‘তালেবানের ডাকে সাড়া দিয়েছে বাংলাদেশের কিছু মানুষ’
১৪ আগস্ট ২০২১
আফগানিস্তানে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে তালেবানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের কিছু মানুষ ‘ঘর ছেড়েছে’ বলে জানিয়েছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম৷
বিজ্ঞাপন
জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে শনিবার ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তাদের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে৷
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘এখন পৃথিবী সাইবার নির্ভরশীল৷ এই মাধ্যম ব্যবহার করে জঙ্গিরা তাদের সব ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে, কর্মী সংগ্রহ করছে৷’’ তিনি জানান, তালেবানদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কিছু মানুষ পায়ে হেঁটে আফগানিস্তানে পৌঁছার চেষ্টা করছে৷ কিছু ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছে৷ ‘‘জঙ্গিদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সকল গোয়েন্দা সংস্থা তৎপর রয়েছে৷ কঠোর নজরদারি রয়েছে। আমরাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যাতে কোনো ধরনের ঘটনা না ঘটে,’’ বলেন তিনি৷
নিজ দেশেই শরণার্থী আফগানরা
দ্রুত রাজধানী কাবুলের দিকে এগোচ্ছে তালেবান৷ এক সপ্তাহেই দেশটির বেশ কয়েকটি প্রাদেশিক রাজধানীর পতন ঘটেছে৷ বিভিন্ন স্থানে আফগান সৈন্যদের সঙ্গে চলছে তালেবানের তুমুল লড়াই৷ সংঘর্ষ থেকে বাঁচতে রাজধানীতে পালাচ্ছেন অনেকে৷
ছবি: REUTERS
এগিয়ে আসছে তালেবান
কুন্দুজ প্রদেশের রাজধানী আগেই দখল করেছিল তালেবান৷ কিন্তু বিমানবন্দরটির দখল নিতে পারছিল না সশস্ত্র গোষ্ঠীটি৷ এবার সেটিরও দখল গেল তালেবানের হাতে৷ বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আফগান ন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যরা তালেবানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম৷
ছবি: REUTERS
এক সপ্তাহে নয়টি প্রদেশ
গত এক সপ্তাহে নিজেদের আক্রমণ আরো শাণিত করেছে তালেবান৷ এই এক সপ্তাহেই দেশটির নয়টি প্রদেশের রাজধানী দখল করেছে তারা৷ বুধবার তাজিকিস্তান সীমান্তবর্তী বাদাখশান প্রদেশের রাজধানী ফয়জাবাদ সিটির নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে তারা৷
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
স্থানীয়রা সংকটে
তুমুল লড়াই ছড়িয়ে পড়ায় অনেক আফগান নিজেদের এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছেন৷ বেশিরভাগ এলাকা তালেবান আক্রান্ত হওয়ায় তাদের অনেকের শেষ ভরসা রাজধানী কাবুল৷
ছবি: REUTERS
নিজ দেশে শরণার্থী
গত কয়েকদিনে আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ায় হাজার হাজার আফগান আশ্রয় নিয়েছেন কাবুলে৷ তাদের অনেককেই অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়া হয়েছে কাবুলের বিভিন্ন পাবলিক পার্কে৷
ছবি: REUTERS
মানবিক বিপর্যয়
ভিটেমাটি থেকে অনেকেই এক কাপড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন৷ পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অনেকে জীবনের সমস্ত সঞ্চয় পেছনে ফেলে এসেছেন৷ কেউ কেউ রাতে ঘুমানোর জন্য মাথাগোঁজার ঠাঁই হিসাবে ছোট তাঁবু পেলেও অনেক পরিবারের শিশু ও নারীদেরও রাত কাটাতে হচ্ছে খোলা আকাশের নীচে৷
ছবি: REUTERS
খাদ্যসংকট
রাজধানীতে পুরো দেশ থেকে হাজার হাজার শরণার্থী জড়ো হওয়ায় আবাসন সংকটের পাশাপাশি খাবার সংকটও দেখা দিয়েছে৷ বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী ও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলেও তাতে বিপুল পরিমাণ চাপ সামলানো সম্ভব হচ্ছে না৷
ছবি: REUTERS
চিকিৎসা সেবা
সংঘর্ষ চলতে থাকা এলাকা থেকে পালিয়ে আসা অনেকেই আহত৷ বেশ কিছু শিশুও গোলা ও বোমার আঘাতে আহত অবস্থায় কাবুলে এসেছে৷ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান তাদের জন্য কাবুলের পার্কে অস্থায়ী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছে৷
ছবি: REUTERS
মাজার-ই-শরীফে গনি
তালেবানের হাতে যখন একের পর এক প্রদেশের পতন ঘটছে, তখনই উত্তরের বিভিন্ন প্রদেশের পরিস্থিতি দেখতে মাজার-ই-শরীফ সফরে গেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি৷ স্থানীয় বিমানবন্দরে নামার পর রাজনীতিবিদ ও আফগান সেনা কমান্ডাররা তাকে সবশেষ পরিস্থিতির বিষয়ে অবগত করেন৷
ছবি: REUTERS
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
কবে শান্তি ফিরবে, কবে নিজের ঘরে ফিরতে পারবেন, কিছুই জানা নেই৷ অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায়ও খোলা নেই তাদের সামনে৷ পরবর্তী প্রজন্মকে যুদ্ধের সহিংসতা থেকে রক্ষাই প্রথম উদ্দেশ্য৷
ছবি: REUTERS
9 ছবি1 | 9
এদিকে আফগানিস্তানে তালেবানরা একের পর এক শহর দখল করে নিচ্ছে৷ পৌঁছে গেছে রাজধানী কাবুলের কাছেও৷ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের শহর মাজার-ই-শরীফে তারা আক্রমণ করেছে৷ কাবুল থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দক্ষিণে লোগার প্রদেশে পুরোটাই তারা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার আইন প্রণেতা হোমা আহমাদি৷ দক্ষিণের শহর কান্দাহারের প্রধান রেডিও স্টেশন দখল করার একটি ভিডিও ছেড়েছে তালেবান৷
এদিকে শনিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি বলেছেন আফগানিস্তানে শান্তি নিশ্চিত করতে তিনি সরকারের জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ, রাজনৈতিক নেতা, নাগরিক প্রতিনিধি এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন৷
এফএস, এডিকে (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, রয়টার্স)
আফগানিস্তান যুদ্ধ: কজন মারা গেলেন, খরচ কত হলো?
প্রায় ২০ বছর পর আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ হতে যাচ্ছে৷ এই সময়ে কোন পক্ষের কতজন প্রাণ হারিয়েছেন, খরচ কত হয়েছে তার খবর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ও ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তথ্যের উৎস
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুলের অধ্যাপক লিন্ডা বিলমেস ও ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কস্টস অফ ওয়ার প্রজেক্টের’ তথ্য ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, এপি৷ ২০০৩ থেকে ২০১১ পর্যন্ত আফগানিস্তানের পাশাপাশি ইরাকেও যুদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এই সময়ে অনেক মার্কিন সেনা দুই দেশেই যুদ্ধ করেছেন৷ ফলে এপির দেয়া কিছু তথ্যে দুটি যুদ্ধেরই পরিসংখ্যান আছে৷
ছবি: AP
যুদ্ধের শুরু
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার এক সপ্তাহ পর ১৮ সেপ্টেম্বর মার্কিন কংগ্রেস হামলাকারীদের বিরুদ্ধে লড়তে মার্কিন বাহিনীকে অনুমতি দিয়েছিল৷ প্রায় ২০ বছর পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রাণহানি
২০০১ সালে আফগান যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মারা গেছেন এক লাখ ৭২ হাজার ৩৯০ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন ও পশ্চিমা বাহিনীতে প্রাণহানি
যুদ্ধে মারা যাওয়া মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা দুই হাজার ৪৪৮ জন৷ এছাড়া মার্কিন কন্ট্রাক্টর মারা গেছেন তিন হাজার ৮৪৬ জন৷ যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আফগানিস্তানে যুদ্ধ করা ন্যাটো ও অন্যান্য দেশের এক হাজার ১৪৪ জন ব্যক্তিও মারা গেছেন৷
ছবি: AFP/T. Watkins
আফগান নাগরিকের মৃত্যু
যুদ্ধে আফগানিস্তানের সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর প্রায় ৬৬ হাজার সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন৷ সাধারণ নাগরিক মারা গেছেন ৪৭ হাজার ২৪৫ জন৷ তালেবান ও অন্যান্য বিরোধী যোদ্ধা মারা গেছেন ৫১ হাজার ১৯১ জন৷
ছবি: Rahmat Gul/AP Photo/picture alliance
ত্রাণকর্মী ও সাংবাদিক
আফগান যুদ্ধে ৪৪৪ জন ত্রাণকর্মী ও ৭২ জন সাংবাদিকও মারা গেছেন৷
ছবি: Reuters
খরচ
২০২০ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র আনুমানিক প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছে৷ বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি প্রায় ১৬৯ লাখ ৫৪ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা৷
ছবি: Getty Images/A. Renneisen
খরচ আরো আছে, থাকবে
যুদ্ধে খরচের জন্য দুই ট্রিলিয়ন ডলার জোগাড় করতে যে ঋণ নেয়া হয়েছে তার সুদ হিসেবে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ৯২৫ বিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছে৷ ২০৩০ সালে সুদের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে দুই ট্রিলিয়ন ডলারে, যা যুদ্ধে খরচের সমপরিমাণ৷ খরচ সেখানেই থামবে না৷ ২০৫০ সাল নাগাদ সুদের পরিমাণ হতে পারে সাড়ে ছয় ট্রিলিয়ন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File/Lt. Col.. Leslie Pratt, US Air Force
সেনাদের দেখভালের খরচ
যুদ্ধ শেষ হলেও খরচ শেষ হচ্ছে না, হবে না৷ আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে অংশ নেয়া প্রায় ৪০ লাখ সেনাকে আজীবন দেখভাল করতে হবে৷ এতে প্রায় ১.৬ থেকে ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে বলে জানিয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিন্ডা বিলমেস৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
আফগান যুদ্ধের খরচ নিয়ে কম আগ্রহ
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সিনেট অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন্স ডিফেন্স সাবকমিটি’ ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় তার খরচ নিয়ে ৪২ বার আলোচনা করেছে৷ একই কমিটি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের খরচ নিয়ে আলোচনা করেছে মাত্র পাঁচবার৷ আর সিনেটের ফাইন্যান্স কমিটি আলোচনা করেছে মাত্র একবার৷