তালেবানকে জাতিসংঘের শীর্ষ নারী কর্মকর্তাদের বার্তা
২১ জানুয়ারি ২০২৩
জাতিসংঘের উপমহাসচিব আমিনা মোহাম্মেদের নেতৃত্বে একটি দল এ সপ্তাহে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন৷ তাদের বার্তা পরিষ্কার- নারী অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে৷
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে জাতিসংঘের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে তালেবানের অধীনে নারী অধিকারের ওপর নেমে আসা খড়গ উঠিয়ে নিতে তালেবানের সঙ্গে জাতিসংঘের দুই শীর্ষ নারী কর্মকর্তার কথাবার্তা এগিয়েছে৷
চারদিনের সফরে এ সপ্তাহে জাতিসংঘের উপমহাসচিব আমিনা মোহাম্মেদ ও ইউএন ওমেনের নির্বাহী পরিচালক সিমা বাহুস আফগানিস্তানে যান৷ তাদের সঙ্গে আরো ছিলেন জাতিসংঘের রাজনীতি, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও প্রক্রিয়া বিষয়ক সহযোগী মহাসচিব খালেদ খিয়ারি৷ শুক্রবার শেষ হওয়া এই সফরে তারা রাজধানী কাবুল ও দক্ষিণাঞ্চলের শহর কান্দাহারে তালেবানের সঙ্গে বৈঠক করেন৷
এক বিবৃতিতে আমিনা মোহাম্মেদ জানান, তালেবান শাসকদের প্রতি তার বক্তব্য ছিল স্পষ্ট৷ সেটি হল, নারীদের শিক্ষা ও কাজ করার অধিকারের ওপর নতুর যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তাতে তারা নিজ ঘরে বন্দী ও অধিকারহীন হয়ে আছেন৷
আমিনা কান্দাহারের ডেপুটি গভর্নর মৌলভি হায়াতুল্লাহ মুবারকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন৷ গভর্নরের তথ্য অফিস পরে বিবৃতিতে জানায়, তালেবান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আরো গভীর সম্পর্ক চায়৷ তারা চায়, তাদের নেতৃত্বের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হোক৷
এ বিষয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, জাতিসংঘের এই দলটির সঙ্গে তালেবানের সহযোগিতামূলক আলোচনা হয়েছে৷ তারা কথাবার্তা এগুনোর ইঙ্গিতও পেয়েছেন৷ তিনি বলেন, তালেবানের মধ্যে বেশ কয়েকটি নেতৃত্ব কাজ করছে৷ জাতিসংঘের দলটি এদের সবাইকে এক জায়গায় আনার চেষ্টা করেছেন৷
জেডএ/এআই (রয়টার্স, এএফপি, এপি)
‘অধিকারহীন’ অসহায় আফগান নারীরা
২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তানের নারীদের নানা অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে তালেবান৷ সম্প্রতি নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অধিকারও কেড়ে নিয়েছে তারা৷
ছবি: AFP
বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ
বোরকা পরা এক নারী কান্দাহারের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসছেন৷ গত বুধবার, এক বিবৃতিতে আফগানিস্তানের সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের নিষিদ্ধ করে তালেবান সরকার৷ এরপর থেকে নারীদের আর শ্রেণিকক্ষে যেতে দেওয়া হচ্ছে না৷
ছবি: AFP
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক নিয়ন্ত্রণ
বিবৃতি দেওয়ার পর কাবুলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক নিয়ন্ত্রণ করছে তালেবান৷ কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ হয়েছে৷ পুরুষ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে গেছেন৷ আর কিছু পুরুষ শিক্ষক ধর্মঘট করছেন বলে জানা গেছে৷
ছবি: WAKIL KOHSAR/AFP/Getty Images
নিষেধাজ্ঞা আগে থেকেই
নারীদের বিষয়ে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা অবশ্য আগে থেকেই জারি ছিল৷ যেমন, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ এবং প্রবেশপথ নারী পুরুষের জন্য আলাদা করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
‘ভবিষ্যতের উপর মারাত্মক প্রভাব’
গত অক্টোবর মাসে হাজার হাজার নারী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল৷ কিন্তু নতুন এই নিষেধাজ্ঞার কারণে অনিশ্চয়তায় তারা৷ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘‘নারীদের উচ্চশিক্ষার উপর দেওয়া এই নিষেধাজ্ঞা শুধু মানবাধিকারের লঙ্ঘনই নয়, এমন পদক্ষেপ দেশের ভবিষ্যতের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে৷’’
ছবি: WAKIL KOHSAR/AFP/Getty Images
একা একা দূরে নয়
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বরের এক নির্দেশনা অনুযায়ী, আফগানিস্তানের নারীরা ৭২ কিলোমিটারের (৪৫ মাইল) চেয়ে বেশি দূরে একা যেতে পারবেন না৷ যেতে হলে সঙ্গে কোনো পুরুষকে রাখতে হবে৷তালেবান মিনিস্ট্রি ফর প্রোপাগেশন অফ ভার্চু অ্যান্ড দ্য প্রিভেনশনস অব ভাইস এক নির্দেশনায় কোনো চালক যাতে কখনো একা দূরে যেতে আগ্রহী নারীকে গাড়িতে না তোলেন সেই কথাও বলা হয়েছে৷
ছবি: Sayed Khodaiberdi Sadat/AA/picture alliance
টেলিভিশনে, মুভিতে চেহারা দেখানো যাবে না
টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে নারীদের চেহারা দেখানোও সীমিত করেছে তালেবান৷ এই নির্দেশের ফলে কোনো নারী আর টিভি শো, নাটক বা চলচ্চিত্রে অংশ নিতে পারেন না৷ বিশেষ ক্ষেত্রে অংশ নিলেও নারীকে অবশ্যই হিজাব পরতে হয়৷এক প্রতিবেদনে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স জানিয়েছে, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর অনেক নারীই মিডিয়া ছেড়েছেন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Ariana News
নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় অবলুপ্ত
২০০১ সালে নারীদের জন্য আলাদা একটি মন্ত্রণালয় খুলেছিল তখনকার সরকার৷২০২১ সালে ক্ষমতায় এসে সেই মন্ত্ণালয় বন্ধ করেছে তালেবান৷ ওপরের ছবিতে কাবুলের এক বেকারির সামনে দরিদ্র নারীদের মধ্যে রুটি বিতরণের দৃশ্য৷ রুটি দিচ্ছেন এক সাধারণ নাগরিক৷
ছবি: Petros Giannakouris/AP/picture alliance
‘বিশ্ববিবেকের জন্য লজ্জা’
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নারীদের উপর এমন নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকে তালেবান৷ তবে তালেবানের এই নিষেধাজ্ঞায় প্রতিবাদে পিছপা হননি অনেকেই৷ গত নভেম্বরে নিজেরদের এই অবস্থা বিশ্বকে জানাতে এভাবেই প্রতিবাদে শামিল হন নারীরা৷ সেখানে এক নারীকে ইংরেজিতে লেখা ‘আফগান নারীদের ভয়াবহ অবস্থা বিশ্ববিবেকের জন্য লজ্জা’ প্লেকার্ড নিয়ে প্রতিবাদে অংশ নেন৷
ছবি: AFP
চেষ্টা করছে কেউ কেউ
তালেবানের শাসনে থাকা আফগানিস্তানের তরুণীরা শুধুমাত্র ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পায়৷ তবে এই ছবির তরুণীরা ভাগ্যবান৷ তালেবানের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ কম এমন কিছু প্রদেশে অবশ্য নারীরা নিষেধাজ্ঞা মানছে না৷