তালাকই কি একমাত্র সমাধান?
১১ জানুয়ারি ২০১৬ইউরোপে বিয়ে যতটা সহজ, তালাক ততটাই কঠিন৷ বিশেষ করে যেসব দম্পতির সন্তান আছে, তাঁদের জন্য বেশ জটিল৷ একটি তালাক প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগে কমপক্ষে ছয়মাস থেকে তিন বছর৷ আর এই সময়ের মধ্যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় কিনা, সে চেষ্টাও থাকে৷ আর বিচ্ছেদের পর সন্তানের দায়িত্ব কোন পক্ষ, কীভাবে পালন করবে সেটাও পরিষ্কারভাবে নির্ধারণ করে দেয় পরিবার বিষয়ক আদালত৷ এক্ষেত্রে প্রয়োজনে সন্তানের মতামত নেয়ারও চেষ্টা করা হয়৷ দম্পতির স্থায়ী সম্পদও ভাগ করে দেয়া হয় নিয়ম মেনে৷
ইউরোপে বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সন্তান আছে এমন দম্পতির সন্তানের ভবিষ্যত বিবেচনায় থাকে সরকার, সমাজের৷ বিচ্ছেদের প্রভাব সন্তানের উপর কীভাবে পড়বে সেটা নিয়ে নানারকম গবেষণা হয়েছে৷ যদিও সেসব গবেষণার ফলাফল নিয়ে মতভেদ আছে, তবুও যতটা অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য তা হচ্ছে:
- সন্তানের বয়স যদি নয় বছরের কম হয়, তখন সেই সন্তান অনেক সময় বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের জন্য নিজেকে দায়ী মনে করে৷ সে আশা করে, বাবা-মা আবারো এক হবেন৷ সে চায় তাঁদের সঙ্গে একসঙ্গে থাকতে৷ কিন্তু সেসব বাস্তবে সম্ভব না হওয়ায় শিশুটি মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে৷
- নয় বছরের বেশি বয়সি সন্তানদের ক্ষেত্রে প্রভাবটা অনেকসময় হয় উলটো৷ এক্ষেত্রে তারা নিজেদের সময়ের আগেই স্বনির্ভর ভাবতে শুরু করে এবং পরিবার থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ তাদের মধ্যে বদমেজাজ দেখানোর প্রবণতা তৈরি হয়৷ অসৎ সঙ্গে জড়ানোর প্রবণতাও বাড়ে৷
- এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের ১৫ থেকে ২৫ বছর পরও সন্তানের উপর তার প্রভাব পড়তে পারে, যখন সে নিজে সম্পর্ক গড়ে৷ সেসময় তার মধ্যে অবিশ্বাস, হারানোর ভয় তৈরি হতে পারে যা সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷
ফলে সন্তানের উপর বিচ্ছেদের প্রভাব বিবেচনা করে ইউরোপে বিচ্ছেদে আগ্রহী দম্পতির মধ্যে বিকল্প চিন্তাও দেখা যায়৷ কেউ কেউ চেষ্টা করেন মধ্যস্থতার ভিত্তিতে ভুল বোঝাবুঝি কমিয়ে আনতে৷ উভয়পক্ষে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়৷ একান্ত সম্ভব না হলে বিচ্ছেদ ছাড়াই আলাদা থাকে দম্পতি৷ কেউ কেউ একই বিল্ডিংয়ে পাশাপাশি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেন, যাতে আলাদা থাকলেও সন্তানরা সবসময় উভয়ের সান্নিধ্য পান৷
ইউরোপের প্রসঙ্গ এ জন্য আসছে যে, বাংলাদেশের কাছে তা উদাহরণ হতে পারে৷ যেসব দম্পতি হুটহাট বিচ্ছেদের চিন্তা করেন, তাঁরা আরো ভাবতে পারেন৷ ভুল বোঝাবুঝিগুলো যাচাই করে, উভয়পক্ষ কিছুটা ছাড় দিয়ে, আলোচনার মাধ্যমে বিচ্ছেদ এড়ানো গেলে মন্দ কোথায়? এক্ষেত্রে তাড়াহুড়া একেবারেই ঠিক নয়৷
তবে বিচ্ছেদ যদি একান্ত এড়ানো সম্ভব না হয়, তাহলে শুধুমাত্র সন্তান বা সমাজ বিবেচনা করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাও ঠিক নয়৷ সেটা বরং সবার জন্যই ক্ষতিকর৷ জীবন একটাই, সেটা উপভোগও তাই জরুরি৷
আপনারা কি আরাফাতুল ইসলামের সঙ্গে একমত? জানিয়ে দিন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷