এবার থেকে শহরের রাস্তায় উর্দি পরে পাহারা দিতে হবে তালেবান যোদ্ধাদের। নির্দেশ শীর্ষ নেতৃত্বের। কাবুলে কাতারের প্রতিনিধি দল।
বিজ্ঞাপন
সাংবাদিক বৈঠকে তালেবান নেতৃত্ব জানিয়েছিলেন, তারা সাধারণ মানুষের উপর জুলুম করবেন না। রাস্তঘাটে মারধর করা হবে না। কিন্তু গত প্রায় একমাসে আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মারধরের অভিযোগ আসছে। কাবুলেও তালেবান যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, রাস্তায় তারা লাঠি এবং বেত হাতে ঘুরছে গতবারের মতোই।
বুকে বন্দুক তাক করেও বিক্ষোভ থামাতে পারছে না তালেবান
তালেবান সরকার গঠন করার আগে থেকেই আফগানিস্তানে চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ৷ প্রতিবাদ আর বিক্ষোভ মূলত তালেবান এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে৷ বন্দুক তাক করে, ফাঁকা গুলি ছুঁড়েও বিক্ষোভ থামাতে ব্যর্থ তালেবান৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: REUTERS
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
মঙ্গলবার কাবুলে বড় একটি বিক্ষোভ হয়েছে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে৷ তালেবান ফিরে আসার পর থেকে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান হস্তক্ষেপ করছে- এমন অভিযোগ তুলে হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা৷ গত রবিবার পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-র প্রধান ফায়েজ হামিদ দু’ দিনের সফরে কাবুলে যান৷ এ সফরে তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেন তিনি৷
ছবি: HOSHANG HASHIMI/AFP
বিক্ষোভ থামাতে ছুটে আসে বন্দুক
পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ থামাতে এক বিক্ষোভকারীর বুকে এভাবেই বন্দুক তাক করেন এক তালেবান যোদ্ধা৷ তারপরও বিক্ষোভ থামেনি৷
ছবি: REUTERS
‘আইএসআই প্রধানের আফগানিস্তানে কী কাজ?’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের অনেক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে৷ স্থানীয় টেলিভিশনেও দেখানো হয় বিক্ষোভের খবর৷ সেখানে এক নারী বলেন, ‘‘আমরা এখানে এসেছি আমাদের দেশ রক্ষা করতে৷ আফগানিস্তানে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে পাকিস্তান৷ আমরা জানতে চাই, তাদের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান এখানে কেন? এখানে তার কী কাজ?’’
ছবি: HOSHANG HASHIMI/AFP
বিক্ষোভে বাধা
রাজধানী কাবুলে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল৷ মিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন সশস্ত্র তালেবান যো্দ্ধারা৷
ছবি: WANA/REUTERS
‘তারা মুসলমান না’
কাবুলে নারীদের বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়া এক নারী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘ তারা (তালেবান) অন্যায়কারী এবং তারা মোটেই মানুষ না৷ তারা আমাদের বিক্ষোভ করতে দিচ্ছে না৷ তারা মুসলমান না, তারা কাফের৷’’
ছবি: WANA/REUTERS
চারপাশে তালেবান
বিক্ষোভ মিছিলটি তখন আফগানিস্তানে পাকিস্তানের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানাতে পাকিস্তান দূতাবাসের দিকে এগিয়ে চলেছে৷ চারপাশ থেকে তাদের ঘিরে ফেলে তালেবান৷
ছবি: REUTERS
নারীদের ক্ষোভ
তালেবানবিরোধী এক বিক্ষোভ মিছিলের পাশ দিয়ে যাবার সময় গাড়ি থেকেই স্লোগান দিতে শুরু করেন এক নারী৷
ছবি: WANA/REUTERS
গনি সরকারের সমর্থন
মঙ্গলবারের বিক্ষোভের ছবি৷ এক বিক্ষোভকারী উঁচিয়ে ধরেন আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের পতাকা৷
ছবি: WANA/REUTERS
‘নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে’
তালেবান ফেরায় আফগানিস্তানের নারীদের একটা অংশ নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত৷ সাম্প্রতিক বিক্ষোভগুলোতে তাই নারীদের অংশগ্রহণ খুব বেশি৷ গত ৪ সেপ্টেম্বরও কাবুলে বিক্ষোভ মিছিল করেন নারীরা৷
ছবি: Bilal Guler/AA/picture alliance
হেরাতেও নারীদের বিক্ষোভ
মঙ্গলবার হেরাত শহরেও নারীদের তালেবানবিরোদী বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যায়৷ রয়টার্সকে এক নারী বলেন, ‘‘আমাদের চাকরি এবং সমাজে অর্জিত মর্যাদা রক্ষার জন্য নারীদের এগিয়ে আসতে হবে৷হয় এখন হবে, নয়তো কোনোদিনই নয়৷ হ্যাঁ, এমনই পরিস্থিতি এখন৷ আমরা সাহসী নই, আমরা আসলে নিজেদের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য বেপরোয়া৷’’ ওপরের ছবিটি গত ২ সেপ্টেম্বরের৷
ছবি: Mir Ahmad Firooz Mashoof/Anadolu Agency/picture alliance
10 ছবি1 | 10
এই পরিস্থিতিতে রোববার তালেবান মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ সংবাদসংস্থা ডিপিএ-কে জানিয়েছেন, তালেবান যোদ্ধাদের ইউনিফর্ম বা উর্দি পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে তালেবান যোদ্ধাদের একটি বড় দল কাবুল বিমানবন্দরের সুরক্ষার দায়িত্বে আছে। তাদের কিছুদিন আগেই উর্দি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাকি যোদ্ধারা সাদা পোশাকেই ঘুরছিলেন। এবার তাদেরও উর্দি পরতে হবে। মুজাহিদ ইঙ্গিত দিয়েছেন, ওই তালেবান যোদ্ধাদেরই পুলিশে নিয়ে নেওয়া হবে। উর্দি পরলে কারা অন্যায় অত্যাচার করছে, তা স্পষ্ট হবে। ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে।
কাতারের প্রতিনিধিদল
এদিকে রোববারেই কাবুলে পৌঁছেছে কাতারের প্রতিনিধি দল। দেশের পররাষ্টমন্ত্রী সেই প্রতিনিধি দলের নেতা। কাবুলের রাজপ্রাসাদে তারা দেখা করেছেন আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে একাধিক বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে বলে তালেবান সূত্র সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন।
এই প্রথম সরকারিভাবে কোনো দেশের প্রতিনিধি দল আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করল। তালেবান সূত্রের দাবি, বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং দেশের উন্নয়ন নিয়ে কথা হয়েছে। দোহায় দীর্ঘদিন নিজেদের রাজনৈতিক দপ্তর চালিয়েছে তালেবান। এখনো সেই দপ্তর আছে। তালেবানের সঙ্গে বরাবরই যোগাযোগ রেখেছে কাতার। কাবুল বিমানবন্দর দ্রুত সারিয়ে খোলার বিষয়েও তুরস্কের সঙ্গে কাতার সাহায্য করেছিল তালেবানকে। মনে করা হচ্ছে, তালেবানের সঙ্গে বিশ্বের কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে কাতার।