ইরাক আর সিরিয়া থেকে শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তানেও ঢুকে পড়ছে ইসলামিক স্টেট? হালে কালো পোশাক পরা সশস্ত্র লোকদের আনাগোনা দেখে সে আশঙ্কাতেই শঙ্কিত আফগানিস্তানের মানুষ৷ তাঁদের মতে, আইএস জঙ্গিরা তালেবানের চেয়েও ভয়ংকর৷
বিজ্ঞাপন
তালেবানের দেশ বলে পরিচিত আফগানিস্তানের পশ্চমাঞ্চলীয় ফারাহ প্রদেশের খাকি সফেদ জেলার অধিবাসী গোল মোহাম্মদ৷ তিনি নিজে দেখেছেন সে এলাকায় কালো পতাকা হাতে নিয়ে কালো পোশাক পরা কিছু মানুষকে ঘুরে বেড়াতে৷ লোকগুলোকে দেখেই বোঝা যায় তাদের টাকার অভাব নেই৷ অস্ত্র নিয়ে দামি গাড়িতে চড়েই ঘোরাফেরা করে তারা৷ পোশাক এবং পতাকা জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর মতো বলে এবং লোকগুলো তালেবানের ভাষায় কথা বলে না বলে স্থানীয়রা তাদের সন্দেহের নজরেই দেখছেন৷ অবশ্য ভয়ও করছে তাঁদের৷ গোল মোহাম্মদ বললেন, কালো পোশাকের লোকগুলো তাঁর কাছে তালেবানের চেয়েও ভীতিকর, ‘‘ওদের আমরা তালেবানের চেয়েও বেশি ভয় পাই৷ এখনো পর্যন্ত ওদের আমাদের শান্তিতে থাকতে দিয়েছে, তবে কতদিন এ অবস্থা থাকবে কে জানে!''
পশ্চিমের ফারাহ প্রদেশের মতো পূর্বের জাবুল এবং দক্ষিণের হেলমান্দেও দেখা গেছে কালো পোশাকের সন্দেহভাজন মানুষদের৷ আফগানিস্তানের সাবেক পানি ও জ্বালানি মন্ত্রী এবং সমর বিশেষজ্ঞ ইসমাইল খান মনে করেন, সরকারের এখনই বিষয়টির দিকে নজর দেয়া উচিত, ‘‘খাকি জেলায় কিছু বিদেশি এসে নিজেদের দলে লোক সংগ্রহ করছে এবং তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে৷ আমার মনে হয়, আগামী বসন্তের আগেই এখানে যুদ্ধ শুরু হবে৷ সরকারের উচিত আগে থেকেই এমন কিছুর প্রস্তুতি নিয়ে রাখা৷''
আফগানিস্তানে জীবন ও যুদ্ধ
দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের ছবি তুলছেন ইরানের ফটোগ্রাফার মাজিদ সাঈদি৷ ছবিগুলো অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারও এনে দিয়েছে তাঁকে৷ চলুন তাঁর ক্যামেরার চোখে দেখা যাক আফগানিস্তানকে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলনা!
কাবুলে যু্দ্ধাহতদের জন্য তৈরি একটা নকল হাত নিয়ে খেলছে দুই কিশোরী৷ এমন কিছু ছবিই তেহরানের মাজিদ সাঈদিকে এনে দিয়েছে বেশ কিছু পুরস্কার৷
ছবি: Majid Saeedi
ছবিই বলে হাজার কথা
১৬ বছর বয়স থেকে ছবি তুলছেন মাজিদ৷ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কারণে মানবিক বিপর্যয়ের দিকেই তাঁর সমস্ত মনযোগ৷ জার্মানির ডেয়ার স্পিগেল, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের মতো ম্যাগাজিন এবং আন্তর্জাতিক পত্রিকায় ছাপা হয় তাঁর তোলা ছবি৷
ছবি: Majid Saeedi
আফগানিস্তানের শিশুরা
ডিডাব্লিউকে সরবরাহ করা মাজিদের ছবির অনেকগুলোতেই ফুটে উঠেছে আফগান শিশুদের জীবনে যুদ্ধের প্রভাব৷ এ ছবিটি যুদ্ধের কারণে হাত হারানো এক আফগান শিশুর৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদকের অভিশাপ
আফগানিস্তানের খুব বড় এক সমস্যা মাদক৷ বলা হয়ে থাকে বিশ্বের শতকরা ৯০ ভাগ মাদকদ্রব্যই নাকি উৎপন্ন হয় আফগানিস্তানে৷ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম হয় দেশটিতে৷ দেশের অনেক নাগরিক আফিমসেবী৷ জাতিসংঘের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আফগানিস্তানের অন্তত তিন লক্ষ শিশু নিয়মিত আফিম সেবন করে৷
ছবি: Majid Saeedi
রোল কল
কাবুলের এক অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ শুরুর আগে ক্যাডেটদের রোল কল চলছে৷ জার্মান সেনাবাহিনী ‘বুন্ডেসভেয়ার’ আফগান নিরাপত্তাকর্মীদের অনেক আগে থেকেই প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল৷ প্রশিক্ষণের লক্ষ্য, আফগান সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় আত্মনির্ভরশীল করে তোলা৷ ২০১৪ সালের শেষেই অবশ্য আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে জার্মানি৷
ছবি: Majid Saeedi
ভয়ংকর শৈশব
স্কুলে লেখাপড়া করতে যাওয়ার সুযোগ শিশুদের কমই মেলে৷ স্কুলে গেলে নগণ্য কারণেও হতে হয় শিক্ষকের কঠোর শাসনের শিকার৷ তা সহ্য করেও পুরো সময় থাকা হয়না, পরিবারের জন্য টাকা রোজগার করতে আগেভাগেই স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়তে হয় তাদের৷ আফগানিস্তানে শিক্ষার হার খুবই কম৷ ২০১১ সালে জার্মান সরকারের উদ্যোগে একটি তথ্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়েছিল৷ তখন আফগানিস্তানের শতকরা ৭২ ভাগ পুরুষ আর ৯৩ ভাগ নারীই ছিল নিরক্ষর৷
ছবি: Majid Saeedi
বোরখা এবং পুতুল
আফগান নারীরা পুতুল বানাতে শেখার ক্লাসে৷ মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার অর্থায়নে এখানে পুতুল বানাতে শেখানো হয় তাঁদের৷ আফগান নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্যই এ উদ্যোগ৷
ছবি: Majid Saeedi
তালেবানের প্রতিশোধ
২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করার পরই আফগানিস্তানে হামলা চালায় তালেবান৷ প্রতিশোধমূলক সে হামলায় প্রাণ যায় চারজনের, আহত হয়েছিলেন ৩৬ জন৷ ছবিতে দু’জন আহতকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলাধুলা
হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে একটু বিশ্রাম৷ আফগানিস্তানে শরীর চর্চা খুব জনপ্রিয়৷
ছবি: Majid Saeedi
যুদ্ধের আবাদ
গত ৩০টি বছর ভীষণ প্রভাব ফেলেছে আফগানদের জীবনে৷ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় যুদ্ধের প্রভাব৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদ্রাসা
কান্দাহারের মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিশুরা৷
ছবি: Majid Saeedi
হত্যার প্রশিক্ষণ
কুকুরের লড়াইও আফগানিস্তানে খুব জনপ্রিয়৷ কুকুরদের এমনভাবে লড়াই করতে শেখানো হয় যাতে তারা প্রতিপক্ষকে একেবারে মেরে ফেলে৷ কুকুরের জীবনেও যুদ্ধের প্রভাব!
ছবি: Majid Saeedi
12 ছবি1 | 12
আফগানিস্তানের নতুন সরকার বিষয়টিকে মোটেই হালকা করে দেখছে না৷ সম্প্রতি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ আফগানিস্তান সফরে এসেছিলেন৷ তাঁর সঙ্গে বৈঠকের সময় আফগানিস্তানের প্রধান নির্বাহী আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘‘আইএস-এর বিষয়টিকে কম গুরুত্ব দেয়া দু'দেশের জন্যই মারাত্মক ভুল হবে৷ এ বিষয়টিতে দু'দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা আরো বাড়ানো দরকার৷''
তবে এখনো কেউ কেউ মনে করেন যে, দুই তালেবান কমান্ডারের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়ায় একটি অংশ আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাঁদের মতে, আফগানিস্তানের আইএস-এর অভয়ারণ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা খুব কম৷ কিন্তু তাঁদের কথায় স্থানীয়দের মনের আতঙ্ক কাটছে না৷