প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির এ ঘোষণা ইন্ট্রা-আফগান আলোচনার পথ খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
মুসলমানদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উপলক্ষে্য আফগান তালেবান গত শনিবার থেকে তিন দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে৷ তার পরদিন ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে দুই হাজার তালেবান বন্দিকে মুক্তির পরিকল্পনা দ্রুত কার্যকরের ঘোষণা দেন ঘানি৷
তালেবানরা যুদ্ধবিরতির প্রথমদিন তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে৷ সেদিন দেশটির কোথাও তালেবান ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়নি৷ ঈদের দিনের শুভেচ্ছা ভাষণে তালেবান বন্দিদের মুক্তির ঘোষণা দিয়ে ঘানি বলেন, ‘‘সরকার সফলভাবে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রাখবে৷'‘
তিনি তালেবানের হাতে বন্দি আফগান নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের দ্রুত মুক্তি দেওয়ার আহ্বানও জানান৷
গনির এ ঘোষণাকে ‘ভালো পদক্ষেপ‘ বলে উল্লেখ করলেও তালেবান মুখপাত্র কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তাতে ‘পাঁচ হাজার বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার' কথা বলা হয়েছিল৷
‘‘ইন্ট্রা-আফগান আলোচনার পথে অগ্রসর হওয়ার এবং ভবিষ্যতের চলার পথ নির্ধারণ করতে যেসব বাধা আছে সেগুলি সরিয়ে ফেলতে দোহা চুক্তির সব শর্ত পূরণ হওয়া জরুরি৷''
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি কাতারের মধ্যস্থতায় দোহায় যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে তাতে পাঁচ হাজার তালেবান যোদ্ধাকে মুক্তির বিনিময়ে দলটি তাদের হাতে বন্দি আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর এক হাজার সদস্যকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে৷
চুক্তির পর আফগান সরকার প্রাথমিকভাবে এক হাজার তালেবান যোদ্ধাকে মুক্তি দিয়েছিল৷ কিন্তু দেশজুড়ে তালেবান হামলা বেড়ে যাওয়ায় বন্দি মুক্তি কার্যক্রম স্থগিত করা হয়৷
বিশেষজ্ঞদের আশা, ঈদ উপলক্ষে যুদ্ধবিরতি আফগান সরকার ও তালেবানদের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরুর মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছে৷
প্রেসিডেন্ট গনিও বলেছেন, সরকারি প্রতিনিধিরা তালেবানের সঙ্গে ‘যেকোনো সময় শান্তি আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত' আছে৷ যুক্তরাষ্ট্রও এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে৷
দেখতে পারেন গত বছরের এ ছবিঘরটি
ধর্ম, বর্ণ, স্বাধীনতা নানা নামে উগ্রবাদ ছড়ায় বিশ্বে৷ বিভিন্ন মতাদর্শের উপর ভর করে গড়ে ওঠে জঙ্গি সংগঠন কিংবা সশস্ত্র বাহিনীও, যা অনেক সময় রূপ নেয় সন্ত্রাসে৷
ছবি: Reutersএকসময় পোশাকি নাম ছিল ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দি লিভ্যান্ট’৷ সংক্ষেপে আইএসআইএল কিংবা আইএসআইএস৷ তবে বেশি পরিচিত আইএস বা দায়েশ নামে৷ বিশ্বজুড়ে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে ২০১৪ সালে তারা আত্মপ্রকাশ করে৷ ২০১৫ সালের শেষ পর্যন্ত বিশ্বের ৮৫টি দেশ থেকে প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা জঙ্গি গোষ্ঠীটিতে যোগ দেয়৷ সিরিয়া, ইরাকের একটি বড় অংশ দখল করে নিয়েছিল তারা৷ তবে সম্প্রতি শেষ ঘাঁটিটিও হারিয়েছে আইএস৷
ছবি: Reutersজর্ডান-প্যালেস্টেনিয়ান মুসলিম ধর্মীয় গুরু আব্দুল্লাহ আজম৷ একটি জিহাদি জার্নালে আফগানিস্তানে লড়াইয়ের জন্য মুজাহিদিন বা বিদেশি যোদ্ধাদের বাহিনী গড়ার ধারণা দেন তিনি৷ ১৯৮৯ সালে মারা গেলেও তাঁর মতবাদই বৈশ্বিক জিহাদি ধারণার জন্ম দেয়৷ যার উপর ভিত্তি করে ১৯৮৮ সালে আল-কায়েদা প্রতিষ্ঠা করেন ওসামা বিন লাদেন৷ আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহারের পরে আল-কায়দার শাখা ছড়িয়ে পড়ে অনেক মুসলিম দেশে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ausafবিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামেও আল-কায়দার জিহাদি মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে জঙ্গি সংগঠন গড়ে ওঠে৷ তারই একটি আল শাবাব৷ সোমালিয়ায় শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০৬ সালে গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ দেশটিতে বহু বিদেশি নাগরিক হত্যার জন্য দায়ী তারা৷ আফ্রিকার এমন আরেকটি জঙ্গি গোষ্ঠী নাইজেরিয়ার বোকো হারাম৷ ২০১৪ সালে ৩০০ স্কুল ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় গোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনায় আসে৷
ছবি: Reuters/J. Penneyবর্ণবাদী মতবাদের উপর ভিত্তি করে বিশ্বে যুগে যুগে নানা গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে৷ বিংশ শতকে ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’ বা সাদাদের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণার উপর ভিত্তি করে অ্যামেরিকায় গড়ে ওঠে ‘কু ক্লুক্স ক্ল্যান’ নামের কট্টর বর্ণবাদী গোষ্ঠী৷ বর্ণবাদের উপর ভর করে ইউরোপে উত্থান হয় ফ্যাসিবাদের৷
ছবি: picture alliance / ZUMAPRESS.comসাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে পশ্চিমা দুনিয়ায় উগ্র ডানপন্থার প্রকটতা বাড়ছে৷ অ্যামেরিকা, ইউরোপ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত এই মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়ছে৷ ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সংস্কৃতির মানুষের প্রতি এর অনুসারীরা রক্ষণশীল৷ সবশেষ নিউজিল্যান্ডে হামলা করে ৫০ জনকে হত্যায় অভিযুক্তও তেমনই একজন৷
ছবি: Reuters/M. Mitchellসমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কিংবা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেয় বিশ্বের অনেক উগ্র বামপন্থি সংগঠন৷ রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে, সরকারি কর্মকর্তা, সম্পদশালী মানুষদের তারা শত্রু বিবেচনা করে৷ ফিলিপিন্সের কমিউনিস্ট পার্টি নিও পিপলস আর্মি বা ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি তারই উদাহরণ - যাদেরকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করে আসছে দেশগুলোর সরকার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Quraishiইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে একটি স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছে ফিলিস্তিনিরা৷ এজন্য সশস্ত্র যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছে হামাস, প্যালেস্টাইন লিবারেশন ফ্রন্ট, প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ৷ উগ্রতার কারণে এই দলগুলোকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এমন স্বাধিনতাকামী সংগঠন আছে আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া, পাকিস্তান ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশে৷
ছবি: picture-alliance এসএনএল (ডিপিএ, এএফপি)