তারেক রহমানের বক্তব্য বাংলাদেশে প্রকাশে আদালতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷ অনেকে নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করলেও তারেকের বক্তব্যের নিন্দাও রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য, বিবৃতি সংবাদমাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ঢাকার আদালত৷ আইনের দৃষ্টিতে যতদিন তিনি ‘পলাতক' থাকবেন, ততদিন এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে বলে জানিয়েছে আদালত৷ ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাঠকদের এই সংবাদের আলোকে প্রশ্ন করা হয়, ‘‘বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?''
বুধবার জার্মান সময় সকাল নটায় প্রশ্নটি করার পর প্রথম দু'ঘণ্টায় উত্তর জমা পড়েছে ছয় শ'র বেশি৷ ইউনুস বিন আজিজ লিখেছেন, ‘‘আমি এ দেশের নাগরিক হিসেবে বলতে পারি৷ বর্তমান দেশে প্রয়োজন একটা নির্বাচন৷ আর তারেক রহমান একটি বড় রাজনৈতিক দলের সিনিয়র ভাইস চেয়্যারম্যান৷ তাই অবশ্যই তাঁর বক্তব্য জনসাধারণের মধ্যে উপস্থাপনা করা প্রয়োজন৷''
সাদেক হোসেন লিখেছেন, ‘‘তারেক রহমান খারাপ হতে পারে জানি, কিন্তু মুখের কথা বন্ধ করার জন্য আইন? এটা যুক্তিসঙ্গত না৷ মিডিয়া হয়ত ভয়ে এটা বন্ধ করে দেবে, কিন্তু সে' সময়ে তার বক্তব্য শোনার জন্য মানুষ আরো বেশি আগ্রহ প্রকাশ করবে৷''
ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাঠক অনিন্দ্য শ্রাবণ অবশ্য আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছে৷ একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয়, বরং বাংলাদেশের সর্বজন স্বীকৃত বিষয়াদি ও আমাদের মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার ধৃষ্টতার জন্য এই আদেশ৷ সে চরম পর্যায়ের একটা বেয়াদব৷''
অস্থির বাংলাদেশ
বাংলাদেশে দশম সংসদীয় নির্বাচনের বছরপূর্তিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে৷ এতে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে৷ ৫ই জানুয়ারি রাজনৈতিক অস্থিরতার কয়েকটি ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
অবরুদ্ধ খালেদা
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে আটকে রেখেছে পুলিশ৷ যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, তবে সোমবার তিনি বাইরে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁর গেটে তালা লাগিয়ে দেয়৷ ফলে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গেটের মধ্যেই৷
ছবি: AFP/Getty Images
অবরোধ ঘোষণা
অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন৷ গুলশানের কার্যালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘আজ আমাদের কালো পতাকা কর্মসূচি ছিল৷ সমাবেশ করতে দেওয়া হয় নাই৷ পরবর্তী কর্মসূচি না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে৷’’
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
খালেদার কার্যালয় ঘিরে পুলিশ
প্রসঙ্গত, গত দু’দিন ধরে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ৷ ছবিতে পুলিশে একটি গাড়ি রাস্তায় আড়াআড়িভাবে রেখে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এভাবে আরো কয়েকটি বালু এবং ইটভর্তি ট্রাকও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/Landov
গাড়িতে আগুন
রবিবার থেকেই ঢাকায় সভা, সমাবেশ, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছিল৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অটল থাকে বিএনপিসহ বিশ দল৷ ঢাকায় একটি সিএনজি এবং মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ছবি এটি৷ বিএনপি সমর্থকরা এটা করেছে বলে জানিয়েছে সংবাদসংস্থা৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
পার্ক করা গাড়িতে আগুন
পার্ক করে রাখা একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দিচ্ছে বিএনপির সমর্থকরা৷ ছবিটি ঢাকা থেকে তোলা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
রাজপথে সরব আওয়ামী লীগ
পুলিশ সভা, সমাবেশ নিষিদ্ধ করলেও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হন৷ বিষয়টি সমালোচনা করে ফেসবুকে সাংবাদিক প্রভাষ আমিন লিখেছেন, ‘‘...নিষেধাজ্ঞা কি শুধু বিএনপির জন্য? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তো দেখি শহরজুড়ে মিছিল করছে, উল্লাস করছে, গান শুনছে, গান গাইছে৷’’ ছবিতে ঢাকায় বিএনপির এক সমর্থককে পেটাচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
‘শান্তির পথে আসুন’
এদিকে সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বিএনপি নেত্রীকে শান্তির পথে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের যে দাবিতে বিএনপিসহ বিশদল আন্দোলন করেছে, সেই দাবির প্রতি কোন নমনীয়তা দেখাননি তিনি৷ হাসিনা মনে করেন, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়াটা বিএনপির রাজনৈতিক ভুল ছিল৷
ছবি: Oli Scarff/Getty Images
‘একতরফা’ নির্বাচন
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের পাঁচ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল অংশ নেয়নি৷ সেই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে কোন ভোটাভুটি হয়নি৷ বাকি আসনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ কম৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেটিকে ‘একতরফা’ নির্বাচন আখ্যা দিয়েছে৷
ছবি: DW
8 ছবি1 | 8
হিমাদ্রী শেখর কাসাব লিখেছেন, ‘‘এ আইনটা অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল৷ তাহলে গত নির্বাচনের আগে কিছু লোকের প্রাণ বাঁচতো৷ যার বক্তব্যে ইতিহাস বিকৃত হয়, দেশে সহিংসতা ছড়ায়, সে সকল ফেরারি আসামীদের বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার না করাই দেশের জন্য, জাতির জন্য শুভ৷ আর আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হরতালের ঘোষণা প্রচার করাও নিষিদ্ধ করা উচিত৷''
ডয়চে ভেলের আরেক পাঠক সজীব সোম মনে করেন, ‘‘আইন একজন মানুষের মনের ভাব প্রকাশে বাধা দিতে পারে কিনা জানিনা৷ তবে তারেকের মন্তব্য নিষেধ করা উচিত৷ কারণ একজন ভালো মানুষ যখন পাগলের মতো বক্তব্য দিয়ে মানুষকে বিব্রত করে, তখন তা প্রচার না করাই উচিত৷''
ইব্রাহিম রনি লিখেছেন, ‘‘বিশ্ব সেরা গণমাধ্যমগুলোতে যখন মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গিদের ভিডিও বার্তা, অডিও বার্তা, প্রেস বিজ্ঞপ্তি, উড়ো চিঠির কথাগুলো প্রচার করে – তখন তো এমন আদেশ-নিষেধ দেখিনি৷ যদি একজন ‘ফেরারি আসামী হিসেবে তারেকের' বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যায়, তাহলে এ বিষয়গুলোও নিশ্চই আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ৷''