলজিয়ামও৷ আর আছে পানামা ও টিউনিসিয়া৷ শেষ দুই বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বই পেরুতে পারেনি থ্রি লায়ন্সরা৷ তবে এবার সে সম্ভাবনা আছে তাদের সামনে৷ বেলজিয়ামও গ্রুপের ফেবারিট৷ তবে পানামা ও টিউনিসিয়া অঘটন ঘটাতে উদগ্রীব৷ দুই দলই ভালো খেলেছে বাছাই পর্বে৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
গ্রুপ এইচ
হামেস রডরিগেজের কলম্বিয়া গতবার যে চমক দেখিয়েছে তা এবার কতটা ধরে রাখতে পারবে বোঝা যাবে গ্রুপ পর্বেই৷ কারণ, গ্রুপে আছে শক্তিশালী পোল্যান্ড৷ আছে পরিশ্রমী সেনেগাল ও জাপান৷ পোলিশরা ফেবারিট হলেও কোন দু’টি দল শেষ ষোল নিশ্চিত করবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না৷ মনে করা যেতে পারে, এটিই গ্রুপ অফ ডেথ৷