আফগানিস্তানে তালেবানের জয় বিভিন্ন ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর মনোবল বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ এর ফলে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে নতুন জোট গঠন ও সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বাড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন৷
ছবি: Rahmat Gul/AP/picture alliance
বিজ্ঞাপন
আফগানিস্তানে তালেবানের জয় বিভিন্ন ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর মনোবল বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ এর ফলে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে নতুন জোট গঠন ও সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বাড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন৷
বার্লিনের জার্মান ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাণ্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের গবেষক ও সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ গিডো স্টাইনব্যার্গ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ইসলামিক স্টেট বা আইএস, আল-কায়েদাসহ ছোট ছোট গোষ্ঠীর শক্তি বাড়বে বলে আমরা আশা করতে পারি৷’’
অবশ্য তিনি বলেন, তালেবান ও আল-কায়েদার সঙ্গে আইএস-এর সম্পর্ক ভালো নয়৷ তাই আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় যাওয়ার মানে যে আইএসেরও শক্তি বাড়বে, তেমনটা না-ও হতে পারে৷
তবে তালেবানের জয়ের কারণে জিহাদি, সালাফি ও ইসলামি জঙ্গিদের মনোবল বাড়বে এবং তা সবচেয়ে বড় সমস্যা বলেই মনে করছেন স্টাইনব্যার্গ৷
তালেবানের শীর্ষ নেতা কারা?
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরে যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে পুরো দেশ দখল করে নিয়েছে তালেবান৷ ১৯৯৪ সালে গঠিত তালেবানের বর্তমান শীর্ষ নেতাদের পরিচয় জানা যাবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Gulabuddin Amiri/AP/picture alliance
হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা
তালেবানের সুপ্রিম নেতা আখুন্দজাদা এই গোষ্ঠীর রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সর্বোচ্চ ব্যক্তি৷ ২০১৬ সালে তার পূর্বসূরী আখতার মনসুর মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর দায়িত্ব পান আখুন্দজাদা৷ পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুচলাক শহরের এক মসজিদে তিনি প্রায় ১৫ বছর শিক্ষকতা ও ধর্মপ্রচারের কাজ করেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স৷ তার বয়স প্রায় ৬০ বলে মনে করা হয়৷
ছবি: Imago/Xinhua
মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে তিনি৷ তালেবানের সামরিক অভিযানের দায়িত্বে আছেন ইয়াকুব৷ ২০১৬ সালে আখতার মনসুর নিহত হওয়ার পর ইয়াকুবকে তালেবানের দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা কম এবং বয়স কম হওয়ায় ইয়াকুব নেতা হিসেবে আখুন্দজাদার নাম প্রস্তাব করেন৷ ইয়াকুবের বয়স ৩০-এর ঘরে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Gulabuddin Amiri/AP/picture alliance
সিরাজুদ্দীন হাক্কানি
হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান৷ পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে তালেবানের আর্থিক ও সামরিক সম্পদ দেখাশোনা করে এই গোষ্ঠী৷ আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলার চল এই গোষ্ঠী শুরু করে বলে মনে করা হয়৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে হত্যার চেষ্টা, ভারতীয় দূতাবাসে আত্মঘাতী হামলার জন্য হাক্কানি নেটওয়ার্ককে দায়ী করা হয়৷ হাক্কানির বয়স ৪০-এর ঘরে শেষ থেকে ৫০-এর ঘরে শুরু পর্যন্ত বলে মনে করা হয়৷
ছবি: FBI/REUTERS
মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার
তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বারাদার এই গোষ্ঠীর রাজনীতি বিভাগের প্রধান৷ কাতারের দোহায় আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে যে আলোচনা চলছিল, সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিনি৷ তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কর্ম ছিলেন বারাদার৷ ২০১০ সালে পাকিস্তানের করাচিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ ২০১৮ সালে তিনি ছাড়া পান৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/REUTERS
শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানেকজাই
তালেবান যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তিনি উপমন্ত্রী ছিলেন৷ এরপর প্রায় এক দশক তিনি কাতারের দোহায় বাস করেন৷ ২০১৫ সালে তাকে দোহার রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান করা হয়৷ সাম্প্রতিক সময়ে আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যকার আলোচনায় তিনি উপস্থিত ছিলেন৷ এছাড়া বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক সফরে তালেবানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন স্তানেকজাই৷
ছবি: Sefa Karacan/AA/picture alliance
আব্দুল হাকিম হাক্কানি
তাকে তালেবানের বর্তমান সুপ্রিম নেতা আখুন্দজাদার সবচেয়ে বিশ্বস্ত মনে করা হয়৷ তিনি তালেবানের সাবেক ছায়া প্রধান বিচারপতি৷ বর্তমানে তিনি এই গোষ্ঠীর ধর্মীয় পণ্ডিতদের প্রভাবশালী সংগঠনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন৷ আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়া তালেবানের প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন হাক্কানি৷ উপরের ছবিটি ২০০৫ সালের৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
6 ছবি1 | 6
নতুন জোট
ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর কাউন্টারটেররিজমঅ্যাণ্ড ইন্টেলিজেন্স স্টাডিজের সন্ত্রাসবাদ গবেষক জসিম মোহাম্মদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ভবিষ্যতে বিভিন্ন ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর মধ্যে জোট গড়ে উঠতে পারে এবং এভাবে তারা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে৷ ‘‘ইয়েমেনে আল-কায়েদা ও আইএস নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়াবে না বলে ইতিমধ্যে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করেছে৷’’
আফগানিস্তানে তালেবানও আল-কায়েদার মধ্যেও এমন ‘সমঝোতা' হয়েছে বলে জানান জসিম মোহাম্মদ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘কিছু মানুষ মনে করতে পারেন যে, আল-কায়েদা গত ১০ বছরে কিংবা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর আফগানিস্তানে বেশি সক্রিয় ছিল না, কিন্তু নথিপত্র ও তদন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, তালেবান ও আল-কায়েদার মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং তালেবানকে সমর্থন করছে আল-কায়েদা৷''
তিনি মনে করছেন, ভবিষ্যতে ইসলামি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এমন ‘শান্তি চুক্তি' আরো হবে৷ ‘‘সামনে হয়ত তালেবানের সঙ্গে আইএস-এর চুক্তি হতে পারে৷ এর আওতায় আইএস হয়ত আফগানিস্তানের ভেতরে কার্যক্রম না চালিয়ে আফগানিস্তানের বাইরে সক্রিয় থাকতে পারে৷’’
বিভিন্ন দেশে তালেবানের বিরুদ্ধে সমাবেশ
আফগানিস্তানে ফিরে এসেছে তালেবান৷ সে দেশে তালেবানবিরোধীদের কী হবে, নারীদের কী হবে এ নিয়ে্ উদ্বেগ বাড়ছে৷ বিরোধীদের এক মিছিলে ইতোমধ্যে গুলি চালিয়েছে তালেবান৷ অন্যদিকে বিভিন্ন দেশে চলছে তালেবান-বিরোধী সমাবেশ...
ছবি: Johanna Geron/REUTERS
লস এঞ্জেলেস, যুক্তরাষ্ট্র
লস এঞ্জেলেসে তালেবানের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সমাবেশ হয় গত ১৭ আগস্ট৷ ক্রন্দনরত এক নারীকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷
ছবি: Ringo Chiu/REUTERS
নতুন দিল্লি, ভারত
নতুন দিল্রিতে এক সমাবেশে আফগান শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়৷ সমাবেশে এক ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে পড়েন৷ ওপরের ছবিতে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মুহূর্ত৷ ১৮ আগস্টের ছবি৷
ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS
বার্লিন, জার্মানি
জার্মানির রাজধানীতে আয়োজিত সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের মূল দাবি ছিল- তালেবানদের হাত থেকে বাঁচতে যেসব আফগান দেশ ছাড়তে চাচ্ছেন, তাদের দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হোক৷
ছবি: Christian Mang/REUTERS
বার্সেলোনা, স্পেন
গত ১৭ আগস্ট বার্সেলোনার সমাবেশ থেকে ওঠে বিশেষ করে আফগান নারী ও শিশুদের তালেবানের কবল থেকে রক্ষার জোর দাবি৷
ছবি: Nacho Doce/REUTERS
ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
ক্যালিফোর্নিয়ার সমাবেশে উপস্থিত হয়েও স্বদেশে অবস্থানরত স্বজনদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রবাসী আফগানেরা৷ তারা মনে করেন, তালেবানের শাসনে ভিন্নমতাবলম্বীদের জীবন বিপন্ন হবে৷ ওপরের ছবিতে সমাবেশের একাংশ৷
ছবি: Ringo Chiu/REUTERS
হেলসিঙ্কি, ফিনল্যান্ড
হেলসিঙ্কি ক্যাথেড্রালের সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে আফগান জনগণের জন্য নিরাপদ জীবন কামনা করা হয়৷
ছবি: Markku Ulander/Lehtikuva/REUTERS
ব্রাসেলস, বেলজিয়াম
ব্রাসেলসে তালেবান-বিরোধী মিছিল৷ ১৮ আগস্টের ছবি৷
ছবি: Johanna Geron/REUTERS
লন্ডন, ব্রিটেন
লন্ডনে তালেবান-বিরোধী সমাবেশটি হয় পার্লামেন্ট স্কয়ারে৷ সমাবেশে অংশ নেয়া এক নারীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘আফগানিস্তানকে রক্ষা করো৷’’ ১৮ আগস্টের ছবি৷
ছবি: Hannah McKay/REUTERS
লেসবস, গ্রিস
গ্রিসের লেসবসে অনুষ্ঠিত তালেবান-বিরোধী সমাবেশ থেকেও আফগান শরণার্থীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া এবং সন্ত্রাসী সংগঠনটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়৷
ছবি: Elias Marcou/REUTERS
ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র
ওয়াশিংটনের সমাবেশটি হয় একেবারে হোয়াইট হাউসের সামনে৷ সেখানে আফগানিস্তানে হত্যা বন্ধের দাবি তোলেন তালেবান-বিরোধীরা৷
ছবি: Ken Cedeno/REUTERS
10 ছবি1 | 10
নতুন প্রজন্ম
স্টাইনব্যার্গ বলছেন, অতীতে আইএস, তালেবান ও আল-কায়েদার নেতারা একে অপরকে শত্রু মনে করতেন৷ তারা নিহত হওয়ার পর এখন যে নতুন নেতারা এসেছেন তারা পুরনো নেতাদের মতো না ভেবে নিজেরা মিলেমিশে থাকতে চাইতে পারেন৷