আফগানিস্তান তালেবানের দখলে। এর প্রভাব কাশ্মীর সমস্যায় পড়বে বলে মনে করছেন একাধিক ভারতীয় বিশেষজ্ঞ।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি কাশ্মীরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন হয়। সেখানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় সেনা বাহিনীর লেফটন্যান্ট জেনারেল ডি পি পাণ্ডে। ১৫ কর্প বা কাশ্মীরের বিশেষ বাহিনী চিনার কর্পের কম্যান্ডিং অফিসার তিনি। স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পাণ্ডে বলেছেন, আফগানিস্তান তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার ফলে কাশ্মীরে তার প্রভাব পড়বে না। কাশ্মীরের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেছে সেনা।
এ বিষয়ে আরো বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিল লেফটন্যান্ট জেনারেলকে। কিন্তু একই কথা বার বার বলেছেন। একইসঙ্গে কাশ্মীরের যুবসমাজকে তিনি বলেছেন,দিকভ্রষ্ট না হয়ে খেলায় আরো বেশি মনোযোগ দিতে। তিনি নিশ্চিত, কাশ্মীরের যুবকরা ভারতকে আরো অনেক সোনা এনে দেবে। প্রশ্ন উঠছে, কাশ্মীরের নিরাপত্তা যদি অটুট থাকে, তাহলে 'দিকভ্রষ্ট' শব্দটি ব্যবহার করলেন কেন সেনার উচ্চপদস্থ অফিসার?
এশিয়ার মানচিত্রের যত রাজনীতি
এক দেশ থেকে আরেক দেশে বদলে যায় একই ভূখণ্ডের মানচিত্র৷ এশিয়ায় কেমন এই মানচিত্রের রাজনীতি, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/AFP/F. J. Brown
সরকারের যত কড়াকড়ি
ভারতের সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, উত্তর ভারতের অভিন্ন অঙ্গ জম্মু ও কাশ্মীর৷ তাই সেদেশের মানচিত্রে পাকিস্তান ও চীন নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকেও ভারতের অংশ হিসাবে দেখানো হয়৷ শুধু তাই নয়, ভারতে সরকার অনুমোদিত নকশা ছাড়া কাশ্মীরের অন্য সব মানচিত্র অবৈধ৷
পাকিস্তান যা বলছে
পাকিস্তানেও কাশ্মীরের মানচিত্র বেশ স্পর্শকাতর একটি বিষয়৷ কিন্তু ভারতের মতো সেখানে গোটা কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ হিসাবে দেখানো হয়না৷ এর বদলে মানচিত্রে কাশ্মীরের কিছু অংশের গায়ে ‘বিতর্কিত অংশ’ বা ‘অনির্দিষ্ট সীমান্ত’ লেখা থাকে৷
সরকারি মানচিত্র কতটা সঠিক?
জাতিসংঘের বৈশ্বিক জিওস্প্যাশিয়াল তথ্যবিষয়ক কমিটির প্রধান টিম ট্রেনর বলেন, ‘‘মানচিত্রের ক্ষমতা অনেক৷ একটি মানচিত্র দেখলেই আমরা ভেবে নিই যে তা আসলে সঠিক তথ্য দিচ্ছে৷’’ তাঁর মতে, মানচিত্র বিশ্বের মানুষের চিন্তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে৷ তিনি আরো বলেন যে, এশিয়ার অনেক দেশের সরকারি মানচিত্রের সাথে সত্যের খুব কমই মিল আছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. J. Brown
দক্ষিণ চীন সাগরের উদাহরণ
২০১৯ সালের ‘এবোমিনেবল’ ছবিতে একটি বিশেষ মানচিত্র দেখানোর ফলে দক্ষিণ চীন সাগরের দখল নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ সেই মানচিত্রে তাইওয়ান ও গোটা দক্ষিণ চীন সাগরকে চীনের অংশ হিসাবে দেখানো হয়৷ যদিও আন্তর্জাতিক মহলে এই অঞ্চলের ওপর মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন্স, ব্রুনেই, ভিয়েতনাম ও তাইওয়ান প্রভৃতি দেশের দাবি রয়েছে৷
মানচিত্র বিশেষজ্ঞ টিম ট্রেনর বলেন, যে কোনো মানচিত্রকে সঠিক ধরে নেবার আগে প্রশ্ন করতে হবে যে সেই মানচিত্রের কাজটা ঠিক কী, আর কারাই বা তৈরি করেছে সেই মানচিত্র৷ তিনি বলেন, ‘‘কোনো মানচিত্রের একটি মাত্র নির্দিষ্ট নকশা থাকতে পারেনা৷’’ তাঁর মতে, ভালো মানচিত্র সেটাই যেখানে তথ্যের সূত্র ও তথ্যপ্রাপ্তির তারিখ দেওয়া থাকে৷ পাশাপাশি, বিতর্কিত সীমান্তের উল্লেখও থাকা উচিত৷
ছবি: Public Domain
অবস্থান অনুযায়ী বদলায় মানচিত্র
বিশ্বের বেশিরভাগ গবেষক ও সাধারণ নাগরিক মানচিত্র বিষয়ে ধারণা পেতে গুগল ম্যাপস বা গুগল আর্থ-এর মতো অ্যাপের ওপর নির্ভর করেন৷ কিন্তু ডয়চে ভেলেকে গুগল জানিয়েছে, অ্যাপ ব্যবহারকারী কোন মানচিত্র দেখতে পাবেন তা তার অবস্থানের ওপর নির্ভর করে৷ যেমন ভারতের বাসিন্দারা ভারত সরকার অনুমোদিত মানচিত্রই দেখতে পান৷ কিন্তু কেন অন্যান্য মানচিত্রের তথ্য দেয়না গুগল, সেবিষয়ে তাঁরা কিছু বলেনি৷
ছবি: Knight-Mozilla-MIT “The Open Internet” Hack Day/opennews.kzhu.io
6 ছবি1 | 6
বাস্তব পরিস্থিতি
সেনা অফিসার যা-ই বলুন, সেনা সূত্রই বলছে, গত কয়েকমাসে কাশ্মীরে উত্তেজনা অনেক বেড়েছে। ভারতীয় সেনা বাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''অন্তত ছয়টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কাশ্মীরে প্রবেশ করেছে। তারা ক্রমাগত নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।'' ৫০ থেকে ৬০ জন 'সন্ত্রাসী' নিয়মিত সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। সেনাকে বিভিন্ন এলাকায় ব্যস্ত রাখছে তারা। কেন ব্যস্ত রাখছে? ই ব্যক্তির মতে, এই সুযোগে সীমান্তে একাধিক লঞ্চপ্যাডে পুনরায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে। গত কয়েকবছরে ওইরকম একাধিক লঞ্চপ্যাড ধ্বংস করেছিল ভারতীয় সেনা।
আরো দুইটি বিষয় নিয়ে সংশয়ে আছে সেনা। গত কয়েকমাসে ৫০ থেকে ৬০ জন কাশ্মীরী যুবক বেপাত্তা হয়েছে। তাদের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, কাজের জন্য বাইরে যাচ্ছে বলে বাড়ি ছেড়েছে ওই যুবকরা। কিন্তু কোনো যোগাযোগের ঠিকানা দিয়ে যায়নি। গত কয়েকবছরে ঘরছাড়ার সংখ্যা কাশ্মীরে অনেকটাই কমেছিল. এবছর ফের তা বাড়ছে। এছাড়া পাকিস্তানের কাশ্মীরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তালেবানের সঙ্গে কাজ করে আসা যোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে, এমন ছবি আছে। ভারতীয় কাশ্মীরেও তা নিয়ে যথেষ্ট আলোড়ন হয়েছে বলে সেনার কাছে খবর আছে। ভারতীয় কাশ্মীরেও তালেবানের আফগান দখল নিয়ে উৎসব হয়েছে।
তালেবানের ১০ প্রতিশ্রুতি
কাবুল নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর ১৭ আগস্ট তালেবানে প্রথম সংবাদ সম্মেলন করে৷ তাদের মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ দিয়েছেন নতুন অনেক প্রতিশ্রুতি৷ তার কয়েকটি থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Rahmat Gul/dpa/AP/picture alliance
কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়
কাবুল দখলে নেয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তালেবান মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ আন্তর্জাতিক পক্ষের সঙ্গে সঙ্গে যেকোন সংঘাত এড়ানোর কথা বলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ কারো প্রতি ইসলামিক এমিরেটের শত্রুতা বা বৈরিতা নেই৷ বৈরিতার অবসান হয়েছে এবং আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই৷ আমরা কোন অভ্যন্তরীন বা বহিরাগত শত্রু চাই না৷’’
ছবি: Rahmat Gul/AP/picture alliance
প্রতিশোধ নেয়া হবে না
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর ভীত সন্ত্রস্ত আফগানরা দেশ ছাড়তে উন্মুখ হয়ে ওঠেন৷ তালেবান মুখপাত্র তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘আমি আমার স্বদেশিদের আশ্বস্ত করতে চাই, অনুবাদক, সামরিক কার্যক্রমের সঙ্গে বা সাধারণ নাগরিক যারাই আছেন না কেন সবাইকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে৷ কারো প্রতি প্রতিশোধমূলক আচরণ করা হবে না৷’’
ছবি: Stringer/REUTERS
বিদেশিদের নিরাপত্তা থাকবে
কাবুলে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে তালেবান মুখপাত্র বলেন, ‘‘দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ প্রথমত, আমরা নিশ্চিত করতে চাই যেসব এলাকায় দূতাবাস আছে সেখানে পুরোপুরি নিরাপত্তা থাকবে৷ সব বিদেশি রাষ্ট্র, প্রতিনিধি, দূতাবাস, মিশন, আন্তর্জাতিক সংস্থা দাতা সংস্থাগুলোকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই তাদের বিপক্ষে আমরা কিছু করতে দিব না৷ আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে৷’’
ছবি: Marc Tessensohn/Bundeswehr/dpa/picture alliance
প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক
‘‘আমি আমাদের প্রতিবেশী দেশি, আঞ্চলিক দেশগুলোকে আশ্বস্ত করতে চাই যে তাদের বিরুদ্ধে বা কোন দেশের ক্ষতিসাধনে আমাদের ভূমি ব্যবহার করতে দেয়া হবে না৷ ... আমরা আন্তর্জাতিক সীমানা ও যোগাযোগকে স্বীকৃতি দেই৷ আমাদের সেভাবেই বিবেচনা করা উচিত যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের কোন সমস্যা নেই,’’ বলেন জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ৷
ছবি: Jafar Khan/AP Photo/picture alliance
নারীদের ‘অধিকার’ দেয়া হবে
সংবাদ সম্মেলন মুজাহিদ বলেন, ‘‘ইসলামিক এমিরেট শরীয়া কাঠামোর আলোকে নারীদের অধিকার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ আমাদের বোন, আমাদের পুরুষরা একই অধিকার ভোগ করবেন৷ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা আমাদের নিয়ম ও নীতির আলোকে কাজ কাজ করতে পারবেন৷ ...আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই নারীদের প্রতি কোন বৈষম্য করা হবে না, তবে অবশ্যই সেটি আমাদের কাঠামোর মধ্যে হবে৷’’
ছবি: Kyodo/picture alliance
গণমাধ্যমে নারীরা কাজ করতে পারবে
সংবাদ সম্মলনে প্রশ্নের জবাবে মুজাহিদ জানান, নতুন সরকারের গঠন হলে তাদের ইসলামিক শরীয়া আইন অনুযায়ী নারীরা গণমাধ্যম থেকে শুরু করে অন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতেও কাজ করতে পারবে৷ তবে দ্রুতই বিষয়টি পরিস্কার করা হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/W. Kohsar
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা
‘‘আমরা গণমাধ্যমকে আশ্বস্ত করতে চাই যে আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক কাঠামোর মধ্যে গণমাধ্যমের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ বেসরকারি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অব্যহত থাকবে৷ তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে৷’’ এমন আশ্বাস দিলেও মুজাহিদ বলেন গণমাধ্যমের কার্যক্রমে ইসলামি মূল্যবোধের প্রতিফলন থাকতে হবে৷ ‘‘গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষ হতে হবে৷...তারা আমাদের কাজের সমালোচনা করতে পারবে যাতে আমরা উন্নতি করতে পারি,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
চোরাচালান, মাদক রোধ
মুজাহিদ সংবাদ সম্মেলনে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা দেশের পুরুষ, নারী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলতে চাই কোন ধরনের মাদক আমরা উৎপাদন করব না৷ কেউ মাদক চোরাচালানে জড়িত থাকবে না৷’’ তবে মাদকমুক্ত আফগানিস্তান গড়তে ও বিকল্প শস্যের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছেও সহায়তা চান৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Press/
অর্থনীতি পুনর্গঠন
দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তালেবান মুখপাত্র বলেন, ‘‘আমরা দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তুলব৷ এজন্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালুর ব্যবস্থা করা হবে৷ ...অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা, বিনির্মাণ ও সমৃদ্ধির জন্য আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ ও অন্য যে সম্পদ আছে তা নিয়ে কাজ করব৷ এজন্য আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করছি যে খুব দ্রুতই পুরো পরিস্থিতি, আমাদের অর্থনীতি আমরা বদলে ফেলতে পারব৷’’
ছবি: AP
সরকারে সব পক্ষ থাকবে
সরকারে সবার অংশগ্রহণমূলক সরকার নিশ্চিত করা হবে উল্লেখ করে মুজাহিদ জানান, ‘‘আফগানিস্তানে একটি শক্তিশালী ইসলামিক সরকার থাকবে৷ নাম কী হবে কিংবা আর কী করা হবে সেটি রাজনৈতিক নেতাদের উপর ছেড়ে দিচ্ছি আমরা৷ তারা এ নিয়ে জরুরিভিত্তিতে আলোচনা করছেন৷ কিন্তু একটা বিষয় নিশ্চিত যে আমাদের মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে একটি ইসলামিক ও শক্তিশালী সরকার গঠন করা হবে এবং আমাদের নাগরিকদের মূল্যবোধ বা স্বার্থবিরোধী হবে না৷’’
ছবি: Rahmat Gul/AP Photo/picture alliance
10 ছবি1 | 10
অতীত স্মৃতি
ডয়চে ভেলের সাংবাদিক এবং কাশ্মীর বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন জেনের বক্তব্য, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান যখন আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ছিল, তখন বহু তালেবান যোদ্ধাকে কাশ্মীরে এসে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলিতে প্রশিক্ষণ দিতে দেখা গেছে। তালেবান যোদ্ধারা কাশ্মীরের সীমান্ত অঞ্চলে মিছিল করেছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে। সালাউদ্দিনের স্পষ্ট বক্তব্য, ''দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানে ব্যস্ত ছিল। কাশ্মীরে তারা বড় একটা আসেনি। আফগানিস্তান তাদের হাতে চলে আসায় এবার ওই যোদ্ধাদের একটি অংশ কাশ্মীরে আসতে পারে। এর আগেও তাই হয়েছিল।'' সালাউদ্দিনের বক্তব্য, আফগানিস্তানে তালেবানের সঙ্গে বহু কাশ্মীরী যোদ্ধা ছিল। এবার তারা ফিরে আসছে। তারাই সীমান্ত অঞ্চলে বহু জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশ নিচ্ছে। কাশ্মীরী যুবকরাও নতুন করে সেই সব জায়গায় যোগ দিচ্ছে। সেনা অফিসারকে তাই বলতে হয়, যুবকরা যেন খেলাধুলোয় মন দেয়।
কূটনৈতিক ব্যাখ্যা
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক অফিসার ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, তালেবান আফগানিস্তান দখল করায় ভারত অত্যন্ত চিন্তিত। যে কারণে, তালেবানের সঙ্গে একাধারে সরাসরি এবং ব্যাক-চ্যানেলে আলোচনা জারি রেখেছে ভারত। এ কথা প্রায় সর্বজনবিদিত যে, পাকিস্তানের আইএসআই তালেবানকে মদত দিয়েছে। পাকিস্তানের পশ্চিমপ্রান্তে আফগান বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানের যে দীর্ঘদিনের শত্রুতা এবং সীমান্ত সংঘাত, তালেবানের আমলে তা কমবে বলে মনে করছে ভারত। ফলে পাক ফৌজ কাশ্মীর সীমান্তে অশান্তি আরো বাড়াতে পারে বলে মনে করছে ভারত। একইসঙ্গে তালেবান যোদ্ধারা কাশ্মীরে ঢুকবে বলেও তারা মনে করছে। ইতিমধ্যেই পাক-কাশ্মীরে তাদের ঢোকার ছবি ভাইরাল হয়েছে। আফগানিস্তানের জমিতে ভারত-বিরোধী গোষ্ঠীগুলিকে আশ্রয় দেওয়া হতে পারে বলেও ভারতের আশঙ্কা। ভারতীয় সেনা বাহিনীর সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''দোহার সাম্প্রতিক বৈঠকে তালেবানের কাছে একাধিক আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ভারত। তার মধ্যে অন্যতম আফগানিস্তানের জমিতে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেওয়া।'' এখন দেখার তালেবান বিষয়টিকে কীভাবে দেখে। ভারত যে কাশ্মীর নিয়ে চিন্তিত তা স্পষ্ট বলেই মনে করেন উৎপল।
অস্ত্র এবং অর্থ
ভারতীয় প্রশাসনের তরফে আফগান সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অমিতাভ রায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, কূটনৈতিক বাস্তবতা ছাড়া আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দিকে নজর দেওয়া দরকার। তার কথায়, ''গত দুই দশকে সোয়া দুই লক্ষ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর অধিকাংশই অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জামের পিছনে। আফগান সেনার হাতেও বিপুল পরিমণ সমরাস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেই সমস্ত অস্ত্র এখন আফগানিস্তানে পড়ে আছে।'' শুধু তাই নয়, অ্যামেরিকা সহ ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে চলে আসার পরে তাদের বেসগুলিতে বিপুল অস্ত্র এবং সামরিক জিনিসপত্র পড়ে আছে। এই সবই এখন তালেবানের হাতে। দেশের ভিতরে দুইএকটি জায়গায় তালেবানকে এখনো যুদ্ধ চালাতে হচ্ছে। কিন্তু তার জন্য ওই বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের প্রয়োজন নেই। তালেবান ওই অস্ত্র নিয়ে দুইটি কাজ করতে পারে। এক, বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে তা তুলে দিতে পারে। এবং দুই ওই অস্ত্র বিক্রি করে অর্থের ব্যবস্থা করতে পারে। বিক্রি করলেও তা বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকেই করা হবে। এ ছাড়াও ওই অস্ত্র তারা নিজেদের কাজে লাগাবে বলেও অমিতাভ মনে করেন। এর ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে সহিংসতার আশঙ্কা অনেকটাই বৃদ্ধি পেল বলে তিনি মনে করেন।
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, তালেবান যোদ্ধাদের একটা অংশ কাশ্মীরের দিকে আসবে। ফলে কাশ্মীরে নতুন করে উত্তেজনা বাড়বে বলেই আসঙ্কা করা হচ্ছে। বস্তুত, গত একমাসে তার খানিকটা আভাসও পাওয়া গেছে।