২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তালেবানদের হাতে দ্বিতীয় প্রাদেশিক রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে আফগান কর্তৃপক্ষ৷ এদিকে কাবুলে সরকারের উচ্চপদস্থ তথ্য কর্মকর্তাকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে গোষ্ঠীটি৷
বিজ্ঞাপন
নিজেদের নাগরিকদের অবিলম্বে আফগানিস্তান ত্যগের নির্দেশনা দিয়েছে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র সরকার৷
শনিবার আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের জজযান প্রদেশের শেবেরঘান শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবানরা৷ সেখানকার ডেপুটি গভর্নর কাদের মালিয়া বার্তা সংস্থা এএফপিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন৷ তিনি বলেন, সরকারি বাহিনীর সদস্যরা ও কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছেন৷
এর আগে শুক্রবার তালেবানদের হাতে প্রথম প্রাদেশিক রাজধানী নিমরোজের জারাঞ্জ শহরের পতন হয়৷ শহরটি দখলে নেয়ার পরই স্থানীয় কারগারের ফটক খুলে দেয় তালেবানরা৷ এর ফলে বন্দি তালেবানদের সঙ্গে সাধারণ অপরাধীরাও জেলখানা থেকে বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা৷ টুইটারে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে সরকারি কার্যালয়ে লুটতরাজের চিত্র দেখা গেছে বলে জানিয়েছে এএফপি৷ যদিও তাৎক্ষণিকভাবে ভিডিওর সত্যতা তারা যাচাই করতে পারেনি৷
তথ্য কর্মকর্তাকে হত্যা
এদিকে শনিবার সরকারের ইনফরমেশন মিডিয়া সেন্টারের পরিচালক দাওয়া খান মেনাপেলেকে হত্যা করেছে তালেবানরা৷ এর দায় স্বীকার করে তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, ‘কাজের শাস্তি হিসেবে বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে’ তাকে হত্যা করা হয়েছে৷
আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মিরওয়াইস স্টানিকজাই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘‘বর্বর সন্ত্রাসীরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে আরো একবার তাদের কাপুরুষোচিত কর্মকাণ্ড দেখালো এবং আরো একজন দেশপ্রেমিক আফগানকে হত্যা করল৷’’
যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন৷ এটিকে আফগানিস্তানের মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার উপর আঘাত বলে অভিহিত করেন তিনি৷
আফগানিস্তান যুদ্ধ: কজন মারা গেলেন, খরচ কত হলো?
প্রায় ২০ বছর পর আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ হতে যাচ্ছে৷ এই সময়ে কোন পক্ষের কতজন প্রাণ হারিয়েছেন, খরচ কত হয়েছে তার খবর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ও ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তথ্যের উৎস
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুলের অধ্যাপক লিন্ডা বিলমেস ও ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কস্টস অফ ওয়ার প্রজেক্টের’ তথ্য ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, এপি৷ ২০০৩ থেকে ২০১১ পর্যন্ত আফগানিস্তানের পাশাপাশি ইরাকেও যুদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এই সময়ে অনেক মার্কিন সেনা দুই দেশেই যুদ্ধ করেছেন৷ ফলে এপির দেয়া কিছু তথ্যে দুটি যুদ্ধেরই পরিসংখ্যান আছে৷
ছবি: AP
যুদ্ধের শুরু
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার এক সপ্তাহ পর ১৮ সেপ্টেম্বর মার্কিন কংগ্রেস হামলাকারীদের বিরুদ্ধে লড়তে মার্কিন বাহিনীকে অনুমতি দিয়েছিল৷ প্রায় ২০ বছর পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রাণহানি
২০০১ সালে আফগান যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মারা গেছেন এক লাখ ৭২ হাজার ৩৯০ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন ও পশ্চিমা বাহিনীতে প্রাণহানি
যুদ্ধে মারা যাওয়া মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা দুই হাজার ৪৪৮ জন৷ এছাড়া মার্কিন কন্ট্রাক্টর মারা গেছেন তিন হাজার ৮৪৬ জন৷ যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আফগানিস্তানে যুদ্ধ করা ন্যাটো ও অন্যান্য দেশের এক হাজার ১৪৪ জন ব্যক্তিও মারা গেছেন৷
ছবি: AFP/T. Watkins
আফগান নাগরিকের মৃত্যু
যুদ্ধে আফগানিস্তানের সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর প্রায় ৬৬ হাজার সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন৷ সাধারণ নাগরিক মারা গেছেন ৪৭ হাজার ২৪৫ জন৷ তালেবান ও অন্যান্য বিরোধী যোদ্ধা মারা গেছেন ৫১ হাজার ১৯১ জন৷
ছবি: Rahmat Gul/AP Photo/picture alliance
ত্রাণকর্মী ও সাংবাদিক
আফগান যুদ্ধে ৪৪৪ জন ত্রাণকর্মী ও ৭২ জন সাংবাদিকও মারা গেছেন৷
ছবি: Reuters
খরচ
২০২০ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র আনুমানিক প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছে৷ বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি প্রায় ১৬৯ লাখ ৫৪ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা৷
ছবি: Getty Images/A. Renneisen
খরচ আরো আছে, থাকবে
যুদ্ধে খরচের জন্য দুই ট্রিলিয়ন ডলার জোগাড় করতে যে ঋণ নেয়া হয়েছে তার সুদ হিসেবে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ৯২৫ বিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছে৷ ২০৩০ সালে সুদের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে দুই ট্রিলিয়ন ডলারে, যা যুদ্ধে খরচের সমপরিমাণ৷ খরচ সেখানেই থামবে না৷ ২০৫০ সাল নাগাদ সুদের পরিমাণ হতে পারে সাড়ে ছয় ট্রিলিয়ন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File/Lt. Col.. Leslie Pratt, US Air Force
সেনাদের দেখভালের খরচ
যুদ্ধ শেষ হলেও খরচ শেষ হচ্ছে না, হবে না৷ আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে অংশ নেয়া প্রায় ৪০ লাখ সেনাকে আজীবন দেখভাল করতে হবে৷ এতে প্রায় ১.৬ থেকে ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে বলে জানিয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিন্ডা বিলমেস৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
আফগান যুদ্ধের খরচ নিয়ে কম আগ্রহ
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সিনেট অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন্স ডিফেন্স সাবকমিটি’ ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় তার খরচ নিয়ে ৪২ বার আলোচনা করেছে৷ একই কমিটি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের খরচ নিয়ে আলোচনা করেছে মাত্র পাঁচবার৷ আর সিনেটের ফাইন্যান্স কমিটি আলোচনা করেছে মাত্র একবার৷
ছবি: PATRICK BAZ/AFP/Getty Images
10 ছবি1 | 10
নাগরিকদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন
এর আগে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতেও বোমা ও বন্দুক হামলা চালিয়েছিল তালেবানরা৷ সব মিলিয়ে গত মে থেকে শুরু করে আফগানিস্তানের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ এখন তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন শনিবার তাদের নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব আফগানিস্তান ত্যাগ করতে বলেছে৷ ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, আন্তর্জাতিক সৈন্য তুলে নেয়ার প্রেক্ষিতে ‘সন্ত্রাসীরা (আফগানিস্তানে) হামলা চালানোর শঙ্কা রয়েছে’৷ এক্ষেত্রে দেশজুড়ে অপহরণের হুমকি রয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে৷
চলতি মাসের শেষ নাগাদ আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার শেষ হওয়ার কথা৷
এফএস/এআই (এএফপি, এপি, রয়টার্স)
'আফগানিস্তানে পরাজিত অ্যামেরিকা'
পরাজয় স্বীকার করছেন আফগানিস্তানে লড়াই করা মার্কিন সেনা অফিসাররাই। তুলনা টানছেন ভিয়েতনামের।
ছবি: Goran Tomasevic/REUTERS
বিশ বছরের যুদ্ধ
৯/১১ হামলার পরে আফগানিস্তানে প্রথম সেনা পাঠান তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ। জানিয়েছিলেন, এ হলো সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই।
ছবি: picture-alliance/dpa
লাদেন কোথায়
আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বার করতেই বহু বছর সময় লেগে গেছে মার্কিন সেনার। শেষপর্যন্ত পাকিস্তানে তাকে হত্যা করা হয়। আফগানিস্তানে বহু তালেবান নেতার মৃত্যু হয়েছে মার্কিন সেনার হাতে।
ছবি: picture-alliance/dpa/Ausaf
মৃত্যুমিছিল সর্বত্র
গত প্রায় বিশ বছরে শুধু আফগানিস্তানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ন্যাটো বাহিনীর মৃত্যু হয়েছে। যার অধিকাংশই মার্কিন। ৪৭ হাজার আফগান নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। ৬৬ হাজার আফগান সেনা মারা গেছেন। লাখ লাখ আফগান দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
ছবি: Getty Images/AFP//N. Noorullha
বর্তমান পরিস্থিতি
কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা। যুদ্ধের চিহ্ন সর্বত্র। আর্থ-সামাজিক দিক থেকেও দেশটির অবস্থা ভয়াবহ।
ছবি: picture-alliance/dpa
বাইডেনের বক্তব্য
এতদিন যুদ্ধের পর বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, আর যুদ্ধ নয়, অগাস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সমস্ত সেনা ফেরত আনা হবে। আফগানিস্তানের দায়িত্ব অ্যামেরিকা আর নিতে পারবে না।
ছবি: picture-alliance/dpa
কঠিন বাস্তব
মার্কিন সেনা ফিরতে শুরু করার পরেই ফের আফগানিস্তানের দখল নিতে শুরু করেছে তালেবান। আফগানিস্তান কার্যত গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি।
ছবি: Ashaq Akramy/DW
অ্যামেরিকার হার
আফগানিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করা মার্কিন সেনাদের একাংশ বলছেন, এটা আসলে অ্যামেরিকার হার। বিশ বছরেও যুদ্ধ জয় করতে পারেনি অ্যামেরিকা।
ছবি: Ashaq Akramy/DW
ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা
কেউ কেউ এই হারকে ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা করছেন। তাদের দাবি, ভিয়েতনাম থেকেও শেষ পর্যন্ত মার্কিন সেনাকে ফিরে আসতে হয়েছিল। আফগানিস্তানেও তাই হলো।
ছবি: Ashaq Akramy/DW
লক্ষ্য ছিল না
তাদের দাবি, ভিয়েতনামের মতোই আফগানিস্তানে অ্যামেরিকার কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল না। কিছু নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সার্বিক পরিবর্তন ঘটানো যায়নি।