লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার শাকচরে তালাবদ্ধ একটি ঘর থেকে এক দম্পতির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ চার পাঁচ দিন আগে কেউ তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে পুলিশের ধারণা৷
বিজ্ঞাপন
ঘর থেকে দুর্গন্ধ বের হলে তাদের মৃত্যুর বিষয়টি স্থানীয়রা জানতে পারে৷তাদের কাছে খবর পেয়ে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জেলার পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ জানিয়েছেন ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ৷
নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার শাকচর ইউনিয়নের উত্তর শাকচর গ্রামের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ছৈই মিঝি বাড়ির আবু ছিদ্দিক (৭৩) ও তার স্ত্রী আতরের নেছা (৬২) ৷
নিহত আবু ছিদ্দিকের ভাতিজা আবদুল হান্নান বলেন, ‘‘আমার জেঠা ও জেঠির নিজেদের কোনো সন্তান নেই ৷ আবদুর রহিম নামের তাদের একটি পালক ছেলে আছে ৷ সে বিয়ের পর থেকে শ্বশুর বাড়িতেই থাকে ৷ একতলা ভবনের বাসায় জেঠা ও জেঠি ছাড়া আর কেউ থাকতো না ৷
‘‘রাতে ঘর থেকে দুর্গন্ধ বের হলে তাদের মৃত্যুর বিষয়টি লোকজন জানতে পারে ৷ পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে ঘর থেকে তাদের গলিত লাশ দেখতে পায় ৷”
হান্নান আরও জানান, তার জেঠা আবুধাবী প্রবাসী ছিল ৷ প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি বাড়িতে আছেন ৷ কয়েক বছর থেকে পালক ছেলের সঙ্গে জেঠা ও জেঠির সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিলো না৷ শাকচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘‘বৃদ্ধ দম্পতির গলিত মৃতদেহ খাটের উপর পড়ে ছিলো ৷ ধারণা করা হচ্ছে, কেউ ঘরে প্রবেশ করে তাদের হত্যা করে পালিয়ে যায় ৷”
পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘গলায় কাপড় পেচানো অবস্থায় দুজনের লাশ খাটে উপর পড়ে ছিল ৷ মৃতদেহ অনেকটাই গলে গেছে ৷ চার থেকে পাঁচ দিন আগে শ্বাসরোধ করে কেউ তাদের হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে ৷ ‘‘বাড়ির গেটে তালা এবং দরজা ভেতর থেকে আটকানো থাকলেও ছাদের দরজা খোলা পাওয়া গেছে ৷ ঘর থেকে কোনো জিনিসপত্র খোয়া গেছে কিনা দেখা হচ্ছে ৷”
সিআইডির সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে ৷ হত্যাকাণ্ডের কারণ তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ সুপার৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
খুনের দেশে, গুমের দেশে
সে দেশে অন্তত এক লাখ ৫৮৭৯ জন এখনো নিখোঁজ৷ তাদের খুঁজে বের করার কাজে ব্যস্ত ১৮০টি গ্রুপ৷ এমন দেশ মেক্সিকোয় চার বছর ১০টি রাজ্যে অনুসন্ধানী গ্রুপগুলোর সঙ্গে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে রয়টার্স কী পেয়েছে দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: MAHE ELIPE/REUTERS
নিখোঁজ সংবাদ – ১
২০১৪ সাল৷ ২১ বছর বয়সি রবার্তো বাড়ি না ফেরায় মা মিরনা মেদিনা (ওপরের ছবি) ভীষণ দুশ্চিন্তায়৷ শিক্ষিকা মিরনা সন্তানকে ফিরে পেতে সারা দেশ চষে বেড়াতে লাগলেন৷ অনেকদিন পর বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে একজনের মেরুদণ্ড আর বাহুর অংশবিশেষ পাওয়া গেল৷ ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেল ওগুলো রবার্তোর দেহেরই অংশ৷ কিছুদিন পরে আরেক জায়গায় পাওয়া গেল পায়ের একটা অংশ আর ট্রাউজার৷
ছবি: MAHE ELIPE/REUTERS
নিখোঁজ সংবাদ - ২
হাভিয়ার সেদিন বাড়ির কাছেরই এক বান্ধবীর জন্মদিনের পার্টিতে যাবে৷ জেসিকা হিগুয়েরা তার ১৯ বছর বয়সি ছেলেকে গালে চুমু দিয়ে বিদায় দিলেন৷ সেই চুমুই শেষ চুমু৷ জেসিকা গভীর রাতে খবর পেলেন হাভিয়ার আর তার বন্ধুরা নাকি কার মোটরবাইক চুরি করেছে৷ তারপর কারা যেন তাকে ধরে নিয়ে গেছে৷ হাভিয়ের আর ফেরেনি৷
ছবি: MAHE ELIPE/REUTERS
নিখোঁজ সংবাদ - ৩
২০১৬ সালে নিখোঁজ হন ৩৮ বছর বয়সি গ্লোরিয়া৷ মারিয়া গনসালেস ছোট বোন হারানোর শোকে দিশেহারা৷ আশপাশের তিন রাজ্যের প্রায় সব জায়গাতেই খুঁজলেন গ্লোরিয়াকে৷ একদিন এক জায়গায় বোনের ছবিসম্বলিত পোস্টার লাগাচ্ছেন৷ কয়েকন না্রী এসে খবর দিলেন দূরে এক জঙ্গলে এক নারীর দেহ পড়ে আছে৷ ডিএনএ পরীক্ষায় জানা গেল দেহটি গ্লোরিয়ার৷ তবে টুকরো টুকরো করা দেহের অনেক অংশই পাওয়া যায়নি৷
ছবি: MAHE ELIPE/REUTERS
নিখোঁজ সংবাদ – ৪
২০১৫ সালের জুলাই মাস৷ মানকি লুগোর জীবনটা কেমন যেন হয়ে গেল ৩৩ বছরের ছেলে হুয়ানকে হারিয়ে৷ ৬৮ বছর বয়সি মানকি ছেলেকে খুঁজতে যোগ দেন স্থানীয় গ্রুপ ‘লা রাস্ত্রেদোরাস দেল ফুয়ের্তে’তে৷ মেক্সিকোয় তো নিখোঁজের মৃতদেহ এক জায়গায় পাওয়া যায় না৷ একদিন কারো আঙুলে বিয়ের আংটি দেখে মানকি ভাবেন এটাই হুয়ান, আরেক জায়গায় গিয়ে দেখেন কারো পড়ে থাকা হাতে হুয়ানের মতোই চাঁদের আকৃতির ট্যাটু৷
ছবি: MAHE ELIPE/REUTERS
বিচারবহির্ভূত হত্যা আর গুমের দেশ মেক্সিকো
গত মে মাসে মেক্সিকোয় নিখোঁজ ব্যক্তিদের সংখ্যা এক লাখ ছাড়ায়৷ তারপরও মায়ের বুক খালি হওয়া কমেনি, বরং পরের চার মাসে বেড়ে এক লাখ ৫৮৭৯ হয়েছে৷ নিখোঁজদের খুঁজে বের করতে মেক্সিকোয় এ মুহূর্তে সক্রিয় রয়েছে কমপক্ষে ১৮০টি গ্রুপ৷ মেক্সিকোয় নিখোঁজের হিড়িক শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালে তখনকার প্রেসিডেন্ট ফেলিপে কালদেরন ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণার পরে৷ সেই থেকে সারা দেশে নিহত হয়েছে প্রায় চার লাখ মানুষ৷
ছবি: MAHE ELIPE/REUTERS
মিরনা মেদিনাদের লড়াই
২০১৪ সালে রবার্তোর সন্ধানে সারা দেশ চষে বেড়াতে বেড়াতে মিরনার মনে হলো সংগঠিত হয়ে কাজ করা দরকার৷ সেই ভাবনা থেকেই গড়া হলো ‘লা রাস্ত্রেদোরাস দেল ফুয়ের্তে’, অর্থাৎ ট্র্যাকার্স অব এল ফুয়ের্তে৷ গত আট বছরে মোট ৪২৩টি মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছে তারা৷ তার মধ্যে মাত্র ২১৮জনের পরিচয় জানা গেছে৷
ছবি: MAHE ELIPE/REUTERS
মারিয়া গনসালেসের প্রতিজ্ঞা
ছোট বোন গ্লোরিয়াকে খুঁজতে বের হয়েই মারিয়া গনসালেস বুঝতে পেরেছিলেন শুধু মৃতদেহ খুঁজে বের করলে হবে না, নিহতদের পক্ষে সুবিচার আদায়ের লড়াইটাও করতে হবে৷ ২০১৯ সালে তাই আইনশাস্ত্র পড়তে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান মিরনা৷ আর কয়েক মাস পরই স্নাতকের সনদ পাবেন মিরনা৷ তারপর শুরু হবে মেক্সিকোর লাখো নিহত এবং নিখোঁজের হয়ে তার আইনি লড়াই৷